নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমাকে চিনব বলে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি একা একা, পাই নি একটুও কূল-কিনারা কিংবা তার কেশমাত্র দেখা। এভাবেই না চিনতে চিনতেই কি মহাকালের পথে আঁচড় কাটবে শেষ রেখা?
: ভালোবাসার গল্প: দ্বিঘাত সমীকরণ-১
কলকাতার হোটেলের কর্মকর্তা বেলা হয়ে গেলেও আমাদের সাড়া শব্দ না পেয়ে ধুপধাপ চলে এসেছে। গতকাল বুকিং নেওয়ার সময় হয়ত কিছু সন্দেহ করেছে। জানাতে এসেছে আমরা আজকেও থাকব কিনা। না থাকলে যেন রুম ছেড়ে দেই।
সকালের নাস্তা করে রাজাবাজার মার্কেট থেকে কিছু কাপড় চোপড় ও একটি ট্রাভেল ব্যাগ কিনলাম। ইতোমধ্যে এরপরের পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে সুসির সাথে কিছুটা আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো কংক্রিট সমাধানে আসতে পারি নি দুজনেই। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কলকাতায় থাকা যাবে না। যত তাড়িতাড়ি পারা যায় এখান থেকে পত্রপাঠ বিদায় নিতে হবে। নাহলে উষ্ঠানি খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ফেলে দেওয়া যায় না।
দুপুরের পরে আবার হোটেলে ফিরে আসলাম। সুসির আবদারে চূড়ান্ত হলো তাজমহল দেখতে যাব। এর পরের পদক্ষেপ পরে...? যদিও ও আমার ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ কাঁদাকাটি শুরু করল। হিলি বন্দর হয়ে সুসির পার হওয়া অসম্ভব, কারণ সেখানে তার বাবার বেশ প্রভাব রয়েছে। গেলেই ধরা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। আর আমাকে যেহেতু বেনাপোল দিয়েই পার হতে হবে, সেহেতু সুসিকে এভাবে একা ছেড়ে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না।
রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটো ‘তৎকাল’ টিকিট কাটলাম। বিকেলেই ট্রেন। দ্রুত বের হয়ে পড়লাম হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ৪.৫৫ ট্রেন ছাড়বে। চারটায় স্টেশনে উপস্থিত। আমার এটা তৃতীয় বারের মতো কলকাতা তথা ভারতে আসা। এর আগে ব্রাজিল ও কাজাকস্থানের ভিসার জন্য ভারতে এসেছিলাম। ওই দুটো দেশের এমব্যাসি বাংলাদেশে ছিল না।
ট্রেনে উঠে পড়লাম। একটু পরেই বিকেলের স্ন্যাক্স ও চা সরবরাহ করল রেল কর্তৃপক্ষ। থ্রি-টায়ার টিকিট। ফলে সেখানে আরো চারজন বসেছে। বাঙালী পরিবার। স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুটো মিষ্টি বাচ্চা। মেয়েটির বয়স ১২-১৩ হবে। আর ছেলেটি ১০’র মতো। পরিচয় হল। উনাদের পূর্বপুরুষের বাড়ি নাকি বরিশাল।
টিকিট চেকার আমাদের দুজনের প্রিন্ট করা কাগজটিতে দুজনের নাম দেখে একবার আমার মুখের দিকে আরেকবার সুসির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। কিছু একটা চিন্তা উনার মাথায় হয়ত খেলে গেছে। বিদেশ বিভূঁই সমঝে চলতে হবে মনে হচ্ছে।
পাশের এই বাঙাল পরিবারটি আমাদের বেশ আপন করে নিয়েছে। পিচ্চি দুটো ল্যাপটপে বাংলা নাটক দেখতে শুরু করেছে। চঞ্চল চৌধুরী ও মোশাররফ করিমের নাকি ভীষণ ভক্ত দুজনেই। উনাদের বাবা-মাকেও মনে হল বাংলাদেশের নাটকের মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক।
সুসিকে বেশ উচ্ছল দেখাচ্ছে এখন। ওর দিকে আমি চোরা দৃষ্টি দিয়ে দেখছি আর ভাবছি। কয়েক মাস আগেই আমাদের জীবনটা কি ছিল আর এখন গতি পরিবর্তন করে কেমন হয়েছে? আকস্মিক ভূমিকম্পে যেমন নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে আমাদের জীবনের রাস্তাটাও তেমনই বেঁকে গেছে। এর শেষ গন্তব্য কোথায় আমরাও জানি না। আমার ভবিষ্যত, ক্যারিয়ার। এগুলো এখন আর আমাকে ভাবাচ্ছে না। অথচ এই আমি কয়েক মাস আগেও কোন দেশে গেলে পোস্ট গ্রাজুয়েশনটা বেটার হবে। হায়ার র্যাঙ্ক ইউনিতে এনরোল করতে হলে আমাকে কী কী করতে হবে ইত্যাদি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।
আসলে মানুষের মন বড় বিচিত্র। জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলোও মনে হয় ক্ষণে ক্ষণে ইউটার্ন নিতেই থাকে সারাজীবন। চাই একটা, হই আরেকটা। এখন আমাকে ঐ সব প্রোগ্রামিং ও অধিক সেলারির জব আর টানছে না। অথচ উল্টোটা ভেবেই সারাজীবন পার করেছি। সুসির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনের অন্য অর্থ খোঁজার চেষ্টা করছি। এখন মনে হচ্ছে কেন অস্টম এডওয়ার্ড সিংহাসন ছেড়েছিল?
ডিনার সেরেই ট্রেনের সকলে ঘুমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। পাশের বৌদিরাও বিছানা-পত্র খুলছে। পিচ্চি দুটো উপরের টায়ারে উঠে গেল। মাঝের একটাতে সুসিকে বিছানা করে দিলাম। আমি নিচের টায়ারে। সুসি শোয়ার পরে ব্লাংকেটটা ওর গায়ে টেনে দিলাম। লোভ সামলাতে না পেরে আধো অন্ধকারে ওর ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁটটা ছোঁয়ালাম। পেছন ফিরে দেখি বৌদি ড্যাব ড্যাব করে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে শুয়ে থেকে। ভাবখানা এমন, ‘ছোকরা, স্পিড বেশি হলে মুশকিলে পড়বে কিন্তু’। দুষ্টু বাঁদরের ন্যায় মিষ্টি এক হাসি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
রাত দুটোর দিকে মুঘলসরাই স্টেশনে ট্রেন থামল। নেমে কিছু ফলমূল কিনলাম সকালে খাওয়া যাবে মনে করে। সকাল দশটায় ট্রেন নয়াদিল্লীর স্টেশনে পৌঁছল।
আমাদের সাথের পরিবারটি দিল্লীর গাজিয়াবাদে থাকেন। উনাদের ওখানে সুইটের দুটো দোকান রয়েছে। দিল্লীতে সকালে ট্রেন পৌঁছার পর আমাদের অনেক করে ধরলেন তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আমরা কথা দিলাম। আবার দিল্লীতে আসলে উনাদের বাসায় আতিথিয়তা গ্রহণ করব।
উনারা চলে যেতেই সুসি কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে, অয়ন দা তুমি গত রাতে ‘অমন’ করলে কেন? ইস, বৌদি যে কী মনে করেছে? তুমি অনেক দুষ্টু আছো!
সুসির আরক্তিম মুখের দিকে তাকিয়ে, 'ঠিক আছে, এরপর আশেপাশে যাতে কেউ না থাকে সেটা লক্ষ্য…’। দেখলাম, সুসি মুঠি পাকিয়ে তেড়ে আসছে…!
এরপর স্টেশনের কাছের পাহাড়গঞ্জের হোটেল ইয়র্ক লিগাসি নামের একটি হোটেলে রাতের থাকার ব্যবস্থা করি। সুসি এর আগেও দিল্লী দুবার এসেছে বেড়াতে। তবে লোটাস টেম্পল, কুতুব মিনার ও স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির এখনও দেখে নি। ফলে আজকের দিনটা ঐ তিনটি জায়গা দেখে আগামিকাল আগ্রার পথে রওয়ানা দিব। যা ভাবা তাই। সুসি আমাকে জড়িয়ে ধরে শূন্যে উড়ার আয়োজন করছে। আর সাথে একটি ডানাকাটা পরী থাকলে নিজেকেও রাজকুমার ভাবতে ক্ষতি কী? ফলে দুজনেই স্বপ্নিল পঙ্খিরাজে চড়ে ছুটে চললাম দিল্লী বিজয়ে। বিজয়রথ শেষে রাতে দুজনেই আগ্রার কোথায় কী দেখব তার চূড়ান্ত করছি।
পরের দিন আগ্রার তাজমহলের সামনের বেঞ্চিতে বসে সুসি আমাকে আঁকড়ে ধরে প্রকাশ্যেই অকস্মাৎ চুমু খেয়ে ফেলে। এরপর যখন খেয়াল হয় দেখে সামনেই কয়েকটি ছেলেমেয়ে মুচকি হাসছে। আমাদের সম্পর্কটাও এখন অনেকটা রোমান্টিক মাদকতায় নেশাগ্রস্ত। রাতে তা দুজনেই টের পেলাম নয়া সম্ভাবনার প্লাটিনাম খনির সন্ধান পেয়ে। আগ্রার ট্রাইডেন্ট হোটেলের ২২০ নম্বর কক্ষে দুটো মানব হ্নদয়ের হ্নদিচিহ্ন কালের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেল।
তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট, আকবর টুম্ব ও ফতেপুর সিক্রি ভ্রমণ শেষে দুইদিন পরে পুনরায় দিল্লী ফেরত আসলাম। এবার দেশে ফেরার পালা। পরের দিন সকালে কলকাতাগামী ট্রেনের টিকিট কাটলাম। সুসি জানালো দিল্লীতে চিত্তরঞ্জন পার্কের কাছে ‘আমার সোনার বাংলা’ নামে একটি চমৎকার বাঙ্গালী রেস্তরাঁ আছে। এর আগে ও নাকি দুইবারই সেই রেস্তরাঁতে খেয়েছে। কয়দিন পরে মাছ-ভাত খাওয়ার জন্যে দুজনে রওয়ানা দিলাম। আর এখানেই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করলাম…!
৫
সাদা ভাত ও ফিশ কারি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি। আর তখনই লক্ষ্য করলাম মেইন গেইট দিয়ে অনিকেত, ওর বয়সী আর এক ছেলে, মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা হোটেলে প্রবেশ করছে। সুসি পেছন ফিরে থাকায় লক্ষ্য করে নি। আমার চেহারার আকস্মিক পরিবর্তনে পেছন ফিরে তাকাতেই অনিকেতের সাথে আমাদের দুজনেরই চোখাচখি হয়ে যায়। এরপর ইতিহাস…
এই উস্কখুস্ক অনিকেতকে আমি চিনি না। অনিকেতও তাই। চিতার ক্ষীপ্রতায় দৌড়ে এসেই প্রথম ঘুসিটা ও আমার চোয়ালে মারে। চেয়ারসহ পড়ে যাই। ঘটনায় আকস্মিকতায় হোটেলের অন্যরাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। এরপর কোন প্রকার উচ্চবাচ্য না করে বেশ কয়েকটা ঘুসি ও লাথি মারে অনিকেত আমাকে। ব্যথার তীব্রতায় চোখে সর্ষে ফুল দেখা শুরু করেছি। খালি আবছা ভাবে লক্ষ্য করলাম সুসি চিৎকার করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে আরো কয়েকজন এসে মারতে শুরু করলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে বুঝতে পারলাম কেউ একজন সকলকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। অসম্ভব ব্যথা নিয়ে নিজেকে সফদার জং হাসপাতালের একটি বেডে আবিষ্কার করি।
ইতোমধ্যে প্রায় দু দিন পার হয়ে গেছে। মানে টানা প্রায় পঞ্চাশ ঘণ্টা অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। চোখ মেলে দেখতে পাই সেই রেস্তরাঁতে দেখা অনিকেতের সাথের ভদ্রলোককে। উনি আমার পাসপোর্ট হাতে দেয়। এর সাত দিন পর প্রায় এসকর্ট করে দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। মাঝে আমি সুসির ব্যাপারে জানতে চাইলে আবারও কিছু চড়-থাপ্পড় হজম করতে হয়। এবং জানানো হয় বাড়াবাড়ি করলে ফলাফলের জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। হুমকিটা নিছক হুমকি ছিল না বুঝতে পারি। দেশে প্রবেশ করে বড় ভাইকে ফোন দিলে বলে বাবাসহ তাঁরা কেউই আমার মুখ আর দেখতে চায় না। আমি উনাদের সম্মান মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছি। তারমানে আমার ও সুসির ভারতের সকল কাহিনি দিনাজপুরের সকলেই জানে।
ঢাকাতে ফেরত আসি। হতাশা, না পাওয়ার অক্ষম আক্রোশ নিজের ভেতর তান্ডব চালাতে থাকে। জীবনের ক্লেদার্থ অধ্যায়কে ছুড়ে ফেলতে গিয়েও পারি না সুসির সেই রেস্তরাঁর চিৎকারের কথা মনে হলে। আবার ভারতে যেতে ইচ্ছে করে। যত্নে লালিত দুষ্প্রাপ্য সম্পদকে নিজের অধিকার থেকে হারিয়ে ফেলার যাতনা কুরে কুরে নিঃশেষ করে দেয় দেহ ও মনকে। এই ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ সময়ে কাছের বন্ধুদের সাহসে বছরখানেক পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি সুসির বিয়ে ও ফুটফুটে এক বাচ্চার জন্ম হয়েছে। আমিও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে প্রোগ্রামিং-এর জগতে ডুব দেই। নানা ধরনের অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ করতে করতে দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে উত্তর আমেরিকার এক প্রযুক্তি কোম্পানীতে চাকরীরে অফার আসে। নয়া ট্রেন্ড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ওদের আয়ারল্যান্ডের অফিসে যোগদান করি। বছর দুয়েক পরে সুইজারল্যান্ড অফিসে কাজ করতে গিয়ে বসের সাথে ঝামেলা হলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেলারুশের এক কলিগের সাথে একটি ফিনটেক স্টার্ট আপ চালু করি।
দিনাজপুর তথা বাংলাদেশের সাথে ২০১৩ সালের পর আর কোনো যোগাযোগই রাখি নি। পরিবার ও সমাজের প্রতি রাগ ও অভিমানে।
২০১৮ সাল। এরপর জীবনের মোড় আবার ঘুরে যায় ‘একটি বার্তাতে’। এতদিন ডুবে ছিলাম কাজ আর কাজে। সে বছরের শেষে ফোর্বস’র ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’তে নিজের নাম আসায় দেশ-বিদেশ নানা জায়গা থেকে পরিচিত জনেরা শুভেচ্ছা জানাতে থাকে। এর আগে আমার অবস্থান কাছের কিছু বন্ধু বাদে কারো জানা ছিল না। দিনাজপুরে যোগাযোগ হয়। বাবা-মার সাথে বহুবছর বাদে কথা হয়। মা আমার চিন্তায়-শোকে অসুস্থ। কথা দেই আমি শীঘ্রি একবার দেশে যাবো।
৬
এরকমভাবেই আমার ব্যক্তিগত ইমেইলে একটি বার্তা আসে। ‘অনেক সুখে আছো নিশ্চয়’। বার্তাটি পাঠের পরই আমার মাঝে ভাঙ্গন শুরু হয়। পুরান ক্ষত থেকে পুনরায় রক্ত ঝরতে শুরু করে বার্তাতে লুকানো অর্থে। যদিও জানি না এটি কার বার্তা। এবং সন্দেহ করি কার ওটি। পালটা ইমেইল করি, কথা বলতে চাই। সাড়া না পেয়ে পরপর কয়েকটি ইমেইল করি। সাড়া নেই। ইতোমধ্যে সুসির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হই। আর পুনরায় সবকিছু জানতে পেরে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করি। প্রায় একমাস পর আবার একটি ইমেইল আসে ‘কাপুরুষ ও স্বার্থপর মানুষের সাথে কোনো কথা নেই’।
জানতে পারি আমার বাংলাদেশ ত্যাগ করার কয়েকমাস পরেই সুসির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ইতোমধ্যে সুসি কলকাতার একটি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে দিনাজপুরের একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করছে। আর সিঙ্গেল মাদার হিসেবে ওদের বাসায় কাজের লোকসহ থাকছে। সুসির বাবা দুবছর আগে মারা গেছে। অনিকেত ভারতে বিয়ে করে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসা নিয়ে আছে। মাসিমাসহ ওরা এখন কলকাতায় থাকে। মাঝে মাঝে দিনাজপুরেও আসে। সুসির সাথে অনিকেতের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। মাসিমা সুসির পক্ষে থাকলেও অনিকেতের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এসব কিছু আমার জানার বাইরে। এত কিছু জানার পর আর সুসির সেই বার্তাগুলোর অর্থ অনুধাবন করে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকি। কেবলই মনে হতে থাকে আরো অনেক আগেই যোগাযোগ করা দরকার ছিলো।
পরের মাসে ঢাকায় নেমে সোজা দিনাজপুরে রওয়ানা হই। আট বছর আগের সেই বিক্ষুব্ধ দিনগুলো মনের পর্দায় সিনেমার ট্রেইলারের মতো ঘূর্ণিপাক খেতে থাকে। সন্ধ্যায় দিনাজপুর পৌঁছেই বাড়িতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অসুস্হ মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কান্না শুরু করি। কতদিন পর দেখা। কিছুক্ষণ পরেই ছটফট করতে থাকি সুসির ওখানে যাওয়ার জন্য। ভাবীকে জানায়ে বাসা থেকে রাতেই বেরিয়ে পড়ি। সেই চির চেনা পথ। কতদিন পর?
বাসায় কলিং বেল চাপলে এক বয়স্ক মহিলা দরজার ওপাশ থেকে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দিলে অনেকক্ষণ কেটে যায়। শীতের রাত। আবার ডাকি। শুনশান নিশ্চুপ চারপাশ। ভেতর থেকে কোনো সাড়া নেই। তবে আমার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে দরজার ওপাশে কারো ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দরজার পাল্লা আস্তে করে ফাঁক হয়।
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি হাজার মাইল দূর থেকেও চিনতে পারব এমন এক মুখের উপর। কারো মুখে কোনো কথা নেই। ভেতরে প্রবেশ করলে সুসি দরজাটা বন্ধ করে দেয়। বয়স্ক মহিলাটি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। উনাকে সুসি বলে, ‘চাচী, আপনি শুয়ে পড়েন’। এতক্ষণে আমি মহিলাকে চিনতে পারি। আমাদের বাসায় আগে কাজ করত নাদিয়ার মা।
সুসির পেছন পেছন গিয়ে বসার ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলাম। হার্ট দ্বিগুণ বেগে ব্লাড পাম্পিং করে চলেছে বুঝতে পারছি। সুসিরও কী একই অবস্থা জানতে ইচ্ছে করছে? এরপর একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সুসি আমার চোখে চোখ রেখে সোজাসাপ্টা জানতে চায়, ‘এতদিন পরে কেন আসলে’? গলার কম্পনের সূক্ষ্ম ব্যাপারটা আমার চোখ এড়ালো না।
সেই অসীম গভীরতার চোখ, নিস্পাপ মুখ। যদিও আগের চেয়ে ওর শরীর একটু ভারী হয়েছে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু সেই একই আগুনঝরা রূপ ও হরিণী চাহনি। চোখ ফেরানো দায়। আমার হাভাতে তাকানো দেখে ও একটু আরক্তিম হলো। এবার আবারও গলার স্বরটা একটু চড়িয়ে, ‘কী শুনতে পাও নি? কেন এসেছ?’। প্রশ্নের মাঝে লুকিয়ে থাকা হাহাকার আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।
মুখে আমতা আমতা করে শুধু বললাম, ‘আমি জানতাম না এত কিছু’?
সাথে সাথেই তীরের মতো আবেগঘন প্রশ্ন উড়ে এলো, ‘একটিবার জানার চেষ্টা করেছিলে কখনও...সুসি কেমন আছে, কোথায় আছে’?
আমি নিশ্চুপ। কিছু বলার মতো খুঁজে না পেয়ে ‘তোমার ছেলেকে দেখছি না’। শিক্ষিত চোর চুরি করে ধরা পড়লে পার পাওয়ার জন্য যেমন রাস্তা খুঁজতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে আমার কথাটিও মনে হয় সুসির কাছে তেমনই শুনালো।
আমার কথা শুনে, সুসি প্রায় কান্না জড়িত কন্ঠে পাল্টা উত্তরে বলল, ‘তারমানে তুমি সুইজারল্যান্ড থেকে আমার ছেলেকে দেখতে এসেছ’। বুঝতে পারলাম ঝড়ের পূর্বাভাস।
আমি সুসির চোখে চোখ রেখে অনুধাবন করলাম, এক সমুদ্র কান্না নিয়ে একটি অপরূপ রূপবতী মেয়ে একজনের জন্য অধীর অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছে। হঠাৎ আমার কী হলো, এক পা সামনে বেড়ে সুসি কিছু বুঝে উঠার আগেই শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নিঃশব্দে আমার পিঠে কিল-ঘুসি মারতে লাগল। ও যতই ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করতে লাগল আমার বন্ধন ততই শক্ত হতে থাকল। শেষে সুসি না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে গুমরে গুমরে কান্না জুড়ে দিল। আমিও সুখের সেই কান্না বৃষ্টিতে সাড়ম্বরে যোগ দিলাম। কতক্ষণ পার হয়েছে জানি না। যখন মনে হচ্ছে বুকের কাছে শীত শীত করছে, তখন সুসির মুখটাকে আলতো করে তুলে কপালে চুমু দিলাম। আর বুঝতে পারলাম ওর কান্নার জল আমার বুক ভিজিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই শীত অনুভূত হচ্ছে।
৭
জানতে চাইলাম কী হয়েছিল সেই দিল্লীর ঘটনার পরে। আর অনিকেতই বা কীভাবে জানল আমরা দিল্লীতে? সুসি জানালো, আমরা ভারতেই আছি তা বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসার থেকে জানতে পারে। এরপর সুসির মেসোর পরিচিত এক মন্ত্রীমশায়ের সহায়তায় ট্রেনের টিকিট চেক করে জানতে পারে আমরা দিল্লীতে গিয়েছি। এরপর অনিকেত ও তাঁর এক কাজিন দিল্লীতে রওয়ানা হয়। এর আগে সুসির বাবা ও মেসো অনিকেতকে এ সবের জন্য দায়ী করে হেনস্তা করে। আর এতেই অনিকেত আমাদের দুজনের উপর মারাত্মক খেপে যায়। আর চিত্তরঞ্জন পার্কের সেই দেখা হওয়াটা ছিল কিছুটা কাকতালীয়। যদিও সুসির সেই আত্মীয় ভদ্রলোক আশেপাশেই থাকে।
এরপর সুসিকে কলকাতা এনে কয়েকদিন পরেই জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। সুসি রাজি না হলে জানানো হয়, আমাকে মেরে ফেলবে। শুধু আমাকে জেলে না দিতে ও বাংলাদেশে ভালোভাবে ফেরত পাঠাতে হবে এই শর্তে সুসি বিয়েতে রাজি হয়। এরপর বাচ্চা হলে সুসির উদাসীন আচরণে ওর হাজবেন্ড ও অনিকেতের সাথে সুসির সম্পর্কের অবনতি হলে দুবছর পরেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর সুসি গ্রাজুয়েশন শেষ করে বাচ্চাসহ দেশে এসে দিনাজপুরের স্কুলে যোগ দেয়। এতকিছু শুনে সুসিকে আবার জড়িয়ে ধরে রাখি। ওর কান্না যেন থামতেই চায় না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ও আমাকে শোয়ার ঘরে নিয়ে গেল ওর ছেলেকে দেখাবে বলে।
একটি ফুটফুটে বাচ্চা ব্লাংকেট মুড়িয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। নিষ্পাপ মুখটাকে ভীষণ আপন মনে হচ্ছে। সুসি বাচ্চার মুখ থেকে ব্লাংকেটের অনেকটা সরিয়ে দিলে ভালোভাবে লক্ষ্য করে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম।
বিস্ময় নিয়ে সুসির দিকে তাকালে সুসির চোখে চিকচিক করতে থাকা রুপালী কান্নার জল বিস্মৃত পর্দা উন্মোচন করে স্মরণ করিয়ে দিলো--আগ্রার ট্রাইডেন্ট হোটেলের ২২০ নম্বর কক্ষ…!!!
**********************************************************************
আখেনাটেন/ফেব্রুয়ারি-২০২২
ছবি: লেখক। তাজমহল, ২০১২
: ভালোবাসার গল্প: দ্বিঘাত সমীকরণ-১
: ভালোবাসার গল্প: দ্বিঘাত সমীকরণ-২
: ভালোবাসার গল্প: দ্বিঘাত সমীকরণ-৩
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৪
আখেনাটেন বলেছেন:
জুনাপা, গল্প তো মানব জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ থেকে তুলে ধরা হয় বেশির ভাগ সময়। কিছু ঘটে বলেই তো এইসব গল্প রটে.....
আর জায়াগাগুলো বাস্তবেই আমার ভীষণ চেনা.....। তবে অয়নবাবুকে আমি চিনি না এটা আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি....
অনেক অনেক শুভেচ্ছা লেখাটি পড়ার জন্য জুনাপা.....। ভালো থাকুন।
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে দ্বিঘাত সমীকরণের সমীকরণ মিলল। আগ্রার ট্রাইডেন্ট হোটেলের দুইশো কুড়ি নম্বর কক্ষ। ঝড়-বৃষ্টি তো পথে থাকবেই। শেষে যে মধুরেণ সমাপয়েৎ-এটাই জীবনের সার্থকতা।সুসিকে নিয়ে লেখকের ভাবী জীবন পরিপূর্ণতায় ভরে উঠুক..
চঞ্চল চৌধুরী ও মোশারফ করিম, অপূর্ব এনাদের অভিনয় আআমারও বেশ ভালো লাগে।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৮
আখেনাটেন বলেছেন: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে দ্বিঘাত সমীকরণের সমীকরণ মিলল। -- হুম, পদাতিক দা....আমাকেও এ জিনিস চাপে রেখেছিল.....শেষমেষ সমীকরণের মারপ্যাঁচ-কাটাকাটি শেষে মিলিয়ে দিলুম.....
বাংলাদেশি নাটকের প্রচুর ভক্ত যে ভারতে আছে, বিশেষ করে বাংলাভাষাভাষীদের মধ্যে-- তা নানাভাবেই টের পেয়েছিলুম...উপরের উদাহরণ বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষাপটেই......
অনেক ভালো থাকুন......কলকাতা টানে দাদা......
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫২
অপু তানভীর বলেছেন: চার পর্ব একটানে পড়ে শেষ করে ফেললাম ! যখন তাদের দেখা হল, পালিয়ে বেড়ালো আমিও যেন তাদের মত উত্তেজনা অনুভব করছিলাম । বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করছিল যে এর পরে কী না হয় !
এই যে এতো কষ্টের পরে আবার যখন ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলন হল, এটা জেনে আজকে শান্তি পেলাম । যদি যদি অয়ন সুসিকে না পেত যদি তাদের মিলন না হত সত্যিই কষ্টটা বুকে লেগে থাকতো অনেকটা সময় ।
শেষের টুইস্টটা পড়ে যদিও চমকাই নি । আগেই এমন কিছু হবে ধারণা করছিলাম !
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৪
আখেনাটেন বলেছেন: এই যে এতো কষ্টের পরে আবার যখন ভালোবাসার মানুষের সাথে মিলন হল, এটা জেনে আজকে শান্তি পেলাম । যদি যদি অয়ন সুসিকে না পেত যদি তাদের মিলন না হত সত্যিই কষ্টটা বুকে লেগে থাকতো অনেকটা সময় । -- ...তবে আমার মতে শেষমেষ সমীকরণটা না মিললেই বুঝি বেশি জমত....ট্রাজেডি হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলাম একবার....
শেষের টুইস্টটা পড়ে যদিও চমকাই নি । আগেই এমন কিছু হবে ধারণা করছিলাম ! --- হা হা...আপনি হচ্ছেন হাজারো গল্পের স্রষ্ঠা...অবাক হই নি...।
ভালো থাকুন।
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুসি নামটা আর কোথাও পড়েছি বলে মনে হচ্ছিল এবং আগের পোস্টগুলোও ঘুরে এলাম, যদিও আর কোথাও আমার কমেন্ট নেই, মনে হচ্ছে 'সুসি' নামটা আপনার অন্য কোনো গল্পেও ব্যবহার করেছেন।
'দ্বিঘাত সমীকরণ' নামটাতেই রয়েছে এক অসাধারণ 'স্বকীয়তা'। মুগ্ধতা নামকরণ থেকেই। কিন্তু, দ্বিঘাতের ঘাতগুলো কী কী, তা অবশ্য ধরতে পারি নি
শেষের চমকটা একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল। এখানেও মুগ্ধ হয়েছি।
কিছু কিছু ডিটেইলস এমন ভাবে উঠে এসেছে যে, একবার মনে হলো আপনার কোনো ভ্রমণকাহিনি পড়ছি কিনা। শিরোনাম দেখে নিশ্চিত হলাম - এটা অয়ন সাহেবের গল্প
অনেকদিন পর ব্লগে একটু সময় দিলাম। প্রাপ্তি হলো, এ গল্পটাও পড়া হলো, যাতে একটা তৃপ্তি ও সন্তুষ্টিও জুটলো।
ভালো ছিল গল্পটা।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০০
আখেনাটেন বলেছেন: 'সুসি' নামটা আমার প্রিয়......অন্য কোথাও ব্যবহার করেও থাকতে পারি.....এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না সোনাবীজ ভাই।
কিন্তু, দ্বিঘাতের ঘাতগুলো কী কী, তা অবশ্য ধরতে পারি নি -- আমিও পারি নি.. .দেখি অন্য পাঠকেরা পারে কিনা..তবে শ্রদ্ধেয় প্রিয় ব্লগার ড. এম এ আলী কোনো এক পর্বে মনে হয় এই 'ঘাত' নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্যে লিখেছিলেন..।
শেষের চমকটা একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল। এখানেও মুগ্ধ হয়েছি। -- ট্রাইডেন্ট হোটেলের কথা মনে হলে আমিও মুগ্ধ হই।
কিছু কিছু ডিটেইলস এমন ভাবে উঠে এসেছে যে, একবার মনে হলো আপনার কোনো ভ্রমণকাহিনি পড়ছি কিনা। শিরোনাম দেখে নিশ্চিত হলাম - এটা অয়ন সাহেবের গল্প -- হা হা হা....
ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলুম। শুভকামনা জানবেন। ভালো থাকুন।
৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৭
শায়মা বলেছেন: আহারে সুসি।
তারজন্যই বেশি কষ্ট হচ্ছে।
তবে তোমার জন্যও একটু হচ্ছে ভাইয়া।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৪
আখেনাটেন বলেছেন: আহারে সুসি।
তারজন্যই বেশি কষ্ট হচ্ছে। তবে তোমার জন্যও একটু হচ্ছে ভাইয়া। --- ক্যানে ক্যানে কষ্ট ক্যানে.....বেচারা-বেচারীরা তো শেষে গোল্ড মেডেল জিতে নিল.....।
এরপরও কষ্ট ক্যান......অত:পর তাহারা.......
শুভেচ্ছা নিবেন...
৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৫
শায়মা বলেছেন: অতঃপরের আগের জন্য কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০৮
আখেনাটেন বলেছেন:
৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভীষণ মন খারাপ করে দেয়া সমাপ্তিতে এত্তগুলান মাইনাস...
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:১২
আখেনাটেন বলেছেন:
আপনার মন্তব্যে তো মনে হচ্ছে সামনে লেখককে পেলে অনিকেতের মতোই এসে দু একটা কিক-টিক দিয়ে ফেলতেন...সুসির এই অবস্থার জন্য......
পালাই....বোকা মানুষ কী করতে কী করে ফেলে....শেষে আরেক কেলেংকারীতে দেশ না আবার ছাড়তে হয়....
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ভাইজান.....সবগুলো পর্ব পড়ে পদচিহ্ণ রেখে যাওয়ার জন্য.....ভালো থাকবেন।
৮| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: এটা শুধু ভালোবাসার গল্প নয়। ভ্রমন কাহিনীও বলা যেতে পারে।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:২২
আখেনাটেন বলেছেন: আপনাকে মাইনাস....মাইনাস....মাইনাস.....
মন্তব্যের জন্য নয়, লেখা না পড়ে মন্তব্যের জন্য.....আবার ভান করছেন...
রাজীব ভাই আপনাকে আগেও বলেছি, আমি কিন্তু আপনার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত 'ব্লগীয় আচরণ' পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়তে পারি। তাই আমার সাথে এইসব ভান-টান ন চইলত.....
আবার দয়া করে বলবেন না যেন...'আমি পড়েছি তো'.....তাহলে তো আবার বিপদ ডেকে আনবেন.... ...বাঘকে (আরইউ) ডাক দিবো...
যাহোক, পরী ও ফাইহা ভালো আছে তো...পিচ্চিগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে নিশ্চয়.....
৯| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সত্যিকার অর্থেই কয়েকদিন ধরে মনটা আদ্র, ইমোশোনালি ডিস্টার্বড ছিলাম। আজ সকালে হালকা চালে গল্পটা পড়তে শুরু করে শেষ পর্বের শেষে এসে কেন যেন চোখে জল চলে এলো। সুসি'র জন্য না, অয়নের জন্য বিশেষ করে। প্রতিটি পাঠক সুসি'র ইমোশনের সাথে হয়তো খুব সহজে কানেক্ট করে ফেলবে; কিন্তু আমি অয়নের পুরো ঘটনাটায় নিজেকে মিশিয়ে চিন্তা করে কষ্ট পেয়েছি। লেখক সাহেব, পাঠক কিন্তু অয়নকে নেগেটিভলি জাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু অয়নের অন্তর্নিহিত বেদনার সময়গুলো ফিল করতে পারছে না, কারণ শেষে এসে সুসি'র বেদনাবিধুর অধ্যায়টা বেশী ফুটে উঠেছে।
যাই হোক, ব্লগে অনেক কম গল্পই আমাকে ছুঁয়ে যায়, আজ পর্যন্ত এমন ইমোশনাল হই নাই কোন গল্প পড়ে। হয়তো এমন কোন ইমোশনাল হওয়ার মত গল্পও না এটা। আমার আদ্র মনে হুট করেই আঘাত করে গেছে কোন কারনে, আমি নিজেও অবাক হয়েছি।
আরেকটি পদচিহ্ন হিসেবে প্রিয় তালিকায় গল্পটি তুলে রাখলাম।
ভালো থাকুন সবসময়। অনেক অনেক শুভকামনা।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:১৯
আখেনাটেন বলেছেন: আজ সকালে হালকা চালে গল্পটা পড়তে শুরু করে শেষ পর্বের শেষে এসে কেন যেন চোখে জল চলে এলো। --- বোকা মানুষতো আমাকেও ইমোশনাল করে ছাড়ল।
পাঠক কিন্তু অয়নকে নেগেটিভলি জাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু অয়নের অন্তর্নিহিত বেদনার সময়গুলো ফিল করতে পারছে না ---একদম...কোরে হিট করেছেন। একটি ছেলে যে কিনা প্রেম-ভালোবাসা এগুলোর সাথে তেমনভাবে জড়িতই ছিল না কিংবা ভাবনার কোনো অবকাশই ছিল না, তার কাছে আসা এক ফোন কলই জীবনের বাঁক বদলিয়ে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছে...তার আবেগকে হয়ত আপাত দৃষ্টিতে বোঝা যাচ্ছে না....কিন্তু অন্তর্নিহিত বেদনার যে চোরা লাভার স্রোত বছরের পর বছর ধরে বয়ে চলেছে সেটা অনুধাবন করা সহজ না হলেও একটু ডিপলি চিন্তা করলেই ধরা পড়ে। আর তখনই গল্পের ভিতরের বেদনাটা আরো গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়....
আরেকটি পদচিহ্ন হিসেবে প্রিয় তালিকায় গল্পটি তুলে রাখলাম। -- শুকরিয়া...
শুভকামনা জানবেন আবারও।
১০| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: আখেনাটেন,
দ্বিঘাত সমীকরণই হয়েছে। বেদনার চোরা লাভার স্রোত এখন তরল সোনা হয়ে সুখে দাউ দাউ........
বউ বাচ্চা দুটো্ই একসাথে।
পুরাতন প্রেমিকাকে বুকে ফিরে পাওয়া আর একটা বাচ্চা ফাও! একটি নিলে আরেকটি ফ্রি ?
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০২
আখেনাটেন বলেছেন: পুরাতন প্রেমিকাকে বুকে ফিরে পাওয়া আর একটা বাচ্চা ফাও! --- হা হা...ফাও কই...এত আগেই বীজ বপন করে এসেছে নিজের অজান্তেই...
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন।
১১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ওরেব্যাস কী মধুর পরিসমাপ্তি !
ভালোলাগা ভালোলাগা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০৩
আখেনাটেন বলেছেন:
ধন্যবাদ মনিরাপা......ভালো থাকুন।
১২| ২৪ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:৪৮
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: গল্প পড়তে বেশ লাগলো।
০৬ ই জুন, ২০২২ সকাল ১১:৫০
আখেনাটেন বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলুম....।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩১
জুন বলেছেন: এত বড় গল্প তারপরও একটানে পড়লাম আখেনাটেন। আপনার জীবন থেকে নেয়া কি? মনে হলো গল্পের সাথে আপনি আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন আর পাঠককে অর্থাৎ আমাকেও পড়া শেষ না করা পর্যন্ত রেহাই দিচ্ছেন না।
অনেক অনেক ভালো লাগা রইলো।
+