নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগ এবং ইসরাইলের ভবিষ্যৎ:

২৩ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:১১

৯ জুন, ২০২৪ সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বিরোধী দলের নেতা বেনি গ্যান্টজ তিন সদস্য বিশিষ্ট যুদ্ধ মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। যুদ্ধ মন্ত্রীসভার তিন জন সদস্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং সদ্য পদত্যাগকারী বেনি গ্যান্টজ। বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগ আকস্মিক বা আশ্চর্যজনক বিষয় নয়। কারণ গ্যান্টজ এবং গ্যালান্ট উভয়ই সম্প্রতি পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছিলেন। যুদ্ধের পরে গাজার অবস্থা কি হবে এই ব্যাপারে নেতানিয়াহু একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন না করলে তারা পদত্যাগ করবেন বলে আগেই জানিয়ে দিয়ে ছিলেন। যদিও পদত্যাগের ঘটনাটি আকস্মিক নয় তবুও একটা বড় ঘটনা হিসাবে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে এবং অস্থিরতা দেখা দিবে। এই ঘটনার পিছনের কারণ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এতে নেতানিয়াহুর কি ক্ষতি হতে পারে বা আদও কোন ক্ষতি হবে কি না সেটাও দেখার বিষয়।

পদত্যাগের ঘটনাটি আলোচনা করার আগে কিছু পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। ৭ই অক্টোবরের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটি জোট সরকার পরিচালনা করছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী নাফতালি বেনেট এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বে বেশ কিছু অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থনের উপর নির্ভর করে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন। এই জোটের শরিক দলগুলি এতই চরম ডানপন্থী যে নেতানিয়াহু আগে এই দলগুলির সাথে জোট গঠন করা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু২০২২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের পর তার আগের জোটের মিত্র দলগুলি তার সাথে জোট করতে অস্বীকার করায় তিনি এই চরম ডানপন্থীদের নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। এতে নেতানিয়াহুর সরকারের জনপ্রিয়তা মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায়। বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে ২০২৩ সালে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে উঠে।

হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহুর সরকার তার অজনপ্রিয় এবং বিতর্কিত নীতির কারণে তীব্র রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়। পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে এবং ডানপন্থী প্রভাব মোকাবেলায় বিরোধী নেতৃবৃন্দ জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু সম্মত হন কারণ অন্য কোন কার্যকর বিকল্প ছিল তার সামনে ছিল না। ফলস্বরূপ ২০২৩ সালের ১১ই অক্টোবর নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং লিকুদ পার্টির এমপি ইয়োভ গ্যালান্ট এবং ইস্রায়েলের বিরোধী দলের নেতা এবং ইসরাইল সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এবং জাতীয় ঐক্য পার্টির নেতা বেনি গ্যান্টজের সমন্বয়ে তিন সদস্যের যুদ্ধ মন্ত্রীসভা গঠন করেন।

গত কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ মন্ত্রীসভায় ধীরে ধীরে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। এই মতবিরোধের প্রাথমিক কারণ হচ্ছে নেতানিয়াহু যুদ্ধ পরবর্তী তার গাজা পরিকল্পনা স্পষ্ট করতে নারাজ। গত মাসে এই বিষয়টা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। কারণ এই সময় গ্যালান্ট এবং গ্যান্টজ প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুকে গাজার ব্যাপারে যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা প্রকাশ করার দাবি করেন। তারপরে ১৯শে মে গ্যান্টজ আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন যে তিনি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করবেন, যদি না,নেতানিয়াহু 8ই জুনের মধ্যে যুদ্ধ-পরবর্তী তার ছয় দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই আল্টিমেটামের পর গ্যান্টজ এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে উত্তপ্ত মতবিরোধ জনসমক্ষে চলে আসে।

তবে আইসিসি নেতানিয়াহুর জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাবে। কারণ আইসিসির গ্রেফতারী পরোয়ানার বিরুদ্ধে উভয়েই একমত। তাছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রস্তাবিত শান্তি ফর্মুলা নেতানিয়াহু মেনে নিলে গ্যান্টজ তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বাইডেনের প্রস্তাবিত শান্তি ফর্মুলাটি তিনটি পর্যায় নিয়ে গঠিত। প্রথম পর্যায়ের লক্ষ্য হল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা এবং কিছু জিম্মি ফিলিস্তিনি বন্দীদের সাথে বিনিময় করা এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল অবশিষ্ট সমস্ত জিম্মিদের মুক্তি প্রদান, তৃতীয় ধাপে শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা। টাইমস অফ ইসরায়েলের মতে নেতানিয়াহু বাইডেনের প্রস্তাবিত শান্তি ফর্মুলা গ্রহণ করলে গ্যান্টজ তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে রাজি আছেন।

আবার অন্য দিকে নেতানিয়াহুর সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছিলেন যে তিনি যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন তবে তারা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিবে। নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ছিল যতদিন লাগে লাগুক তিনি পুরাপুরি হামাসকে নির্মূল করবেন। হামাসকে নির্মূল করার আগে তিনি যুদ্ধ বিরতি মেনে নিবেন না। কিন্তু ইসরাইলের অধিকাংশ দল এবং বাইডেন প্রশাসন এই ব্যাপারে নেতানিয়াহুর সাথে একমত না। তারা মনে করেন যে নেতানিয়াহু তার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। আবার অপর দিকে হামাসও অনানুষ্ঠানিক ভাবে বাইডেনের প্রস্তাবিত শান্তি ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই দিক দিয়ে হামাস এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে বেশ মিল আছে। হামাস মনে যে বাইডেনের প্রস্তাবিত শান্তি ফর্মুলা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির গ্যারান্টি দেয় না এবং নেতানিয়াহুও অনুরূপ মনোভাব পোষণ করে।

এইরকম পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু আরো বেশি করে ডানপন্থীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশি-বিদেশী বাম ও মধ্যপন্থীদের চাপের কারণে ইসরাইলের ভিতরে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা বিরোধীদের তুলনায় ধীরে ধীরে বাড়ছে। নেতানিয়াহু মনে করছেন এখন নির্বাচন দিলে তিনি আগের চেয়ে ভাল ফলাফল করবেন। এই বিবেচনায় তিনি খুব শীঘ্রই নির্বাচন দিতে পারেন। অর্থাৎ ইসরাইলের আগামী নির্বাচনের মাধ্যমেই গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। গ্যান্টজ আমেরিকার পক্ষে কাজ করছে, নেতানিয়াহু ইসরাইলীদেরকে এমন একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করছেন।

যুদ্ধ-পরবর্তী একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব থাকা সত্ত্বেও হামাসকে ধ্বংস করার বিষয়ে নেতানিয়াহুর লক্ষ্য এখন অনেক ইসরায়েলি কাছে গ্রহণ যোগ্য হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির কারণে হামাসের পর হিজবুল্লাহকে মোকাবেলা করার নেতানিয়াহুর লক্ষ্য আগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপ থেকে দেখা যায় যে ইসরায়েলি ভোটারদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিজবুল্লাহর সাথে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ চায়। সংক্ষেপে বলা যায়, ইসরায়েলের রাজনীতি বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং পরিস্থিতি অনিশ্চিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.