নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
আমি ক্রিকেট ভালো বুঝি না। মোটেই বুঝি না বললেও চলে। তবে খেলার সাফল্য ব্যর্থতা, চমৎকারিত্ব ইত্যাদি স্বভাবতই বুঝি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে স্কোর গোণার মতো ধৈর্যশীলও আমি নই। এক কথায়, এই খেলাটার প্রতি কোন আগ্রহ আমি বোধ করি না। তবুও খেলা চোখে পড়ে, বাংলাদেশের খেলায় কাজ ফেলে টিভি নিয়ে বসি। খেলার অনুরাগী না হয়েও দেখতে পাই, শুনতেও পাই সারা বিশ্বে ক্রিকেটের চমৎকার সব দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশের ক্রিকেট যাত্রা বা বুনিয়াদ খুব পুরনো নয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলেও যুদ্ধে যুঝতে যুঝতে সেই ২০০০ সালে টেস্ট প্লেয়িং টিমের মর্যাদা অর্জন করি আমরা। ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেটের প্রচলন আঠার শতকে হলেও বাংলাদেশে সেই ১৯৯৫ সাল পর্যন্তই ছিল একচেটিয়া ফুটবলের রাজত্ব। ক্রিকেটকে এদেশের সন্তানেরা গ্রহণ করেছে বেশ বেশ দেরিতে।
আমার এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্বলতা বা ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান। এই অনুসন্ধানে ইতিহাসটাও পর্যালোচনা করা জরুরি। মোদ্দা কথা দিয়েই রেশ ধরি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যর্থতার মূল কারণ কী?
আগেই বলেছি, খেলা আমি ভালো বুঝি না, তবে যারা বোঝে, তাদেরকেই অসংখ্যবার আমি এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছি। তারা কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছে। কোন সুচিন্তিত উত্তর দিতে পারেনি। আমার হতাশা উত্তরোত্তর বেড়েছে।
গিলক্রিস্ট, গেইল, আফ্রিদি, ইনজামাম, জয়বর্ধন, ব্রায়ান লারাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কী আসলে? শারীরিক যোগ্যতা? একেকজন দানবের মতো দেখতে বিধায়? অসুরের শক্তি তাদের গায়ে? তাহলে শচীনের শারীরিক যোগ্যতা কী? শচীন তো ছয়ফুট নয়, দানবের শক্তিও নেই তার। সে তো পেরেছে। শরীরের গঠনই যদি ব্যাপার হত তবে কি এটা সম্ভব ছিল? তামিম ছোটখাট হয়েও কি দিব্যি ছক্কা তুলতে পারছে না?
আমার এক তুখোড় ক্রিকেটার ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ক্রিকেটে আমাদের দুর্বলতা কি এটা যে, আমাদের গায়ে জোর কম?
ওর নিজের স্বাস্থ্যও বিশেষ ভালো না। বলল, স্যার, ফোর বা সিক্স মারতে খালি গায়ের জোর হলেই হয় না। কায়দামতো বলের সঙ্গে ব্যাট লাগাতে পারলেই হয়।
ছেলেটা ক্রিকেটার। ক্লাবে খেলে, এলাকায় নামডাক আছে। ওর অনুভূতি অভিজ্ঞতা তুলে দিলাম যুক্তিটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে।
এবার আসি বুনিয়াদ প্রসঙ্গে। ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড (ষোড়শ শতক)। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ইতিহাসও একসূত্রে গাঁথা (১৭২১ হতে যাত্রা শুরু)। শ্রীলঙ্কা নিউজিল্যান্ডও সমসময়ে (১৮৩০-১৮৩৩)। ঐতিহাসিকভাবে উত্তরসূরিতা হতে কিছু পাওয়ার ব্যাপার থাকতেই পারে, তবে আমি যদি এর প্রতি নিবেদিত প্রাণ না হই, আমার বংশতালিকায় হাজার ক্রিকেটার থাকলেও ফায়দা কী?
নিবেদিত প্রাণ হওয়াটা, মনে প্রাণে ভালাবাসাটা যেকোন সাফল্যের পশ্চাতেই সবার আগে জরুরি। এবং এই দিক দিয়ে আমি বলব, আমাদের দেশ পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশের তুলনায় অনেক কম সময়ে ক্রিকেটে উন্নতি করেছে। আর বাংলাদেশে ক্রিকেটের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ অবদান অধিনায়ক আকরাম খানের। যাইহোক, আমরা সেই নব্বই দশকের শেষের দিকেই আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আর ২০০৬ এর মধ্যেই বিশ্বের ক্রিকেট অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য আসন তৈরি করে নিয়েছি।
আমরা অবশ্যই সফল, আমাদের অবশ্যই যোগ্যতা আছে। বাঙালি জাতির মেধা ও যোগ্যতাকে আমি পৃথিবীর যেকোন জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং বহুমুখী মনে করি, কেবল সঠিক প্রত্যয়ের অভাব রয়ে গেছে চিরকাল!
হ্যাঁ, প্রত্যয়ের অভাব।
T-20তে দেখা যায় ওভার প্রতি ফোর সিক্স ছাড়া কথা নেই, কিংবা সুনামধন্য দলগুলোর বেলায় দেখা যায় খেলার শেষের কয়েক ওভারে বল যা-ই আসুক, লাগাতর চার ছক্কা মেরে স্কোর ধাওয়া করে নাভিশ্বাস তোলে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা পারি না কেন?
এটাই আমাদের প্রত্যয়ের অভাব।
সাকিব আল হাসান ক্রিকেট জগতে সারা বিশ্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত একজন খেলোয়াড়— শূন্য রানে আউট হয়ে ফেরে, তামিম লাগাতর শূন্য; নাইমুর, এনামুল, মুশফিক বিশের ঘর অতিক্রম করতেই পারে না! কারণটা কী?
সাকিব শূন্য রানে আউট, আমাকে নামানো হলে আমিও সেই শূন্য রানেই আউট হব। তাহলে ব্যাপারটা কোথায়?
ব্যাপার ধরার আগে জিজ্ঞেস করি, একজন খেলোয়াড়ের বেতন কত? একজন খেলোয়াড়ের খাওয়া থাকাসহ জীবনযাপনের সুযোগ সুবিধা কী? দেশের লক্ষ লক্ষ টাকা যে তারা মাসে মাসে ভোগ করছে, বিনিময়ে তারা দেশকে দিচ্ছে কী? যদি দিতেই না পারে, তবে কোন বিবেকে ভোগ করছে এসব?
এই প্রশ্নগুলো যতই যৌক্তিক হোক, ডিপ্লোম্যাসির হিসেবে এটা অযোগ্য, নাদান জিজ্ঞাসা।
অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে যে স্কোর আপ করার একটা প্রাণ বাজি রাখা চেষ্টা, নিজের দেশকে জেতানোর যে অটুঁট প্রতিজ্ঞা, তা আমার দেশের খেলোয়াড়দের চোখেমুখে কখনই দেখতে পেলাম না। এরচেয়ে নির্মম সত্য আর নেই।
বিসিবির পরিচালনার ত্রুটি, অস্বচ্ছ আচরণ, বিবিধ অপ্রকাশযোগ্য অনিশ্চিত অপবাদের কথা পরে বলব, একজন খেলোয়াড়ের মধ্য জেতার নেশা তো থাকতে হবে, কেননা এর সঙ্গে তার নিজেরই মানসম্মান জড়িত। দেশ তাকে কিছু দিক বা না দিক, পরিচালনা পার্ষদ তাকে ভালো পুরস্কার দিক বা না দিক, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে তো তার নিঃস্বার্থভাবেই দেশের জন্য খেলার মাঠে লড়ার কথা!
সেই দেশপ্রেম কি তাদের মধ্যে আছে?
নেই। আমি নিঃসঙ্কোচে বলছি নেই।
কমিটির ওপর রাগ করে তুমি খারাপ খেলেছ এটা একটা অকৃতজ্ঞের ফাজলামি যুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। তুমি ভালো খেলা দিয়ে কমিটির দাঁত ভেঙে দেখাও। কমিটি তোমাকে মাথায় তুলে নাচতে বাধ্য।
ভারতে খারাপ খেললে খেলোয়াড়দের বাড়িতে হামলা করে জনগণ, সেটাই দরকার ছিল এদেশে। আমাদের একেকজনের চর্বি খুব বেড়েছে দেশের পয়সায় মৌজ মারতে মারতে।
লেখার স্পেইস শেষ, আমি মনে করি, পঞ্চাশ রান করলেই গাড়ি আর ফ্ল্যাট দিয়ে, পত্রিকায় টাইগার টাইগার করে করেই আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের নষ্ট করেছি। বেশি মাথায় তুললে দেবতাও বাঁদর হয়ে যায়!
সামরিক বাহিনীতে যেভাবে খেলোয়াড়দের লাঠির ওপর রাখা হয়, এদেরকেও সেভাবে কঠোর আদেশের তলে রাখলে তবেই হয়ত উন্নতি হতে পারে। আর বেতন দিয়ে খেলোয়াড় রাখা হচ্ছে নিশ্চয়ই সকাল বিকাল চেহারা দেখিয়ে ফটো তোলার জন্য নয়?
বাংলাদেশে ক্রিকেটের উন্নতি এছাড়া সম্ভব না!
©somewhere in net ltd.