নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে কিছু একটা লিখব বলে ভাবছিলাম কাল থেকে। কিন্তু কী যে লিখব তা-ই স্থির করতে ব্যর্থ হলাম। হ্যাঁ ব্যর্থই হয়েছি, কারণ নজরুল জীবনী এত গভীর আর ইম্প্রেশানে ঋদ্ধ যে, দুয়েক কথায় তা আলোচনা করে শেষ করা অসম্ভব। আমার ভয় যে, যা-ই লিখব অসম্পূর্ণ হবে তা।
কবির জীবন তো, আর দশটা জীবনের মতো সহজে তা ব্যাখ্যা বা চিত্রায়ণ করা সম্ভব নয়। আমি নজরুলকে নিয়ে ভিন্ন কিছু করার সংকল্প নিলাম এবার। এবার বড়ো আকারের কিছু করব। হয়ত সম্পন্ন করতে বছর দুয়েক লাগবে এতে।
যাইহোক, কিছু না কিছু তো আজ অন্তত লেখা উচিত। ভাবলাম তবে ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই লিখি। নজরুল সম্পর্কে সাধারণ পাঠকের জানাশোনা নেই বললেই চলে। জানাশোনা আসানসোলের রুটির দোকান, চুরুলিয়া, সৈনিক জীবন আর নার্গিস-প্রমীলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কবি নজরুলের যে দর্শন, যে মানসিকতা, তা যেমন আমাদের অজানা, তা উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতাও বোধকরি আমাদের নেই। নজরুল এমন একটা মানুষ, যিনি সম্পূর্ণই ছিলেন মানবতার কবি। মানুষের জন্য নিরন্তর লড়েছেন তিনি। উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন মেহনতি বঞ্চিত মানুষের কথা। মিছিলে মিটিংয়ে পায়ে হেঁটে পথে পথে গান করেছেন তিনি, মুক্তির গান। নারীকে দিয়েছেন তিনি নরের সমকক্ষ সম্মান। নজরুলের মতো অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি গোটা বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয়টি আর নেই। এবং বাংলা সাহিত্যের দরবারে তিনিই প্রথম অসাম্প্রদায়িক কবি।
১. কাফের?
নজরুলকে অতি আবেগী ধার্মিকগণ কাফের বলেন। শক্তিমান ইসলামপন্থী কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন তাঁর ঘোর বিরোধী। ইসলামী চেতনার কবি গোলাম মুস্তফাও তাঁকে নিয়ে হাস্যকর ছড়া কেটেছেন।
অথচ ইসলামী ঐতিহ্যকে নজরুলের মতো আর কোন কবিই এতটা সোচ্চার আর গর্বিত কণ্ঠে ঘোষণা করতে পারেননি! "কোরবানী" কবিতাটিতে তিনি কোরবানীতে পশু হত্যার বিষয়ে মানবতাবাদীরা মুসলিমদের উপর যে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ এনেছিল তার দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। এছাড়া মহররম, কামাল পাশা, আনোয়ার, রণ-ভেরী, শাত-ইল-আরব, খেয়াপারের তরণী প্রভৃতি কবিতা দিয়ে তিনি গোটা ইসলামের গৌরবোচিত ঝাণ্ডা সমুন্নত রেখেছেন।
অপরদিকে তিনি হিন্দু ঐতিহ্য ও স্তবরচনায়ও সম্যক অবদান রেখেছেন। অথচ হিন্দুবাদী কবিলেখকগণও তাঁকে সর্বোপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছেন। এ ভূমিকায় সজনীকান্ত দাশ, হেমন্ত চট্টোপাধ্যায়, অশোক চট্টপাধ্যায় এবং যোগানন্দ প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সজনীকান্ত তো অত্যন্ত নিকৃষ্ট প্যারোডিও রচনা করেছেন নজরুলকে নিয়ে।
সেসব হাস্যকর প্যারোডির উদাহরণ দিয়ে লেখা দীর্ঘ করব না। অনেক কাজের কথাই বাকি।
নজরুলের খ্যাতির প্রতি ওইসব লেখকের তীব্র ও সুস্পষ্ট ঈর্ষার পরিচয় আমরা পাই। তাঁরা নিজেরা অত ভালো কিছু করতে পারেননি বলে, নিজেরা উপরে উঠতে পারেননি বলে, নজরুলকেও তাঁদের পর্যায়ে টেনে নামাতে চেষ্টা করেছেন।
আসলে নজরুল কোন দলের অনুগামী ছিলেন না। তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা। একারণেই তাঁকে কেউ পাতে তোলেনি। মুসলিমেরা বলেছে কাফের, হিন্দুরা বলেছে ভণ্ড, পুঁজিবাদীরা তাঁকে বলেছে মার্ক্সবাদী শত্রু, অথচ মার্ক্সবাদী সমাজবাদীরাও তাঁকে বলেছে দালাল! নিরপেক্ষতার এ বড়ো দারুণ বিড়ম্বনা।
আরো নির্লজ্জ ব্যাপার হল, তাঁর শ্লোগান এবং সঞ্চারক পঙ্ক্তিকেই আবার ওইসব নিন্দুকেরা নিজ নিজ সুবিধামত ব্যবহার করেছে!
নজরুল প্রমীলাকে বিয়ে করে ধর্ম জলাঞ্জলি দেননি মোটেও। যাঁরা এমনটি বলেন, তাঁরা অন্ধ আবেগী মাত্র। যখন নজরুল-প্রমীলার বিয়ে পড়ান হয়, তখন বিয়ে কোন রীতিতে পড়ানো হবে- এ নিয়ে সংশয় বাঁধে। হিন্দু রীতি অপ্রযোজ্য, তাই সিভিল ম্যারেইঝ-এর কথা ভাবা হয়। কিন্তু সে নিয়মে বিয়ে করতে হলে পাত্রপাত্রীকে নিজ নিজ ধর্মকে অস্বীকার করার কথা ঘোষণা অন্তত ওই মজলিশের সামনে দিতে হবে। নজরুল মোটেও তা মানতে পারেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাঁর গায়ে মুসলমানের রক্ত বইছে এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এ তিনি অস্বীকার করতে পারবেন না!
নজরুল যে কতটা ধার্মিক ছিলেন এতেই কি আপনাদের কাছে তা সুস্পষ্ট হয় না??
নজরুল ধার্মিক ছিলেন এবং অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। বিয়ের অজুহাতে প্রমীলার ধর্মান্তরের প্রস্তাবকেও তিনি সমর্থন দেননি।
তিনি হিন্দুর সঙ্গে সমান ঔদার্যে থেকেছেন, তাঁরই বাড়ির চিলেকোঠায় শাশুরি গিরিবালাদেবীর পুজোঘর ও কালীমূর্তি ছিল। নজরুলের ধর্ম যায়নি এতে। নজরুল ইসলামের প্রতি প্রবল ভক্তিস্বরূপ যে সকল গজল রচনা করেছেন তার তুলনা কি সারা বিশ্বে আছে?
ধার্মিকেরা এরচেয়ে ভালো গজল আর কোথায় পাবেন?
ধর্ম কিসে যায়, যায় কি যায় না- এ বিষয়ে হুমায়ূন মানস প্রবন্ধেই আমি যথার্থ উত্তর দিয়ে রেখেছি। আগ্রহীগণ দেখে নেবেন।
সবশেষে আবার বলি, নজরুলই ছিলেন প্রকৃত মানবতাবাদী এবং ধর্মের মর্মার্থ তিনি যথার্থ উপলব্ধি করেছিলেন বলেই যাবতীয় গোঁড়ামি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন। আর তাঁর কবর যে মসজিদের পাশে কেন- তা নিশ্চয়ই কারোই অজানা নয়।
অসাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে নজরুলের স্বীকারোক্তিটি দেখুন-
"আমি হিন্দু মুসলমানের মিলনে সম্পূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের কুসংস্কারে আঘাত হানবার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু দেবদেবীর নাম নিই।"
অন্যত্র তিনি বলেছেন-
"কেউ বলেন আমায় বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি, ওদুটোর কিছুই নয়। আমি শুধু হিন্দু মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।"
সেকালের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার সময়ে এরচেয়ে ভালো চেষ্টা আর কী হতে পারে?
২. রবীন্দ্রনাথ নজরুল বিরোধ?
"শ্বশুর না হইলে রবি
আমি হতাম বিশ্বকবি!"
রবীন্দ্রনাথ নজরুলের শ্বশুর ছিলেন- এই ধারণা বাঙালির মনে কোত্থেকে উদিত হল তা আমার জ্ঞানের অতীত। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের শ্বশুর তো ননই, প্রমীলার পূর্বপুরুষ পঞ্চানন জমিদারের সঙ্গে রবীঠাকুরের পূর্বপুরুষ পঞ্চানন ঠাকুর যদি এক ব্যক্তি হনও (ব্যাপারটি অনিশ্চিত এবং গবেষণা সাপেক্ষ), তাতেও রবীঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে গিরিবালার পরিবারের কোন সংসর্গের আভাস কোথাও পাওয়া যায় না। কোন দলিল দস্তাবেজ বা চিঠিপত্রেও এমন কিছু নেই।
আগামী খণ্ড দ্রষ্টব্য।
২| ২৫ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
শেরজা তপন বলেছেন: পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম...
২৬ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪১
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: প্রথমেই দুঃখপ্রকাশ করছি যে, লেখাটি অত্যন্ত তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে সম্পাদন করতে হয়েছে, একারণে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন ব্যাহত হয়েছে । আমার লেখায় সাধারণত নিরেট যুক্তিনির্ভরতা বজায় থাকে ।
তাছাড়া এই লেখাতে দুইটি ভুল আছে । এবং আমি কাল চার চারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও লেখাটি এডিট করতে সফলভাবে ব্যর্থ হয়েছি ।
৩| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:২৩
উমার বলেছেন: আচ্ছা ধর্মকে আপনারা কি মনে করেন , বাপ-দাদার সম্পত্তি ? নাকি পাহাড় যে হাজার ধাক্কাইলেও সরে না । আমি নজরুল বিদ্বেষী নই । ধর্ম কোন ছেলে-খেলা নয় , যে যা খুশি তাই করবে আর ধর্ম সেটাকে মেনে নেবে । যার নামাজ নাই , ইসলামে তার কোন অংশ নাই । আর আপনি দয়া করে বলবেন কি ধর্ম যায় কিসে ? ধর্ম মানবেন না সেটা আলাদা কথা । কিন্তু ধর্মকে গোল-আলু মনে করবেন না যে সব তরকারিতে কেটে দিয়ে দিবেন ।
২৬ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: উমার, ব্লগের মন্তব্যগুলো অনেক সুসংযত হয় বলে জানি । আপনি অল্পতেই আবেগী হয়ে পড়েছেন ।
ধর্মকে যে হেয় করা হয়নি, বরং উজ্জীবীত করারই চেষ্টা করা হয়েছে আমি আলোচনায় সেটিই দেখিয়েছি । আসলে এই আলোচনা এত অল্পতে শেষ হবার নয় । পাঠককে একটু মনোযোগী হয়ে যেমন পড়তে হবে তেমন নজরুলের সময়কাল সম্পর্কেও একটি স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে । তবেই পাঠক নজরুলের কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যটা বুঝতে পারবেন ।
আমরা ধার্মিক বটে, তবে ধর্মবিধান আমরা নিজেরাই বা কতটা মানছি ?
ধর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ আমরা একজন হুজুর বা আলেমের কাছে যতটা পাব একজন প্রেমবাদী কবির কাছে ততটা পাব না এটাই স্বাভাবিক ।
তারপরেও নজরুলের জীবনাচার ও সাহিত্যকর্মে ইসলামপ্রেমের অজস্র নজির আছে । আপনি জানার উদ্দেশ্যে যদি জিজ্ঞেস করেন তবে আমি অনেক খুশির সঙ্গেই আপনাকে সেসব জানাতে পারি ।
আর যদি কেবল তর্কই আপনার উদ্দেশ্য হয় তবে আমি বিরক্ত হয়ে এড়িয়ে যেতেই বাধ্য হব । ধন্যবাদ ।
৪| ২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০৬
কেএসরথি বলেছেন: @উমর: আমার মনে হয়না, মহান আল্লাহ-তাআলা আমাদের ধর্মকে এতটি কঠিন করে পাঠিয়েছিলেন। ধর্ম হলো শান্তির প্রতীক, হিটলারের শাসনামল নয়।
৫| ২৬ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯
নগর বালক বলেছেন: ++++++++
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১
মুক্তকণ্ঠ বলেছেন: +