নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আনন্দে লিখতে থাকি; আনন্দ শেষ, তো লেখাও শেষ! সবাইকে শুভেচ্ছা

এই সব দিন রাত্রি

মনের আনন্দে লিখতে থাকি, আনন্দ শেষ তো লেখাও শেষ! কেও না পড়লেও কোন অসুবিধে নেই! সবাইকে শুভেচ্ছা!

এই সব দিন রাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নির্বাসন : মুক্তির গান

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০২

The Game plan



আমি আমার জীবনে এত লম্বা সময় কখনও চেয়ার টেবিলে বসে অফিস করিনি। আমার গজিয়ে ওঠা শেকরটা চেয়ারের নরম গদির ভেদ করে মাটি খুঁজছিল বোধহয়। ইউ এন এর কড়া নিরাপত্তা দেয়া ডেস্কটপের নেটওয়ার্কের ছিদ্রান্বেষণে কিছুদিন মজা খুজে পেলেও আস্তে আস্তে তা ম্যার ম্যরে হয়ে উঠতে লাগল। আসলে আমি জেট ফুয়েলের গন্ধ, কপাল বেয়ে নেমে আসা চোখ জ্বালা করা ঘাম আর রক্তে উত্তাল জাগানো উত্তেজনার অভাব বোধ করছিলাম খুব বেশি রকম। বেশ কিছুদিন যাবত তাই আমার গজিয়ে উঠা শেকড়টাকে উৎপাটনের চেষ্টা করছিলাম। আমার দৈনন্দিন কাজের বৃত্তান্ত হচ্ছে ইউ এন এর ভেতর যাবতীয় উড্ডয়ন বিষয়ক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিতদের উপরে ছড়ি ঘোরানো। সেই অর্থে বলা যায় আমি এই এলাকার বেশ একজন কেউকেটা। আমার ডেনিশ বসকে সরাসরি বলে ফেললাম এক সকালে, উড্ডয়ন বিষয়ক কর্মকাণ্ড যথাযথ ভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা সচক্ষে দেখার সাধ হয়েছে আমার। আমার বিচক্ষণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুচকি হেঁসে বুঝিয়ে দিলেন, আমার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য তার বুঝতে আর বাকি নেই। রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ যে এতদিন শাকপাতা খেয়ে টিকে ছিল এতেই কিঞ্চিৎ বিস্মিত মনে হল তাকে। তবে ব্যপারটিকে তিনি দাপ্তরিক রূপ দান করে আমাকে একটি After Action Report এর ফান্দে ফেলে বললেন, যাও এইবার, কাম কইরা খাও! তবে আমার শেকরটা এত বেশি অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল যে আমার কাছে এইটুকু কষ্ট কিছুই মনে হল না। আমি মহা আনন্দে পরিকল্পনা করলাম উড্ডয়নের, আমার আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দেখে কারো বুঝতে বাকি রইল না খাচার পাখি আজ মুক্তির আনন্দে আছে।



Who let the dogs Out!!!!!



লাইবেরিয়ায় ইউ এন এর কাছে ইউক্রেনের তিনটি এম আই-২৪ গানশিপ রয়েছে। যুদ্ধবাজদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে এই হেলিকপ্টার গুলো নাম করেছে। রাশিয়ান আর আফগান যুদ্ধের সময় আফগান মুজাহিদদের কাছে আমেরিকা Stinger Missile তুলে দেবার আগ পর্যন্ত ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিল এই মেশিনটি। এই মিশনে তার কাজ অবশ্য উল্টো, ত্রাস সৃষ্টি রোধ করা। লাইবেরিয়া আর আইভরি কোস্টের বর্ডারে নিয়মিত টহল দেয় এই গানশিপ গুলো। আমার ডাবল ইঞ্জিন আফটারবারনারের স্বাদ মেটাতে পারবেনা জানি, তবে মন্দের ভালো। তাছাড়া এর কুখ্যতিও আমাকে টানছিল। এই গানশিপ গুলোতে চড়তে হলে আমাকে যেতে হবে সীমান্তের কাছাকাছি একটি জায়গায়। ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বের হয়ে পড়লাম অভিযানে।



জায়গাটির নাম গ্রীনভিল। একটি সমুদ্র বন্দর। শহর না বলে গ্রাম বলা যায় বড়জোর। মেজর শাহিন স্যার এই জায়গায় একজন ইউ এন মিলিটারি অবসারভার হিসাবে আছেন। আমার মাথা গোঁজার ঠায় হল তার সাথেই। সম্পূর্ণ বিরূপ পরিস্থিতিতে কিভাবে একবছর কাটান আমাদের সামরিক কর্মকর্তারা তা আসলে ভাষায় বর্ণনা করা সহজ নয়। সামরিক বাহিনীর ঘোর নিন্দুকদের যদি দেখানো যেত, হয়ত কিছুটা সহানভুতিশীল হতেন তারা। ঢালাও ভাবে ‘তকমা’ লাগাতেন না। শাহিন স্যার আমাকে আমন্ত্রন জানালেন তাদের একটি পেট্রোল গ্রুপের সাথে বের হতে। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। গাড়ির নাম নিশান পেট্রোল; অফ রোড ড্রাইভিঙের জন্যে বিশেষ ভাবে তৈরি। অবিরত বৃষ্টি রাস্তাগুলোকে চলাচলের অযোগ্য করে তুলেছে। এর মাঝেই এই গাড়ী এত সাচ্ছন্দে চলছিল যে রীতিমত শ্রদ্ধাবোধ করলাম এর নির্মাতার প্রতি। রাস্তার একটি ছবি দেখলেই বুঝতে পারবে সবাই আমি কি বলতে চাইছি।



বেশ কিছু নতুন কায়দা কানুন শিখলাম শাহিন স্যারের কাছ থেকে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে গিয়ার শিফট করে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রন করা। পিচ্ছিল রাস্তায় ব্রেক ব্যবহার না করে গিয়ার দিয়ে গতি কমালে এক্সিডেন্টের ঝুকি কমে যায় নাকি। সন্ধ্যা নামলে ফিরলাম আমরা; নাকে মুখে গুজে লম্বা হলাম আগামিকালের এম আই -২৪ এর অপেক্ষায়।



It’s a DATE!!



এম আই- ২৪ কখনও একা উড়ে না। সবসময় দুটো পাশাপাশি থাকে। আইভরি কোস্টের ‘মান” নামক জায়গা থেকে উড়ে এল দুটো ভয়ংকর সুন্দর হেলিকপ্টার। পাইলট ইউক্রেনিয়ান, দোভাষী ছাড়া কথা বলতে পারে না। আমাকে দেখে একটু সন্দিহান হয়ে উঠলেও তাদের আশ্বস্ত করা হল, তাদের উপর নজরদারি করতে আসিনি আমি।

-You pilot??

-Yah I am!

-Wanna fly this bird??

-I would love to, but should I?

অর্থপূর্ণ একটা হাসি দিলেন রাশিয়ান পাইলট, যার মানে হল, How dare you can even think about it!!!!

আমি বললাম,

-I have my own bird back at home, it’s your baby; I’m just a mare passenger my friend

অট্টহাসিতে শেষ হল সাময়িক উত্তেজনা। গানশিপে চড়ে বসলাম, প্রথম ভাললাগার শুরু সেইখান থেকে।



রাশিয়ান ব্লকের পাইলটদের মাথা কিঞ্চিৎ উল্টাপাল্টা আছে; এতদিন সেটা শুনেছিলাম। এইবার হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। মাটি থেকে মাত্র ৫০ মিটার উচ্চতায় শুরু করলেন তারা মিশন।



আটলান্টিকের বাতাসের ঝাপটা, জেট ফুয়েলের গন্ধ, দ্রুত গতিতে সড়ে যাওয়া মাটি...আমার রক্তে নাচন!! ক্যমেরা খুলে পটাপট ছবি তুলতে লাগলাম। লাইবেরিয়া একটি অতিমাত্রায় সুন্দর দেশ। ছবি দেখে আশাকরি কিছুটা আঁচ করতে পারবে সবাই।



এম আই -২৪ আমার ভেতরে আঁটকে থাকা একঘেয়েমিকে উড়িয়ে নিয়ে গেল; দীর্ঘ দুই ঘণ্টার মিশনটাও ছোট মনে হল। মিশন শেষে পাইলটের আমন্ত্রনে বসলাম ককপিটে। অনেক দিন পর কন্ট্রোল স্টীক হাতের মুঠোয় ধরতেই যেন দেশে ফিরে গেলাম। নির্বাসনের বাকি আর ৪২ দিন!!

মিশন থেকে ফিরে পরিতৃপ্ত ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম বিছানায়। মনে মনে তৈরি আগামিকালের আরেকটি অভিযানের জন্যে। এবার একটু অন্য রকম। এবার সত্যিকারের আফ্রিকায় যাবো, জঙ্গলের ভেতরে, যেখানে কিছু কিছু জায়গায় মানুষের পা পড়ে কালেভদ্রে। সাথেই থাকুন.।.।



চলবে.।.।.।।।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৭

এহসান সাবির বলেছেন: চলুক........!!! আছি সাথে।

++++++++++

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৬

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ এহসান ভাই, সাথে থাকুন :)

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫১

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: লাইবেরিয়ার ছবি গুলো অনেক সুন্দর ! এত যুদ্ধ বিদ্রোহ না থাকলে পর্যটন প্লেস হতে পারতো !
কপ্টার টা জোস ! আমাদেরও একটা দুটো থাকলে ভালো হতো !

ভালো লাগলো , চলুক , সাথে আছি ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৮

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আসলেই তাই আপু! ছবির মত দেশ ! কপ্টারটা সত্যি অনেক জোস !!!! তবে রাশিয়ান পাইলট গুলা আরও জোস!!!

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৫

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: মনে হল আমিও সেইসব জায়গায় চলে গেছি.। ভালো লাগল । ছবিগুলো জোস হয়েছে

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যি ছবির চাইতে অনেক বেশি সুন্দর ছিল জায়গাটা।

৪| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

পাতা ঝরার দিনে বলেছেন: তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো মনে হলো, এই পর্ব আরেক্তু বড় হতে পারত :)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আজকাল লিখতে কষ্ট হয়, ৩৮ দিন বাকি আর। ভালো থাইকো :(

৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: রাস্তার যে ছবিটা দিয়েছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেমন থকথকে কাদা। আর অন্যান্য ছবি মানে সমুদ্রের ওখানে তোলা ছবিগুলো খুব সুন্দর ! প্রতিনিয়তই কি এমন এডভেঞ্চারাস মুডে আর পজিশনে থাকেন ?

ভালো লেগেছে পড়তে। পাইলট ইউক্রেনিয়ানের সাথে কথোপকথন টা উপভোগ করেছি।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু! ইউ এন এ আসার আগ পর্যন্ত চেয়ার টেবিলে বসে এত লম্বা সময় আর পার করিনি, টাই একঘেয়েমি কাটাতে এই এডভেঞ্চার এ যোগদান। শাহিন স্যরেরা (মিলিটারি ওবসারভার) অবশ্য পুরটা সময় এমন ভাবেই কাটান। ভালো থাকবেন অনেক

৬| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বাহ দারুণ!

সাথেই আছি।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: পরের দিন হীরের খনি দেখবার সুযোগ মিলেছিলো, জঙ্গলের মাঝখানে, সেটা নিয়েই লিখছি আরকি। সাথে থাকুন। ভালো থাকুন :)

৭| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: সামরিক জীবন নিয়ে এমন দুর্ধর্ষ পোস্ট ব্লগে শুধু আপনার কাছ থেকেই পাওয়া সম্ভব। অনেক ভালো লাগলো। অজস্র শুভকামনা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১২

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: হাসান ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। সৃষ্টিকর্তা আমাকে তার অনুগ্রহে এমন কিছু অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ দিয়েছেন যে আমি ধন্য! সব লেখার অক্ষরে ধরতে পারি না। পারলে হয়ত আপনাদের আরও কিছু সত্যি গল্প শোনাতে পারতাম। :)

৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৭

ধুম্রজ্বাল বলেছেন: রাশান টিমসাইট বস কে দেখে মনে হয় তাল পাতার সেপাই। কেমন তোমাদের আকরে ধরে আছে।
নিজের ছবি দিসো ?? ক্লিয়ারেন্স নিসো ? জেট ফুয়েলের গন্ধ অধরা হয়ে যাবে মিয়া।

ডায়মন্ড নিয়ে লেখা পড়া'র অপেক্ষায় থাকলাম।
"Like a diamond in the sky" গানটা মনে ধরসে

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৮

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: স্যার, মাফ কইরা দেওন যায় না?? :(

লেখা এখনও ছাপাখানায় আছে, আসিতেছে.।.। :)

৯| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

শান্তির দেবদূত বলেছেন: ওয়াও! আপনার বদৌলতে জম্পেস একটা অভিযান হয়ে গেল লাইবেরিয়াতে, সেই সাথে MI-24 ফ্লাইয়িং এক্সপেরিয়েন্স বোনাস :) :)

লাইবেরিয়া দেখি সেই রকম সুন্দর!

ভাল থাকুন, নির্বাসন শেষ হোক তাড়াতাড়ি, দেশে ফিরে আসুন। শুভকামনা রইল।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩০

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: লাইবেরিয়া খুব সুন্দর দেশ আসলেই। আমিও দিন গুনছি দেশে ফেরার্‌ ১৮ দিন বাকি :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.