নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি ঃ প্রথমা
লেখক আহমদ ছফা রচিত উপন্যাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়কে উপজীব্য করে । ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়।
যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অতীতে পুরো দেশের আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা হত, আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্তরে নানান রকম প্রেতাত্মা ভর করেছে।
লেখকের ভাষায়, মাছের পচন যেমন মস্তক থেকে শুরু হয়, তেমনি যাবতীয় অসুখের জীবাণু শিক্ষকদের চিন্তা চেতনায় সুন্দরভাবে স্থান করে নিয়েছে। এখানে শিক্ষকসমাজ বলতে কিছু নেই। আছে হলুদ, ডোরাকাটা,বেগুনি এসব দল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির মারপ্যাঁচে মিয়া মুহাম্মদ আবু জুনায়েদ উপাচার্যের পদে আসীন হন। আবু জুনায়েদ নিতান্তই গোবেচারা আর শত্রুহীন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন ডোরাকাটা দলের নীরব সমর্থক। স্ত্রী নুরুন্নাহার বানু থেকে শুরু করে সহকর্মী দিলরুবা খানম সবাই আবু জুনায়েদের উপাচার্য হওয়ার ক্রেডিট নিতে কার্পণ্য করলেন না। অবশ্য দিলরুবা খানমের বিশেষ কৃতিত্ব তিনি আবু জুনায়দের নাম প্রার্থী হিসেবে লিখে দিয়েছিলেন।
আমাদের সমাজে একশ্রেণীর মানুষ রয়েছেন যারা অন্যকে আঘাত না দিয়ে কথা বলতে পারেন না। নুরুন্ননাহার বানুও সেই গোত্রের। উপাচার্য ভবনের বাসিন্দা হওয়ার আগে তিনি স্বামীকে যেভাবে হেনস্তা করতেন ,সেই ধারা তিনি অব্যাহত রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি।
উপাচার্য হওয়ার পর আবু জুনায়েদের মনে বহুদিনের পুরানো খায়েশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আর সেটা হল গাইগরু পোষা। আর এই শখ পূরণে আবু জুনায়েদকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদার তবারক আলী। তবারক আলী গরু সরবরাহের পাশাপাশি একটা গোয়ালঘরও তৈরি করে দেন। সেই গোয়ালঘরে নুরুন্নাহার বানু একদিন মেয়ে দিলু আর তবারক আলীর জামাতাকে হাতে-নাতে ধরেন। তবারক আলীর সাথে পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় মেয়ের এমন কর্মকাণ্ড নুরুন্নাহার বানুর কাছে আরও বেশি বিষাক্ত হয়ে উঠে। নুরুন্নাহারের ইচ্ছে হয়, তবারক আলীর সব উপহার ফেলে দিত কিন্তু পারেন না । লেখকের ভাষায়, নারীর হৃদয় বড় বেশি সোনার বশীভূত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ব-ঘোষিত নাস্তিক শিক্ষক ডঃ আহমদ তকির বাসার সামনে আড্ডা বসলেও একসময় আবু জুনায়েদের গোয়ালঘরের উত্তর শেডের সান্ধ্যকালীন আড্ডাও বেশ জমে উঠে। দলীয় পরিচয়হীন নানা শিক্ষক যখন নানান স্বার্থে গোয়ালঘরের আড্ডায় নিয়মিত হাজিরা দিতে থাকেন তখন আবু জুনায়েদের মাথায় নতুন শিক্ষক দল গঠনের বুদ্ধি আসে।
গরু আর গোয়ালঘর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অরুচিকর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। “উপাচার্য নাকি গো আচার্য” এই শিরোনামের একটা লিফলেটেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গোয়ালঘরের আড্ডার শিক্ষকরাও কেন বসে থাকবেন । তারা “মাননীয় উপাচার্যঃ বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামে পাল্টা লিফলেট বিলি করেন।
সময়ের পরিক্রমায় গোয়ালঘর হয়ে উঠে আবু জুনায়েদের ক্ষমতা চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। যে সহকর্মীরা একসময় তাকে নানাভাবে হেনস্তা করেছেন আজ তারাই গোয়ালঘরে ধর্না দিচ্ছেন। এজন্য তিনি গাভীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।কারণ গাভী না থাকলে গোয়ালঘরও হত না।আর গোয়ালঘর না হলে ,আড্ডা হত না।
এদিকে গাভীর কল্যাণে আবু জুনায়েদের ভাগ্য যতই সুপ্রসন্ন হোক না কেন, তার উল্টো ঘটনা ঘটতে থাকে নুরুন্নাহার বানুর জীবনে। আবু জুনায়েদের সাথে গাভীর সম্পর্কের রসায়নে নুরুন্নাহার নিজেকে অপাঙ্খতেয় ভাবেন । নুরুন্নাহার স্থির করেন, গাভীটিকে বিষ খাইয়ে মারবেন। গাভীটি মারা যাওয়ার আবু জুনায়েদের কি অবস্থা হবে সেটা চিন্তা করে কিছুটা বিকৃত আনন্দও অনুভব করছেন।
অবশেষে গাভীটির যখন ছয় মাস চলছে নুরুন্নাহারের সেই সুযোগ আসলো। আবু জুনায়েদের অনুপস্থিতির সুযোগে জাউয়ের গামলার মধ্যে গুড়ো মিশিয়ে দিলেন। এদিকে আবু জুনায়েদ নরসিংদী থেকে এসে দেখতে পান গাভী অসুস্থ। দারোয়ানের কাছে জানতে পারেন, গাভী সকাল থেকে পাতলা পায়খানা করছে। পশু হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক এসেও প্রতিকার করতে পারলেন না।
আবু জুনায়েদ ভগ্ন হৃদয়ে স্ত্রীর কাছে যায়। আমেরিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য প্রদান করে বিরাশি লক্ষ টাকার মত সম্মানী পাওয়া যাবে। স্ত্রীকে এই সংবাদ দেওয়ার পর নুরুন্নাহার বলে উঠেন, খুবই উত্তম সংবাদ।তুমি বিরাশি লক্ষ টাকা পাবে।এই টাকাটা তোমার দরকার হবে। গাভী প্রেমিকার কবরের উপরে তুমি তো তাজমহল বানাবে। শুনে রাখো তোমার প্রেমিকাটি আজ রাতে কিনবা কাল সকালে মারা যাবে এবং আমিই ওকে খুন করেছি।
এই উপন্যাসটির মাধ্যমে আহমদ ছফা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুগ্ন অবস্থা তুলে ধরেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার চেয়ে দলীয় রাজনীতির চর্চায় বেশি ব্যস্ত। উপন্যাসটির রচনার সময়কাল নব্বইদশক হলেও তা আজও প্রাসঙ্গিক।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৭
ডার্ক ম্যান বলেছেন: উনার বাঙালি মুসলমানের বইটাও দারুণ । অর্ধেক নারি, অর্ধেক ঈশ্বরী এটাও ভাল
২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩
পবন সরকার বলেছেন: আহমদ 'ছফার যদ্যাপি আমার গুরু'
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৯
ডার্ক ম্যান বলেছেন: এটা কয়েকবার পড়া হয়েছে
৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: আমার গল্প কবিতা যা কিছু পড়া সত্তুরের আগে।সত্তুরের পরের লেখকদের লিখা খুব একটা পড়া হয় নাই।আহামদ ছফার কোন লেখাই পড়া হয় নাই।বাম ধারার লেখা পড়তে পড়তে এই সব লেখার উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।পত্র পত্রিকায় আলোচনা পড়েছি তার সম্পর্কে এই পর্যন্তই।পড়া উচিত ছিলো।আমার সংগ্রহে বহু বই আছে কিন্তু তার কোন বই নাই।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৯
ডার্ক ম্যান বলেছেন: মহিউদ্দিন আহমেদের বইগুলো পড়তে পারেন
৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৩৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আহমেদ ছফার সব বই-ই আমাদের দেশে তো বটেই, তৃতীয় বিশ্বের সমাজের দর্পন!
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১
ডার্ক ম্যান বলেছেন: সমাজের দর্পণ কিনা সেটা বলতে পারবো না তবে তাঁর মত লেখক বাংলাদেশে আর আসে নাই
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫১
পদ্মপুকুর বলেছেন: আহমদ ছফা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবি ছিলেন। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি গরুকে উপজীব্য করেছিলেন, এখনকার সময়ে হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তিনি কিভাবে চিত্রায়িত করতেন, আল্লাহ মালুম! গাভী বৃত্তান্তে দিলু আর তবারক আলীর জামাতার ঘটনায় একটা নতুন শব্দ শিখেছিলাম 'বুনি', যেটা এর আগে আমি শুনিনি।
আহমদ 'ছফার যদ্যাপি আমার গুরু' আমার পছন্দের একটা বই। এ ছাড়া ওনার সাক্ষাৎকারগুলোও বেশ চিত্তাকর্ষক, যার মধ্যে ব্রাত্য রাইসুর নেয়া সাক্ষাৎকারও আছে।