নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের আনন্দে লিখতে থাকি; আনন্দ শেষ, তো লেখাও শেষ! সবাইকে শুভেচ্ছা

এই সব দিন রাত্রি

মনের আনন্দে লিখতে থাকি, আনন্দ শেষ তো লেখাও শেষ! কেও না পড়লেও কোন অসুবিধে নেই! সবাইকে শুভেচ্ছা!

এই সব দিন রাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাসনে ফেরা

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৪

মানুষ হবার সবাচাইতে যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার হচ্ছে, মানুষকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কাজ করতে হয়। পশু পাখি অথবা বৃক্ষের এই সমস্যা নেই। বিদায় বলাটা অনেকটা সেইরকম একটা ব্যাপার। যতটুকু আনন্দ নিয়ে দেশে ফেরার বিমানে চেপে বসেছিলাম, তার চেয়ে বেশি বেদনা নিয়ে ঘর ছাড়লাম আবার। নির্বাসনে ফিরতে হবে। মাঝখানে ৩ টি সপ্তাহে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি একজন জেল ফেরত কয়েদীর কি অনুভূতি হয়!



যেদিন ফিরছিলাম, ২৮ ফেব্রু ২০১৩, সারাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় বেশ ভয়ংকর পরিস্থিতি। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছানো নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। তবে ঢাকার এই সাংঘরশিক পরিস্থিতির সাথে মানুষজন বেশ মানিয়ে নিয়েছে মনে হল। বেশি মানিয়েছে আমাদের সি এন জি চালক ভাইরা। তা এমন একজন সি এন জি চালক আমার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন। ‘হরতাল বান্ধব’ বিভিন্ন অলি গলি তার মুখস্ত। তা সেইসব গলির ভেতর দিয়ে তার নিপুন কসরত করে সি এন জি চালনা দেখে মাঝে মাঝে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। স্বীকার করতেই হবে ভদ্রলোক এই প্রতিভা নিয়ে ফর্মুলা ওয়ান রেসে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারতেন। মিরপুর থেকে ৪৫ মিনিটের থ্রিল রাইডে তিনি আমাকে পৌঁছে দিলেন বিমানবন্দরের গেটে। ৫০০ টাকার একটি নোটের বিনিময়ে যদিও এই কাজটি করলেন তিনি, তবে আমার মনে হয় তিনি ব্যপারটি বেশ উপভোগ করেন।



বিমানবন্দরে নেমে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার দীর্ঘ যাত্রাপথের সবচেয়ে কঠিন পর্বটি শেষ। বিমানবন্দরে আসা বেশিরভাগ মানুষের মাঝে আতঙ্কের ছাপ, সাথে স্বস্তির নিশাসও ফেলছেন কেও কেও। আজকের বেশিরভাগ বিমানের শিডিউল পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কারন অনেক যাত্রীই ঠিক সময়ে বিমানবন্দরে আসতে পারেননি। বিমানবন্দরে ঢুকে তাই দেখলাম বিশাল ভিড়। অনেকগুলো ফ্লাইটের যাত্রী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের ইমিগ্রেশনের পুলিশ। বাংলাদেশের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অভ্যস্ত। কিন্তু এইখানে দেখলাম উল্টো চিত্র। পাছে প্লেন ছুটে যায়, এই ভয়ে সবাই অস্থির। এই লাইনেই পরিচয় হল মাসুদ ভাই আর তার পরিবারের সাথে।





ভদ্রলোক প্রবাসী বাংলাদেশি। দুই বাচ্চা আর বউ নিয়ে দেশে এসেছিলেন বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে। দেশ ছেড়েছেন প্রায় ১৫ বছর। বেশ ভালো একটা চাকরী করেন আমেরিকায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অধৈর্য বাঙালীদের দেখিয়ে চিরায়ত হাঁ হুতাশ শুরু হল তার।



- কি হবে এই দেশের বলেন।

- হুম, কিছুই হবে না

- না দেখেন না, কেমনে ঠেলা ঠেলি করতেসে!

- ঠিক বলছেন, কারও কোনও ভদ্রতা বোধ নেই।

- দেশে মনে হয় যুদ্ধ লেগে গেছে!

- আমারও তো তাই মনে হল।

- কেন যে আমার দেশটা আমেরিকার মত হলনা।

- ঠিক, কেন হলনা বলেনতো?

- হবে কেমন করে মানুষ গুলা সব ধান্দাবাজ।

- সব মানুষ ধান্দাবাজ?!

- দেশে কোনও আইন নাই।

- আইন তো আছে, অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি আছে!

- মানে প্রয়োগ নাই আরকি।

- প্রয়োগ নাই কেন বলেনতো?!

- সব আসলে ধান্দাবাজ!



ভদ্রলোক সকল সমস্যার উপসংহার টানেনে দেশের মানুষ কে ধান্দাবাজ বলার মাধ্যমে। হয়তো একধরনের আত্মতৃপ্তি পান। ১৬ কোটী ধান্দাবাজের দেশে তাকে আঁটকে থাকতে হয়নি। তিনি বাস করেন ফেরেশতাদের দেশে।



-আপনি কি কি ধান্দাবাজি করেছেন মাসুদ ভাই?

-হ্যা! কি বললেন! একটু চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন মাসুদ ভাই।

-না, এমনি মজা করলাম, আপনিও এই ধান্দাবাজদের একজন কিনা জানতে ইচ্ছা করতেছিল। হা হা হা হা।



মাসুদ ভাই আমার সাথে হাসিতে যোগ দিলেন না। বোধহয় আমার সুক্ষ খোঁচা তিনি গিলে উঠতে পারেন নি।



আমার কেন যেন শেকড় হীন এই মানুষ গুলোর জন্যে করুণা হয়। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সকল দেশের আমি নাগরিক, এই বুলিটা আমার কাছে ফাঁকা লাগে। শেকড় থাকাটা জরুরী, খুবই জরুরী।



যাই হোক দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে টার্কিশ এয়ারলাইনের স্বর্ণকেশীদের দেখা পেলাম। এবারে ওদের বেশি আন্তরিক লাগছিল না। হয়তো বিদায়ের বিস্বাদ মনে জুড়ে ছিল। কোনও কিছুই আর ভালো লাগছিল না।

যাত্রা পথ ইস্তানবুল-ঘানা-লাইবেরিয়া। ইস্তানবুলে এইবারও ১০ ঘণ্টার মত বিরতি। ঘানাতে একদিন। কারন ঘানা থেকে ইউ এন এর ফ্লাইট সপ্তাহে দুদিন মাত্র।



ইস্তানবুলে নেমে দেখি শীতের প্রকোপ বেড়েছে। সাব্বির স্যার হেসে জিজ্ঞেস করলেন, বাহির হবা নাকি এখন! আমার মন পরে আছে বাংলাদেশে, ইস্তানবুলে কিছু আর দেখতে ইচ্ছে করছিল না। স্যার কে মৃদু

হেসে বললাম। চলেন স্যার হোটেলেই যাই!



টার্কিশ এয়ারলাইনের এরা আমাদের একটা বাসে করে ৪ তারা হোটেলে নিয়ে গেল। হিলটন হোটেলে যখন আমরা পৌছালাম তখন সময় সকাল ৪টা। বাহিরে হাড় কাঁপানো শীত। হোটেলে ঢুকে একটা গরম শাওয়ার নিলাম। এরপর ল্যাপটপ খুলে বসলাম, যদি বাসায় একটু যোগাযোগ করা যায়! তা এদের নেটের গতি বেশ ভালো। বাসায় কথা সেরে ভোরের অপেক্ষায় রইলাম।





হোটেলে সকালের নাস্তাটা বেশ ভাল, বুফে নাস্তা। আমি আর সাব্বির স্যার পেট পুড়ে খেয়ে বের হলাম একটু যদি এদিক ওদিক যাওয়া হয়। কিন্তু শীতের প্রকোপে সেটা আর হলনা। বাধ্য হয়ে হোটেলে ফিরে অপেক্ষায় রইলাম কখন আবার বের হওয়া যায়।

শেষ পর্যন্ত আর বের হওয়া হয়নি। দুপুরের একটু পরে ঘানার উদ্দেশ্যে উড়াল দিলাম আমরা। বাইরে বেশ চকচকে আকাশ। আকাশ থেকেই এবার ভ্রমন শুরু হল আমার, পাখির দৃষ্টিতে ইউরোপ দর্শন!





আকাশ থেকে দেখা তুরস্ক।





এটা হল সিসিলি দ্বীপের একটি জ্বালামুখ



এটা নামনাজানা কোনও এক বরফমোড়া পর্বতমালা গ্রিসের দক্ষিণে।



সাহারা মরুভুমি





ঘানায় নামার পর এবার যে হোটেলে উঠলাম সেটা বেশ খরুচে। সাব্বির স্যার বললেন, দুই রাত কাঁটাতে হবে একটা ভালো হোটেল না হলে কি হয়। অতএব পকেট থেকে বের হয়ে গেল নগদ ১৩০ ডলার!

আমি স্যার রে বললাম, স্যার ট্যাঁকের অবস্থা বেশি ভালো না।

সাব্বির স্যার বললেন, কি করবি তাইলে।

স্যার, মন টন বেশি ভালো নাই, দুই দিন একটু ঘুমাইয়া নেই!

স্যার একটা অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ঠিক আছে, ঘুমা!

দুটো দিন দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা আর দেশে ফেলে আসা আমার পরিবারের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করলাম। আমরা কতটা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগি। আমি আরেক দেশের নিরাপত্তা দিতে যাচ্ছি ভেবে খুব হাসি পেল কিছুক্ষণ।

আব্বু আম্মু আজকে ট্রেনে যশোর যাবে, রাস্তা ঘাটে এমবুশের আশংকা আছে। ট্রেন খুব ধীরে চলছে। কোথাও যদি আগুন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কেও। অথবা তুলে ফেলে রেলের স্লিপার!



ভয়,আতংক, এই নিয়েই আমাদের এই সব দিন রাত্রি! ভালই তো আছি, তাই না?



বিঃদ্রঃ কাওকে আঘাত করে লেখা আমার অভিপ্রায় নয়, আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনাগুলো দেখার চেষ্টা করি শুধু।



ফেরা-১ , ফেরা-২ , ফেরা-৩



মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৩

কালোপরী বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা :)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৭

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ কালো পরী। ভালো থাকুন অনেক!

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩৫

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: পোস্টে অনেক ভাললাগা। ++++++++

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫০

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ নাজিম ভাই। ভালো আছেন তো?

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৬

নিমচাঁদ বলেছেন: ঘর ছাড়ার কষ্টটুকু এক জন হোমসিক মানুষের জন্য খুব কষ্টের ।
চমৎকার বর্ণনা ।
আকাশ থেকে দেখার অংশটুকু চমৎকার।
আশা করি ঘরের মানুষ আবার সহ সালামতে ঘরে ফিরে আসবেন ।
ধন্যবাদ ।

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫১

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ নিমচাঁদ ভাই। ঠিক ঠাক দেশে ফিরতে পারলে বাঁচি। অনেক ভালো থাকুন। পড়বার জন্যে ধন্যবাদ।

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: লেখা আর ছবি দুটোই চমৎকার।

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২৫

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই। অনেক ভালো থাকুন।

৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:১৩

পাতা ঝরার দিনে বলেছেন: হুম ভালো হয়েছে।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২০

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: যাক, অবশেষে :)

৬| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: নির্বাসনের দিনগুলো ভালো কাটুক। ফিরে আসুন আবার শ্যামল ছায়ায়। অনেক শুভ কামনা রইল।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০৩

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন অনেক

৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:


চমৎকার !


প্লাস ...



ভালো থাকুন

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৪১

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু, অনেক ভালো থাকবেন :)

৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫১

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:




:)




০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫৪

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: :)

৯| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৪

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: নির্বাসন পর্ব গুলো খুব ভাল লেগেছে ,আগের পোস্ট , নির্বাসন শেষ আশা করি , অনেক শুভকামনা রইল ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: এখনও চলছে, আরও ১৭ দিন বাকি

১০| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৪১

শান্তির দেবদূত বলেছেন: শেকড় ছেড়া মানুষ গুলোকে দেখলে আসলেই করুনা হয়! ইউকে আমেরিকায় থাকা একেক জনের লাট সাহেব ভাব দেখলে রাগ লাগে ভীষণ!

আর দেশের যাওয়ার জন্য বেশ উতলা হয়ে আছেন মনে হচ্ছে ? :) প্রতিটি দিন কাউন্ট করছেন :) ! শেষের দিকে এমনি মনে হয়! প্রতিটি দিন বছরের মত লাগে :( আহ! সে কি তীব্র অনুভুতি ঘরে ফেরার :) প্লেন থেকে নেমে প্রথমে বুক ভরে শ্বাস নেই, তারপর খুব ধীরে ধীরে ছাড়ি, যেন প্রতিটি বাতাসের কণা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারি :)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৩৬

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: ঠিক ধরেছেন; দেশে ফিরতে আর তর সইছে না। আপনাকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন

অফঃটঃ খাস্তগির এই ঈদে নতুন কিছু আবিষ্কার করেনি? কোরবানির হাট সংক্রান্ত কোনও সমাধান হলে বেশ হয় কিন্তু :)

১১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৪৫

শান্তির দেবদূত বলেছেন: খাস্তগীরের সাথে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ নেই :) সে কিরছে আপাতত জানি না। ঈদের ছুটিরে মনে হয় গা ঢাকা দিয়ে আছে। দেখি ঈদের পর কি নিয়ে হাজির হয় :)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৭

এই সব দিন রাত্রি বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.