নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মতিচোরঃ পর্ব-১ (ছোটগল্প)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫

- শোন্‌ আমি তো সেভেন এইটের বেশি পড়তে পারি নাই। আমার বাপেরে আমি দেখিই নাই। মায় চেরমান বাড়িতে কাজ কইত্ত। সেই সমে আমারে নিয়া চেরমানের কামে লাগাইদিল। ভালাই আছিলাম। চেরমানের গরু গোথান দেখি, ঘাস কাডি, গরু গুলানরে খাওন দেই। কম বেশ নিজেও খাওন পাই। ঈদে চাঁন্দে মাইনষের কাছে যা সাহায্য সহযোগিতা পাইত হেই গুলা জমাতে লাগল। মার ইচ্ছা অনে টেকা জমা হইলে। আমারে বিদেশ পাঠাইব। মা জানেও না, বিদেশ যাইতে কয় টাকা লাগে। তয় জানে অনেক টাকা লাগে। আর মাও এক টাকা দুই টাকা কইরা জমায়। আর ভাবে একদিন অনেক টাকা হইব। এর মাঝে একদিন গ্রামের চৌকিদার মারা গেল। আমিও একটু ডাঙর হইছি। মা গিয়া চেরমানেরে কইল মতি মিয়ারে বোড অফিসের এককান কাম দিয়া দ্যান না, হুজুর। আপনার লগে লগে থাইকব। আপনার হা খেজমত কইরব। যাক চেরমানের দয়া হইছে। আমাদের নিয়া চৌকিদারি পোস্টে ঢুকাই দিছে। পোশাক আশাক দিছে। জীবনে প্রথম পেন্ট পইচ্ছি। এর আগে কোনদিন পেন্টে ঢুকি নাই। নোতুন নোতুন গা চুলকাইত রে খালি। যা হোক সারাদিন লাডি একটা নিয়া চেরমানের পিছে পিছে ঘুরি। রাইতের বেলা বোড অফিসে ঘুমাই। মাসে পাঁচশ টেকা বেতন। শেষের দিকে অবশ্য একহাজার টাকা কইচ্ছিল। মায়ে সইন্ধ্যা অইলে চেরমান বাড়িততুন খাবার নিয়া দিয়া আসত। মাঝে মাঝে এদিক সেদিক চ্যাঁচড়া চোর, সিঁদেল চোর ধরা পরে। মাইষে ধইরা আইচ্ছা মত বানানির পরে আমি গিয়া মনের সুখে আরো দু চার ঘা দিয়া থানায় দিয়া আসি। হের পর কি হয় কে জানে। এরা আবার চুরি করে। আমার অত চিন্তার কাম কি! আমার কাম আমি করি। হেগো কাম হেরা করে। আমি বালাই আছিলাম রে। হুন্‌ ইশকুলে থাইকতে একবার স্যারেরা লিখত দিছিলো জীবনের লক্ষ্য কি। আমি শালার পড়া লেয়া কিছুই পাইত্তাম না। পারমু কোনতুন, মাস্টারের কেলাসে যা কইতো সব আমার মাথার উপরে দিয়া যাইত। এমন কোন দিন আছিল না আমি পিডা খাই নাই। তহন বুঝতাম না রে এহন বুঝি, চোর খালি আমি না। মাস্টারেরাও চোর। তারা যে পড়া চুরি করে হেইটা কিন্তু কেউ কয় না। আমি যেমুন চোর হেরা তেমন চোর। হেরা খালি কইত আমার মাথায় খালি গোবর। আইচ্ছা তুই ক, আমার মাথায় যুদি কিচ্ছু না থাকে আমি হুদা হুদাই এত বড় চোর অইছি। চোর অওয়া কি এত সোজা। তাই ত মাইসে জজ বেরিস্টার না অই চোর অইত।
-ওস্তাদ চোর অওন কি, জজ বেরিস্টারির তন কটিন। চোর মাথা কি হেগো চাই ভালা?
-তুই আসলেই বেআক্কইল্লা রে। তুই যুদি কোন জজ বেরিস্টার রে আনি কছ চুরি করবার, পাইর বো? পাইর বো না। মাইর খাই বুত হই যাইব। চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা, বুঝলি?
-হ ওস্তাদ।
-চুরি তে বহুত কিছিমে বেরেন খাটান লাগে। বহুত চিন্তা ভাবনার বিষয় আছে। কার বাড়ি চুরি করবি। কিভাবে চুরি করবি। কখন চুরি করবি। ধরা খাইলে কি করবি। বহুত বেপার আছে। যাই হোক আমি হেই দিন খাতায় লিখছিলাম, আমি পুলিশ হমু। পুলিশ হইয়া চোর পিডামু। সেই সমে চেরমান বাড়িতে চোর ধরা পড়ছিল। চোরেরে বাইন্ধা থুইছিল, পুলিশ আইসা পিডাইতে পিডাইতে থানায় নিয়া গেল। দেইখা মনে হইল বড় হইয়া আমিও চোর পিডামু। কষ্ট কইরা দৌরায়া ধরতে হয় না, বাঁনতে হয় না। আরেক জনে ধইরা বাইন্ধা রাখব তুমি আইসা পিডাবা। হেবি মজা। আমি মনে কই পুলিশ অই নাই তো কি অইছে চৌকিদার তো হইছি। চোর তো পিডাই।

-ওস্তাদ সবি তো বুইঝলাম। কিন্তুক তুমি চোর হইলা কেমনে। হেইডা তো কইতাছো না।
-আরে কইতে দে না। আমি সেইদিকেই তো যাইতেছি রে বাপ। আর শোন চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা। এতে ধৈর্য ধরন লাগে। তোর ধৈরয দেখতাছি একদমই নাই। চোর হবি কেমনে। চুরি বহুত সাধনার জিনিস। বুঝলি? চুরির মত একটা ভালা কামে আইসা, প্যানর প্যানর পশ্ন করবি না। পশ্ন করন মানা।
-হ ওস্তাদ বুঝচি।

প্রত্যেক গ্রামে একটা চোর থাকা নিয়ম আছে। আমাদের গ্রামে তেমনি আছে মতি চোর। ভদ্রলোকেরা বলে মইত্যা চোরা। মতির মা মতিরে বিয়ে করিয়েছিল। পাশের গ্রামে। তখনো মতি মইত্যা চোরা হয়নি। মতির বউ সুন্দরই ছিল। শ্বশুরের গ্রামের বাজারে একটা ছোটখাট চায়ের দোকান আছে। ছেলেপুলে বলতে দুইজন। মতির বউ আর তার একটা ভাই। ভাইটা বাপের সাথে দোকানে কাজ করে। মতির বউ চলে গেছে বাপের বাড়ি। চোর চ্যাঁচ্যড় জামাইয়ের ভাত খাবে না। অবশ্য মতিকে ফেরানোর চেষ্টা সে কম করে নাই। নরম কথা, গরম কথা, কান্না-কাটি কোন কিছুই বাদ রাখেনি। মতির কথা চুরি কি খারাপ নাকি! অন্য কাম যেমন কাম চুরিও তেমনি একটা কাজ। এই নিয়ে এত চিল্লা পাল্লার কি আছে। তবে মতির চোর হওয়ার পেছনে একটু ইতিহাস আছে। সে ইতিহাসও চোরের মত সাধারণ ইতিহাস। বিচিত্র নয়। গ্রামের চৌকিদারি পেয়ে মতির দিন ভালই যাচ্ছিল। শেষে মতির মা মতিরে বিয়ে দিল। মাসে মাসে বেতন পায়। চেয়ারম্যান টুকটাক সাহায্য করে। ইউনিয়ন পরিষদের রেশন রিলিফ এসব পেয়ে সে বলতে গেলে স্বাচ্ছন্দেই যাচ্ছিল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২০

উদাস কিশোর বলেছেন: আমার মনে হচ্ছে গল্প লম্বা হচ্ছে , কাহিনি গড়াচ্ছে না ।
লেখা ভাল লেগেছে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

আনু মোল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় উদাস কিশোর।
পুরো গপ্ল একসাথে দিয়েছি আশা করি পড়ে দেখবেন।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পর্ব হিসেবে ছোট গল্প এই প্রথম পড়লাম।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০১

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জনাব।
পুরো গল্প একসাথে পোস্ট করেছি। আশা করি পড়বেন।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫

নেক্সাস বলেছেন: কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পর্ব হিসেবে ছোট গল্প এই প্রথম পড়লাম।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০০

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জনাব।
পুরো গল্প একসাথে পোস্ট করেছি। আশা করি পড়বেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.