নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাঝরাতে

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

মাঝরাতে মাঝ রাস্তাতে নামিয়ে দিয়ে রিসকাঅলা বেশ অবাক হয়েছিল।কিন্তু শিমুল গাছটা চিনতে রোমেলের একটুও ভুল হয়নি। এই শিমুল গাছথেকে নব্বই ডিগ্রি কোনে হাটা দিলে সোজা নীলাদের বাড়ি। নীলাদের বাড়ির পথ এটা নয়। তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বড় রাস্তা গেছে। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া এখন মোটেও নিরাপদ নয়। তাই উলটো দিক হতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। রাস্তা থেকে প্রায় কিলো খানেক দূরে বাড়িটা। নীলার পরদাদাদের আমলের পুরনো বিশাল বাড়ি। বাগ-বাগিচায় ঠাসা। সামনে পেছনে দুটো পুকুর। বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়টা বেশ নির্জন। বড় বড় গাছ-গাছলি আর লতাগুল্মে মিলে বুড়ো জঙ্গল। কোনায় একটা বাঁশঝাড়। দিনের বেলায় ও এদিকে মানুষের তেমন একটা আনাগোনা নেই। গত সপ্তাহে রোমেল এসে সরেজমিনে দেখে গেছে। ওদের বাড়ির কারো সাথে দেখা হয়নি। পেছনের বাড়ির কয়েকজন এখানে কাজ করছিলে তারা রোমেলের ইতিউতি তাকানো দেখে রীতিমত সন্দেহ করে বসে। তাদের কে উলটপালট বুঝিয়ে কোন মতে মানে মানে সরে পড়ে সে। ভাগ্য নিতান্ত অপ্রসন্ন না হলে আজ রাতে কার এদিকে আসার সম্ভাবনা নেই। আর কিছু সময় পরেই নীলা এসে হাজির হবে বাশ ঝাড়টাই। নীলার সাথে রোমেলের গত একবছরের সম্পর্ক। গত একবছর ধরে তাদের মাঝে ঘুব লদকালদকি প্রেম চলছিল তা বলা যাবে না। প্রথমে তারা কেউ স্বীকার করতো না তাদের কোন সম্পর্ক আছে। নিজেদের কাছেই করতো না। শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের কে ফাঁকি দেয়া গেল না। রোমেলের মাস্টার্স শেষ। এখনো চাকরি বাকরি নাই। টিঊশনির উপর নির্ভর। বাড়ির দিক হতে তেমন কোন চাপ নেই। গ্রাম্য মধ্যবিত্ত পরিবার ভালমন্দ মিলায়ে চলে যাচ্ছে। আপাতত রোমেলের উপার্জনের জন্য কেউ না খেয়ে মরবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে শুধু টিউশনির উপর নির্ভর করে রাত ১২ টার সময় এসে ভিন গাঁয়ে এসে পরের মেয়েকে নিয়ে কাজী অফিসে যাওয়ার সাহস করার মত ছেলে রোমেল না। সামনে একটা হাইস্কুলে জয়েন করার কথা পাকাপাকি হয়েছে। কিন্তু নীলা এই দিন কয়েক অপেক্ষা করতে চাইল না। তার নাকি যে কোন দিন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বিয়ে হয়ে গেলে সে নিশ্চিন্ত। রোমেলের বন্ধুদের ধারনা রমেল নিতান্ত গাধা না হলে নীলার জন্য এত বড় রিস্ক নিত না। এখনকার যুগে নিতান্ত একটা প্রেম করে তাকে বিয়ে ফেলার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই। নীলার ভালবাসা নিয়ে তারা সব সময়ই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। রোমেল চ্যালেঞ্জ চুঁড়ে দিয়েছে নীলা আজকে বের হবে না। আচ্ছা নীলা যদি সত্যি সত্যি বের না হয়! নীলা ওরকম মেয়েই না। হয়ত এতক্ষণে এসে দাঁড়িয়ে আছে বাঁশ তলায়। কে জানে কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে এই শীতের রাতে। দ্রুত পা চালায় রোমেল।

সিনেমায় যেরকম দেখা যায় রোমেল ঠিক ঐ ধরনের নায়ক গোছের কেউ না। পড়া লেখায় মোটামুটি। আহামরি কোন রেজাল্ট তার কখনোই ছিল না। খেলাধূলা গানবাজনা, ফুটবল ক্রিকেট কোনটাতেই সে নাই। বাঙালির ছেলে নাকি কবি হয়ে জন্মায়। স্কুল কলেজে পাঠ্য কবিতা ছাড়া সে অন্য কোন কবিতার ধারে কাছেও যায় নাই, লিখা তো দূরে থাকুক। গল্প, উপন্যাসের লেখকরা কিভাবে এত আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ে তা ভেবে সে কূল করতে পারে না। বাংলা নাটক সিনেমা দেখে দেখে তারও বেশ একটা ধারনা হয়েছিল কোন একদিন ক্লাসে কিংবা লাইব্রেরিতে কোন সুন্দরি মেয়ের সাথে সে ধাক্কা খাবেই আর বই পত্র সব এলোমেলো হয়ে পড়ে যাবে, আর সে ত্বরিৎ গতিতে তুললে গিয়ে আবার ধাক্কা চোখাচোখি। ব্যাস প্রেম। কিন্তু তার আর উপায় নেই। ধাক্কা যদিবা সে খায়ও বই তুলে দেয়ার পর্ব টা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নাই। ক্লাসে কেউ বই নিয়ে আসে না। যারা আসে তারা ইয়া বড় ব্যাগ নিয়ে আসে। বছর দুই এভাবে লাইব্রেরিতে আর ক্লাসে ঘুরাঘুরি করে প্রেমের আশা সে বাসই দিয়েছিল। তবু তার প্রেম হয়েছিল। একদিন ক্লাসে রাষ্ট্রের ধারনা পড়াতে গিয়ে স্যার বড় পন্ডিতদের তত্ত্বগুলো বিশ্লেষণ করে বুঝাচ্ছিলেন আধুনিক রাষ্ট্রের রূপরেখা কেন নির্ভুল। সেদিন কি মনে করে জানি না রোমেল আধুকিক রাষ্ট্রের ত্রুটিগুলো নিয়ে বেশ একটা বকৃতা দিয়ে ফেলে। স্যার তার কথা মেনে না নিলেও স্বীকার করলেন তার কথায় যুক্তি আছে। ক্লাসের অনেকের কাছেই মনে হল সে ঠিকই বলেছিল। স্যার রা স্বীকার করবেন না সে তো জানা কথা।

ক্লাস শেষে রোমেল ক্যান্টিনের কোনায় বসে আরামে চা খাচ্ছিল। বেশ ফুরফুরে মেজাজে। কিছুটা আনমনাও ছিল। ‘মতিন স্যার কে তো বেশ জব্দ করলে’ – চমকে উঠে রোমেল। কোন সময় নীলা এসে যে সামনে বসেছে সে ঠিক টেরও পায়নি। সেই থেকে শুরু একসাথে চা খাওয়া, লাইব্রেরিতে বসা, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা। এই করে করে কি আশ্চর্য তারা এক সময় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আশ্চর্য!


শীতের কনকনে উত্তুরে হাওয়া। কুয়াশা। ধানক্ষেত ধরে হাঁটছে রোমেল। বেশির ভাগ ক্ষেতেই ধান কাতা হয়ে গেছে। নাড়ার কুয়াশা আর ধূলা মিশে কাদা মাখামাখি হয়ে গেছে প্যান্ট। পা ছিলে গেছে কয়েক জায়গায়। গ্রামের মাঝরাত। চারিদিক একেবারেই শুনশান। অন্ধকার রাত হলেও আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারার। ঠান্ডায় কনকনি লেগেগেছে রোমেলের। বেশির ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বড় একটা ক্ষেত পার হলেই সামনে একটা বাড়ি। তার পরেই নীলাদের বাড়ী। এই ক্ষেতে ধান কেটে স্তুপ স্তুপ করে রাখা। ক্ষেতের মাঝে একটা তাঁবু দেখা যাচ্ছে। ধান চোর পাহারা দেয়ার জন্য বসানো হয়েছে।তাঁবুর ভেতথেকে আওয়াজ আসে
- কে গো??
- আমি
- আমি টা কে?
- মিয়াজি বাড়ি যাচ্ছি। সাঈদের বন্ধু।
- কই থেইকা আসেন।
- সদর থেকে। সাঈদ আর আমি এক ক্লাসে পড়ি।
সাঈদ নীলার বড় ভাই। নীলাদের বাড়ির কেউ রোমেল কে চিনে না। তাদের বাড়ি পাশের ইউনিয়নে। প্রায় চার পাঁচ মাইল দূরে। তাদের বাড়ির মুরুব্বীদের কে চিনতে পারে। নীলার বড় ভাই সম্পর্কে যা শুনেছে ধরা খেলে ভাল রকমের বিপদের সম্ভাবনা আছে।সাঈদের কথা শুনে কিনা কে জানে ওরা আর কথা বাড়ায় না। অথবা তারা ভাবে যেই হোক ধান চোর না হলেই হয়। আর রোমেল কে আর যাই হোক ধান চোর মনে হচ্ছে না। মাঠ টা প্রায় শেষ হয়ে আসে। রোমেলের বুকের ধুকুকানি বেড়ে যায়। একটু পরেই নীলা হাত ধরবে তার। নীলা নামটি ভাবতেই তার শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায়। কত মিষ্টি একটা নাম। নীলা কে নিয়ে এই পথে ফেরা যাবে না। ওটাও ঠিক করা আছে। ওরা গ্রামের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যাবে। ওদিকে গিয়ে বড় রাস্তাটা পার হলেই শিহাবদের বাড়ি। ওদের কাছারিতে রাতটা পার করে ফজরের সময় তারা চলে যাবে সোজা সদরে।

মাঠটা পার হয়ে বাড়িটার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে সে। ও বাড়ি থেকে একটানা কুকুরে ডাক শোনা যাচ্ছে। কুকুর টাকি আবার ওকে ফলো করছে না তো। ভাবতেই বুকটা ধবক করে উঠে ওর। কুকুরেরর গর্জন বাড়তেই থেকে। যা থেকে কপালে রোমেল হাঁটতে থাকা। কিছুদূর অগ্রসর হতেই চোর চোর চিৎকার। তীব্র টর্চ লাইটের আলো। কয়েকজন ছুটে আসছে। সাথে কুকুর ও। ওকে লক্ষ্য করেই আসছে। আশে পাশে বাড়ি থেকে ও টর্চ্বের আলো নিয়ে টুটছে লোকজন। চোর চোর চিৎকার পুরো এলাকা জুড়ে। হটাৎ কি করবে বুঝে উঠতে পারে না সে। তিন দিকে থেকেই তীব্র টর্চের আলো ধেয়ে আসছে তাকে লক্ষ্য করেই। শীতের মধ্যে ঘামতে থাকে রমেক্ল। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। উল্ট দিকে দৌড় দিবে কি? তাতে কি লাভ হবে। গ্রামের লোকজনে র সাথে সে পেরে উঠবে কেন? আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধরে ফেলবে তাকে। ও খোদা কারো হাতে ইয়া বড় বড় লাঠি। কি করবে এখন রোমেল, কি করবে??

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: তারপর !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

ভালো থাকুন !

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় অপূর্ণ রায়হান ভাই।
শুভ কামনা রইল। ভাল থাকুন নিরন্তর :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.