নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
ইতিহাস বিষয়টি জ্ঞানকাণ্ডের এমন একটি শাখা যা অন্যান্য শাখাকে এমনভাবে সংশ্লিষ্ট করে তোলে যে তা এক অখণ্ড ধারণার জন্ম দেয়। যেমন- একটি নির্দিষ্ট সময়ের বা ভূ-খণ্ডের ইতিহাস হল সেই সময় বা ভূ-খণ্ডের মানুষ, তার আচার-আচরণ, রুচি ও মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবনপ্রণালি-সবকিছুর একটি সংমিশ্রিত বিষয়। সাহিত্যের ইতিহাসও তেমনি কোন একটি ভাষা বা অঞ্চলের সামগ্রিক ইতিহাসকে ধারণ করে। আমরা জানি ‘প্রত্যেক দেশের সাহিত্য সেখানকার জনসাধারণের চিত্তবৃত্তির ঘনীভূত প্রতিবিম্ব’-তাই সাহিত্যের ইতিহাস কেবল সাহিত্যিক, তাঁদের রচনাবলি ও সাহিত্যপ্রতিভাকে নিয়েই নয় বরং আরও বিস্তৃতভাবে সেখানকার জনগণের রুচি, মূল্যবোধ, তার পরিবর্তন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
হিন্দি ভারতের একটি সুবিশাল অঞ্চলের সাহিত্য ভাষা। তার বিস্তার রাজস্থান ও পাঞ্জাবের পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিহারের পূর্বপ্রান্ত এবং উত্তরপ্রদেশের উত্তর সীমা থেকে মধ্যপ্রদেশের প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মৌখিক ভিন্নতার কারণে অনেক ভাষার প্রচলন থাকলেও, উপাঞ্চল-ভেদ ও নাম-ভেদ থাকা সত্তেও ভারতের চতুর্সীমায় মধ্যবর্তী অপভ্রংশ ভাষাপ্রকৃতি প্রবণতা এবং বৈশিষ্ট্য প্রায় এক ও অভিন্ন। তাই হিন্দি ভাষার বিস্তৃতি এত বিশাল। ধারণা করা হয় হিন্দি সাহিত্যের প্রারম্ভ হয় খ্রিস্টীয় দশম শতকে। ঐ সময়কার প্রামাণিক গ্রন্থ হেমচন্দ্রের ‘প্রাকৃত ব্যাকরণ’, রাজশেখরের ‘প্রবন্ধকোষ’, আব্দুর রহমানের ‘সন্দেশ রাসক’ ইত্যাদি। তবে এগুলোর ভাষাগত বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি হিন্দির মত ছিল না। তখনই হিন্দি ভাষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছিল। মোটামুটি দশম থেকে চর্তুদশ শতক সময়ে হিন্দি সাহিত্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এ সময়কে হিন্দি সাহিত্যের আদিকাল বলা হয়। আলোচনার সুবিধার্থে হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথ-া
১. আদিকাল বা বীরগাথা কাল [৯০০-১৪০০খ্রি:]
২. মধ্যকাল [১৪০০-১৮৫০খ্রি:]
৩. আধুনিক কাল [১৮৫০-বর্তমান]
আদিকাল বা বীরগাথা কাল [৯০০-১৪০০খ্রি]/sb]
প্রাকৃতের শেষ অবস্থা ‘অপভ্রংশ’থেকেই হিন্দি সাহিত্যের উদ্ভব বলে অনুমান করা হয়। অপভ্রংশ বা প্রাকৃতাভাসযুক্ত হিন্দি কবিতার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় সপ্তম শতকেই। তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় নবম শতকের সাহিত্যিক ভাষার, যা ক্রমে ক্রমে স্পষ্টতার দিকে এগোতে থাকে। তাই হিন্দি সাহিত্যের আদিকাল ধরা হয় ৯০০ খ্রি: থেকে ১৪০০ খ্রি: পর্যন্ত সময়কালকে।
এ যুগে সাহিত্যের প্রধান বাহর ছিল ছন্দোবদ্ধ দোহা। ধর্ম, নীতি, শৃঙ্গার, যুদ্ধ-সকল বিষয়ই তখন দোহাতে পাওয়া যেত। তবে তখনকার কবিরা রাজসভায় বিনোদনের জন্য যেমন কাব্যশক্তির পরিচয় দিতেন তেমনি রাজাদের বীরত্বের ইতিহাসও কাব্যাকারে রচনা করতেন। রাজাদের শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস প্রধান সাহিত্য হওয়ায় ঐ সময়কে অনেকে বীরগাথা কাল বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। ঐ সময়কার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তিগুলো হল-
খুমান রাসো
মূল কাব্যটির রচয়িতা কবি দলপতি বিজয়, তিনি এটি নবম শতকের প্রারম্ভে রচনা করেন। চিতোরের রামচন্দ্র থেকে রাবল খুমান পর্যন্ত আটজন রাজার কীর্তিকথা কাব্যটিতে বর্ণিত হয়েছে। তবে কাব্য অসম্পূর্ণ। সম্ভবত দ্বিতীয় খুমানের শাসন আমলে এটি রচিত হয় (৮১৩-৮৩৩খ্রি। ভাষা, বিষয় ও রচনাকালের বিচারে কাব্যটি হিন্দি সাহিত্যের আদিযুগের পূর্ববর্তী রূপে গ্রহণ করা উচিত।
বীসলদেব রাসো
‘বীসলদেব’ সাম্ভররাজ চতুর্থ বিগ্রহ রাজের উপনাম। তাঁর সভাকবি নরপতি নালহ আশ্রয়দাতা রাজার বীরত্ব কাহিনি বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে ১১৫৫ খ্রি: ‘বীসলদেব রাসো’ রচনা করেন। এতে ৩১৬টি শ্লোক, ৪টি ভাগে মোট ১০০ পৃষ্ঠায় আছে। বীসলদেব রাসোর ১৫টি পুঁথি পাওয়া গেছে। কাব্যের ভাষা রাজস্থানী হলেও হিন্দির মিশ্রণ ঘটেছে দেখা যায়। এ থেকে অনুমান করা যায়, সে যুগে ব্রজ বা মধ্যদেশের ভাষার আশ্রয়ে একটি সাহিত্যিক ভাষা গড়ে উঠেছিল।
পৃথ্বীরাজ রাসো
চাঁদবরদাঈ হিন্দি সাহিত্যের প্রথম কবি ও তাঁর কাব্য ‘পৃথ্বীরাজ রাসো’ প্রথম মহাকাব্যরূপে গণ্য। দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের সভাকবি ও পরম বন্ধু ছিলেন চাঁদবরদাঈ। তাঁর আড়াই হাজার পৃষ্ঠার কাব্যটি ঊনসত্তরটি সর্গে বিভক্ত। শৌরসেনী অপভ্রংশে প্রচলিত সে যুগের প্রায় সব ছন্দেরই প্রয়োগ আছে কাব্যটিতে।
আমীর খুসরো
সম্ভবত ১২৯৩ সালে তিনি লিখতে শুরু করেন। তিনি কেবল সুকবিই ছিলেন না, বিদ্বান ও মেধাবীও ছিলেন। তাঁর রচনা এত বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল যে জনগণের মুখে মুখে বিস্তৃতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে বিকৃতি লাভও তার ভাগ্যে ঘটেছিল। তিনি মূলত ফারসি ভাষার গ্রন্থ রচনা করলেও সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় দোহা, সমিল পঙক্তি ও ধাঁধা রচনাতেও নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বহু গানও তিনি লিখেছেন।
সন্দেশ রাসক
মুলতানের কবি আবদুর রহমানের একটি সুন্দর সুললিত প্রণয়কাব্য হল ‘সন্দেশ রাসক’। কাব্যটির দুটি সংকলিত টীকা পাওয়া গেছে। কাহিনির বেশ সরস ও মর্মস্পর্শী।
বিদ্যাপতি
‘মৈথিলী কোকিল’ কবি বিদ্যাপতি ‘অভিনব জয়দেব’ নামেও অভিহিত। তিনি মূলত রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক বৈষ্ণব পদ রচনা করেছেন। তবে তাঁর সাহিত্য ভাষার প্রভাব গভীর। তিনি ‘কীর্তিলতা’ ও ‘কীর্তিপতাকা’ নামে দুটি কাব্য রচনা করেন।
হিন্দি সাহিত্যের আদিকালটিতে অপভ্রংশ ভাষায় রচিত সাহিত্যকে প্রধানত তিন ভাগে রাখা যায়। যথা-
১. জৈনধর্মাশ্রিত কাব্য
২. সিদ্ধ ও নাথ পন্থীদের রচিত কাব্য
৩. সন্দেশ রাসক কীর্তিপতাকা আদি আশ্রিত কাব্য
এইগুলো হিন্দি সাহিত্যে আদিকালকে সমৃদ্ধ করেছে।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৬
সুব্রত দত্ত বলেছেন: আসলে লেখাটা অনেক আগের। মাস্টার্সে পড়ার সময়ে পরীক্ষার প্রয়োজনে লিখেছিলাম। শেয়ার করলাম। উপকৃত হয়েছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনাকেও ধন্যবাদ।
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪
সেলিম৮৩ বলেছেন: স্বল্প পরিসরে অত্যান্ত সুন্দরভাবে অাপিন বিসয়িট উপাস্হাপনা করেছেন। ভালো লাগলো।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
সুব্রত দত্ত বলেছেন: স্বল্প পরিসরে আসলে স্বল্প কথাই বলা হয়েছে। আসলে এটা নিয়ে কাজ করার সময় ও সুযোগ নেই, অাগে লিখেছিলাম তা-ই দিলাম। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৪
হাবিব বলেছেন: জেনে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ............
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: নতুন একটি বিষয়!
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৯
সুব্রত দত্ত বলেছেন: হতে পারে। কেউ এটা নিয়ে কোনো পোস্ট দিয়েছে নাকি জানি না। তবে লেখাটা অনেকের আগে এবং এখন এ নিয়ে বিস্তর কাজ করার সময় ও সুযোগ নেই। আগ্রহী কেউ হয়তো করবেন আশা করি। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাস জানা ছিল না। জেনে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ, দাদা।