নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনরাষ্ট্র ভাবনা-৮

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪২

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৩)

সংবিধানের প্রস্তাবনায় (Preamble) মুক্তিযুদ্ধ অনুপস্থিত:

সংবিধানের প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধের কথা থাকতে হবে এমন কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই। আমেরিকা সহ উল্লেখযোগ্য কোন দেশের সংবিধানেই সেই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বা আন্দোলন সংগ্রামের কথা প্রস্তাবনায় লেখা নাই। তবে ইন্দোনেশিয়ার সংবিধানের প্রস্তাবনায় উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উল্লেখ আছে।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় খুব সংক্ষেপে রাষ্ট্র গঠনের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যগুলি উল্লেখ করা হয়। প্রস্তাবনাটা মূলত সংবিধানের সারাংশ। প্রস্তাবনায় উল্লেখিত লক্ষ্যগুলিকে সামনে রেখে বিস্তারিত বিধান প্রণয়ন করা হয়। যেমন: আমেরিকা, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি।

আবার অনেক দেশের সংবিধানে কোন প্রস্তাবনাই নাই। যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত কয়েকটি প্রস্তাব:

আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি;

আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে;

প্রস্তাবনায় স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখ উল্লেখ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের কথা উল্লেখ নাই।

ঐতিহাসিক সংগ্রাম মানে কি? ঐতিহাসিক সংগ্রাম বলার মাধ্যমে কি মুক্তিযুদ্ধকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে? এর কোন ব্যাখ্যা সংবিধানে উল্লেখ নাই। আভিধানিক অর্থে সংগ্রাম বলতে যুদ্ধকেও বুঝায় আবার কোন কিছুর জন্য চেষ্টা করাকেও বুঝায়। কিন্তু প্রচলিত অর্থে সংগ্রাম বলতে রাজনৈতিক আন্দোলনকে বুঝায় আর মুক্তিযুদ্ধ বলতে আমরা বুঝি স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ। যেমন এখন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। এই যুদ্ধকে কেউ বলবে না যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংগ্রাম হয়েছিল, বরং যুদ্ধই বলবে।

কোন বিশেষ কারণে "ঐতিহাসিক সংগ্রাম" শব্দমালা ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধকে আড়াল বা গৌণ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। দ্বিতীয় বাক্যেও "ঐতিহাসিক সংগ্রাম" শব্দমালা পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে সুচিন্তিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে আড়াল বা গৌণ করার একটি প্রচেষ্টা ছিল।

প্রস্তাবনার দ্বিতীয় বাক্যে বীর জনগণের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণোৎসর্গের কথা উল্লেখ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উল্লেখ করা হয় নাই।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, স্বাধীনতা ঘোষণা, বিজয় ইত্যাদি কি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা জরুরি, না প্রয়োজনীয়? এই সব কথা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স অনুসারে প্রয়োজনীয় কোন বিষয় না। কিন্তু বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে এই প্রসঙ্গগুলি যদি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় তাহলে তা যথাযথ ভাবে করতে হবে। আংশিক বা বিকৃত ভাবে বা কোন কিছু আড়াল করা জন্য ভাষার মারপেঁচে উল্লেখ করে বরং সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করা হয়েছে।

বিষয়গুলি অনেকের কাছে খুব ছোট বা তুচ্ছ মনে হলেও এই সব অসঙ্গতিগুলির কারণে সংবিধানের ভিতরে অনেক বড় বড় অসঙ্গতির সৃষ্ট হয়েছে। আর এই সব অসঙ্গতির কারণে সংবিধান প্রণয়নের অর্ধ শতাব্দী অতিবাহিত হলেও রাষ্ট্রের কোন একটি প্রতিষ্ঠানও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না অথবা প্রতিষ্ঠানগুলি অকার্যকর হয়ে আছে। সরকারের পর সরকার বদল হলেও এই সংবিধান দিয়ে কার্যকর কোন রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
জনরাষ্ট্র ভাবনা-১
জনরাষ্ট্র ভাবনা-২
জনরাষ্ট্র ভাবনা-৩
জনরাষ্ট্র ভাবনা-৪
জনরাষ্ট্র ভাবনা-৫
জনরাষ্ট্র ভাবনা-৬
জনরাষ্ট্র ভাবনা-৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.