নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংবাদ মাধ্যম:

২০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:৩২

পাঠক নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, আমেরিকা এবং পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম সহ বিশ্বের যেকোনো সংবাদ মাধ্যমে যখন গাজায় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয় তখন সূত্র হিসাবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম উল্লেখ করা হয়। যেমন, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৪,১৮৩ জন নিহত এবং ৭৭,০৮৪ জন আহত হয়েছে। (According to the Gaza Ministry of Health, at least 34,183 people have been killed and 77,084 have been wounded in Israeli attacks.) এমন কি জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হিউমেন রাইটস ওয়াচের মত সংস্থাগুলিও গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এই বিষয়টা লক্ষ্য করলে কিছু প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক, যেমন --
১. গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি একই প্রতিষ্ঠান না ভিন্ন দুইটি প্রতিষ্ঠান?
২. গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহকৃত তথ্য কি সঠিক, না পক্ষপাত মুক্ত?
৩. কেন বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যম গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ কৃত তথ্য ব্যবহার করে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইটি প্রতিষ্ঠান।

২০০৭ সালে হামাস সরকার গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে। এই মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর গাজা উপত্যকার গাজা শহরে অবস্থিত। মেধাত আব্বাস গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিন সরকারের অধীনস্থ নয় বরং হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা সরকারের অধীন একটি মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে ফিলিস্তিন সরকারের অধীনস্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হচ্ছেন মাজেদ আবু রমজান।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন তথ্যের সঠিকত্ব এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর থেকে সম্পূরক প্রশ্ন হিসাবে তৃতীয় প্রশ্ন চলে আসে। তাহলে কেন বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যম গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ কৃত তথ্য ব্যবহার করে? এই ব্যাপারে তাদের মতামত হচ্ছে নিম্নরূপ:

১. স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্যতা:
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিসংখ্যান রেকর্ড করার জন্য প্রাথমিক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত। গাজায় হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো পরিচালনাকারী সরকারী সংস্থা হিসেবে এটি হতাহত এবং চিকিৎসা পরিস্থিতির তথ্যের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক এবং বিশ্বাসযোগ্য উৎস। সাংবাদিকরা সরাসরি, বিস্তারিত এবং আপডেট তথ্যের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে।

২. স্বাধীন ভাবে যাচাই করা সম্ভব না :
গাজায় সীমিত প্রবেশাধিকারের কারণে বহিরাগত সংস্থা বা আন্তর্জাতিক মিডিয়া দ্বারা হতাহতের পরিসংখ্যানের স্বাধীন ভাবে যাচাই করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। সময়মত তথ্যগুলি সংগ্রহ, সংকলন এবং প্রকাশ করার জন্য গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যাপ্ত লোকবল আছে ৷ তাই মিডিয়া আউট লেটগুলির কাছে এই পরিসংখ্যানগুলি উদ্ধৃত করা ছাড়া আরো কোন বিকল্প নেই এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য উৎসটি উল্লেখ করা হয়।

৩. সংঘাতময় পরিস্থিতি:
সংঘাতময় পরিস্থিতি কারণে জাতিসংঘ বা রেড ক্রসের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কার্যক্ষম গাজায় সীমিত হয়ে পড়েছে। তাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তুলনায় তাদের পক্ষে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টগুলি থেকে তারা তাৎক্ষণিক তথ্য পায়।

৪. স্ট্যান্ডার্ড রিপোর্টিং অনুসরণ করছে:
সংঘাতের কারণে ঘটনা স্থলে পৌঁছে নিজে সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারলে এটাই হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড সাংবাদিকতার নীতিমালা। তাই সংবাদ মাধ্যমগুলি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহকৃত তথ্যকেই গাজার স্বাস্থ্য তথ্যের সরকারী উৎস হিসাবে বিবেচনা করছে। এটিই সংবাদ সংস্থাগুলির জন্য একটি প্রাথমিক রেফারেন্স।

৫. তথ্যের নির্ভুলতার দায়িত্ব সংবাদ মাধ্যম নিবে না :
সংবাদ মাধ্যমগুলি তাদের প্রকাশিত তথ্যের সূত্র উল্লেখ করে সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিচ্ছে। পাঠকরা সম্ভাব্য পক্ষপাত বা জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তথ্যকে সমালোচনামূলক ভাবে মূল্যায়ন করবে।

৬. রাজনৈতিক ও মানবিক সংবেদনশীলতা:
গাজার ঘটনার মধ্যে মানবিক উদ্বেগ আছে, সেই সাথে একটি সংবেদনশীল এলাকা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে হতাহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে সংঘাতের মানবিক প্রভাবকে বোঝার এবং সেখানে ঘটে যাওয়া মানবিক পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ আকৃষ্ট করে। গাজার সমস্যাগুলির ব্যাপক কভারেজের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ দিকে তারা বলেন এই কারণগুলি সত্ত্বেও, গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলি যে তথ্য দিচ্ছে সেটা অনেকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। হামাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রদত্ত তথ্যের যথার্থতা এবং সম্ভাব্য পক্ষপাত নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

অনেক ঘোরানোপেচাঁনো টেকনিক্যাল উত্তর দেয়ার পর সরাসরি তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে কি আপনাদের মনে কোনো প্রশ্ন আছে?

সরাসরি প্রশ্ন করাতে তারা সরাসরি বলেন যে, হ্যাঁ, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে।

কারণ হিসাবে তারা বলেন:

১. রাজনৈতিক প্রভাব: আন্তর্জাতিক সহানুভূতি এবং সমর্থন অর্জনের জন্য হতাহতের পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বা হেরফের হতে পারে।

২. তথ্য যাচাইকরণ চ্যালেঞ্জ: পরিস্থিতির কারণে তথ্য যাচাই করা অনেক কঠিন।

৩. ঐতিহাসিক নজির: অতীতে তারা ভুল, বিতর্কিত এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দিয়েছিল।

৪. বিরোধপূর্ণ প্রতিবেদন: পরস্পর বিরোধী তথ্য প্রদান।

৫. স্বচ্ছতা এবং মেথডোলজি: তথ্য সংগ্রহ, এবং যাচাই করার প্রক্রিয়াতে ত্রুটি আছে।

ঘোরানোপেচাঁনো উত্তর থেকে যখন সরাসরি কোন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না তখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হল, যেখানে আপনারা স্বীকার করছেন যে তথ্যের মধ্যে সম্ভাব্য পক্ষপাত এবং তথ্যের যথার্থতা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ এবং প্রশ্ন রয়েছে সেই ক্ষেত্রে জনসাধারণের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করা কি আইন এবং নৈতিকভাবে সঠিক?

আইন এবং নৈতিকতার প্রশ্নে আবার জটিল উত্তর দিতে শুরু করে।

আইন গত দিক বা বৈধতা:

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা:
আইনি সুরক্ষা: সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। সাংবাদিক এবং সংবাদ আউট লেটদের পক্ষপাত থাকতে পারে এমন তথ্য সহ বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য প্রকাশ করার আইনি অধিকার রয়েছে৷

আইনি বাধ্যবাধকতা: নিউজ আউট লেটগুলিকে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ না তারা তথ্যের উৎসকে দায়ী করে এবং জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ না করে, তারা সাধারণত আইনি সীমানার মধ্যে কাজ করে।

নৈতিকতা:

জনসাধারণের জানার অধিকার:
স্বচ্ছতা: জনসাধারণের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে সংঘাত পূর্ণ অঞ্চলে যেখানে মানবাধিকার এবং মানবিক উদ্বেগ গুরুত্বপূর্ণ। গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য সরবরাহ করাকে জানানোর একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ হিসাবে দেখা যেতে পারে।

সারসংক্ষেপ:
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহ কৃত তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ থাকার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার না করে বরং নির্দ্বিধায় আমেরিকা এবং পাশ্চাত্যের প্রধান এবং প্রভাবশালী নিউজ আউট লেটগুলি সহ বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যম কেন এই তথ্য প্রচার করছে তা আইন এবং নৈতিকতার বিচারে প্রশ্ন বিদ্ধ হওয়া উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.