নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
ঘরে ছুঁচোর উপদ্রব ঘটেছে ইদানিং । রান্নাঘরে প্রতি রাতে লঙ্কাকাণ্ড চলে । গিন্নির বলতে গেলে এখন একটাই মিশন, ছুঁচোটাকে ঘর থেকে বের করা, নয়ত মেরে ফেলা । এই বুড়ো বয়সে বেচারী ছুঁচো নিয়ে ছেলেমানুষের মতো হৈচৈ করছে । ছেলের বৌও আত্মনিয়োগ করেছে এই মিশনে । নাতনীর কাছে দীদার এই ছেলেমানুষী একটা বিনোদন হয়ে দেখা দিয়েছে ।
আজও ছুঁচো ধরা নিয়ে শাশুড়ি পুতের বৌ মিলে বেশ কসরত করে ব্যর্থ হয়েছে । নাতনীর আবদার, ছুঁচোটাকে মেরে ফেলা হোক, কারণ সে এখনও ছুঁচো দেখেনি । ইঁদুর আর ছুঁচো যে আলাদা কেন— এটা সে বুঝে দেখতে চায় ।
ইঁদুরের ছবি সে বইতে দেখেছে । ছুঁচো দেখেনি । ওদের রাইমসের বইতে ছুঁচো নিয়ে একটি কবিতা আছে । নাম The Moles! সেটা নাকি আবার মাটি খুঁড়তে পারে ! এ নিয়ে তার কৌতূহলের শেষ নেই !
আজ আমার কাজ হচ্ছে তাকে ছুঁচো সম্পর্কে বোঝানো । ও এসে আমাদের মাঝখানের জায়গাটা দখল করেছে । গল্প শোনাতে হবে ।
বললাম, "দাদুভাই, গণেশের বাহন কী জানো তো ?"
—"জানি, ইঁদুর । কার্টুনে দেখেছি ।" নাতনীর চটপটে উত্তর ।
—"বেশ । ইঁদুরের ভালো নাম হল মূষিক । তো মূষিক গণেশের বাহন হওয়াতে দূর্গাকে সেও মা বলে ডাকত । কার্তিক গণেশের মতোই দূর্গার প্রতি তার ভক্তি ছিল প্রগাঢ় ।"
—"তারপর ?"
—"তারপর মূষিক বিয়ে করল । তার প্রথম যে সন্তান হল, সেই সন্তানকে এনে সমর্পণ করল দূর্গার পায়ে । দূর্গা ফুটফুটে সেই মূষিক শাবককে আশীর্বাদ দিলেন । এবং বললেন, এ হবে আমার একনিষ্ঠ ভক্ত ।"
—"হুম । তারপর কী হল ?"
—"তারপর সে মূষিক শাবক বড়ো হল, দূর্গার আশীর্বাদে তার গায়ের রং ধবধবে ফর্সা । গায়ে তার বেজায় সুঘ্রাণ । যে পথ দিয়ে সে যেত, সে পথ ঘ্রাণে ভরে যেত । বড়োই একনিষ্ঠ উপাসক সে দূর্গার । সৌন্দর্যের কারণে তাকে ডাকা হত ধলা মূষিক । ধলা মূষিকের দিন রাত একটাই কাজ, দূর্গার উপাসনা ।
ধলা মূষিকের অন্যান্য ভাইয়েরাও তাকে খুব মান্য করত । এবং উপাসনা ছাড়া আর কোন কাজ তাকে ওরা করতেও দিত না ।"
—"তো হলোটা কী ?"
—"তো কী হলো শোন, একদিন ধলা মূষিক ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলল । প্রভাতের উপাসনা করা হল না আর । মূষিক তো খুবই লজ্জিত হল, আর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দূর্গার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল । দূর্গা হাসিমুখে ক্ষমা করে দিলেন ।
এই ক্ষমা পেয়ে ধলা মূষিকের সাহস বেড়ে গেল । সে বিলাসিতা ধরল, প্রায়ই পূজো কামাই যেত । এবং এক পর্যায়ে সে পূজো অর্চনা একদম ছেড়ে দিল ।
তখন তো টনক নড়ল সবার ! দূর্গা রুষ্ট হয়ে তাকে শাপ দিলেন । তার গায়ের রং সাদা হতে কুৎসিত ধূসর হয়ে গেল । গায়ের সুগন্ধ দুর্গন্ধে পরিণত হল । সেই হতে সে হল ছুঁচো ।
ছুঁচো সেই হতে লজ্জায় গা ঢাকা দিল । নিজের কদর্যতা নিয়ে মানুষের সামনে সে আর আসে না । রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে অন্ধকারে বের হয় খাবার চুরি করতে । আর যদি কখনও কারো সামনে পড়ে যায় তখন সে লজ্জায় নিজেকে ছিঃ ছিঃ করে ধিক্কার দিতে দিতে পালিয়ে যায় । ছুঁচোর নাক লম্বা বলে এই ছিঃ ছিঃ আমাদের কাছে চিঁ চিঁ শোনায় । এজন্য একে আমরা তাচ্ছিল্য করে চিকা ডাকি ।"
—"তাই তো ! আমিও তো ছুঁচোকে চিঁ চিঁ করতে শুনেছি দাদু ! বেচারার তাহলে অনেক লজ্জা, তাই না দাদু ?"
—"হাঁ, সে তো বটেই ।"
—"তাহলে দীদা, ও দীদা, (দাদিকে ঠেলা দিয়ে বলছে এবার) দীদা শুনেছ, ছুঁচোর কিন্তু অনেক কষ্ট । ওকে আর মারতে পারবে না । বুঝেছ ? আর কখ্খোনো ছুঁচোদের মারা চলবে না বলে দিচ্ছি ! বলো, আর মারবে না, বলো ?"
গিন্নি এবার আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে । ঝামেলা যে এই দিক দিয়ে হবে তা তো বুঝিনি !
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫০
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: হা হা হা! ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:০১
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বাহ!
সুন্দর তো!
আপনি খুব সুন্দর গল্পচ্ছলে বললেন। আসলে ছুঁচোই যে চিকা, এটা জানতুম না। গুগোল করতে হলো। এটা পেলাম সাথে। অনেক ভাল লাগল।