নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়টা ১৯৮৫। মধ্যবিত্ত সাধারণ একটি পরিবারের সুখ, ভালোবাসা, বিয়ে, মৃত্যু, সমস্যা ইত্যাদিকে উপজীব্য করে বিটিভিতে প্রচার হতে থাকে একটি ধারাবাহিক নাটক। নাটকটার জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে, নাটক চলাকালে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকত।
নাটকটি লিখেছিলেন সেই সময়কার তরুণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।
নাটকটি রচনার প্রেক্ষাপট নিজের আত্মজীবনীমূলক বই ‘বলপয়েন্টে বিস্তারিত লিখেছিলেন তিনি।
আমেরিকা থেকে পিএচডি শেষ করে দেশে ফেরার পর নুরজাহান রোডের একটা ছোট বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। নিজের বাসায় টিভি না থাকার কারণে পাশের ফ্ল্যাটে তাঁর মেয়েরা প্রায় টিভি দেখতে যেত । কিন্তু তাদের একদিন টিভি না দেখেই ফিরতে হয়।
তিনি লিখেছেন ,
এক রাতের কথা। মেয়েরা খুব আগ্রহ করে টিভি দেখতে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ফিরে এসে জানালো, ঐ ফ্ল্যাটে মেহমান এসেছে। কাজেই তাদেরকে আজ টিভি দেখতে দেয়া হবে না। বাচ্চারা খুবই মন খারাপ করল। তাদের চেয়েও মন খারাপ করল বাচ্চাদের মা। কেন বাংলাদেশে এসেছি? কী পাচ্ছি বাংলাদেশে? একটা টিভি কেনার সামর্থ্য নেই! ইত্যাদি ইত্যাদি।
রাতে ভাত খাবার সমর বড় মেয়ে বলল, বাবা, তুমি আমাদের একটা টিভি কিনে দেবে?
আমি বললাম, দেব।
রঙিন টিভি?
আমি বললাম, অবশ্যই রঙিন টিভি।
কবে কিনে দেবে?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারলাম না। তবে একটা রঙিন টিভি যেভাবেই হোক কিনতে হবে এটা মাথায় ঢুকে গেল।‘’’’
হুমায়ন আহমেদ চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে কি করা যায় । মেয়েদের কথা দিয়েছেন যেভাবেই হোক একটা রঙিন টিভি কিনে দিবেন।
"
তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন তথা বিটিভি’র প্রযোজক ও নির্মাতা নওয়াজীশ আলি খানের সাথে তাঁর দেখা হয়। ১৯৮৩ সালে নওয়াজীশ আলি খানের পরিচালনায় বিটিভিতে প্রচারিত হয় "প্রথম প্রহর’’ নাটকটি । যেটার রচয়িতা ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ ।
হুমায়ন আহমেদ তাঁর বইতে লিখেছেন ,
নওয়াজীশ আলি খান সাহেব , আমাকে একটি ধারাবাহিক নাটক লিখতে বলছেন। আমি ধারাবাহিক নাটক লিখতে রাজি হলাম। ঠিক করলাম, একটি রঙিন টিভি কিনতে যত টাকা লাগে তত টাকার ধারাবাহিক নাটক লেখা হবে। যে নাটকটি লিখলাম তার নাম 'এইসব দিনরাত্রি'। নাটকটির পরিচালক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আমার রঙিন টিভি কেনার টাকা হওয়া মাত্র নাটকের একটি চরিত্র টুনির মৃত্যু দিয়ে নাটক শেষ করে দিলাম।
এইসব দিনরাত্রি ধারাবাহিক নাটকটি প্রচার হবার পর এক সাংবাদিক জানতে তাঁর কাছে চাইলেন, এই ধারাবাহিক নাটকটি লেখার পেছনে আপনার মূল প্রেরণা কী ছিল?
হুমায়ূন আহমেদ উত্তর দিলেন, , অর্থ উপার্জন। আমার একটি রঙিন টিভি কেনার প্রয়োজন ছিল বলেই ধারাবাহিক নাটকটি লিখেছি। এই নাটকটির প্রতি আমি নানাভাবে ঋণী। নাটকটির কারণে আমি আমার বাচ্চাদের একটা শখ মিটালাম- রঙিন টিভি কিনলাম।
আর হুমায়ূন আহমেদের এই সাক্ষাৎকার প্রচারের পর নাটকটির অভিনয় শিল্পীরা নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে লাগলেন ।
প্রয়াত প্রখ্যাত অভিনেতা আবুল খায়ের বললেন, আমরা এত আবেগ নিয়ে এই নাটকে অভিনয় করেছি, আর হুমায়ূন আহমেদ বলে দিলেন তিনি সামান্য একটা রঙিন টিভির জন্যে নাটক লিখেছেন।
একদিন অভিনেতা আবুল খায়েরকে ডেকে পাঠালেন হুমায়ূন আহমেদ। জিজ্ঞাসা করলেন
, ভাই, আপনি যে অভিনয় করেছেন তার জন্যে কি বিটিভির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন?
তিনি বললেন, হ্যাঁ নিয়েছি।
আমি বললাম, আমিও ঠিক ভাই করেছি। নাটক লেখার জন্যে টাকা নিয়েছি। আপনি হৈচৈ করছেন কেন? একজন লেখক চাঁদের আলো খেয়ে বাঁচেন না। তাকে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খেতে হয়।
আপনাকে ডেকেছি রঙিন টিভিটা দেখার জন্য। নিজের চোখে দেখুন আমার বাচ্চারা কত আগ্রহ নিয়ে টিভি দেখছে। বেতনের টাকা দিয়ে বাচ্চাদের এই টিভিটা কিনে দেবার সামর্থ্য আমার ছিল না।
আবুল খায়ের সাহেব খুব আবেগপ্রবণ মানুষ ছিলেন। তিনি কিছুক্ষণ আমার বাচ্চাদের সঙ্গে টিভি দেখলেন। একসময় তাঁর চোখে পানি এসে গেল। তিনি চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ভুল করেছি। ক্ষমা চাই।
ছবি :: অনলাইন
বই ঃ বলপয়েন্ট
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫১
ডার্ক ম্যান বলেছেন: খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনি।
২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৫৭
কামাল১৮ বলেছেন: অনেক ঘটনার পিছে আরেকটি ঘটনা লুকিয়েথাকে।অনেক সময় তা প্রকাশিত হয় না।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫২
ডার্ক ম্যান বলেছেন: ঘটনার পিছনে নানা ঘটনা থাকে। কোনটা প্রকাশিত হয় আবার কোনটা অপ্রাকাশিত থাকে ।
৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:১৮
সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে অনেক সমালোচনা, তর্ক - বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু উনি মানুষের হৃদয় যেভাবে জয় করে নিয়েছেন তা আরও এক শতাব্দীতে ও কেউ পারবে কিনা সন্দেহ আছে।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬
ডার্ক ম্যান বলেছেন: বাংলাদেশের মধ্যবিত্তকে তাঁর মত করে কেউ বুঝতে পারে নি। নিন্দুকেরা তাঁকে যতই বাজারি লেখক বলে ছোট করার চেষ্টা করুক না কেন, তাঁর মত লেখক বাংলাদেশে আর আসবে না।
৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৩
মুনতাসির বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। বহুব্রীহিতে তোড়শা নামে যে ছেলেটি ছিল, সে আমার বন্ধু ছিল। একই কলোনিতে থাকতাম।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩১
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনার ঐ বন্ধু কি আর অভিনয় করে না
৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৯
ধুলো মেঘ বলেছেন: তোরসা ছিল বহুব্রীহি নাটকের প্রযোজক নওয়াজিশ আলী খানের পুত্র নওয়াফিল আলী খান। সে এখন অস্ট্রেলিয়ায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছে। পাশাপাশি 'মেইডেন মেইহেম' নামের একটি ব্যান্ডের লিড এবং ভোকাল।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০১
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনার ইনফরমেশনের জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪৫
আজব লিংকন বলেছেন: আমরা সব সময় নিজেদের অবস্থান থেকে অন্যজনদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। কারো বাধ্যবাধকতা আমরা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করি না। কাউকে না জেনেই চট করে একটা মন্তব্য করে বসি।
সুন্দর লিখেছে ভাই।