নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের রাজনীতি

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫







আমাদের অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা ঘোলাটে করে ফেলেছি। রাজনৈকিতক ও সাংস্কৃতিকভাবে সবাই নিজেদের কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বলে দাবি করেন। বিরোধপূর্ন পরিবেশে পরষ্পরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি বলে নিন্দা মন্দ করে থাকেন। সবার কাছেই মুক্তি যুদ্ধের চেতনা পন্থি হওয়া খুবই গৌরবের। বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য কাজ করুন আর না করুন সবাই দাবি করেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক।







রক্তক্ষয়ি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কঠিন কঠিন তত্ত কথার আড়ালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান উদ্ধেশ্য অর্থনৈতিক মুক্তি। একটি বৈষম্যহিন সমাজ প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার ও সাম্য হবে তার ভিত্তি। সামাজিক সাম্য ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা। একটি সত্যিকারের প্রগতিশিল গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করা। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিষয়গুলোর প্রতি কতটুকু যত্নবান? আমাদের রাজনীতির গতি প্রকৃতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশ্লষণ করলে মনে হবে আমাদের রাজনীতি বরং এই সমস্ত চেতনা ধ্বংস করতেই যেন প্রবৃত্ত।







আমরা স্বাধিনতার চার দশকের বেশি সময়ে ও একটা সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে পারিনি। আমাদের রাজনৈতিক বিভাজন এত তীব্র এবং হিংসাত্মক আমাদের দেশের শীর্ষ নেত্রিদ্বয় পরস্পর মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত করেন না। প্রগতিশীল কোন রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে না পারলেও আমরা দেশের সবকিছু কে আমরা রাজনীতিকরন করেছি।

চায়ের দোকান, মুদির দোকারন, সেলুন, পাব্লিক বাস, ফুটপাত সবখানে পলিটীক্স। দুইজন মানুষ একসাথে কথা বলছে বিষয় পলিটিক্স। আত্মিয়ের বাসায় বেড়াতে এসে কুশল বিনিময় করতে না করতে কথা যে কোন ফাঁকে পলিটিক্সে চলে যায় বোঝা যায় না। অফিসে দুই সহকর্মি কাজের আলাপ করতে গিয়ে কিংবা আপনার বস হয়ত আপনাকে কোন জরুরি কাজে ডেকেছে আপনি নিশিত থাকুন জরুরি কাজ নিশিত ভাবেই পলিটিক্সে গিয়ে শেষ হবে। পৃথিবিতে আমাদের মত এত পলিটিকাল জাতি আছে কিনা আমার জানা নেই।



অনেকেই একে রাজনৈতিক সচেতনতা বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চান। তাঁরা আরামের ঢেকুর তুলুন তাতে কোন আপত্তি নাই কিন্তু বাস্তবিক এটা কি রাজনৈতিক সচেতনতা? মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ সাহেব নির্বাচনে জয়ি হবার পর তাঁর সাধারন জ্ঞানের বহর দেখে অনেকে বলেছিলেন আমাদের হাটে মাঠে দোকানে ঘরে বাইরে যারা চায়ের কাপে ঝড় তুলেন তারা বুঝি বুশ সাহেবের চেয়েও বড় পন্ডিত। এই যে এত এত রাজনৈতিক আলাপ তাতে কি আপনার মনে হয় এতে দেধের রাজনোইতিক সংস্কৃতির কোন উন্নয়ন ঘটেছে কিংবা ঘটবে। অথচ এই সমস্ত তথাকথিত রাজনৈতিক সচেতনতার ফসল অনেক ক্ষেত্রেই হাতাহাতি হতে শুরু করে মারামারি এমন কি কোপাকোপি কি বাড়ী ঘর জালানো পর্যন্ত গড়ায়। শ্রমিক, বুদ্ধিজিবি, কবি, সাংবাদিক, শিল্পি, রিকশা ওয়ালা, ভ্যান অয়ালা, গার্মেন্টস কর্মি, সরকারি আমলা, ট্রাক ড্রাইভার, বাস ড্রাইভার, কর্পোরেট নির্বাহি, ব্যবসায়ি, ফেরিওয়ালা সকলেই রাজনৈতিক। সকলেরই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি মোহ আছে। রাজনৈতিক সমর্থন গণতান্ত্রিক দেশে সকলেরই অধিকার। কিন্তু আমাদের এখানে তা নয়। রাজনৈতিক সমর্থন মানেই হল অন্ধ আনুগত্য। ফলাফল সুস্পষ্ট বিভাজন। টীভী পর্দার টকশো হতে শুরু করে অজ পাড়া গাঁয়ের চায়ের দোকান সর্বত্র একই রূপ। অন্ধ রাজনৈতিক সমর্থন। কোন মধ্যম পন্থা নেই। গঠনমূলক সমালোচনা নেই। পক্ষে না হয় বিপক্ষে। বিচার বুদ্ধি তথ্য উপাত্তের নিরিখে যুক্তি তর্কে পরিশিলিত একটা প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরির পথে বড় অন্তরায় হল এই কঠিন বিভাজন। কিন্তু দিন কে দিন আমরা এই বিভাজন না থামিয়ে আমরা আরো উস্কে দিচ্ছি। সর্বাধিক পরিতাপের বিষয় হল আমাদের অপরিসীম অপরিশিলিত আবেগ। আমাদের এই গেঁয়ো আবগ চাপিয়ে আমরা যুক্তি বুদ্ধির দুয়ারে পৌঁছাতে পারি না। আমাদের চিন্তা বুদ্ধির জগৎ অতিরিক্ত অপরিপক্ক আর ততোধিক অপরিশিলিত ও আদিম। আমাদের দেশে রাজনীতির সমার্থক হয়ে গেছে প্রতিহিংসা, ভাংচুর, হত্যা, গুলি, টীয়ার, গুম এক কথায় অরাজকতা।





আমাদের গণতন্ত্রের ধারনা অতি সংকীর্ন ভোটের মধ্যে সীমাবিদ্ধ। এছাড়া গনতন্ত্রের অন্য কোন উপাদান আমাদের মাঝে নাই। পরমত আমাদের পরম শত্রু। ক্ষমতাই আমাদের গণতন্ত্রে একমাত্র আরাধ্য। আমাদের শাসক গোষ্ঠির সকলেই চরিত্রের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় তাঁদের সমস্ত কর্মপদ্ধতি হল কিভাবে ক্ষমতায় আরোহন করা যায়। এজন্য তাঁরা বৈধ অবৈধ, সম্ভব অসম্ভব, আইনি বেআইনি সব চেষ্টাই করেন। সরকারের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হল কিভাবে এই ক্ষমতা চিরস্থায়ি করা যায়। আর এই দুই পক্ষের বিপরিতমুখি এবং জনবিদ্বেষি সকল কর্মকান্ডে সাধারনের অবস্থা হয় উলু খাগড়া’র মত। কেউ তত্বাবধায়ক সরকার নিজের পছন্দসই করার জন্য বিচারপতির বয়স বাড়ান আর কেই তত্তাবধায়ক পদ্ধতিটাই বাতিল করে দেন।



রাজনিতিকে কেন্দ্র করে যে হীন হানাহানি আর গালাগালি তা থেকে উত্তরণ আমাদের সম্মুখে প্রধান সমস্যা। আর এই সমস্যার সমাধান হয় না কারন আমদের রাজনিতিকদের মাঝে সে ধরনের বোধ-বুদ্ধি-বিবেক আর দেশপ্রেম নাই। ভিন্নমত দলনই যেখানে রাজনিতিকদের একমাত্র ব্রত, টিভি পর্দায় দেশবাসির সামনে যারা হাতাহাতি করে তাদের কাছে আমরা এর সমাধান আশা করা মানে মাকাল ফলকে আপেল মনে করা। এর জন্য দরকার জাতীয় চিন্তা মেধা ও মননের বিকাশ। আমাদের জাতীয় মননশীলতাকে অন্তত এই স্তরে উঠাতে হবে জাতে আমরা বিবেকের তাড়নায় মিথ্যা হতে বিরত হই। আমাদের রাজনীতি পরিচালিত হবে বিবেক বুদ্ধি আর যুক্তি তর্কের ধারা। তবেই একটা প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.