নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিপ্লবী সরকার কি?
"বিপ্লবী সরকার" বলতে বোঝানো হয় একটি সরকার, যা প্রচলিত রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন বা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। এই ধরনের সরকার সাধারণত একটি প্রচলিত সরকারের পতনের পর গঠিত হয় এবং নতুন আদর্শ বা ব্যবস্থার প্রবর্তনের জন্য কাজ করে।
বিপ্লবী সরকার সাধারণত প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাকাঠামো বা শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন, সশস্ত্র সংগ্রাম বা অন্যান্য বিপ্লবী কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে গঠিত সরকার বা রাশিয়ান বিপ্লবের পর সোভিয়েত সরকারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
বিপ্লবী সরকারে বৈশিষ্ট্য কি কি?
বিপ্লবী সরকারের বেশ কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই ধরনের সরকারকে স্বতন্ত্র করে তোলে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিস্থিতি এবং বিপ্লবের প্রকৃতি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়:
1.প্রচলিত শাসনব্যবস্থার পতন: বিপ্লবী সরকার সাধারণত পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার পতনের পর গঠিত হয়, যা প্রচলিত নিয়ম-কানুন ও শাসনব্যবস্থা বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে।
2. বিকল্প রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ: বিপ্লবী সরকার সাধারণত একটি নতুন রাজনৈতিক বা সামাজিক আদর্শ নিয়ে আসে, যেমন সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, বা জাতীয়তাবাদ। এই আদর্শের মাধ্যমে পুরোনো ব্যবস্থার পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা থাকে।
3. গণ আন্দোলনের ফলাফল: বিপ্লবী সরকার প্রায়শই জনসাধারণের বৃহৎ অংশের সমর্থন ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। গণঅসন্তোষ বা বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রচলিত সরকারকে উচ্ছেদ করা হয়।
4. প্রচলিত আইন ও প্রতিষ্ঠান ভাঙার প্রবণতা: বিপ্লবী সরকার প্রচলিত আইন, বিচার ব্যবস্থা, সংবিধান, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত কাঠামোগুলো পরিবর্তন বা ভাঙার চেষ্টা করে এবং তাদের জায়গায় নতুন নিয়ম বা কাঠামো প্রবর্তন করে।
5. সশস্ত্র সংগ্রাম বা শক্তি প্রদর্শন: অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লবী সরকার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধ, বিদ্রোহ বা সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে।
6. দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ: বিপ্লবী সরকার প্রায়শই তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি গ্রহণ করে। বিরোধী শক্তি বা প্রাক্তন শাসকদের প্রতি দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
7. নতুন অর্থনৈতিক নীতি: বিপ্লবী সরকার প্রায়ই নতুন ধরনের অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে, যা প্রচলিত শাসনব্যবস্থার তুলনায় সম্পদ বিতরণ বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, জমি সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতি, বা ধনিক শ্রেণির উপর নিয়ন্ত্রণ।
8. বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব: অনেক বিপ্লবী সরকার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে এবং অন্য দেশগুলোর জন্য বিপ্লবের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিপ্লবী সরকারের মৌলিক দিকগুলো বোঝায়, যা প্রায়শই প্রচলিত সরকারের থেকে তাদের আলাদা করে তোলে।
কখন বিপ্লবী সরকার গঠন হতে পারে?
বিপ্লবী সরকার গঠন সাধারণত তখন ঘটে যখন একটি দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় বা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। বিশেষ করে নিম্নলিখিত পরিস্থিতিগুলোতে বিপ্লবী সরকার গঠনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়:
১. গভীর সামাজিক বা অর্থনৈতিক অসন্তোষ:
• যখন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব, দারিদ্র্য, খাদ্য সংকট, বা অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, তখন জনগণ প্রচলিত সরকারকে অকার্যকর বা অন্যায় হিসেবে দেখাতে শুরু করে।
• জনগণের একটি বড় অংশ যদি নিজস্ব জীবনমান উন্নত করার কোনো উপায় দেখতে না পায়, তাহলে তারা বিপ্লবী পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকতে পারে।
২. রাজনৈতিক দুর্বলতা বা অকার্যকরতা:
• যখন একটি সরকার জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, বা দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও স্বৈরাচারিতার কারণে জনপ্রিয়তা হারায়, তখন বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
• দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, এবং সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের অভাব বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
৩. গণআন্দোলন ও প্রতিবাদ:
• যদি দীর্ঘমেয়াদী গণআন্দোলন বা প্রতিবাদ আন্দোলন হয় এবং সরকার সেই আন্দোলনকে দমন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আন্দোলনকারীরা সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারে।
• ঐতিহাসিকভাবে ফরাসি বিপ্লব বা রাশিয়ান বিপ্লবের উদাহরণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে এসেছে।
৪. সামরিক ব্যর্থতা বা যুদ্ধপরাজয়:
• একটি দেশের সামরিক ব্যর্থতা, বিশেষ করে বড় যুদ্ধে পরাজয় বা সামরিক কৌশলে বড় ভুল, জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে এবং সরকার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়।
• যুদ্ধপরাজয় বা অভ্যন্তরীণ সামরিক সংগ্রামের ফলে একটি বিপ্লবী সরকার ক্ষমতা দখল করতে পারে।
৫. বহিরাগত প্রভাব ও সমর্থন:
• কখনো কখনো বাইরের শক্তির সমর্থন বা প্রভাব বিপ্লবী সরকার গঠনে সহায়ক হতে পারে। বিদেশি শক্তি নিজেদের স্বার্থে বা কোনো রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের জন্য বিপ্লবকে সমর্থন দিতে পারে।
৬. অত্যাচারী বা স্বৈরাচারী শাসন:
• যদি কোনো সরকার দীর্ঘ সময় ধরে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে এবং স্বৈরাচারীভাবে শাসন করে, তখন সেই শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সম্ভাবনা বাড়ে। এই বিদ্রোহের ফলে এক সময় একটি বিপ্লবী সরকার গঠিত হতে পারে।
• বিশেষ করে মুক্ত মতপ্রকাশ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং রাজনৈতিক দমনপীড়নের কারণে জনগণ বিদ্রোহ করতে বাধ্য হতে পারে।
৭. আদর্শিক সংগ্রাম:
• কোনো আদর্শিক বা নৈতিক কারণে বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার বিপরীতে যদি একটি নতুন আদর্শ বা নীতি জনগণের মধ্যে প্রচলিত হয়, তখন বিপ্লবী আন্দোলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ বা ধর্মীয় আদর্শের ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তন করা হতে পারে।
৮. সরকারের পতন বা ভেঙে পড়া:
• যখন প্রচলিত সরকার কোনো আভ্যন্তরীণ কারণে ভেঙে পড়ে (যেমন: নেতৃত্ব সংকট, আর্থিক ধ্বংস, প্রশাসনিক বিপর্যয়), তখন বিপ্লবী শক্তিগুলো সুযোগ নিয়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এই পরিস্থিতিগুলো একত্রিত হলে একটি দেশ বিপ্লবী সরকার গঠনের পথে যেতে পারে।
বিপ্লবী সরকারের কাছে কি পুরাতন সংবিধান বিবেচ্য বিষয়?
বিপ্লবী সরকারের কাছে সাধারণত পুরাতন সংবিধান বিবেচ্য বিষয় নয়। বিপ্লবী সরকারগুলোর লক্ষ্যই থাকে পুরাতন শাসনব্যবস্থা এবং তার সাথে সম্পর্কিত আইন ও সংবিধানকে পরিবর্তন করা বা বাতিল করা। তারা নতুন আদর্শ বা শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধান বা আইন প্রণয়নের চেষ্টা করে। তবে, পুরাতন সংবিধান এবং তার কিছু নীতিমালা সাময়িকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে যদি তা তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হয়।
©somewhere in net ltd.