নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাসার কাছাকাছি এসে বকুল মোবাইল টা অন করল। সে বেরিয়েছে বিকেল তিনটায়। সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরার কথা। সন্ধ্যার পর এক সেকেন্ড দেরিও বাবা সহ্য করে না। বাবা এই সময় বাসায় থাকে না। মা থাকে। মাও সহ্য করে না। এখন বাবা চলে আসছে। আজ তুলকালাম কান্ড হবে। হোক। সে ইচ্ছে করেই দেরি করেছে। এমনকি রিয়া নিজেই তাকে তাড়া দিয়েছিল। তারপরও সে আটটা পর্যন্ত বসেছিল। আজ কয়েকদিন বাসাটাকে অসহ্য লাগছে। একবার মা এসে ঘ্যান ঘ্যান করছে। মার কথা শেষ হতে না হতেই ভাইয়া আসবে। উপদেশ, উপদেশ, উপদেশ। ছেলেটা খুব ভাল। ভাল টাকা পয়সা আছে। আমাদের মত গরীব মানুষের এর চেয়ে বেশি কি চাওয়ার আছে। সে তো বেশি কিছু চায়নি। এবং কখনো চায় না, চাইবেও না। গাড়ি, বাড়ি, শপিংয়ের স্বপ্ন সে দেখেনি কোন দিন। দুই ঈদে যে জামা জুতো পায় তাতেই তো সে সন্তুষ্ট ছিল। বেড়াতে যাওয়ার মধ্যে এক গ্রামের বাড়ি যাওয়া। একবার কলেজ থেকে সবাই কক্সবাজার গিয়েছিল। সে বলেছিল সমুদ্র তার ভয় করে। মিথ্যে কথা। কত দিন সে সমুদ্র দেখার স্বপ্ন দেখেছিন। পিকনিকের চাঁদা পাবে কোথায়। চাঁদার পরিমান তার বাবার বেতনের টাকার অর্ধেক। বাবা কে বললে দেয়ার সাধ্য নেই। কাজের মধ্যে যেটা হতো তার বাবা মন খারাপ করে বারান্দায় বসে থাকতো। তারপর অপরাধী মুখে বলতো মারে এবার তো খুব খারাপ অবস্থা। পরের বার যখন পিকনিক হবে আমি ব্যবস্থা করে রাখব। সে জানে কোনদিনই তাদের ব্যবস্থা হবে। অল্পতেই সে সব বুঝে। বুঝে বুঝে সে বড় হয়েছে। এই নিয়ে তার দুঃখও নেই। যা নেই, কিংবা যা হবে না তা নিয়ে দুঃখ না করার এই অভ্যাস তার কিভাবে হল, সে নিজে ও জানে না। কিন্তু এখন সত্যি সত্যি দুঃখের শেষ নাই। দুঃখ রাগ ঘৃণা একসাথে আসছে। কিন্তু কার প্রতি? কার উপর রাগ দেখাবে, কাকে এই ঘৃণা সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। সবে মাত্র ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে এই কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না সে। এখনো না। তার বাসায় ফিরতেই ইচ্ছে করছিল না। রিয়াদের বাসা থাকতে পারলে ভাল হত। সে শুধু একা একা কেন কষ্ট করবে? সবাই কষ্ট করুক। সবাই টেনশন করুক। ভাইয়া পড়তে পারবে সে পারবে না। রেজাল্টের পর বান্ধবিরা সবাই কে কোথায় ভর্তি হবে এই নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে, কোচিং করছে। ফরম উঠাচ্ছে। তার বেলায় ঢু ঢু। বাবার মালিক তাকে বুঝিয়েছে মেয়েমানুষের বেশি পড়ালেখা করা উচিত না। বিশেষ করে সে যদি ড্রাইভারের মেয়ে হয়। ড্রাইভারের মেয়ে বি,এ; এম,এ; পাশ করলে ছেলে পাওয়া মুশকিল হবে। ড্রাইভারের এম,এ পাশ করা মেয়েকে কে বিয়ে করবে? সুতরাং বিয়ে দিয়ে দাও। এবং সেই উদযোগী হয়ে ছেলে নিয়ে আসছে।
বাসায় ঢুকতেই কেমন জানি অস্বস্তিকর থমথমে অবস্থা। মরা বাড়ীর মত অবস্থা। সবাই কান্নাকাটি করে ক্লান্ত। এখন আর কাঁদতে পারছে না। এক জীবনে একদিন দেরী করে আসায় কি সবাই ধরে নিয়েছে সে মরে গেছে! এত ভাবনার সময় তার নাই। আস্তে আস্তে শোবার চলে যায় বকুল। একটু পরেই বাবা আসে। করুন মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। আস্তে আস্তে বলে, “ আজকে কেন এত দেরি করলিরে মা।” বাবা কে বুঝতে পারে না বকুল। কি হয়েছে বাবার। ঢাকা শহরে দেরি হওয়া কোন ব্যাপার না। তার জন্য বকাঝকা হতে পারে। তার জন্য বকুল প্রস্তুতই ছিল। কিন্তু বাবার কেন এই আহাজারি!
আজ বিকেলে ছেলের মা ছেলেকে নিয়ে মেয়ে দেখতে এসেছিল। যে মেয়ে মোবাইল বন্ধ করে এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকে তাকে ছেলের বউ করতে রাজি না ছেলের মা।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪২
আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় রায়হান ভাই।
এখনো হাতে কোন সিরিজ নাই। তবে একজন গ্রাম্য চোর কে নিয়ে একটি ছোটগল্প লিখছি।
শুভেচ্ছা নিবেন আর ভাল থাকবেন
২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
বেশ টুইষ্ট দিলেন শেষ বেলায় ...
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: শেষ হয়েও শেষ হল না , জীবনের বাস্তব গল্পগুলোর কোন সমাপ্তি থাকে না । সহমত।
++
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৩
আনু মোল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১২
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: শেষ হয়েও শেষ হল না , জীবনের বাস্তব গল্পগুলোর কোন সমাপ্তি থাকে না ।
ভালো থাকবেন ভ্রাতা ।
মোরগ রাজার পরে নতুন কোন সিরিজের পরিকল্পনা আছে কি ?
শুভকামনা ।।