![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে সময় ফিরে আসে। দুই হাজার তের সালে তারিখটা ছিল চব্বিশে ডিসেম্বর। ক্রিসমাসের আগের দিন ক্রিসমাস ঈভ। খ্রিস্টানদের আনন্দ উৎসবের সময় আমাদের ছুটি ছিল। পারিবারিকভাবে সবাই মিলে মজা করছিলাম। টিভিতে মুভি দেখতে দেখতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। আসবে আসবে করে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে বিদ্যুৎ না আসায়, আমরা সবাই ঘুমাতে গেলাম।ডিসেম্বর মাসের শীতে হিটিং ছাড়া ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল বাড়িঘর। রাত শেষ হওয়ার পরে দেখলাম সারা শহর জুড়ে এক তছনছ অবস্থা। বৃষ্টির জল জমে গাছের ডাল পালাগুলো ভারি হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে, ঝুলে পরেছে মাটিতে বিদ্যুতের তার। শহর অন্ধকার ছিল সে সময় তিন চারদিন। জলের এমন আগ্রাসন, মানুষের দুরবস্থা করতে পারে আগে কখনো দেখিনি। প্রচুর তুষারপাত দেখা হয়েছিল। বন্যা, ঝড় অনেক কিছু দেখেছিলাম। সেবার ফ্রিজিং রেইনের ভয়াবহতায় চেনা হয়েছিল।
অনেক বছর পর এবার বসন্ত শুরু হওয়ার পর সেই ভয়াবহ ফ্রিজিং রেইনস্ট্রম আবার জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলল। সময়টা এবার ঈদের আগের রাত্রে। সকাল থেকে শহরে ঘুরছিলাম কাজে। কিন্তু এবার আবহাওয়া বারতায় ফ্রিজিং রেইন শুরু হবে সন্ধ্যা থেকে জানা থাকার জন্য। শহরে কারো বাড়িতে না গিয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে এলাম। সাথে নিয়ে আসলাম অনেক বাজার সদাই।
রাত এগারোটার পর থেকে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ঝিলিক দিতে শুরু করল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম তুমুল বৃষ্টিপাত। ধীরে ধীরে ভারী বৃষ্টিপাতে গাছগুলো বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। ডালে ডালে ঘষা লেগে করকড়াৎ শব্দ করছিল
। ঘরে বসে নানা রকম শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে থেকে। বিদ্যুৎ আসা যাওয়া এবং লাফ ঝাপের মাঝে একেবারেই চলে গেল রাত একটার সময়। নিকষ অন্ধকারে নীলাভ আলোর ঝিলিক খেল ছিল আকাশ জুড়ে। যা বজ্র বিদ্যুৎ মনে হলো না। বরং মানুষের তৈরি কোন যন্ত্র স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে নিভে গেল একবারে। বিদ্যুৎ আসবে আসবে অপেক্ষা করে দুই দিন কেটে গেল।
যদিও সেবারের মতো শীত নেই এখন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিহীন সময় কোন কিছুই করার উপায় নেই এই সময়ে। আড়াই দিন চলছে বিদ্যুৎ বিহীন রান্না খাওয়া করতে পারলাম কিন্তু ধরে রাখা পানি, ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়া পানির পাম্প কাজ করছে না। দোকানপাট বন্ধ বিদ্যুৎ না থাকায়। পানির বোতল কেনার উপায় নেই। ফ্রিজ বিদ্যুৎ বিহীনভাবে খাবার ভালো রাখার কোন উপায় নেই। দুই লক্ষের উপর মানুষ বিদ্যুৎ বিহীন প্রভিন্স জুড়ে । বিদ্যুৎ কর্মীরা দিনরাত্রি কাজ করছে। কিন্তু যে বিশাল এরিয়া জুড়ে, বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সবটুকু সারিয়ে তুলতে কয়েকদিন সময় লাগবে। আরো তিনদিন পরে আমার এলাকায় বিদ্যুৎ আসার সময় দিয়েছে। হয়তো কিছুটা আগে আসতেও পারে তবে আজ বা কাল নয়। ক্রমাগত ফোন করে তিনদিন পর আজ ওদের সাথে কথা বলতে পারলাম। আর তিন দিন পরের সময়টা জানালো বিদ্যুৎ আসার। যা আমি অনলাইনেও দেখতে পাচ্ছিলাম। কিনে আনা সমস্ত খাবার নিয়ে এখন আবার ছুটতে হবে অন্য বাসায়, যেখানে বিদ্যুৎ আছে। তিনদিন পর্যন্ত এভাবে থাকা যাবে না। ঠান্ডা যা মনে হয় বসন্ত এসেছে বলে কমে গেছে তাও কিন্তু নেমে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই মাইনাসের ঘরে সর্বোচ্চ সাত। এমনটাই থাকবে আরো দেঢ় মাস। আমি না হয় অন্য বাড়িতে গিয়ে, কাটিয়ে দিব আরামে। কিন্তু আমার ঘরের গাছগুলো তারা আর তিন দিন ঠান্ডায় কাটাতে পারবে তো! কত যত্নে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখি আলো, উত্তাপ,জল এবং খাবার দিয়ে। মাত্র তিন দিনে তারা দুর্বল হয়ে যাবে না তো।
গতকাল অনেকটা দূর ড্রাইভ করে গিয়েছিলাম। ট্রাফিক লাইট গুলো জ্বলছিল না। রাস্তার দুপাশে ভাঙ্গা গাছের সারি। কোথাও কোথাও গাছ পড়ে গেছে মানুষের বাড়ির উপরে,গাড়ির উপরে। কোন বাড়ি একটুর জন্য বেঁচে গেছে।
আমার বাড়ির চারপাশে অনেক গাছ পরিষ্কার করে ফেলার পরেও শেষ রক্ষা হলো না। রাস্তায় কোথাও ছিঁড়ে পড়ে গেছে বিদ্যুতের তার। গতকাল এমন বিদ্যুতের শুয়ে পড়া তার অনেক দেখেছি রাস্তার পাশে।
ঘনবসতি শহর অঞ্চলের কাজগুলো শেষ হলে,বিরল মানুষের গ্রামাঞ্চলের দিকে বিদ্যুৎ কর্মী এগুচ্ছে ধীরে ধীরে। ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়।
সময়টা নিত্যদিনের পরিচিত জীবন যাপনের চেয়ে আলাদা। কিন্তু চোখের মধ্যে যে সৌন্দর্যটা রেখে গেল এই ভয়ানক ঝড় তা মনে থাকবে অনেকদিন এই সৌন্দর্যের কোন তুলনা নেই। অদ্ভুত সাদা ক্রিস্টাল মোড়ানো গাছের ডালগুলো, বৈদ্যুতিক তার গুলো, ঘরের চালায় ক্রিস্টাল স্টিক যেন ঝুলে আছে। গাড়িটা বরফের আবরণে ঢেকে আছে তার মধ্যে বরফের ঝালর ঝুলানো অপূর্ব সুন্দর। কিছু কিছু গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছিল জলের ভারে, দেখে মনে হয়েছিল এরা আর কখনোই উঠে দাঁড়াবে না। অথচ উত্তাপ বাড়তেই বরফের আবরণ খুলে গেলো গাছের ডাল থেকে, গাছগুলো মাথা তুলে আবার দাঁড়িয়ে গেল যেমন তারা দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। এবছরের শীত একদম অন্যরকম কেমন প্রচন্ড তুষার ঝড় হল এখন ফ্রিজিং রেইন, তুমুল ঠান্ডা ছিল এবার। গত কয়েক বছর ঠান্ডা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আবার চট করে সমস্ত বরফ গলে,বরফ গলা নদী হয়েছিল চারপাশে গত সপ্তাহে মনে হয়েছিল বসন্ত এসেই গেল। সেখান থেকে চট করে আবার উত্তাপ হিমাঙ্কের নিচে নেমে বরফ বৃষ্টিতে এলোমেলো করে দিল চারপাশ। যে গাছগুলো শীতকালটা কাটিয়ে দিল, শৈত্য প্রবাহ আর তুমুল বাতাসের গঞ্জনা সয়ে আর কদিন পর ফুলে, পাতায় সেজে উঠতো। তাদেরকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিল। প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত নিজের নিয়মে চলছে আপন মনে। আজ সাড়ে পাঁচদিন চলছে বিদ্যৎ বিহীন সময়। দুই দিন বিদ্যুৎ ছাড়া কাটিয়ে বাড়ি রেখে চলে আসলাম অন্য বাসায়। গতকাল বিদ্যুৎ আসার সময় ছিল সন্ধ্যায় কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এবং আবারো বরফ এবং তুষারপাত হওয়ার সংকেত দুদিন ধরে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ঠিক হবার কাজ আবার পিছিয়ে গেলো।
কবে বিদ্যুৎ আসবে এবং বাড়ি ফিরব ঠিক নাই।আশা রাখি দ্রুত কাজ শেষ করবে বিদ্যুৎ কর্মিরা সব দূর্যোগ মাথায় করে যারা চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছে।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:১৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রকৃতি অনেকভাবে সুন্দর।
নরওয়ে ছাড়া অন্য দেশে যেখানে বরফ পরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ছিল এই ধ্বংসের ভিতর।
শুভকামনা
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:২৫
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
অনেকেই মনে করেন প্রবাস হচ্ছে লাল সবুজ নীল রঙা ভূস্বর্গ! সমস্যা হচ্ছে এই ভূস্বর্গেও ভয়ংকর ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে এবং যারা বসবাস করেন তারা জানেন জীবনযাপন কেমন!
তারপরও আমাদের দেশে এমন হলে আরও খারাপ পরিস্থিতি হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, রান্না নেই, খাবার নেই, ঘুম নেই। তারপর শুরু হবে চোরের উৎপাত - এই হচ্ছে বাংলাদেশের আবহমান অবস্থা।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৩২
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক বলেছেন, স্বপ্নের ভূমি আর নাই প্রবাস। দিন দিন প্রকৃতির আচরণ বড়ই বিরূপ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
আগে জানতাম কখনো বিদ্যৎ যায় না বাস্তবে অনেক বার বিদ্যুৎ না থাকার মুখোমুখি হয়েছি।
আমেরিকার নানা প্রদেশে গত বছর যে পরিমাণ ঝড় হয়েছে, বাংলাদেশে এমন হলে আর খুঁজে পাওয়া যেত না।
ভয়াবহ ভুমিকম্প, থাইল্যাণ্ডে যে ভাবে আঘাত হানলো। বাংলাদেশে কখনো তেমন বড় আঘাত না আসুক এই প্রার্থনা।
বিদেশে অনেক বড় বড় প্রকৃতিক বিপর্যয় ঘটে তবে তারা সামলে নেয় নিজেরাই।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, পানি না থাকলে ঢাকা ছাড়া আগে জীবন যাত্রা তত কঠিন ছিল না। কুয়া, টিউবওয়েল, পুকুর ছিল। খোলা জায়গায় রান্না খাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল। সেই সুযোগগুলো নিজেদের জীবনযাত্রার অংশ নষ্ট করে আমরা আধুনিক হয়ে নিজেদের অসুবিধায় ফেলছি। সাথে অসাধু মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থায়ও হামলা করে মানুষকে। একবার বন্যার সময় ডাকাতির হিরিক পরে গিয়েছিল কিছু অঞ্চলে।
তারপরও আমাদের দেশে এমন হলে আরও খারাপ পরিস্থিতি হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, রান্না নেই, খাবার নেই, ঘুম নেই।তারপর শুরু হবে চোরের উৎপাত - এই হচ্ছে বাংলাদেশের আবহমান অবস্থা।
আমরা কবে বাংলাদেশের আবহমান অবস্থা থেকে, নিজেকে সংশোধন করে মানুষ হয়ে উঠব কেজানে।
ভালো থাকবেন অনেক
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৪৮
কামাল১৮ বলেছেন: আজকে ১৪/১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকাতে দুপুরে পার্কে হাটতে গিয়েছিলাম।গাছের ডাল পালায় আর গতরাতের বৃষ্টির জল কাদায় একাকার।রাত্রির ঝড়বৃষ্টি যে এতোটা লন্ডভ্ন্ড করেছে এটা ভাবিনি।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: হ্যাঁ ১৪/১৫ র পরেই পরদিন আবার ঝড় হলো, যেসব জায়গা ভালো ছিল সে সব এলাকায়। অদ্ভুত ব্যবহার দেখছি এবার আবহাওয়ার। এপ্রিলে সাধারনত বরফ পরে না আর পরলেও খুব হালকা। অথচ এবার চলছেই একটার পর একটা ভিন্নরকম ঝড়।
দুদিন ভালো ছিল আজ আবার প্রচণ্ড বাতাসসহ ফ্রোজেন রেইন শুরু হলো।
এখনও অনেক মানুষ অন্ধকারে আছে।
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: খুব শ্রীঘই আমাদের দেশে ঝড় বৃষ্টি শুরু হবে। পহেলা বৈশাখ। ধেয়ে আসছে কাল বৈশাখী।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঢাকায় তো তেমন ঝড় হয় না। বৈশাখের এই সময়টা ঝড়ের। তারপর সারা বছর বেশ ঝড় ছাড়া সময়।
এদেশে যেমন বাতাস প্রতিদিন হয় তাই ঝড়ের মতন।
৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রকৃতির রূপ যেমন সুন্দর, তেমনই ভয়ঙ্কর! আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে মনে হলো, প্রকৃতির শক্তির সামনে আমরা কতটা অসহায়, আবার প্রকৃতিই কীভাবে সবকিছু পুনর্গঠনের শক্তি রাখে। কঠিন সময় হলেও, এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হওয়াটা এক অন্যরকম অনুভূতি। আশা করি এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আর পড়তে হবে না। শুভ কামনা জানবেন।
৬| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০২
রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রকৃতি অসাধরন। ভয়ঙ্কর সময়ে যেন আরো বেশি অপরূপ হয়ে উঠে।
অনেকবার এমন সৌন্দর্য দেখার সুযোগ হয়েছে আমার।
অনেক কঠিন সময় সহজভাবে প্রকৃতির দেয়া অসুবিধাগুলো মেনে নিতে চেষ্টা করি। মন্দ লাগেনা যাপিত জীবনের চেয়ে অন্যরকম কিছু অভিজ্ঞতাও হয়।
ধন্যবাদ আশা করি প্রকৃতি আবার বিরূপ হয়ে আসবে না আমার কাছে তবে আসলেও নতুন কিছুর সাথে পরিচয় হবে।
শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩১
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সুন্দর প্রকৃতি । অনেক টা নরওয়ের মতো লাগছে।