![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
(মাঝে মাঝে এমন হয়- অনেক লেখা পড়ে আছে, কিন্তু লিখতে ইচ্ছা করে না। আলস্য ভর করে। আমার হয়েছে এমনটা!)
২৩ আগস্ট, ২০১৬ (মঙ্গলবার)-
রাতে ঘুমোতে যাবার আগে পাশের রুমে খাট টানাটানির শব্দ পাওয়া গেছে। এ আর নতুন কি! গল্পটা সময় মতো বলা যাবে।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই মেঘেদের লুকোচুরি। চারপাশে সবুজ পাহাড়। মেয়েরা হাতে বই, ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আমি ও শাকিলা ঝটপট তৈরি হয়ে হোটেলের বাহিরে বের হলাম। শান্ত, মোহনীয় সকাল। হাটতে হাটতে সামনে এগুতেই এক ঝোপ সূর্যমূখী’র দেখা পাই- কত সতেজ। বেশ কিছু ছবি তুলে সামনে এগোই। সন্ধ্যায় হোটেলে আসার পথে ক্লক টাওয়ারটা দেখেছিলাম। বেশী দূরে হবার কথা নয়।
থিম্পুর মেইন রোড আমাদের হোটেলের পেছনে। হাটাপথে উঠতেই রাস্তা লাগোয়া সুইডেন এ্যাম্বাসি’র ভবন চোখে পড়ল। কোন নিরাপত্তা নেই, চাকচিক্য নেই। আশেপাশে অনেক বার ও রেস্তোরা। সকাল বলে চারিদিকে একটা নীরবতা ছিল। দুই লেনের প্রধান রাস্তাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। কিছুদূর যেতে একটা মন্দির পেলাম। দুই একজন প্রেয়ার হুইলগুলো ঘুরাচ্ছিল। সেখান হতে ক্লক টাওয়ারটি দেখা যাচ্ছে। ৪টি ঘড়ি সম্বলিত দন্ডটিতে ভূটানিদের নিজস্ব রীতি’র ড্রাগন ও অন্যান্য কারুকাজ দেখতে পেলাম। এটা থিম্পুর একটি ল্যান্ডমার্ক। একে ঘিরেই হোটেল, বাজার, রেস্তোরাগুলোর অবস্থান। চত্বরটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, আর রাস্তার পাশের সিড়িতে বসে ভূটানিরা তা উপভোগ করে। সকাল বলে অনেকগুলো কুকুর সেখানে ঘুমাচ্ছিল, আমরা তাদের ঘুম ভাঙ্গালাম না।
নীরবতা আর নির্মলাতার পরশটুকো নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। মিলন, লিজাও আশেপাশে হেটে ফিরেছে। কর্মা লোটে ৯ টায় আমাদের নিয়ে থিম্পু অভিজানে বের হবে। এখন নাস্তা খাবার সময়। নানাকে নিতে তার রুমে ঢুকলাম। নানা খাটের উপর একদৃষ্টি নিক্ষেপে করে বসে আছেন। আমাকে দেখে স্বস্তি পেলেন। জানালেন, সেই ফজর থেকে বসে আছেন। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে গেছেন। আরো জানালেন, উনি রাতে খাটে ঘুমাননি। কেন? উনি ঘুমাতে গিয়েছিলেন- কিন্তু নরম বিছানায় ওনার শরীর ব্যথা শুরু করে, তাই ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন।
আমি অবশ্য তেমন অবাক হলাম না। দেশেও উনি খাটে তোষক ব্যবহার করেন না, কাথা বিছিয়ে থাকেন। যত গরমই হোক ওনাকে ঘরের ফ্যানটি চালাতে দেখিনি। ওনার কথা হচ্ছে প্রাকৃতিক বাতাসই ওনার জন্য যথেষ্ট। রাতে খাবার শেষ করে ডাক্তারের পরামর্শ মত ২ ঘন্টা বসে থাকেন। এজন্য এখন মাগরিবের নামাজ শেষেই উনি রাতের খাবার খেয়ে ফেলেন।
আমরা হোটেলের রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে বসলাম। নানা মহাআনন্দে মিলন/লিজাকে রাতের ফ্লোরে থাকার কাহিনী শোনাচ্ছেন। কিন্তু নাস্তা দিতে এত দেরী করতে থাকল যে আমরা সবাই ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, নানা কিছু করতে না পেরে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। আধাঘন্টা অপেক্ষার পর গরম গরম নাস্তা আসে-লুচি, আলু পরোটা, আলুর দম ও চাটনি।
আমার ও শাকিলা’র আলু পরোটা অনেক প্রিয়। সৌদি আরবে শুধুমাত্র রোজার সময় এক পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে আলু পরোটা বানাত। আদিল ভাই সেই খোঁজ দেন। সেই আলু পরোটা মজা করে খেতাম। আদিল ভাই যখনই সুযোগ পেতেন তা কিনে খেতেন। ভূটানের আলু পরোটা’র খেয়ে আদিল ভাইয়ের জন্য আফসোস হল-এই স্বাদ উনি নিতে পারছেন না। এই আলু পরোটার কাছে পাকিস্তানিটা অতি সাধারণ মনে হল।
কর্মা লোটে ঠিক ৯টায় উপস্থিত। আমরা মাইক্রোতে উঠে বসলাম। কর্মা প্রথমেই আমাদের ক্লক টাওয়ার হতে ২/৩ মিনিটের দূরত্বে ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চরতেন নিয়ে গেল। এটাকে কিং’স মেমোরিয়াল চরতেনও বলে। চরতেন মানে- বিশ্বাসের স্থান। চরতেন বা স্তুপা বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থান, একধরণের সাদা কাঠামো যার চূড়ায় পেচানো সোনালী রংয়ের গোলক থাকে। স্তুপার ভেতরে সাধারণত ভিক্ষুদের দেহবশেষ রাখা হয়। ভূটানের বিভিন্ন স্থানে আমরা ছোট বড় এধরণের স্তুপা দেখেছি।
১৯৭৪ সালে রাজমাতা পুন্টশো চোদেন ওয়াংচুক তার প্রয়াত পূত্র ভুটানের ৩য় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক (১৯২৮-১৯৭২) এর সন্মানে ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চরতেন তৈরি করেন। অন্যান্য স্তুপার মত এখানে কোন দেহবশেষ রাখা হয়নি, শুধুমাত্র রাজার একটি ছবি টানিয়ে রাখা আছে।
ভূটানিদের দেখলাম স্তুপাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে। অনেকটা মুসলমানদের কাবার মতো। তবে একটা পার্থক্য আছে-কাবার চারপাশে ডানদিকে প্রদক্ষিণ করা হয়, এখানে ওরা বামদিকে প্রদক্ষিণ করছিল। কর্মাকে পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানাল- ৩/৫/৭ বা তারো বেশীবার তারা এটা পূণ্যের আশায় প্রদক্ষিণ করে থাকে।
চরতেনের পাশেই বিশাল বিশাল প্রেয়ার হুইল। সবাই গিয়ে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কর্মার কাছে জানলাম হুইলগুলোর ভেতরে অনেক মন্ত্র লেখা কাগজ আছে, হয়তো লক্ষ লক্ষ মন্ত্র সেখানে লেখা আছে। কেউ যদি একবার প্রেয়ার হুইল ঘুরিয়ে দেয় তাহলে তার জন্য লক্ষ মন্ত্র একবার পড়া হয়ে গেল। আমাদের জাতীয় সংসদে এমন একটা ব্যাপার ঘটে - প্রশ্নের উত্তর অনেক লম্বা হলে সেটা অল্প কিছু পড়ার পর উত্তরটি সবার সম্মতিতে পঠিত বলে গন্য করা হয়। যেহেতু প্রেয়ার হুইল ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত, আমরা কেউ তা ঘুরাতে গেলাম না।
নানাকে নিয়ে একটা ভয় ছিল। উনি এবং আমরা সবাই ইসলাম ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলি। এখন এই মন্দির অথবা বিভিন্ন মূর্তি দেখতে যাওয়া কিভাবে নেবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। উনি সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন। উনি বললেন- যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে, ভূটানিদের আকীদা তাদের কাছে। আমরা টুরিস্ট মাত্র, আমরা ঘুরে বেড়াতে এসেছি।
চরতেন হতে বের হয় পাহাড়ী আকাবাকা পথ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। দূর হতে বুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূর্তিটি চোখে পড়ল-উচু পাহাড়ের চূড়া হতে থিম্পু ভ্যালির দিকে তাকিয়ে আছে। কর্মা লোটে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আর জিজ্ঞাসা করলাম না। অনুমেয়, আমরা যাচ্ছি –বুদ্ধা পয়েন্ট।
(চলবে)
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১২
মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। কাছেই তো, সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন।
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: উপভোগ্য বর্ণনার সাথে দৃষ্টিনন্দন ছবি। চমৎকার!
ধন্যবাদ মধুমিতা।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৩
মধুমিতা বলেছেন: পড়ার জন্য এবং ভালো লেগেছে বলে আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন ভ্রমনে সংগী করায় ধন্যবাদ
প্রকৃতির সাথে জীবন দর্শন জীবন যাপন কত্ত কিছু উঠেেএসেছে
ভাল লাগল
++++
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৭
মধুমিতা বলেছেন: সত্যি বলছি- লেখার সময় আপনার কথা ভাবছিলাম। লেখাটির জন্য অপেক্ষায় রাখার জন্য দু:খিত। যেটা দেখি তার বাহিরে বেশী বর্ণনা করতে পারিনা। জীবন দর্শন আমার মতোই সাধারণ।
ভালো থাকবেন।
৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩
কালীদাস বলেছেন: বৌদ্ধরাও প্রদক্ষিণ করে!! কত অজানা। প্রেয়ার হুইলের কনসেপ্ট দেখে মজা পেলাম
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩
মধুমিতা বলেছেন:
৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কালীদাস বলেছেন: বৌদ্ধরাও প্রদক্ষিণ করে!! @ কালিদাস দা- এটা বোধকরি সৃষ্টির মৌলিকতা!
অনু পরমানু চক্রের আবর্তনে লক্ষ্য করুন!
আমরা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই চক্রাবর্তনেই আছি!!!! হা হা হা
লেখক বলেছেন: সত্যি বলছি- লেখার সময় আপনার কথা ভাবছিলাম।
@ সত্যি কৃতার্থ বোধ করছি। এ অধম কে মনে করেছেন জেনে!
অনেক অনেক ধন্যবাদ
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪
মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। পরের পর্ব তাড়াতাড়িই দিয়ে দিলাম।
৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:০৯
জুন বলেছেন: আমরা যে পথে পথে ঘুরেছি পাচদিন ধরে, আপনিও সে পথেই চলেছেন মধুমিতা। অপেক্ষায় রইলাম পুনাখা হয়ে ওয়াংডির পথ পর্যন্ত ঘুর ঘুর করার
+
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
মধুমিতা বলেছেন: পথতো সব একই। আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ছবি গুলো অনেক সুন্দর
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩১
শোভন শামস বলেছেন: উপভোগ্য বর্ণনার সাথে দৃষ্টিনন্দন ছবি।
সেই সাথে পরবর্তী পর্ব পড়ার এবং অনেক ছবি দেখার আশায় থাকলাম। সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ ।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। পরের পর্ব দিয়ে দিয়েছি। ভালো থাকবেন।
৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫৪
বিলিয়ার রহমান বলেছেন: দারুন সব ছবির সাথে সুন্দর বর্ননা!
প্লাস
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১০| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৯
শামীম সরদার নিশু বলেছেন: সুন্দর লিখছেন, আমি ব্লগে নতুন, পাশে থাকবেন।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনিও লিখতে থাকুন।
১১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৫১
হাসান রাজু বলেছেন: মনে হচ্ছে চেনা পথটা ধরে ধরে আসছেন । আসম্ভব সুন্দর শান্ত দেশ ।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯
মধুমিতা বলেছেন: কোন সন্দেহ নাই। ঘুরে এসেছেন?
১২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১
হাসান রাজু বলেছেন: হ্যাঁ । লেখার হাত ভালো না তাই ছবি ব্লগ শেয়ার করেছিলাম ।
সময় হলে দেখবেন । ক্লিক ।
ক্লিক
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০১
একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: দারুন বর্ণনা করেছেন ।সেই সাথে ভুটান যাওয়ার ইচ্ছাটা জাগিয়ে দিলেন ।