নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের আনন্দে লিখতে থাকি, আনন্দ শেষ তো লেখাও শেষ! কেও না পড়লেও কোন অসুবিধে নেই! সবাইকে শুভেচ্ছা!
এক
আমি নিতান্তই সাধারণ একজন। তবে মাঝে মাঝে সাধারনের মাঝেই অসাধারণ লুকিয়ে থাকে। আমার জন্ম আমার নানা বাড়িতে, পাবনায়। ঐযে যে বছর জিয়া কে মারা হল, সেই বছরে। আমার নানু বললেন, প্রেসিডেন্ট তো মারা গেলেন, তুই প্রেসিডেন্ট হবি? আমি নাকি হ্যা সুচক উত্তর দিয়েছিলাম। বাচ্চা মানুষের ভাষায় অবশ্যই। তবে নানুর মনে হল, সত্যি বুঝি! সেই থেকে তিনি আমাকে ডাকলেন “প্রেসিডেন্ট” বলে। কালক্রমে অবশ্য সেই ডাক হারিয়ে যেতে বসেছিল। মা মাঝে মাঝে গল্পের ছলে বলতেন। মজা পেতেন মনে হয় বলে। আমিও মজা পেতাম; ভাবতাম সত্যি যদি এই দেশটার রাজা হয়ে বসি কোনও একদিন! অবশ্য এদেশের রাজা হবার অধিকার উত্তরাধিকার সুত্রে অর্জন করতে হয়। আমার তেমন কোনও রাজ বংশানুক্রম নেই। পড়ালেখা করেছি মাঝারি মানের ছাত্র হিসেবে। ভদ্র সন্তান বলে কখনই রাজনীতির আসে পাশেও যাই নি। ওসব তো বাজে ছেলে পেলেদের কাজ। আমি রাজনীতি ঘৃণা করি; আমি শুধু দেশের রাজা হতে চাই। এক ছত্র অধিপতি; শুধু ভালবাসব সবাইকে। আমার সামনে নত হয়ে থাকবে সব জ্ঞ্যানি গুনি পণ্ডিত; রাজনীতিবিদ। সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে দেশ থেকে বিতারিত করব যত অনচার অবিচার, দুঃখ দুর্দশা। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার, দেশের উন্নতি এবং অবনতিতে আমাদের অবস্থা পরিবর্তনশীল। আমাদের কাছে ভালো থাকার মানে হল শান্তিতে রাস্তাঘাটে চলে ফিরে শান্তিমত ব্যাগ ভরে বাজার করে ঘরে ফেরা। সন্ধ্যার সময় খবর ছেড়ে দেশের দুর্দশায় কিছুক্ষণ উহু আহা করে শান্তিতে নিদ্রাগমন। আমার প্রেসিডেন্ট হবার দুর্বিনীত ইচ্ছেটার গলা চেপে আমি একজন মধ্যবিত্ত হবার প্রশিক্ষনে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। আমি সরকারী চাকুরী করি, মাস গেলে যা মাইনে পাই সেটা সোয়েটার কোম্পানির একজন সুপারভাইজারের সমান। যদিও আমি সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, বাজারের ব্যাগ হাতে সেই শ্রেণী ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করি না। মনে ভাবি, রাজা হতাম যদি, তবে আর এই কষ্টে থাকত না সরকারী চাকুরেরা। আরও অনেক কিছু ভাবি, রাজা হলে এইটা করতাম, ঐটা করতাম! ভেবে কেমন একটা পুলক অনুভব করি। আমার দুটি সন্তান হয়, সন্তানদের দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে যায়; আমার সাধ জাগে দেশের সব বাবা মা তাদের শিশুকে নিয়ে নিরাপদে থাকবে আমার রাজ্যে। আমার রাজ্যে শিশুরা হবে সব আনন্দের উৎস; তাদের খিল খিল কণ্ঠস্বর রেডিও টিভিতে প্রচার করা হবে। ইথারে ছড়িয়ে পড়বে আনন্দ;আনন্দ আর উল্লাস। ভালই চলছিল সব। নিজের মনে রাজা হয়ে সব পরিবর্তনের আপন খেলায় মেতে ছিলাম ভালই। গোল বাধল মাস খানেক আগে। পুরনো বন্ধুদের আড্ডায় রাজা গজা মারতে মারতে বলেই বসলাম আমার রাজা হবার ইচ্ছেটা। সেকি হাসির রোল; মোটা মুটি মাসখানের খোরাক পেল যেন ওরা আমাকে পচানোর। বাসায় ফিরে মেজাজ টা খিঁচরে গেল। বন্ধুদের আড্ডায় আর যাবনা বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সমস্যা হল, ওরা এই খবর মোটামুটি রাষ্ট্র করে দিল এবং আমার নামের আগে ও পিছে কিছু কিম্ভুত উপমা যোগ করে দিল। ব্যাপারটা এই পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখল না তারা। অতি উৎসাহী একজন আমার নামে একটা ফেসবুক ফ্যান পেজ খুলে বসল। পেজের নাম “The self-proclaimed President of the people’s republic of হীরকদেশ ; The King Khan” পেজের ভুমিকায় আমার বিশদ বর্ণনা দিয়ে নিচে লেখা, রাজার দরবারে আপনাদের যার যা আর্জি আছে তা wall এ পোস্ট করুন। বাংলাদেশের মানুষের বোধ হয় খেয়ে দেয়ে সত্যি কোনও কাজ নেই। এই পেজে হাজার হাজার কমেন্ট পড়তে লাগল। আমার যেই বন্ধুটি পেজ খুলেছিল, সে বাসায় এসে হেসেই কুটি কুটি।
-হে রাজাধিরাজ, আপনার প্রজাকুল আপনার প্রজ্ঞার প্রার্থি; অধমদের কৃতার্থ করুন!
-ফাইজলামির একটা সীমা থাকা উচিৎ। তুই আজকেই এই জিনিস বন্ধ কর!!
-এত মানুষের ভালবাসা অগ্রাহ্য করবি?
-কত মানুষ?
-দু’ লক্ষ এবং বাড়ছে!
-কস কি মোমিন!
-আবার জিগায়!
তা পেজ খুলে সত্যি অভিভুত হয়ে গেলাম। এত পাগল আমার দেশে আছে, জানতাম না। অবশ্য নিজেকে সত্যি সত্যি রাজা মনে হচ্ছিল। আমার দুই লাখ ঊর্ধ্ব প্রজা আমার কাছ থেকে শুনতে চায়; আহা এ যেন নানির ভবিষৎবাণীর বাস্তবায়ন।
শুরু হল আমার ডিজিটাল রাজ্যের রাজত্ব। বেশ মজার ব্যাপার। আমি কিছু লিখলেই হাজার হাজার লাইক আর কমেন্ট। আমার ছাপোষা জীবনে নতুন মাত্রা যুক্ত হল।
সারাদিন অফিস শেষে এসে ফেসবুকে ঢুকে বলি; “আইজকা সারাদিন বাসাত ছিলাম, কারেন্ট ছিল না; আমার রাজ্যে এই ফ্রব্লেম তাকবেনা” অথবা দুইটা ইলিশ মাছ কিনে বাসায় ফিরে লিখি; “আমার গবমেন্ট ইলিশ রপ্তানি বন করবে”।
আমার কাছে অনেক “প্রজা” অনেক আর্জি পেশ করেন, আমাই তাদের ডিজিটাল সমাধান দেই,
-রাজা মশাই, পড়তে ভালো লাগে না!
-ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, মন্ত্রি পদে দরখাস্ত কর!
-রাজা মশাই, প্রেমে ছ্যাকা খাইছি, কি করুম!
-সভাকবির পদে নিয়গ চলছে, সত্বর যোগাযোগ কর!
বিভিন্ন জন গুরুত্ব পূর্ণ ব্যপারেও আমি আমার সুচিন্তিত মতামত দিতে শুরু করলাম। তেল গ্যাস, সুন্দরবন, হেফাজত, শাহবাগ ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং এক সময় আমি আবিষ্কার করলাম, আমি ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু করতে পারি।
হ্যা, ঠিক ধরেছেন অশুভ কিছু। কঠিন কিছু না, দশটা সত্যের সাথে একটা মিথ্যে মিশিয়ে দেয়া। কেউ টের পাবে না। সবাই উন্মুখ হয়ে আছে প্রভাবিত হবার জন্যে। অবশ্য এই ভাবনাটি আমার মাথায় এমনি এমনি আসেনি। আমার কাছে আজকাল অনেক রকম মানুষের ফোন আসে; তাদের কারও কারও ফোন নম্বর ওঠেনা; লেখা আসে, Privet Number। আমি এদের অনেকের হয়ে অনেক কিছু লিখে দেই। অনেক সময় তারা লিখে পাঠান, আমি নিজের নাম দিয়ে ছাপিয়ে দেই। আমাকে কেমন একটা নেশায় পেয়ে বসেছে। এত অল্পে আমার পোষাচ্ছে না। আমার লক্ষ্য আরও বড়। আমি রাজা হতে চাই,সত্যিকারের রাজা!!
দুই
মনের মধ্যে বিশাল উশখুশ! হবে তো, নাকি বৃথাই সব; এভাবেই পার হয়েছে গত আধ ঘণ্টা। কিচ্ছু হয়নি। আধঘণ্টায় কি কি হওয়া সম্ভব ছিল জানেন? অনেক কিছু। অনেক জীবন বদলে যাওয়া অথবা পরিবর্তনের বাতাসের শুরু। অনেক কিছুই হতে পারত, কিন্তু হয় নি কিছুই। আমার হাতেই সব, এই মুহূর্তে আমিই শক্তিশালী। কিন্তু আমি যে ঢুকতেই পারছি না আমার রাজত্বে। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর হাল ছেড়ে দিলাম। আমি রাজত্ব হারিয়েছি, চুরি হয়েছে আমার পেজটি। সেটি এখন অন্য কারো দখলে। ধপাস করে পড়লাম যেন, আকাশ থেকে সোজা মাটিতে। খেলাচ্ছলে বানানো আমাদের “রাজত্ব”টি আসলে এখন একটা দানবে রূপান্তরিত হয়েছে। যে দানবের নিয়ন্ত্রণ আমি হারিয়েছি।
তিন
-এইসব আপনি লিখেছেন?
-না, সত্যি বলছি আমি লিখিনি!
-একাউন্ট টা তো আপনারই।
-হ্যা, হ্যাক হয়ে গেসিল।
-তারমানে আপনি লখেন নাই!
-সত্যি বলতেছি, আমি লিখি নাই!
-কে লিখছে?
-আমি জানি না ভাই, আমি সত্যি জানি না!
-হুম, আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান?
আমি নিশ্চুপ;
-উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
-ওটা একটা রসিকতা ছিল!
-এই রাজ্যে রসিকতা করা অপরাধ, আপনি জানেন?
-না, জানি না, আর করবো না, ভুল হয়ে গেছে!
-প্রেসিডেন্ট হলে কি কি পরিবর্তন করবেন দেশের?
আমি নিশ্চুপ;
-উত্তর না দিলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে!
প্রেসিডেন্ট হলে অনেক কিছুই করতে চেয়েছিলাম, অনেক ভাবনা মাথায় আছে। অনেক দিন ভেবেছি, কোনও কিছুই এখন মাথায় আসছে না।
-কি হল, কথা বলছেন না কেন?
-প্রেসিডেন্ট হলে...প্রেসিডেন্ট হলে অপরাধের তালিকা থেকে রসিকতাটা বাদ দিতাম!
প্রচণ্ড অট্টহাসির শব্দে ফেটে পড়ল ইন্টরেগেশন সেলের বদ্ধ জায়গাটা।
আমি বৃথাই মুচড়ে খোলার চেষ্টা করলাম আমার পিছমোড়া করে বাঁধা হাতটা।
১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:২৯
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই
২| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৮
শিব্বির আহমেদ বলেছেন: ভাল্লাগসে
১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:২৯
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আমারও ভাল্লাগসে লিখতে! ধন্যবাদ ভাই
৩| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৫৪
জ্যাক রুশো বলেছেন: কস কি মমিন এই রাবণ রাজ্যে তুই রাজা হইবার চাস
১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৩১
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আমি!!! না তো!!! কই?? এইসব কি কন উল্টাপাল্টা! :p
৪| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:১৫
নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: মজা পাইছি ভাইয়া
প্লাস লন
১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৩২
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: প্লাস লইলাম! অসংখ্য ধন্যবাদ
৫| ১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:
শেষের অংশটা পড়ে ভয় পেয়েছি ... মন ও খারাপ হয়েছে ...
পরাধীন রাজ্যে প্রজাদের এটুকু স্বাধীনতাও নেই যে যার যেটা ভালো লাগলো তা লিখবে বা সেখানে লাইক দেবে
++++++++
( ও হ্যাঁ ভাই , আমি কিন্তু আমার প্রমিসটা সবসময় মনে রাখি ... ওই যে ... সব পোস্ট এ প্লাস দেয়ার... )
১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৫
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: এই যাহ্। আপনি এখনও প্রতিশ্রুতির জালে বন্দী!! বাংলাদেশে এই জিনিস যে খুবই বিরল ঃ).. যস্মিন দেশে যদাচার হইল না তো!!!!
৬| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
শান্তির দেবদূত বলেছেন: ফিনিসিংটা দুর্দান্ত হয়েছে।
শিশুদের নিয়ে আপনার স্বপ্নের অংশটা হৃদয় ছুঁয়ে গেলো একেবারে।
শুভেচ্ছা রইল।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: স্বপ্ন গুলো সবসময়ের জন্যেই একটু রঙ চারানও হয়, সীমানা বাঁধার কেও নেই যে
৭| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দূর্দান্ত!!!
রসিকতা নিয়েও রসিকতা!!!!!!!!!!!!
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: আবার জিগায়; এইটাকেই কিন্তু সিরিয়াস রসিকতা বলে
৮| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:০০
ভাইটামিন বদি বলেছেন: ভয়াবহ হৈছে........এক্কেবারে রসের হাড়ি....সাথে বাশটাও ধরায়া দিছেন জাহাপনা!!!
১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: কি যে বলেন ভাই! বাশ শুনলেই কেমন হাঁস ফাঁশ লাগে;
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০০
নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: ভাল লেগেছে।