নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র, না দুর্বৃত্তের রাষ্ট্র

২৭ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:৩৮


রাষ্ট্রের নাগরিকরা বলছে কালো টাকার উপর ১৫% কর এবং বৈধভাবে উপার্জিত আয়ের উপর ৩০% কর ধার্য করা হয়েছে—এটা অন্যায়, জুলুম এবং অবিচার।

তাহলে কি কালো টাকার উপর ৩০% এবং সাদা টাকার উপর ১৫% কর হলে ন্যায্য হতো? কালো টাকার উপর যত কর ধার্য করুক না কেন তা কোন অবস্থাতেই ন্যায্য এবং বৈধ হবে না।

প্রকৃতির বিধান এবং লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের সর্বসম্মত নীতি হলো, কোনো অবৈধ, বেআইনি বা অনৈতিক কাজকে বৈধ কাজ হিসাবে গণ্য করা বা স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। অন্যায়কারীকে তার অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হবে; ক্ষেত্র বিশেষে অপরাধীকে ক্ষমা করা যেতে পারে। কিন্তু অপরাধমূলক কাজকে বৈধতা দেওয়া যাবে না।

অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যে নাগরিকদের কালো টাকার মালিকদের উপর কোনো রাগ নেই। অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করার ব্যাপারেও তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তাদের অভিযোগ হচ্ছে বা বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সাদা টাকার মালিকরা কালো টাকার মালিকের চেয়ে বেশি কর দেবে কেন?

যারা অবৈধভাবে কালো টাকা উপার্জন করে, যারা কালো টাকাকে বৈধ করার উপায় বের করে দেয়, যে আইন প্রণেতাগণ এই ধরনের আইন পাশ করে, যে অর্থনীতিবিদগন এই নীতিকৌশল সমর্থন করে এবং যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই নীতি সমর্থন করে তারা অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় জন্মগত অপরাধী।

জন্মগত অপরাধী আইন প্রণেতা:
অবৈধ কাজকে বৈধতা দেওয়ার কাজটি করেছে আইন প্রণেতাগণ। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স অনুসারে কোনো বিদ্যমান অপরাধকে আইন প্রণয়ন করে বৈধতা দেওয়া যায় না। তাছাড়া অপরাধ সংক্রান্ত আইনকে রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট দেওয়া যায় না। অর্থাৎ আজকে যে কাজটা বিদ্যমান আইনে অপরাধ, সেটাকে আগামীকাল বৈধ বলে গতকালের কাজকে বৈধ বলা যাবে না। এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তারা সবাই লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স এবং ক্রিমিনোলজির সংজ্ঞা অনুসারে জন্মগত অপরাধী।

জন্মগত অপরাধী অর্থনীতিবিদ:
একদল জন্মগত অপরাধী অর্থনীতিবিদ ব্যাপক গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন যে যদি কালো টাকাকে করের আওতায় এনে সাদা করা যায় তাহলে এই কালো টাকা দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখবে। অর্থনীতির দৃষ্টিতে এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুল এবং অবান্তর। আমি অর্থনীতিবিদ নই তাই অর্থনীতির আলোকে আলোচনা না করে এই দুর্বৃত্তদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

কোন অর্থনীতিবিদ কোনো অনৈতিক বা বেআইনি কাজকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন না। যে চোরাকারবারি করে সেও তো কারবারি মানে ব্যবসায়ী, কিন্তু তার পরিচয় চোরাকারবারি। যে ওজনে কম দেয় সেও তো দোকানদার, কিন্তু তার পরিচয় অসাধু ব্যবসায়ী। এইসব অসাধু মাধ্যমেও অর্থনীতির কিছু অবদান রাখতে পারে, কিন্তু এজন্য কোনো অর্থনীতিবিদ এই নীতিকে সমর্থন করবেন না।

জন্মগত অপরাধী নাগরিক:
নাগরিকদের ক্ষোভ ১৫% আর ৩০% নিয়ে। কালো টাকা এবং কালো টাকার মালিকদের নিয়ে তাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমি মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এমন কোনো লেখা পাইনি যেখানে বলা হয়েছে ১৫% না ১০০% কর দিলেও কালো টাকাকে কালো টাকা হিসাবেই গণ্য করতে হবে। কালো টাকা কোনো অবস্থাতেই সাদা বা বৈধ হবে না। প্রতিটি কালো টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে এনে কালো টাকার মালিককে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে।

সারসংক্ষেপ:
কালো টাকা, কালো টাকার মালিক, যারা কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে, যেসব অর্থনীতিবিদ এই অবৈধ ব্যবস্থাকে তাত্ত্বিকভাবে সমর্থন করেছেন এবং যারা যেকোনো যুক্তিতে অবৈধ কালো টাকাকে সমর্থন করছে, তাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা করুন। এই সম্পদের মালিক রাষ্ট্রের জনগণ। পৃথিবীতে এমন কোনো আইনি প্রক্রিয়া বা নীতিমালা নেই যাতে কালো টাকা সাদা হতে পারে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ১:৪১

ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: ভাই, কালো চামড়াকে অনেকেই অপছন্দ করলেও কালো টাকাকে বা তার মালিককে মন থেকে ঘৃনা করে, এমন লোক আমাদের সমাজে সত্যি বলতে হাতে গোনা যাবে। কেউ কেউ কালো টাকাকে ঘৃনা করলেও তার মালিককে ঘৃনা করেনা। কারন, কালো টাকা গ্লো এন্ড লাভলী মেখে রাতারাতি সাদা হয়ে যায়। আর কোন সরকারই কখনোই এই সুবিধা বন্ধ করবেনা। তাহলে সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী রাজনীতিবিদ আর সরকারী কর্মকর্তার কালো টাকা সাদা হবে কি করে?
ভিক্ষুকের থালার ৫ টাকার কয়েনের প্রতিও এদের লালসার শেষ নেই। রিক্সাওয়ালার ঘামে ভেজা দশ টাকা কিংবা আপনার আমার ছেড়া পুরাতন মানিব্যগের প্রতিও এদের সেই একই লালসা।

২৯ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:৫৪

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


কালো টাকা বা তার মালিককে মন থেকে ঘৃণা করে, এমন লোক আমাদের সমাজে কম এই কথা সত্য।

ভাল মানুষ, ভাল জিনিস সংখ্যায় কম বলেই ভালর মূল্য বেশি।


কেউ কেউ কালো টাকাকে ঘৃণা করলেও তার মালিককে ঘৃণা করেনা।

এই কথার সাথে সামান্য ভিন্নমত আছে।
যারা কালো টাকার মালিককে ঘৃণা করে না তারা আসলে কালো টাকাকেও ঘৃণা করে না।
তাদের অবস্থা "পাই না, তাই খাই না।"


আর কোন সরকারই কখনোই এই সুবিধা বন্ধ করবেনা।

এই কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।
এই দেশ, এবং এই দেশের সরকার কাঠামোটাই এমন ভাবে গঠন করা হয়েছে যাতে সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী রাজনীতিবিদ আর সরকারী কর্মকর্তা অবাধে কালো টাকা উপার্জন করতে পারে।
তাই এক দিকে কালো টাকা উপার্জনের সব পথ এদের জন্য খোলা রাখা হবে এবং উপার্জিত কালো টাকা লন্ড্রিতে দিয়ে সাদা করার প্রক্রিয়াও চালু রাখা হবে।


আর যারা এই নোংরা কালো টাকা উপার্জন করে তাদের কাছে ভিক্ষুকের থালার ৫ টাকার কয়েন,রিকশাওয়ালার ঘামে ভেজা দশ টাকা কিংবা ছেড়া পুরাতন মানিব্যাগ সবকিছু লালসার বস্তু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.