নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
একটি লাভের গল্প
কাজী সায়েমুজ্জামান
এক.
গত অর্থ বছরে আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি হিসেবে বেশ কিছু সরকারী কেনাকাটা করতে হয়েছিল। এর মধ্যে রেকর্ডরুম ডিজিটালাইজেশনের জন্য সাতটি ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্টিলের র্যাক, কাগজ, প্রিন্টারের কালিও ছিল। অন্যকোন ক্রয়ে সমস্যা না হলেও বিপত্তি ঘটেছিল ল্যাপটপ ক্রয়ের ক্ষেত্রে। সিডিউল জমা দেয়ার দিন দেখি খোচাখোচা দাড়ি যাতে ইচ্ছা করেই খুরের পোচ দেয়া হয়নি এমন দশাসই চেহারার অফিসের সিড়িতে দুইজন, অফিসের সামনে দুইজন এবং গেটেও দুইজন দাড়িয়ে আছে। কর্মচারীরা এসে বলছে, স্যার এরা ছাত্রনেতা। আমাদেরকে শাসিয়ে গেছে, কেউ যাতে সিডিউল জমা দিতে না পারে। আমি ঝামেলা না দেখার ভান করে থাকলাম। দুপুরে লাঞ্চ করে অফিসে ঢুকতেই আমার সঙ্গে অন্য একটি ছেলে ভিড়ে গেল। বললো, স্যার, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনার সঙ্গে কথা আছে। আমি বললাম, আমার কক্ষে চলুন। সে আমার সঙ্গে আমার রুমে এসে একটি খাম বের করে বললো, আমি রাজবাড়ি জেলা শহরের রবিন কম্পিউটার থেকে এসেছি। এই সিডিউলটা জমা দেবো। কিন্তু দূর থেকে কিছু ছেলেকে পাহারা দিতে দেখে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি তার বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম ব্যবসা করতে হলে আসলেই কিছু বুদ্ধি লাগে। দাড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো বুঝতেই পারেনি সে দরপত্র জমা দিতে এসেছে। তারা ভেবেছিল, আমার পরিচিত কেউ হবে। কিন্তু দরপত্র জমা দিতে সমর্থ্য হলেও রবিন কম্পিউটারের ছেলেটির শেষ রক্ষা হয়নি। অফিসের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময়ই তাকে ধরে নিয়ে যায় ওই পাহারাদার ছেলেপুলেরা। রবিন কম্পিউটার এর প্যাডেই লিখিত নেয়, সিডিউল ক্রয় করে দরপত্র জমা করলেও আর্থিক ও দূরত্বের কারণে এ টেন্ডারে অংশ নিতে ইচ্ছুক নই। এজন্য আমি আমার টেন্ডার প্রত্যাহার করছি। লিখিত দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলেটি ফোন করে আমাকে এসব জানায়। আমি বললাম, ভাইরে বুদ্ধি করে জমা দিতে পারলেও তোমার শেষ রক্ষা হলোনা। তোমাকে যে সাবাস দিয়েছিলাম তা তো ফেরত নিতে হবে দেখছি।
দুই:
কিছুক্ষণ পর ৩০ ব্যাচের আমার একজন জুনিয়র সহকর্মী আমার রুমে আসে। বলে স্যার একটি তদবীর আছে। আমি বললাম, কি? সে বললো, খুবই ঝামেলাহীন মনে হয়েছে তাই বললাম। আমার বাসার মালিকের ছেলে এসে ধরেছে, সে যেই দরপত্র জমা দিয়েছিল তা প্রত্যাহার করতে চায়। আমি বললাম, ভালো কথা। তুমি বাক্স উন্মুক্ত করার সময় থেকো। বাক্স উন্মুক্ত করার সময় অফিসের আশেপাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো সবাই হাজির। একজন বলে, স্যার, আমি রাজবাড়ির রবিন কম্পিটারের প্রতিনিধি। আমরা এ টেন্ডারে অংশ নেবোনা। এই দেখেন, আমাদের অফিসের প্যাডে লিখিত দিচ্ছি। আমি সহকর্মীকে বললাম, তুমি যার জন্য তদবীর করছো- সে কি এই। সে বললো, হাঁ, স্যার। আমি বললাম। তাহলে তোমাকে এই নাটকের শেষাংশ দেখতে হবে। নয়তো বুঝতেই পারবেনা এর কারা। আমার এই সহকর্মীটাই পরে বললো, স্যার এ জীবনে আর কখনই কোন তদবীর করবোনা। আমি কানে কানে টেন্ডার উন্মুক্তকরণ কমিটির সদস্যদের বললাম, এরা জোর করে লিখিত নিয়ে এসেছে। তাদের বলে দিলাম, টেন্ডার জমা দেয়ার পর প্রত্যাহার করতে হলে এটি মূল্যায়ন কমিটিতে দাখিল করতে হবে। টেন্ডার খুলে দেখলাম, সর্বনিম্ন দরদাতা ওই রবিন কম্পিউটারই। পরে শুনলাম, ছাত্র নেতারা নিজেরা কাজ করবেন না। তারা একজনের পক্ষে এসেছেন। আর কাজ পাইয়ে দেয়ার চুক্তি মূল্য ২০,০০০ টাকা। কিন্তু তাদের কোম্পানির প্রদত্ত দর রবিন কম্পিউটারের চেয়ে এক লাখ টাকারও বেশি। ফলে যা হবার তাই হলো। রবিন কম্পিউটার কাজ পেল। কিন্তু কাজ না পেলেও হাল ছাড়েনি। তারা আমার অফিসের কর্মচারীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে। রবিন কম্পিউটারের লোক কবে আসবে এজন্য একজনকে সারাদিন রাজস্ব শাখায় বসিয়ে রাখে। তাদের উদ্দেশ্য হলো- রবির কম্পিউটারের কাউকে পেলে ওই বিশ হাজার টাকা আদায় করে আগে যার কাছ থেকে নিয়েছিল তাদের দেয়া। আমি ফোন করে রবিন কম্পিউটারকে বলে দিলাম, এখন আপনাদের আসার দরকার নেই। অন্য যেকোন দিন এসে ল্যাপটপ দিয়ে যাবেন। এসময় নওগায়েঁর আমার একজন সহকর্মী যাকে আমি ভুয়া কবি ডাকি, সহকারী কমিশনার পরিমল চুয়াডাঙ্গায়। তাকে বললাম, দোস্ত, তুই এই ছেলেগুলোকে একটা ঝাড়ি দিয়ে দে। আমি তাদের আমার রুমে ডাকলাম। পরিমল ঝাড়ি দিয়ে বললো, চুয়াডাঙ্গার ম্যাজিস্ট্রেটদের দেখছি অনেক ধৈর্য্য। আমার নওগাতেঁ হলে দুই বছরের জন্য জেলে পাঠিয়ে দিতাম। ছেলেগুলো আর শাখায় বসে থাকবেনা- এ অঙ্গিকার করে চলে গেল। আমি মনে মনে পরিমলকে ধন্যবাদ দিলাম। যাক ওর ঝাড়িতে কাজ হয়েছে। কিন্তু নাহ। পরদিনই তারা হাজির। এবার তাদের অবস্থান বারান্দায়। আর একটু একটু পরপর শাখায় ঢুকে কর্মচারীদের বিরক্ত করছে। আর কর্মচারীরাও আমাকে বারবার বলে যাচ্ছে, স্যার এভাবে তো কাজ করা যাবেনা। আমি তখন অনেক ঝামেলায় ছিলাম। আমার জন্য বিপদ কখনোই একা আসেনি। আমাদের স্যারদের একটি অভ্যাস আছে। তারা কোন কাজে ঝামেলা হোক- তা চান না। ঝামেলা হলো কেন- এটাও তারা বুঝতে চান না। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য একটিই। তাহলো- অফিসার ট্যাক্টফুল নয়। একেতো ঝামেলায় আছি-এরপর ওদের সঙ্গে ঝামেলা হলে জেলা প্রশাসক মহোদয় বিরক্ত হতে পারেন ভেবেই আর স্যারদেরকেও জানাইনি। ওদের সঙ্গেও বোঝাপাড়ায় যাইনি। ভাবলাম কয়দিন আর এভাবে পাহারা দেবে? কর্মচারীদেরও বললাম, দেখবেন বড়জোড় দুই দিন। কিন্তু নাহ তারা হাল ছাড়েনি। এদের এড়াতে চাইলেও পারিনি। বেশ কিছুদিন পরে তাদের আমার কক্ষে ডাকতে বাধ্য হই। কিভাবে এ ঝামেলা থেকে আমি রক্ষা পেয়েছিলাম তা বলতে হলে অন্য একটি গল্প বলে নেয়া দরকার। এটাই আসলে মুল লাভের গল্প।
তিন:
আমি চুয়াডাঙ্গার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ খেলাপীদের টাকা আদায়ের জন্য আমার আদালতে মামলা হয়। আমি খাতককে সিভিল কারাগারে পাঠিয়ে, মালামাল ক্রোক করে, বন্ধকী সম্পদ নিলাম করে টাকা আদায় করে মামলা নিষ্পত্তি করি। একবার নিজে উদ্যোগ নিয়ে ২২ বছরের পুরানো একটি মামলার খাতকের পুত্রদের জেলে পাঠিয়ে টাকা আদায় করি। নথিতে ছিল, খাতকের পুত্ররা ভারতে চলে গেছে। আসলে প্রসেস সার্ভারকে অবৈধ সুবিধা দিয়েই এরকম একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল। ফলে এই তথ্য নথিতে লিপিবদ্ধ হয়। এতে ২২ বছর ধরে নথি ফুলে ফেঁপে কয়েক কেজি ওজনের হয়ে উঠে। আমি ব্যাক্তগতভাবে খবর নিয়ে জানতে পারি তারা দেশেই রয়েছে। নিজে ফোন করে পুলিশ পাঠিয়ে দিয়ে তাদের আটক করি। পরে আটককৃতদের সিভিল কারাগারে পাঠিয়ে টাকা আদায় করে মামলা নিষ্পত্তি করি। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় একটি ফিচারও লিখি। তার ফটোকপি বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করে টাঙ্গানোর ব্যবস্থা করি। এতে বেশ ইতিবাচক ফলাফল আসে। ওই মাসেই ২৫ বছরের বেশি সময়ের পুরানো বেশ কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি হয়। আমাদের এই প্রশাসন ক্যাডারে কাজ দিয়ে উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষকে কখনোই সন্তুষ্ট করা যায়না। পত্রিকায় যখন সাংবাদিকতা করতাম, সম্পাদক অফিসে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করতেন- সায়েম এসেছে কিনা? সেই একই ব্যক্তির কপালে এখন কারণে অকারণে ঝাড়ি বিধির বিধান। যাই হোক সার্টিফিকেট মামলা নিয়ে মিটিংয়েও জবাবদিহিতা করতে হয়। ইতোমধ্যে নির্দেশনা এসেছে, প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ মামলাই আমি নিষ্পত্তি করে ফেলেছি। এই গত তিন বছরে তার আগের ১০ বছরের চেয়েও বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছি। অনেক কৌশল অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। সার্টিফিকেট মামলা যাতে না হয়, তার জন্য একটু অন্যপথে যাই। ঋণগ্রস্থকে ব্যাংকের পক্ষে লাল নোটিশ দেই। কাজ হয় চমৎকার। অনেকেই হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন- মামলার আগে এ ধরনের কোন নোটিশ সার্টিফিকেট অফিসার দিতে পারেন কিনা? কিন্তু এই প্রশ্নের বাইরে গিয়ে আমি এটা করেছি। আর শুধু সার্টিফিকেট অফিসারের একটি নোটিশের কারণে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে চুয়াডাঙ্গায়। এজন্য গত দুই বছরে চুয়াডাঙ্গায় ঋণ আদায়ের জন্য কোন ব্যাংককে আর মামলা করতে হয়নি। বর্তমানে ৮০টি মামলা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ব্যাংকের পাওনা আদায়ের মামলা হবে ৬০ টিরও কম। বাংলাদেশের অন্য কোন জেলায় সার্টিফিকেট আদালতে এত কম মামলা আছে বলে আমার জানা নেই। এখন যেগুলো নিষ্পত্তি করতে বাকী রয়েছে সেই মামলাগুলো অনেক জটিল। যেমন খাতক সকল সম্পত্তি বিক্রি করে লাপাত্তা। অথবা মৃত। তার কোন সম্পদ নেই। অথবা সম্পত্তি নিলামের বিজ্ঞপ্তি দিলেও ক্রেতা পাওয়া যায়না। ব্যাংকের ম্যানেজারকে বলি- উদ্যোগ নেন। উনি বলেন, স্যার ঢোল সহরত করি। বিজ্ঞপ্তি দেই। ক্রেতা পাইনা। কারণ যারা জমি কিনেছে তারা খুব প্রভাবশালী। ওই জমি কেউ কিনতে চায়না। আমি মনে মনে উপায় খুঁজতে থাকি। ঠিক তখনই অফিসের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে কাজেকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে যাচ্ছিল ওই যে কিছু টেন্ডারবাজ। আমি তাদের ডাকলাম। বললাম, আপনারা এখানে কি চান? তারা খুব নরম স্বরে ভদ্রভাব নিয়ে বললো, স্যার রবিন কম্পিউটারের সঙ্গে আমাদের কিছু দেনা পাওনা আছে। ওদের ফোন নম্বরটা দরকার। আমি বললাম, আমি কিন্তু হার্ড লাইনে যাবো। এখন দুই বছর জেল দিয়ে দিতে পারি। তারা বলে, স্যার আমরা চুয়াডাঙ্গার মানুষ। বাইরের তাও আবার রাজবাড়ি জেলার লোক এসে কাজ নিয়ে গেলে আমরা খাবো কি? আমি বললাম, এদের পিছু ছাড়লে আমি আপনাদের অন্য কাজের সন্ধান দিতে পারি। তারা বললো, কি কাজ? আমি বললাম, কিছু সম্পত্তি নিলাম দেবো। অনেক ক্রেতা আছে। আমি আপানদের দেবো-এই ক্ষমতাটা আমার আছে। জমির দাম ১০ লাখ টাকার বেশি হবে। অথচ ঋণ মাত্র ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। দিতে পারবেন? তারা এক পায়ে রাজি হয়ে গেলো। আমি তাদের ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।
চার:
কয়েকদিন পর ব্যাংকের ম্যানেজারের ফোন পেলাম। মনে হলো, ম্যানেজার খুব বিপদগ্রস্থ। আমাকে বললেন, স্যার আপনি কিছু ছেলেকে পাঠিয়েছেন ?
- এদের ছেলে না বলে জমির ক্রেতা বলুন। আপনিতো জমির ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছিলেন। এখন কি সমস্যা?
- এরা প্রথম দিনে এসেই জমি দেখতে চাইলো। তাদের জমি দেখালাম। কিন্তু তারা ওই জমির দখলকারীদের জমি ছেড়ে দিতে বলে। আরও বলে এ জমি আমরা নিলামে কিনবো। এদের লম্ফঝম্ফতে অতিষ্ঠ হয়ে ওই জমির ক্রেতারা এখন টাকা দিয়ে দিতে চাইছে। তারা প্রতিদিন এসে ব্যাংকে বসে থাকছে। কিন্তু মামলার তারিখ তো একমাস পর। তাই আদালতের আদেশ ছাড়া টাকা নিতে পারছিনা।
- এদের আগে বলেননি যে আপনারা যে জমি কিনেছেন, আইনানুযায়ী তা ব্যাংকের। কারণ জমির মালিক এই তফশিলের জমি বন্ধক রেখেই ঋণ নিয়েছিল। সে জমি তারা কিনেছেন কেন?
- জ্বি স্যার বলেছি। কিন্তু তারা ওই সময় টাকা দিতে রাজি হয়নি। বলেছেন, সাব রেজিস্ট্রারের অফিস তো জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছে। তাছাড়া আমরাতো জানিনা। ব্যাংকতো এত বছর বলেনি। এখন ২৫ বছর পর বললেই তো হলোনা। জমি বিক্রেতার ব্যক্তিগত ঋণ আমরা বহন করবো কেন?
-ঠিক আছে এখন নিলাম করে দেন। তাহলেই বুঝবে জমি বিক্রেতার বন্ধককৃত জমি কেনার পরিণাম কি হয়?
- স্যার, নিলাম হলে আইন শৃংখলার সমস্যা হবে। আমার সমস্যা হবে। আমি আর এখানে চাকুরি করতে পারবোনা।
-ঠিক আছে। তাহলে টাকাটা জমা নিয়ে টাকা পেয়েছেন- এমন নিষ্পত্তি প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিন। আমি নিষ্পত্তি করে দেবো।
- স্যার, সমস্যাই তো এখানে। আমার সামনে ওই ছেলেগুলো বসে আছে। তারা বলছে, টাকা জমা নেয়া যাবেনা। তারা জমিটি নিলামে কিনবে।
আমি বললাম, এটা অফ দ্যা রেকর্ড। ওদের ম্যানেজ করুন। ওদের কিছু ঋণ আছে একটি কম্পিটারের দোকানে। ম্যানেজার ফোন রেখে দিলেন। কয়েকদিন পর আমি নিষ্পত্তি প্রতিবেদন পেলাম। তবে ওই ছেলেগুলো মানে ছাত্রনেতারা আমার অনেক উপকার করেছিল। ওই এলাকার এই ধরনের জমি যারাই কিনেছিলেন, তারা নিজেরাই জমি বিক্রেতার ব্যাংক ঋণ শোধ করেছিল। এবার লাভের গল্প শুরু হলো-
আমার লাভ: সার্টিফিকেট অফিসার হিসেবে বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি করলাম। নিষ্পত্তি ছিল বলে মিটিংগুলোতে নির্ভার ছিলাম। কেন হয়নি- এই প্রশ্ন করা হয়নি বলে আমতা আমতা করে জবাবও দিতে হয়নি। তবে এত কষ্ট করে কোটি কোটি টাকা সার্টিফিকেট অফিসার আদায় করে দিলেও তার আর্থিক কোন সুবিধা নেই। আমি একবার বলতে গিয়ে ধমক খেয়েছিলাম। বলা হয়েছিল, আদালতের আবার অংশ কিসের?
ব্যাংকারের লাভ: ২৫ থেকে ৩০ বছর পর একটি ব্যাড ঋণ আদায় হয়েছিল। যতটুকু জানি, এ ধরনের টাকা আদায় হলে ম্যানেজার ইনসেনটিভ পান।
ঋণগ্রস্থ খাতকের লাভ: তার লাভ পুরোটাই। ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। একটি টাকাও দিতে হয়নি। উল্টো যে জমি বন্ধক রেখে টাকা তুলেছিলেন, সেটাও বিক্রি করে দিয়েছেন। ঋণের টাকাও জমির ক্রেতা পরিশোধ করেছেন। মজা আর মজা। আর কি?
জমির ক্রেতার লাভ: তারা যে জমি কিনেছিলেন তার মালিক ছিল ব্যাংক। অথচ বন্ধকী জমি ঋণগ্রস্থ খাতকের কাছ থেকে কিনেছেন। পুরোটাই ছিল অবৈধ। এই জমি তারা নামজারি করতে পারেননি। জমির বর্তমান বাজার দর ১০ লাখ টাকা। অথচ এক লাখ টাকায়ই সব রফাদফা। আর কোন ঝামেলা রইলনা। তাছাড়া জমিটি তাদের বাড়ি থেকে বেরুনোর একমাত্র পথ ছিল। হাতছাড়া হয়ে গেলে তাদেরও এলাকা ছাড়তে হতো।
ছাত্রনেতাদের লাভ: এটা উহ্য থাক। একজন সরকারী কর্মচারী হিসেবে এটা বলা আমার জন্য উচিত ও হবেনা। তবুও অফ দ্যা রেকর্ড বলতে পারি, তারা খালি হাতে সেখান থেকে ফেরত আসেননি।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকেবন। কিছু কিছু ইনোভেশনের কাজ হয়েছে। অনেকেই এখন উদ্ভাবনী আইডিয়া সেবার কাজে লাগাচ্ছেন।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭
নিমতিতা বলেছেন: মারহাবা!
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৬
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। মারহাবা!
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫১
পথহারা সৈকত বলেছেন: মারহাবা!
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৪
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। মারহাবা!
৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৬
কথক পলাশ বলেছেন: স্যার, বুদ্ধিটা কাজে লাগবে।
হ্যাটস অফ।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থেকো।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: সব সরকারী অফিসার যদি এরকম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতো তাহলে মানুষের সাথে সাথে দেশেরও অনেক লাভ হতো।