নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
লিখতে চাইছিলাম নিজের ছেলেবেলার শিক্ষা নিয়ে। কিন্তু লিখতে গিয়ে প্লট ঘুরে গেল। আমার সামনে এসে দাঁড়াল একালের শিক্ষা ব্যবস্থা। ভাবলাম, তবে একালের কথাই লিখি।
একালের ছেলেপেলেরা বড় দুর্ভাগা। তারা লেখাপড়ার শুরু হতেই একটা অর্থহীন মশকারির মধ্যে পড়ে যায়। এখন তারা রাইম্স শেখে। তোতাপাখির মত টুংটাং করে 'ট্যুইংকল ট্যুইংকল লিটেল স্টাঃ' আউড়ায়। কিন্তু কী যে বলছে তারা নিজেরাও জানে না। এভাবেই শুরু না বুঝে মুখস্ত করার প্রবঞ্চনা।
প্রসঙ্গত একটি ঘটনা বলি, আমি সেদিন এক বাসায় ক্লাস সিক্সের একটি ছেলেকে দেখলাম হুম হাম করে পড়ছে। আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম, দেখি— বাংলা বই।
ছেলেটির আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আগেও ওর সঙ্গে আমার কয়েকবার গল্প হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কী পড়ছ?
বলল, গল্প পড়ি।
বইটা টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বল তো, গল্পটা কী নিয়ে লেখা?
সে ফ্যালফ্যালে চোখে বলল, হুম..?
বললাম, এই গল্পের কাহিনী কী?
সে এবার সাহস করে বলল, পুরোটা এখনও পড়িনি তো!
বই ফেরত দিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলাম, তা কতটুকু পড়েছ?
হাত দিয়ে সীমানা দেখাল, এই পর্যন্ত।
বললাম, এইটুকুতে কী ঘটনা লেখা আছে?
সে এবার দেখে দেখে প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগল আমাকে গল্পটি বোঝানোর।
বুঝতে আমার আর বাকি রইল কী?
এই হল আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা! মেরে ফেলা হচ্ছে বাচ্চাদের মেধাকে। হত্যাযজ্ঞ চলছে মস্তিষ্কের। তিন বছরের গুড়ি গুড়ি বাচ্চা, বইয়ের সংখ্যা তাদের বয়সের চারগুণ! ব্যাগ বোঝা বাওয়ার জন্য আরেকজন লাগে। গার্ডিয়ানেরা সেই হতেই প্রতিযোগিতায় নামে। অমুক ভাবীর চেয়ে আমার বাচ্চা বেশি নম্বর পেল না কম পেল? এই নিয়ে প্রতিযোগিতা!
পড়ে তো ওরা না, পড়ে ওদের মায়েরা।
এই ছেলেপেলে বই আর কোটেশন গলা পর্যন্ত গিলে গিয়ে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দিয়ে আসে। বিদ্যার্জন এপর্যন্তই। কাল পরীক্ষায় কী লিখেছে আজই আর মনে করতে পারে না! এরা A+ পায় ঠিকই, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বেলায় A+ এর আর খবর থাকে না। A গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীগুলোই টেকে বেশি। কারণ A+ পাওয়া আর জ্ঞান অর্জন এক জিনিস নয়। ওসব পরীক্ষায় সবার আগে জরুরি IQ, উপস্থিত বুদ্ধি।
এই তোতা পাখিগুলো তো বইয়ের লাইন ছাড়া এক লাইনও বাড়তি বলতে পারে না। বড়ই আফসোসের বিষয়!
এবারে আসি খাতার নাম্বারিং প্রসঙ্গে। আমাদের সময়ে ছিল ডিভিশান। ছয়শো নম্বরে ফার্স্ট ডিভিশান। একজন পরীক্ষার্থীকে দশে ছয় দেওয়া মানেই হল তাকে ফার্স্ট ডিভিশান পাইয়ে দেওয়া! এ বড় সহজ কথা নয়। লেখা জাতের হলে পরীক্ষক পাশ নম্বর ৩০%, অর্থাৎ দশে তিন হতে count করতে শুরু করেন। লেখা আরেকটু ভাল হলে চার, আরো ভালো হলে পাঁচ পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু ছয় দিতে পরীক্ষককে দশবার ভাবতে হয়। এভাবেই মূল্যায়ন হত। এবং তারপরেও ছেলেমেয়েরা ফার্স্ট ডিভিশান, স্ট্যান্ড মার্ক্স, লেটার মার্ক্স অবধি পেত। যেটা পাশ করে বের হত, সেটা বুলেট হয়েই বের হত। কাঁচা সোনা একেকটা! আর সেসব ছেলেমেয়েকে দেখতে গ্রাম- গ্রামান্তর হতে লোকের ভীড় নামত!
অথচ একালে নাম্বরিং হয় উল্টো দিক হতে। সাড়ে নয় হতে শুরু করা হয়। আহামরি লিখলে সাড়ে নয়, নয়ত নয় নম্বর। কম ভালো অথচ খারাপ নয় এমন হলে আট। মুটামুটি ধাঁচের লেখার জন্য সাত। আর গড়পড়তা লেখার জন্য ছয়।
কোনমতে আগডুম বাগডুম লিখলেও এখন পাঁচ দেওয়া হয়।
আহা রে অবমূল্যায়ন! পরীক্ষা দিয়ে গ্রেড বের হয়, শিক্ষা নয়।
শিক্ষাব্যবস্থার বড় খুঁৎ নিয়ে তো এখনও বলিনি। ১৯৮৬ সালের সিলেবাস ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ আমার মতে। আহ, কী একেকটা পরিচ্ছেদ! বাংলা বইয়ে কী সুন্দর সুন্দর গল্প! বকুলপুরের স্বাধীনতা, 'পথের পাঁচালী' হতে সংকলিত 'মাঠের পরে দূরের দেশ' পড়ে যে কোন্ কল্পনার জগতের চেতনা পেত একেকটি শিক্ষার্থী তা সেকালের মানুষ মাত্রই বলতে পারবে।
সেখানে ছিল জসিমউদদিনের 'আসমানী'কে নিয়ে লেখা কবিতা। ছিল 'ডাক্তার সফদার','তালগাছ একপায় দাঁড়িয়ে', নজরুলের 'লিচুচোর'ও ছিল। কতই না আনন্দ ছিল তখন বই পড়তে ও পড়াতে!
১৯৯৬ সালের সংস্করণটিও প্রসংশার যোগ্য। সেখানে 'ট্রেন চলেছে', 'কাঁজলা দিদি', 'গড়াই নদীর তীরে', 'মেঘনায় ঢল', 'রূপাই', 'রসাল ও স্বর্ণলতিকা' থেকে শুরু করে 'আয় আয় তুতু রঙ্গা ভঙ্গা ভুতু', 'নিষ্ঠুর দৈত্য' আর 'সুখী মানুষের গল্প', 'তারার দেশের হাতছানি', 'জোঁক' ইত্যাদি পাঠ্যগুলো যে কতটা গভীর ভাবনা সঞ্চারী আর আনন্দদায়ক ছিল তা বলিহারি।
সবচেয়ে চৌকস হয়েছে তখনকার মাধ্যমিক বাংলা সংকলন বইটি । এর প্রত্যেকটি কবিতা, প্রত্যেকটি গল্প স্নাতকসহ যেকোন ক্লাসের সংকলন অপেক্ষা শ্রেয় ছিল। আর এখন যা এসেছে তা দেখে আফসোসের সাথে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়। প্রাইমারি তো বাচ্চাদের মেধাকে মারারই ব্যবস্থা করে আছে। এ প্রসঙ্গে শামসুর রাহমানের 'সাইক্লোন' কবিতাটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কী সব গাছ উড়ছে, মাছ উড়ছে ইত্যাদি লেখা একটি নিরর্থক কবিতা! আর কোন একজন কবির 'হবে তবু শিখতে' নামের একটি মেধাহীন কবিতার কথাও না বলে পারছি না।
আমি বাংলা একাডেমির একজন সংকলককে এ নিয়ে যথেষ্ট হেনস্তা করেছি। সংগত কারণে তাঁর নামটি উল্লেখ করছি না। ব্যক্তি হিসেবে তিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয়, অত্যন্ত সজ্জন এবং একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি আমার অভিযোগকে সমর্থন করে পরবর্তী সংস্করণে ব্যতিক্রমী কিছু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে রাখতেও যে পারেননি তা বলাই বাহুল্য।
গত শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের আঙ্গিক নিয়ে আমার হতাশা এবং আপত্তি ছিল। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অবস্থাকে আমি সবচেয়ে নাজুক মনে করি। প্রশ্ন করা হত, ব্যবসায় বলতে কী বুঝ? ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি বর্ণনা কর।
আরে বাপু, অমুক অমুক মনীষী এই এই সংজ্ঞা দিয়েছেন আর চুলার ঘরের কয়লা থেকে শুরু করে চন্দ্রাভিযান কি আফ্রিকার সোনার খনি পর্যন্ত যে ব্যবসায়ের আওতা বিস্তৃত— এই উপাত্ত একজন শিক্ষার্থীর ব্যবসায় বোঝার জন্য কি খুবই জরুরি কিছু? এটাই কি বাস্তবমুখী শিক্ষা? এই উত্তর খাতায় লিখে একজন শিক্ষার্থী কোন জ্ঞানের প্রমাণ দিয়ে আসে শুনি?
এরপরে এল আরো বড় জালিয়াতি। সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা।আরো নিকৃষ্ট এই প্রশ্ন পদ্ধতি।
space শেষ, দ্বিতীয় পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলব। সাথে থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২১
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ৬. ০৭. ২০১৩ তে লিখিত ।