নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
জগৎ মিথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখনও আমাদের অধিকাংশ ধারণাই মিথ্যে। এই মিথ্যের প্রয়োজন আছে।
মিথ্যে আছে বলেই, বিভ্রম আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। এই যে এত বড়ো বড়ো ইমারত, এসব দাঁড়িয়ে আছে ত্রিকোণমিতি তথা জ্যামিতির ওপর, পৃথিবীর হিসেব, মহাকাশের হিসেবও এই জ্যামিতিতে। অথচ জ্যামিতি নিজেই দাঁড়িয়ে আছে একটা ভুল তত্ত্বের ওপর!
বিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল যে অসংখ্য ভুল তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন তার সুবাদেই বিজ্ঞান আজ এগিয়েছে এতদূর!
যাইহোক, মিথ্যেকেও ক্ষেত্রবিশেষে লালন করে রাখতে হয়। আমাদের জীবন যাপনের, নিয়মতত্ত্বের ফাঁকগুলো সম্পর্কে আমরা যখন অবগত হই, তখনই আমরা হয়ে উঠি সংশয়বাদী বিজ্ঞানী, অনুসন্ধানী দার্শনিক।
আমরা সত্যকে খুঁজতে থাকি, কেউ কেউ পেয়েও যাই। আর পাওয়ার পর দমে যাই। চুপ হয়ে যাই। চরমভাবে আহত হই। সুখ চলে যায়। জীবন হয়ে ওঠে বিষাদময়।
কারণ, সব সত্য মঙ্গলময় নয়। সব সত্য প্রকাশ পাওয়াও উচিৎ নয়। আমরা অসংখ্য মিথ্যে ধারণা নিয়েই সুখে আছি। মনকে বুঝ দিয়ে তৃপ্ত থাকি। কিন্তু যদি সে মিথ্যের বদলে সত্যটি আমরা জানতাম, তাহলে আর সুখ থাকত না, তৃপ্তি থাকত না, থাকত না কোন সান্ত্বনা। এমনও সত্য আছে যা শুনলে আপনার আর বাঁচতে ইচ্ছে করবে না।
তাই একবার বলেছিলাম, অধিক দেখিও না বৎস, অধিক দেখিতে নাই।
যারাই রহস্যের পেছনে লেগেছে, তারাই হয়েছে বিপর্যস্ত। গ্লানি, হতাশা আর অপরাধবোধে অনেকেই করেছে আত্মহত্যা। এ অনুসন্ধিৎসা বড়ো ভয়ানক ব্যধি। রহস্য খুঁজতে যাবেন না। এ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
আবার কিছু ক্ষেত্রে সত্য অনাপোষযোগ্য এবং আবশ্যক। যেমন- আদালতের বিচার কার্যে। অবশ্য সেখানেও মিথ্যেই বেশি।
গ্যালিলিও একটি মহাসত্য বলেছিলেন, বিনিময়ে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল। সক্রেটিস সত্য প্রচার করেছিলেন, আর তাঁকে বরণ করতে হয়েছিল হেমলকের বিষ। মেধাবী ভিঞ্চি এখানে বড় কৌশল খাটিয়েছিলেন। তাঁর সত্যগুলোকে তিনি সরাসরি প্রকাশ করেননি, লিখে গিয়েছিলেন সাঙ্কেতিক ভাষায়, তাঁর ব্যক্তিগত ডায়েরিতে। সেই ডায়েরিটিই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রীত পুস্তক।
তসলিমা নাসরিনও কিছু ব্যাপারে সত্য বলেছেন। তাঁর সে সত্যগুলো ঘেন্নাজনক এবং অপ্রয়োজনীয়। তাঁর উঠতি বয়সে তাঁর ফুপা নাকি তাঁর বুকে হাত দিতে গিয়ে অন্তর্বাস ছিঁড়ে ফেলেছিলেন! বুঝলাম, ব্যাপারটি দুঃখজনক, একজন বয়োঃসন্ধির কিশোরী মেয়ের মনে এই অপ্রীতিকর জঘন্য ঘটনাটি গভীর দাগ কেটেছিল মানি, কিন্তু এ কথা প্রকাশ করে তিনি মঙ্গল নয়, তাঁর পাঠকের অনিষ্ট সাধন করেছিলেন। তিনি তাঁর ফুপাকে নয়, নিজেকেই ছোট করেছিলেন।
সমাজ নারীকে ভোগের বস্তু বিবেচনা করে, তাই তিনিও একাধিক পুরুষকে ভোগ করেছেন। একেকজনকে দু'চার দিন বিছানায় রেখে পরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছেন। আর সে পুরুষগুলো শত হাত পা ধরেছে তাঁর পাশে থাকার সুযোগ চেয়ে। ভোগের জন্য নয়, তারা মায়ার জন্য থাকতে চেয়েছে, ভালোবাসার জন্য থাকতে চেয়েছে তাঁর পাশে। এটি তসলিমা স্বীকারও করেছেন। তাহলে প্রমাণ হল কী?
প্রেমকে অবজ্ঞা করেছেন তিনি, আর সেটা কখনই কোন মহৎ কাজ হয়নি।
তিনি পুরুষ মানেই যে রাক্ষস হায়েনার চিত্র এঁকেছেন, তা কতটুকু সত্যি? সমাজের সব পুরুষই কি খারাপ? তাঁর দুর্ভাগ্য যে, তিনি কেবল লম্পটের সাথেই ওঠবস করেছেন, রতনে রতন চিনলে যা হয় আর কি! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মত ভালো পুরুষের সন্ধান তিনি পেলেও তা আর স্বীকার করতে চাননি। বরং সুনীলের সঙ্গে একসাথে রাত্রিযাপনকালে তসলিমা ধরেই নিয়েছিলেন যে সুনীল তাঁর সুন্দর শরীরটাকে না চেখে থাকতে পারবেন না। এটা ভেবে তিনি মনে মনে অধীর এবং উত্ফুল্ল ছিলেন যে, আজ তাহলে সুনীলের মত বিরাট লেখকের মুখোশ উম্মোচিত হয়ে যাবে তাঁর কাছে। বেশ কিছুদিন সুনীলের চরিত্রের কুশদাহ করে লেখা চালানো যাবে তাহলে। অথচ সুনীলের নিষ্কাম আচরণে সেই তিনিই তাঁকে ঈর্ষাপরায়ন হয়ে পুরুষত্বহীন আখ্যা দিয়েছিলেন। আর যদি সুনীল কিছু করে বসতেন তবে তিনি আখ্যায়িত হতেন লম্পট বলে যেটার জন্য তিনি ভীষণ আশাবাদী ছিলেন।
তিনি নারীদের মাঝে পুরুষের প্রতি একটি ঘৃণা ও ভীতি মিশ্রিত ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই ব্যর্থ হয়েছেন।
এজন্যেই বলা হয়, মানবজাতির এখনও সৌভাগ্য যে, নারীরা আর যা-ই হয়ে উঠুক, আজ পর্যন্ত দার্শনিক হয়নি। যদি হতই, তবে মানবজাতির ওপর নেমে আসত ঘোর দুর্গতি।
আমি তসলিমাকে অসুস্থ মস্তিষ্ক মনে করি। তাঁর লেখায় তাঁর মানসিক অসুস্থতাটি সুস্পষ্ট, যা চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। পাগল কখনও জানে না যে, সে পাগল। যাইহোক, তাঁর এসব অনিষ্টকর সত্যে আমাদের কাজ নেই।
আমাদের হুমায়ুন আজাদও কিছু নির্মম সত্য প্রচার করে বোকামি করেছেন। বাংলাদেশে নিরেট দার্শনিক কেবল একজনই জন্মেছিলেন, তিনি হুমায়ূন আজাদ। মানুষের এত মেধা কল্পনা করা যায় না। তিনি সত্য টের পেয়েছিলেন ঠিকই, তবে বাস্তবতাটা টের পাননি। নইলে কি আর গর্ভবতী নারীকে পশুর সাথে তুলনা করেন?
ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মত ভুলটি করেছিলেন আজাদ। সব কিছুর জন্যই একটি সুগম প্রসঙ্গ লাগে, পর্যাপ্ত আলোকপাত লাগে, গ্রহণযোগ্য উপমা লাগে, কিন্তু তিনি এসব বিবেচনা না করেই 'অসময়ে বাবু একখান হাফ টিকিট' করে বসেছেন। ফল তার ভালো হয়নি।
আমারও এই সত্যগুলোকে নিয়ে বড় ভয় হয়। আমি এড়িয়ে যাই, লুকিয়ে রাখি, বলতে চাই না। কেননা, সব সত্যকে গ্রহণ করার জন্য মানব সমাজ এখনও তৈরি হয়ে উঠতে পারেনি। কিছু সত্য অত্যন্ত ওজনদার। হজম করা কঠিন। আর কিছু সত্য আত্মঘাতী।
কিন্তু ভাবি, আমি যেদিন থাকব না সেদিন আমার আবিষ্কৃত সত্যগুলোরও মৃত্যু হবে আমার সাথে সাথে? নাকি আমি সাহস করে ঠিকই বলে যেতে পারব??
আবার ভাবি, থাক। সব সত্যে কাজ কী? পৃথিবীর সব রহস্য ভাঙতে নেই। তাতে পৃথিবী নীরস হয়ে যাবে, অনিষ্ট হবে সকলের। সত্যকে পুরোপুরি জেনে গেলে মানুষ অহঙ্কারী আর স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে। কাজ নেই বাবা, কাজ নেই।
পরিশেষে বলি, সত্যের চেয়ে মিথ্যে সুন্দর হয় সবসময়। মিথ্যে সাজানো গোছানো হয় বলে তা অনেক ঝকমকে দেখায়। আর সত্য নির্ভেজাল, নিষ্প্রলেপ হয় বলে তা থাকে ম্লান। সত্য প্রতিষ্ঠার বড়ো পীঠ যে আদালত, সত্যের বড়ো অবমাননাই হয় ওই আদালতে।
জয়, তবে মিথ্যারই হোক জয়।
সত্যও করুক আজি মিথ্যার আশ্রয়।
©somewhere in net ltd.