নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
লেখার concept চুরি প্রসঙ্গে কেউ একজন বলেছিল, জ্ঞান আবার চুরি হয় নাকি ?
concept চুরির ভয় যে করে সে নাকি সংকীর্ণমনা !
আমি মনে মনে ভাবি জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা, তাঁর আবিষ্কার প্রচারের অভাবে চাপা পড়ে গিয়েছিল, রেডিও আবিষ্কারক ঘোষিত হয়েছিলেন মার্কনি ।
মার্কনি অবশ্য জগদীশের কাছ থেকে কন্সেপ্ট চুরি করেননি । ব্যাপারটা ছিল coincidence । তবুও কি জগদীশ ব্যথিত হননি ? গোটা ভারতবাসীর বুক জ্বলেনি ?
আমার মনে পড়ে সেইসব বেনামী লেখকের কথা, যারা লেখা নিয়ে প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দেয়, হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে গিয়ে, হাত পা ধরে একটু অন্তত পড়ে দেখার জন্য ।
প্রকাশকের সময় কোথায় ?
ফুরসত পেলে তো পড়বেন তিনি । তাই প্রকাশকের কথা মতো পাণ্ডুলিপি জমা রেখে আসে উঠতি লেখক ।
দিন দশেক পরে দেখা যায় হুবহু একই কবিতা, একই লাইন কেবল সামান্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে অন্য নামে । কিংবা একই গল্প কিছুটা কাটছাট করে চরিত্রের নামগুলো পাল্টে দিয়ে, ঘটনায় অল্প বিস্তর সংযোজন বিয়োজন করে প্রকাশ করা হয়েছে অন্য কোন রাশভারী লেখকের নামে ।
ভাবুন তো, ওই বেনামি লেখকদের তখন কেমন লাগে ! সে কিছু বলতে গেলেই তো সংকীর্ণমনা হবে তাই না ?
না, জ্ঞান তো চুরি হয় না । কারো বাপেরও সাধ্য নেই ওই পথের লেখকের জ্ঞান চুরি করার । ওর জ্ঞান পকেটেই পঁচবে । নয়ত এভাবেই অকাতরে বেহাত হবে । ওর জ্ঞান পরাজিত হবে এভাবেই ।
একটা নাটক দেখেছিলাম, এক কবি তার কবিতা টাকার অভাবে কোথাও ছাপাতে না পেরে শেষমেশ ইটের টুকরা দিয়ে রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে কবিতা লিখে বেড়ায় ।
জ্ঞান চুরি হয় না । জ্ঞানের কোন মা বাপ নেই, কোন মালিকানা নেই । জ্ঞানের গায়ে লোগো বা স্টিকার থাকে না যে দেখলেই চেনা যাবে এটা কার ।
নারী আর ভূখণ্ড সম্পর্কে বলা হয় এরা যখন যার তখন তার । এই তালিকায় জ্ঞানও অন্তর্ভূক্ত । যখন যার তখন তার । এ বই সে বই থেকে উক্তির পর উক্তি ঠোঁটস্থ করে নিয়ে বিদ্বান সভায় গিয়ে টেবিল চাপড়ে কপচাতে পারলে সেটাকেও আমি জ্ঞান বলি না ।
জ্ঞানের সংজ্ঞা যদি লিখতে হয়, তবে সেখানে দুইটি বৈশিষ্ট্য বা যোগ্যতার উপস্থিতি অত্যন্ত আবশ্যকীয় মনে করি প্রথমটি হল বিচক্ষণতা আর দ্বিতীয়টি উদ্ভাবনী ক্ষমতা । এ দুটি যার মধ্যে আছে, সে বই না পড়লেও, বিদ্বান সভায় তার নামে চেয়ার বরাদ্দ না থাকলেও সে জ্ঞানী ।
মুখস্ত বিদ্যাকে বিদ্যাই বলা যায় বড়োজোর, জ্ঞান বলা যায় না ।
যে অনেক জানে আমি তাকে জাননেওয়ালা বলতে রাজি আছি, জ্ঞানী নয় ।
এখন, আমরা যত যা শিখেছি এ যাবত, তার প্রায় সবটুকুই হয় বই পড়ে, নয়তো বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে অনুসরণে । নিজে নিজে শিখেছেন ক'জনে ?
নিজে নিজে শেখা যায় । নিজে নিজেও আবিষ্কার করা যায় । এ যোগ্যতা সবাই নিয়ে জন্মে না । নিজে নিজে শিখেছিলেন হজরত ইব্রাহীম আ. আকাশের তারায় তারায় তিনি খুঁজে বেড়িয়েছেন তাঁর রবকে ।
আচ্ছা, তিনি তো নবী, বাদ দিচ্ছি তার কথা । তবে বলি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কথা । কেউ তাঁকে শিখিয়ে দেয়নি । তিনি নিজেই জন্ম দিয়েছে অসংখ্য সব যুগান্তকারী তত্ত্বের । বলি, কনফুসিয়াসের কথা, বলি রেনে ডেকার্টের কথা ।
অবশ্য, এসব বলেই বা লাভ কী ?
সবাই তো আর ওরকম উদ্ভাবনী চেতনার অধিকারী হয় না, আমরা দশটা বইয়ের concept, দশজন বিচক্ষণ ব্যক্তির attitude থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেরা নিজেদের বুদ্ধির সংযোগে নতুন কিছু লিখি বা বলি । কেউ এখানে আর ওইসব লেখক বা ব্যক্তির কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করি না । প্রয়োজনও পড়ে না । যেমন ধরুন, বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে । এটি এখন একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ । আমরা হরদম ব্যবহার করি, অথচ এটির লেখকের নাম জানি না বা বলার প্রয়োজন হয়ও না ।
এ জ্ঞান এখন সার্বজনীন । আর সার্বজনীন জ্ঞান হল আহরিত জ্ঞান । এখানে সবার অধিকার । অপরদিকে, যে জ্ঞান এখনও সার্বজনীনতা পায়নি, এখনও যে জ্ঞান সবার কাছে পৌঁছয়নি, তাকে নামোল্লেখ ব্যতীত নিজের নামে প্রচার করে বাহবা নেওয়া বা সেখান হতে ধারণা গ্রহণ করে নিজেকে জাহির করা চৌর্যবৃত্তি ছাড়া আর কী ?
আপনি লিখেছেন বলে যে আমি লিখতে পারব না সে দাবি অচল । তবে আমি লেখার সময় অবশ্যই যেটা করব, তা হল আপনার কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেব । আমি অবশ্যই উল্লেখ করব যে, আপনার লেখা দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি, কিংবা আপনার লেখার কিছু অংশের সাথে আমি একমত নই বলেই এই লেখা লিখছি ।
এটুকু আমি করবই । কারণ আমি নিজের কাছে নিজে ছোট থাকতে চাই না ।
এক প্রদীপ শিখা হতে হাজার নেভানো প্রদীপ যদি প্রজ্জ্বলিত হয় তাতে হয়ত জড় প্রদীপের কিছু যায় আসে না । বলা হয়, জ্ঞান দান করলে জ্ঞান বাড়ে, বাড়ে বৈকি, কিন্তু জ্ঞান যদি চুরি হয়, তবে লেখকের স্পৃহা মরে, লেখক কষ্টে, দুঃখে তার কলম ছাড়ে ।
এটা বাস্তব জগত । এটাই বাস্তবতা ।
যাইহোক, এই বিরক্তিকর প্যাঁচাল এখন শেষ করব একটি গল্প দিয়ে । আমরা যা যা জানি, তার সবটা কখনও প্রকাশ করি না । অনেক কিছুই প্রকাশ করা সম্ভব হয় না সঙ্কোচে, সংস্কারের প্রতিবন্ধকতায় । আর সম্ভব হয় না নিঃস্ব হবার ভয়ে । অন্যে জেনে যাবে এই ভয়ে । এ প্রসঙ্গেই এবারের গল্প ।
এক মার্শাল আর্ট ওস্তাদ তাঁর এক শিষ্যকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন । পরম স্নেহে একে একে সব আর্ট ফর্ম, সব কৌশল তাকে শিখিয়ে দিলেন ।
যখন সব শেখানো শেষ, তখন আর শিষ্যকে পায় কে ?
শিষ্য এবার ওস্তাদকে ম্যাচ চ্যালেঞ্জ করে বসে । ওস্তাদ বুড়ো মানুষ, এক ঠ্যাং কবরে, তার ওপরে সমস্ত কৌশলই শেখানো শেষ এখন কি তিনি আর পারবেন এই জোয়ান শিষ্যের সাথে ??
বিচক্ষণ ওস্তাদ সাহস হারালেন না । নির্ধারিত দিনে তিনি লড়াইয়ের মাঠে এলেন । শিষ্যকে দেখিয়ে দেখিয়ে তিনি আটটি spoon (চামচ) কোমরে দড়ি দিয়ে পেঁচাতে লাগলেন । শিষ্য তো এই চামচ পেঁচানো দেখে গেল ভড়কে । জিজ্ঞেস করল, এটা কী ?
ওস্তাদ তখন মুচকি হেসে বললেন, হা রে বোকা ছেলে, তোকে সব শেখালেও সবচেয়ে বড়ো যে কৌশল এই spoon therapy আমি রেখে দিয়েছিলাম নিজের হাতে । কারণ, এটাই ছিল তোর সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা এবং তুই ফেইল করেছিস ।
শিষ্যের তখন মনোবল ভেঙে গেল । সে জলদি পায়ে পড়ল ওস্তাদের । আর ওস্তাদ বললেন, বেঈমানের কোন ক্ষমা নেই ।
ন্যাড়া তো বেলতলায় একবারই যায়, তাই না ?
©somewhere in net ltd.