নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখন থেকে লিখব না আর সত্যিকারের কিছু/ বলব না আর, চলব শুধু ছায়ার পিছুপিছু।// সবাই যখন নামছে নীচে, আমার তখন কী দায়? / অন্ধকারের সঙ্গী হলাম—আলোক তোমায় বিদায়।// এখন আমি থমকে রব, জীবন হবে থ-ময়,/ মাথা নেড়ে আজ্ঞে বলেই কাটিয়ে দেব সময়।// মিথ্যেটাকে সত্যি জেনেই করব কারাবরণ—/ এখন থেকে জানবে, হে দেশ, কবির হলো মরণ।//
সেদিন বিকেল বেলায় আমরা, এলাকার ছেলেপুলের দল, খালপাড়ের মাঠটায় খেলছিলাম।হঠাত্ বলা নেই, কওয়া নেই কোত্থেকে এক ইয়া বড় দশাসই চেহারার গরু মাঠের মাঝখানে শিং বাগিয়ে তেড়ে এল। কান্ড দেখে আমরা তো যে যেদিকে পারলাম ছুটে পালালাম!মাঠের পশ্চিমকোণে ছিল অনেকদিন ধরে পড়ে থাকা একটা ভাঙা পাঁচিল। সেইটার পিছনে আমি ঘাপটি মেরে বসে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম— গরুটা এদিক-ওদিক চাইছে, যেন হতভম্ব হয়ে কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। মাঠের উত্তর দিকে একটা গরু বাঁধা ছিল। খানিকক্ষণ ইতস্তত করে গরুটা সেইদিকে এগিয়ে গেল। তারপর গাছের সাথে বাঁধা গরুটার মুখ শুকতে লাগল। বোধহয় কিছু ভাবের আদান-প্রদান হয়ে থাকবে। বোধহয় বলছি, কারণ আমি তো আর গরু না যে শিওর হব, ভাবের আদান-প্রদান হলো কি না। যদিও পড়াতে বসলে বড় ভাইয়া আমাকে গরু-গাধা বলে সম্বোধন করে, তারপরও আমি বোধহয় গরুর ভাষা বোঝার মতো অত উচ্চ পর্যায়ের গরু এখনও হতে পারি নি—সে বড় ভাইয়া যা-ই বলুক না কেন।
—কাদের গরু রে?
কানের কাছে হঠাৎ করে আওয়াজ হওয়ায় চমকে উঠলাম। বুকে থুথু দিয়ে তাকিয়ে দেখি জাহিদ। বললাম—বাইরের কোনও গরু মনে হচ্ছে। পরিচিত কোনও গরু না।
জাহিদ তার হাফপ্যান্ট টেনে উপরে তুলতে তুলতে বলল—উহ! আরেকটু হলেই গুঁতো মেরে পুরো প্যান্টটা খুলে ফেলত!ভাগ্যিস সময়মতো দৌড় দিতে পেরেছি। এই দ্যাখ মাজার কাছে শিংয়ের আঁচড় লেগে ছুলে গেছে! জাহিদ তার জামাটা উঁচু করে আমাকে দেখাল।
কি একটা বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু গরুটার দিকে চোখ পড়তেই কথাটা আবার গলার মধ্যে ফেরত গেল। ও আল্লাহ! গরুটা মৃগীরোগির চেয়েও ভয়ঙ্করবেগে কাঁপতে শুরু করেছে। যেন মোবাইলে ভাইব্রেশন হচ্ছে। তারপরই চোখের সামনে গরুটা ভ্যানিশ! তার যায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদেরই মতো বয়সের একটা ছোটখাট ছেলে!
কাণ্ড দেখে জাহিদ ভূ-ভূ-ভূ-উ-উ— বলে কাঁপতে শুরু করেছে। আমি বললাম—ভূ-ভূ-ভূ—কী? ভুয়া?
জাহিদ বলল—ন্-না।
—তাইলে কী?ভূমিকম্প? ভুমিকম্পের মতো কাঁপছিল?
—ন্-না।
—ভূগোল?
—ন্-না।
—ভূমধ্যসাগর?
জাহিদ কাঁপাকাঁপি ভুলে দাঁত-মুখ খিঁচে বলল—ভূত রে শালা। ভূত।
—আমি বললাম ও! তা, পুরোটা বলবি তো। আজকে আবার সন্ধ্যেবেলা ভাইয়া ভূগোল চ্যাপ্টারটা পড়াবে কিনা, তাই ওই মাথার মধ্যে খালি ভূগোল-টুগোলই ঘুরছিল।
জাহিদ বলল—ছাগল!
গরুটা এবার ছাগলের রূপ নিয়েছে কি না দেখার জন্য উঁকি মারলাম। না ছেলেই আছে। কিন্তুু, এ কি! ও তো সোজা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে!
জাহিদ ঘাবড়ে গিয়ে বলল—কী হবে রে? এ তো এদিকেই আসছে। আমাদের এবার তো...। সে তো-তো করতেই থাকল। এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কারণ ছেলেটা ততক্ষণে আমাদের প্রায় সামনে এসে পড়েছে, আর ছেলেটা দেখতে হবহু জাহিদের মতো।
আমি হলে তো মূর্ছা যেতাম। জাহিদ তো খালি তো-তোর উপর দিয়ে গেছে।
আমি ফিসফিসিয়ে বললাম—ভূত না। ভূত কি দিনের বেলা বেরোয়?
জাহিদ আরও বেশি ফিসফিসিয়ে বলল—ওসব নিয়ম-টিয়ম এখন কেউ মানে নাকি? দেখিস নে, গরমকালেও এখন কোকিল ডাকে?
আমি বললাম—তাই বলে,সবাই তো আর নিয়ম ভাঙে নি। গরুরা তো এখনও হাম্বা-হাম্বাই করে, ম্যাও-ম্যাও তো করে না। কিংবা বিড়ালেও তো এখনও হাম্বা-হাম্বা ডাকা শুরু করে নি।
জাহিদ কি একটা বলতে যাচ্ছিল,কিন্তু সেই গরুটা, মানে জাহিদের কপিটা এসে ধপাস করে আমাদের সামনে বসে পড়ল। তারপর অবিকল জাহিদের মতো গলায় বলল—কী খবর?
আমি আমতা আমতা করে বললাম—ইয়ে, আজকের পেপারটা পড়া হয়নি।খবর বলতে পারব না।
জাহিদ সাহস করে বলল—তুমি কি ভূত?
—না, আমি আসলে ভূতফুত নই। ওই যে তোমরা কি বল যেন—ভিনগ্রহবাসী...
আমি বললাম—ও! এলিয়েন। তুমি এলিয়েন?
—হুম।
—তা, তোমার মহাকাশযান কই?
—আরে ঐ কি বলে, নামার সময় একটা বাঁশঝাড়ের মাথায় আটকে গেছে!
আমরা তো থ! এলিয়েনের মানসিক সুস্থতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হলো।অবশ্য ‘মানসিক’ না বলে ওটাকে ‘এলিয়েনিক’ সুস্থতা বলাই বোধহয় ভালো হবে!
আমি বললাম—তুমি কিন্তু দেখতে একদম জাহিদের মতো। কেমনে সম্ভব?
—আছে একটা সিস্টেম। কারও রক্ত নিয়ে সেটা থেকে —কি যেন বলে—DNA নিয়ে, ঐটার কপি করে...
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম—হয়েছে হয়েছে!ঐসব ‘দিয়ে আবার নে’ মানে—দিয়েনে-ফিয়েনে আমরা বুঝব না। আসল কথা হচ্ছে—এইটার পিছনে বিজ্ঞান আছে—এই তো?
এলিয়েন বলল—শুধু পিছনে না— সামনে, উপরে, ডানে, বায়ে—সবদিকে বিজ্ঞান।
জাহিদ ফোঁস করে বলল—আর সেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি জাহির করতে তুমি আমারে এক্কেরে ছুলে ফেললে! তারপর তার কোমরের ছিলে যাওয়া জায়গাটায় হাত বুলাতে লাগল।
এলিয়েন বলল—আরে, গরু থাকা অবস্থায় আর কীভাবে রক্ত যোগাড় করব, বলো?
খানিকক্ষণ চিন্তা করে জাহিদ বলল—তাও ঠিক।
আমি বললাম—কিন্তু তুমি পৃথিবীতে নেমেই গরুর রূপ ধরলে কেন?
এলিয়েন মুখে একটা বিরক্তি ফুটিয়ে বলল—আর বলো না,মহাকাশযান নিয়ে নেমেছিলাম ভারতের মহারাষ্ট্রে। কিন্তু নামার সময় একটা বাঁশঝাড়ের মাথায় আমার মহাকাশযানটা তো আটকে গেলই,নামার পরেও সেটাকে কিছুতেই বাঁশের মাথা থেকে ছোটানো গেল না।অগত্যা সেটা থেকে বের হয়ে ভাসতে ভাসতে কিছুদূর গিয়ে দেখি বেশকিছু গরু এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে আছে, আর কতোগুলো লোক তাদেরকে ঘিরে ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে —কি যেন বলে—ঐ পুজো করছে। তারপর দেখলাম তাদেরকে সে কি আপ্যায়ন! কেউ বস্তা-বস্তা ঘাস আনছে, কেউ খৈল-ভূষি মাখছে, কেউ মাছি তাড়াচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি কমন-সেন্স খাটিয়ে বুঝে নিলাম গরুগুলো হচ্ছে মালিক। আর দোপেয়ে চাকর-বাকরগুলো বোধহয় তাদের পোষা প্রাণীট্রানি হবে। তাই সুবিধা হবে ভেবে গরুই হয়েছিলাম।
জাহিদ বলল—তুমি আসলেই একটা বলদ। তোমার গরু হওয়াই ঠিক হয়েছিল।
এলিয়েন মুখ ভার করে বসে রইল। আমি বললাম—তা সেই মহারাষ্ট্র ছেড়ে এই সুদূর বাংলাদেশে কেমনে?
এলিয়েন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল—আর বলো না। ওই গরুগুলো ছিল এলাকার মুসলমানদের গোয়াল থেকে জোর করে ধরে আনা। ওরা আর কত সহ্য করবে? একরাত্রে গো-আশ্রমে দিল আগুন ধরিয়ে। তারপর গরুগুলোকে ট্রাকে ভর্তি করে দিল রাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে। আমি তো ওই হুড়োহুড়ির মধ্যে নতুন কোনও রক্তও যোগাড় করতে পারি নি, আবার ট্রাক থেকেও পালাতে পারলাম না। তারপর ঘুরতে-ঘুরতে হাত-বদল হয়ে পশ্চিম বাংলায়।সেইখান থেকে বর্ডার পার করে আমাকে বেঁচে দেওয়া হলো এক কসাইয়ের কাছে। আজকেই আমাকে জবাই করার কথা ছিল। আমি শেষমেষ দড়ি ছিঁড়ে পালিয়েছি।
আমরা এতক্ষণ রুদ্ধনিশ্বাসে এলিয়েনের কাহিনী শুনছিলাম। বেচারা পৃথিবীতে এসে ধরে দৌড়ের পরে আছে!
এলিয়েন হঠাত্ কঁকিয়ে উঠে বলল—খিদে পেয়েছে! তারপর একমুঠো ঘাস ছিঁড়ে মুখে পুরে দিয়েই থু-থু করে ফেলে দিল। জিভে কামড় খেয়ে বলল—ধুর! মনেই নেই, আমি এখন আর গরু নেই।
জাহিদ বলল—বলদ!
আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আস্ত একটা এলিয়েনের সাথে আমাদের দেখা হয়ে গেছে! আমি একটু কৌতূহলী হয়ে বললাম—আচ্ছা, তুমি বলছিলে যে বাঁশঝাড় থেকে নেমে তুমি ভাসতে ভাসতে যাচ্ছিলে। তার মানে তোমার তো একটা শরীর আছে। না কি?
—আছে, আবার নেইও!
আমি বললাম—যা! তাই আবার হয় না কি?
এলিয়েন খানিকক্ষণ ভেবে বলল—আচ্ছা, বলো দেখি —তোমার এখন খিদে পেয়েছে কি না?
খিদের কথা শুনে আমার চিনির বয়ামটার কথা মনে পড়ে গেল। লুকিয়ে চিনি খাওয়া আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। শুধুশুধু চিনি খেতে গিয়ে কতবার যে আম্মুর হাতে মার খেলাম! আমি সুড়ুৎ করে একটা লোল টেনে বললাম—ইয়ে! একটু পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে! সেই দুপুরবেলা খেয়ে বের হয়েছি কিনা।
এলিয়েন বলল—দেখো, আগে কিন্তু তোমার খিদের কথা মনে ছিল না, যেই মনে করিয়ে দিলাম, অমনি তোমার খিদে পেয়ে গেল!আমার শরীরটাও ওরকম।যেই তুমি জিজ্ঞেস করলে, আমার শরীর আছে কি না, অমনি আমার মনে হলো আমার শরীর আছে। কিন্তু আগে হয়তো আমার শরীর ছিল না।
আমি বললাম—ধুর! তাই বলে, আছে আবার নেই, এমন শরীর হয় না কি?
এলিয়েন বলল—কেন, তুমি যখন ঘুমাও তখন কি বলা যায় না—তোমার চেতনা আছে, আবার নেই?
আমি একটু চিন্তা করে বললাম—হু। এইবার কিছুটা বোঝা যাচ্ছে।
জাহিদ বলল—চেতনার কথা শুনলে আমার খালি একাত্তরের চেতনার কথা মনে পড়ে। আর আমি চেতে যাই।
আমি বললাম—চেতিস না। মানে, চেতো না।
তারপর এলিয়েনের দিকে তাকিয়ে বললাম—কিন্তু, এখন তো একটা বড় সমস্যা বাঁধিয়ে বসলে! দুই জাহিদকে যদি গ্রামের লোক একসাথে দেখে তাইলে তো খবর আছে!
জাহিদ ধড়মড় করে উঠে বসে বলল—তাই তো!
আমি বললাম—অন্যরাও হয়তো এক্ষুনি এসে পড়বে।
এলিয়েন কাঁদকাঁদ গলায় বলল—কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে!তারপর খিদের চোটে সেখানেই শুয়ে পড়ল!
আমি বললাম—ও মা! এ যে একেবারে এলিয়ে পড়ল!
জাহিদ বলল—এলিয়ে-পড়া এলিয়েন!
[চলবে]
—এলিয়ে-পড়া এলিয়েন
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা
২৮ অক্টোবর, ২০১৭।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: আপনি খেলছেন না বলেই তো আমি বল নিয়ে মাঠে নামলাম।মিয়া,আগে শালবনে ফেরত আসেন।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: কেন!!! রূপকথাটা ভালো লাগছে না!!!
আপনার লেখাটা ভালো হয়েছে। বেশ মজারও।
প্যারাগুলো শুধু একটু ফাঁকা ফাঁকা করে দিলে, পড়তে অনেক সুবিধা হবে আমার মত চশমিশদের।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১০
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ,ভাই পরামর্শের জন্য।এডিট করে দিয়েছি।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়লাম, আপাতত তেমন ইন্টারেষ্টিং কিছু ঘটেনি
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৩
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: আপনার কমেন্টটাকেই তো আমার ইন্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছে!
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩
করুণাধারা বলেছেন: জানাই মুগ্ধতা!!
আপনি চমৎকার লিখেন, যেমন কবিতা তেমনি গল্পও। গল্পে বেশ সুকুমার সুকুমার আমেজ পাওয়া গেল।সেই যে, রুমাল হয়ে গেল বেড়াল। চলতে থাকুক গল্প।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৫
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: এই ব্লগেই আমার লেখা আরেকটা কল্পবিজ্ঞানের গল্প আছে।পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
করুণাধারায় সিক্ত হলেম।
৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৩
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: আহরে এতো দিন আমি কই ছিলাম!
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৯
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: অনুপ্রাণিত এবং পরমাণুপ্রাণিত হলাম!
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: হয় নাই! হয় নাই!
খেলবো না বলে দিলাম।