নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১০

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৫)

ধর্মের নামে প্রতারণা:

পৃথিবীতে বাংলাদেশ সহ ১০টি দেশ আছে যাদের সংবিধানে কোন একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বা রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে। দেশগুলি হচ্ছে:

১. সৌদি আরব:
সৌদি আরবের বেসিক ল অফ গভর্নেন্স (সংবিধান) স্পষ্টভাবে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ধারা ১ এ বলা হয়েছে, "সৌদি আরব একটি সার্বভৌম আরব ইসলামী রাষ্ট্র। এর ধর্ম ইসলাম।"

ধারা ২৩ এ বলা হয়েছে, "রাষ্ট্র ইসলামিক রীতিকে সমুন্নত রেখে শরীয়া আইন প্রয়োগ করবে, ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর দিকে ডাকার দায়িত্ব পালন করবে।"

২. ইরান:
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান স্পষ্টভাবে শিয়া ইসলামকে (Twelver Ja'fari School) রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছে।

১২ ধারায় বলা হয়েছে, "ইরানের সরকারী ধর্ম হল ইসলাম ও দ্বাদশ জাফরি ​​স্কুল এবং এই নীতি চিরকাল অপরিবর্তনীয় থাকবে।"

৩. গ্রীস:
গ্রিসের সংবিধান প্রচলিত ধর্ম হিসাবে অর্থোডক্স চার্চকে প্রতিষ্ঠা করেছে।

৩ ধারায় বলা হয়েছে, "গ্রীসে প্রচলিত ধর্ম হল ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ অফ ক্রাইস্ট।"

৪. মালদ্বীপ:
মালদ্বীপের সংবিধান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছে এবং সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলক ভাবে মুসলিম হতে হবে।

২ ধারায় বলা হয়েছে, "মালদ্বীপ ইসলামের নীতির উপর ভিত্তি করে একটি সার্বভৌম, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।"

৯ ধারায় বলা হয়েছে, "কোন অমুসলিম মালদ্বীপের নাগরিক হতে পারে না।"

৫. নরওয়ে
নরওয়ের সংবিধান রাষ্ট্রের সরকারী ধর্ম হিসাবে নরওয়ের চার্চ অর্থাৎ ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথেরান চার্চকে স্বীকার করে।

১৬ ধারায় বলা হয়েছে, "নরওয়ের চার্চ, ইভাঞ্জেলিক্যাল-লুথেরান চার্চ, নরওয়ের প্রতিষ্ঠিত চার্চ হিসেবে থাকবে এবং রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত হবে।"

৬. ডেনমার্ক:
ডেনমার্কের সংবিধান ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথেরান চার্চকে রাষ্ট্রীয় চার্চ হিসাবে ঘোষণা করে।

৪ ধারায় বলা হয়েছে, "ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথেরান চার্চ হবে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠিত চার্চ, এবং এটি রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত হবে।"

৭. আইসল্যান্ড:
আইসল্যান্ডের সংবিধানও ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথারান চার্চকে রাষ্ট্রীয় চার্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

৬২ ধারায় বলা হয়েছে, "ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথেরান চার্চ একটি জাতীয় গির্জা এবং সেই হিসেবে রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত ও সমর্থিত।"

৮. ভুটান:
ভুটানের সংবিধান বৌদ্ধধর্মকে দেশের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

৩ ধারায় বলা হয়েছে, "বৌদ্ধ ধর্ম হল ভুটানের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য, যা শান্তি, অহিংসা, সহানুভূতি এবং সহনশীলতার নীতি ও মূল্যবোধকে প্রচার করে।"

৯। থাইল্যান্ড:
থাইল্যান্ডের সংবিধান বৌদ্ধধর্মকে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং বৌদ্ধ ধর্মকে রক্ষা ও প্রচার করার রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে সরাসরি বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয় নাই।

৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, "রাষ্ট্র বৌদ্ধ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা ও রক্ষা করবে, যেটি বেশিরভাগ থাইদের দ্বারা পালন করা ধর্ম।"

১০. বাংলাদেশ:
সংবিধানের ২ক ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।

বাংলাদেশ ব্যতীত বাকি নয়টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাদের ধর্ম সম্পর্কে বিধানগুলি অকপট এবং দ্ব্যর্থহীন। অর্থাৎ কথার পেঁচে কোন অস্পষ্টতা রাখা হয় নাই বা কোনরূপ চালাকি করা হয় নাই। অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে কোন মিথ্যা আশ্বাস বা সান্ত্বনা দেয়া হয় নাই।

কিন্তু রাষ্ট্র ধর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানের বিধানটি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে মুসলিম সহ সব ধর্মের মানুষের সাথে একধরণের চালাকি এবং প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম যেহেতু ইসলাম তাই সাংবিধানিক ভাবেই ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্ম থেকে অধিক মর্যাদা লাভ করেছে। কিন্তু অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে, "তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।" সাংবিধানিক ভাবে একটি ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা এবং ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার এক কথা নয়। অর্থাৎ এই বিধানের দ্বারা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে প্রতারণা এবং বৈষম্য করা হয়েছে।

আবার রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এই বিধান মুসলিমদের সাথেও এক ধরণের চালাকি ও প্রতারণা এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

সংবিধানের প্রস্তাবনার দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, "আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে;"

সংবিধানের ১২ ধারায় বলা হয়েছে,
" ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন,
বিলোপ করা হইবে।"

রাষ্ট্র ধর্ম আর ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি সম্পূর্ণ বিপরীত দুইটি নীতি। যে সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি থাকবে সেই সংবিধানে একই সাথে রাষ্ট্র ধর্ম বলে কিছু থাকতে পারে না। উপরে উল্লেখিত যেসব দেশে রাষ্ট্র ধর্মের বিধান আছে সেই সব দেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার কোন বিধান নাই।

একদিকে ইসলাম ধর্মকে সাংবিধানিক ভাবে রাজনৈতিক এবং আইনগত মর্যাদা দেয়া হয়েছে আরেক দিকে একই সংবিধানে বলা হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান করা হবে না।

যার সঙ্গে যে রকম প্রযোজ্য সেই রকম প্রতারণা, ছলচাতুরী, চালাকি, ফাঁকিবাজি ইত্যাদি যতরকম পন্থা আছে ব্যবহার করে ফাঁকিঝুকির এই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-৯

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৩

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: জামায়েত ইসলাম ক্ষমতায় আসলে সকল অসংগতি দূর করা হবে।

০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:০৫

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


এটা তো ভাল কথা।

কিন্তু আজ পর্যন্ত জামায়াতই ইসলামী সহ কোন একটি দলের কাছ থেকে সংবিধানের ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে কোন কথা শুনি নাই।

আগে সংবিধানের ত্রুটিবিচ্যুতি চিহ্নিত করুন।
তারপর সমাধানের কি পথ তা বলুন।
সমাধান তো দূরের কথা ত্রুটিবিচ্যুতিই চিহ্নিত করতে পারবে না।

এই লেখায় ত্রুটিবিচ্যুতি চিহ্নিত করার পর সমাধানের পথও বলে দেয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.