নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
(তৃতীয় পর্ব)
ধরুন, টয়লেটে ঢুকতে যাচ্ছেন, দরজা খুলতেই আচমকা দেখতে পেলেন অন্ধকারে ফোকলা মুখের ধবধবে হাসি !
ঘোমটা মাথায় বসে আছে আপনার বুড়ি দাদি, যে কিনা বছর পাঁচেক আগেই গতায়ু হয়েছে !
কেমন লাগবে তখন ?
জ্ঞান হারাবেন নিশ্চয়ই ?
এরকম পরিস্থিতিতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাওয়াই মঙ্গল । কমের ওপর দিয়েই ভয়টা যায় । :-)
আজ আপনাদের বলব এরকমই একটি ঘটনা । তখন আমাদের মেট্রিক পরীক্ষা চলছে । পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে বেশ দূরের এক মফস্বল শহরে । এক মাসের জন্য ঘর ভাড়া নিতে হয়েছিল এক কলোনিতে । সেটা আসলে কোন ক্লাসিফিকেশানের মধ্যে পড়ে না । ভাড়া ত্রিশ টাকা । নিম্নবিত্তের বসবাস । ছয়টি বাসা । ব্যাচেলরও আছে, ফ্যামিলিও আছে ।
সেখানকার টয়লেট ছিল ঘর হতে বেশ দূরে জংলা প্রকৃতির এক খালের পাড়ে । সেই খাল এবং টয়লেট উভয় নিয়েই বেশ কানাঘুষা ছিল, শোনা যেত, ওই খালে প্রায়ই লাশ ভেসে আসত । বিদঘুটে সব লাশ । আবার টয়লেটেও নাকি কী সব দেখতে পেয়েছে অনেকে । দরজা খুলতে চায় না, ছাগল ডাকে, অদ্ভুত অদ্ভুত ঘ্রাণ ইত্যাদি হাজার ফিরিস্তি । আমাকে প্রথমেই অন্যরা সাবধান করে দিয়েছিল । আমি গায়ে মাখার মানুষ ছিলাম না কোন কালে ।
সাহস ছিল বেজায়, অবশ্য সে সাহস পরে কুঁচকে গেছে ।
তো এক রাতে পড়তে পড়তে দেড়টা বেজে গেল । সবাই ঘুমে । যে চাকরটি ফাই-ফরমাশ খাটতে আমার সঙ্গে এসেছিল, সেও নাক ডেকে চলেছে । ঘুমুতে যাবার আগে ইচ্ছে হল টয়লেটে যাই একবার । যাওয়াটা তেমন আবশ্যক ছিল না, কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের একটা ঝোঁক ছিল মাথায় ।
বেড়িয়ে পড়লাম তখন । কাঁসার বদনায় পানি ভরে এগিয়ে গেলাম গাছপালার ভেতর দিয়ে । টয়লেট দুইটা, লাগোয়া । প্রথমটি নোংরা, ভাঙাচোরা । তাই জলা জায়গায় হলেও ওটাতে যেতে সবসময়ই অনীহা ছিল । আর দ্বিতীয়টি বেশ পরিষ্কার । তবে ওটা একেবারে জঙ্গলে সাঁধানো । একটু সঙ্কোচ করে তবুও এগিয়ে গেলাম দ্বিতীয়টার দিকে ।
ভাগ্যের চেয়ে ওটাকে দুভার্গ্যই বলব যে, ওখানে বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল । দুর্ভাগ্য এই যে, টয়লেটের আশেপাশে কোন আলোর ব্যাবস্থা ছিল না । পাশের এক কলোনির আবছা আলো গাছপালা ভেদ করে ছোপছোপ এখানে ওখানে একটু পড়েছে এটুকুই ভরসা । দ্বিতীয় টয়লেটটা বাঁশঝাড়ে ঢাকা । তার হাত পাঁচেক দূরে পশ্চিমে একটি মেটো দেয়াল । পূবদিক হতে একপশলা আলো এসে সে দেয়ালে বেশ উজ্জ্বল হয়ে পড়েছে ।
টয়লেটের দরজা টানলে হয়ত হঠাৎ দেখব যে কেউ বসে আছে— এরকম একটা অলীক কল্পনা আমার ছেলেবেলা হতেই ছিল । দাদির কাছ থেকে ভুতের গল্প শুনে শুনে এই কল্পনা গেঁথে গিয়েছিল মনে । তাই, আমি দরজা খোলার সময় স্বভাববশতঃ মুখ পশ্চিমের দেয়ালের দিকে করে রেখেছিলাম । টয়লেটের ভেতরে কী আছে সেটা আমি এখনই দেখতে চাই না । স্থির হয়ে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে ভেতরে তাকাব আর তারপরই ঢুকব— এমনটাই আমার অভ্যেস ।
বিপত্তিটা ঘটল এই কৌশলেই । আমি যে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থেকে টয়লেটের দরজা টেনে খুলছিলাম, সেই দেয়ালের ওপর দেখতে পেলাম একটি দীর্ঘকায় ছায়া— যেন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ! সেটা দেখতে অনেকটা এবড়োথেবড়ো খড়ের মূর্তির মতো, মাটির প্রলেপ দেওয়ার আগে খড় আর চটা দিয়ে যে আদল তৈরী হয় সেইমতো কিছু একটা ! নিচু মাথা ক্রমশঃ উঁচু করে উঠে দাঁড়িয়েছে এমন ! বিরাট ! দীর্ঘ !
আমার দৃষ্টি ঝিলিক দিয়ে উঠলো । আমি থমকে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম যে, আসলে এটা আমি কী দেখেছি !
সাহস আমার বেশ ছিল । তারমানে এই নয় যে আমার কোন ভয়ই ছিল না । ভয়বোধ মানুষ হিসেবে আমারও ছিল, আছে । তবে আমি খুব যুক্তিবাদী । যাচাই না করে কিছু মানার পাত্র নই ।
টয়লেটের ভেতরে তাকালাম, সেটা ফাঁকাই আছে । ভাবতে লাগলাম, ব্যাপারটা কী ! একটা ব্যাখ্যা ঝিলিক দিয়ে উঠল মাথায় । ভাবলাম, হয়ত এমন হয়েছে যে, আমি যখনই দরজাটা বাইরের দিকে টেনে খুলেছি, সেই দরজার প্রলম্বিত তির্যক ছায়া দেয়ালে পড়ে এমন একটা বিভ্রমের সৃষ্টি করেছে ।
আমি ভেতরে না ঢুকে ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আবার দরজাটা কয়েকবার টেনে বন্ধ করে, আবার খুলে— আবার বন্ধ করে, আবার খুলে নাড়াচাড়া করে দেখলাম । কিন্তু সে মূর্তির আর খোঁজ নেই । দরজার কোন ছায়াই সে দেয়ালে পৌঁছয় না । অন্য কেউ হলে হয়ত চিৎকার দিত, হয়ত বদনা ফেলে দৌড়ে পালাত, কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে আছি কৌতুহল নিয়ে । নিজের কাছে নিজে হারতে চাই না ।
চলে তো যাবই না । পালাব না আমি । তবে একবার ভাবলাম, এই দ্বিতীয় টয়লেটে যখন ধন্ধ তখন নাহয় প্রথমটাতেই ঢুকি । কিন্তু সেই অভক্তি বশে ঢুকে পড়লাম দ্বিতীয়টাতেই । টয়লেট হল না কিছুই, শুধু ভাবতে লাগলাম, আমি এটা বোকামি করেছি । কী দরকার এসব ফটকা সাহসের ? এখন যদি একটা বিপদ ঘটে ? যদি দরজা খুলে ভয়ানক কিছুর সামনে পড়ি ? যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় এখন তবে কালকের পরীক্ষার কী হবে ?
আমি এসব ভাবছি আর দরজার ফুটো দিয়ে বাইরে সন্ধানী চোখ রাখছি । গাছপালার অবস্থান সব অবিকল আছে কি না, হঠাৎ করে কিছু পয়দা হয়ে যাচ্ছে কি না— ইত্যাদি । মতলব আঁটলাম, বদনার পানি সবটা খরচ করব না । যদি দরজা খুলে সামনে কিছু দেখি তো আগে এই ঝুটা পানি মারব ওর মুখ বরাবর । তারপর যা হয় হবে ।
আমি দরজা মেললাম একটু একটু করে । নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে হ্যাঁ, সব ঠিক আছে । দরজার সামনে একটি নারকেল গাছ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । বাইরে এসে দাঁড়ালাম । সাহস বেড়ে গেছে তা নয়, তবে দ্বিধা কাজ করছে । কী যে দেখেছি— এখনও বুঝতে চাইছি । চারপাশ বড়ো অস্বাভাবিক রকমের থমথমে হয়ে আছে । বুঝতে পারছি, পরিবেশটা মোটেও স্বাভাবিক নেই । কাঁসার বদনা শক্ত করে হাতে ধরা । অদূরে কোথাও ভয়ার্ত স্বরে চেঁচিয়ে চলেছে একটি কুকুর !
নিজেকে বোঝাচ্ছি, অনেক হয়েছে বাহাদুরি । ভালোয় ভালোয় এখন ঘরে ফেরা উচিৎ । আমি ফিরতি পথ ধরলাম । হঠাৎ একটা অস্বাভাবিক জোরালো বাতাস যেন পেছন থেকে ধাক্কা দিল অমাকে ! একটা ভ্যাপসা অনুভূতি । ঠাণ্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ।
আমি আর থামলাম না । জানি, এসময় পেছন ফিরে তাকাতে নেই । দৌড়ও দিলাম না, অনেক শান্ত ভঙ্গীতে পায়ের পর পা ফেলে হাঁটতে লাগলাম ঘরের দিকে । আর কিছু ঘটল না ।
তবে তার পরের রাতেই একজন ভীষণ চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল সেই টয়লেটের সামনে !
সে তো আরেক কাহিনী ।
বলব আরেক দিন ।
#Zeonic_গল্পকথা
©somewhere in net ltd.