নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: হৃৎপিণ্ড বা ভ্রুণ

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

সৌমিক ঘুম থেকে উঠে দেখল সে একটা পোকায় পরিণত হয়েছে- এভাবে গল্পটা শুরু করলে অনেকেই ভাববেন কাফকার ‘রূপান্তর’ গল্পটার অনুবাদে হাত দিয়েছি। কিন্তু তা নয়, এটা নিতান্তই সৌমিকের গল্প। সৌমিক ঘুম থেকে একটু দেরিতেই উঠেছিল। আর পাঁচটা দিনের থেকে ভিন্ন ভাবে। গত ১৫টি মাস ওর একই লয়ে, একই তালে জীবন কেটেছে। ১০টা-৫টা অফিস হলেও ওকে ঘুম থেকে উঠেই অফিসের কথা ভাবতে ভাবতে সবগুলো কাজ করতে হয়েছে। ৭টায় ঘুম থেকে উঠে একেবারে গোসলসমেত ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হতে হয়েছে অফিসের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় নিত্যদিনের যানজটকে মূল্য না দিলে কি চলে! অফিসে পৌঁছাতে প্রতিদিনই ১০টা ০৫ কি ১০ বাজে। তাতে অবশ্য বস রাগ করেন না। কারণ সৌমিক পরিশ্রমী ছেলে। ফাঁকি দেয়া ওর স্বভাবেই পড়ে না। সুতরাং ঐ দেরিটুকু যে অনিচ্ছাকৃত এবং বাংলাদেশের যানজট যে কি রকম- দু-ই বস জানেন। কিন্তু আজ ঘুম ভাঙল ৮টা ৩০ মিনিটে। ঘুম থেকে উঠেই ঘড়ির দিকে তাকাতেই ওর বুক ধড়ফড় করার কথা ছিল কিন্তু তা হলো না। সৌমিক অবাক হয়ে ওর উদাম বুকের দিকে তাকালো। ওর হৃৎপি-টা কাঁপছে না। অদ্ভুত কথা! বুকে বারবার হাত দিয়ে হৃৎপি-কে অনুভব করতে চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বোধ হল না। শান্তা, সৌমিকের ছোট বোন ওর ঘরে এসে বলল, ‘ভাইয়া, কি হলো তোমার? সেই কখন থেকে ডাকলাম, সাড়াই দিলে না। দেখছ, কয়টা বাজে? অফিসে যাবে না?’ সৌমিক হতবাক হয়ে শান্তার দিকে তাকিয়ে, ওর পলক পড়ছে না। শান্তা আবার বললো, ‘কি হয়েছে ভাইয়া? কথা বলো না কেন?’ সৌমিক মুখ খুললো। ‘অফিসে যাব। একটু দেরি হয়ে গেল।’ নিজের কণ্ঠধ্বনি শুনে নিজেই অবাক হলো সৌমিক। ও কখনই এভাবে গম্ভীর সুরে কথা বলে না। এমন পরিস্থিতিতে ওর বক্তব্য হওয়া উচিত ছিল এমন- ‘আগে ডাকতে পারলি না? কতটা দেরি হয়ে গেলো? তোর কি কা-জ্ঞান কিছু আছে? যা তাড়াতাড়ি, নাস্তা দে। আমি আসছি।’ ওর কথাটায় কিছুটা মিথ্যে ঝাঁঝ থাকত কিন্তু আজ তো তেমনটার ধারে কাছেও গেল না। সৌমিক ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ওর চোখটা ওর বুকের বাম পাশে। না ওখানে কোন কম্পন নেই। কিন্তু তাহলে ও বেঁচে আছে কীভাবে? ও তো মরেনি নিশ্চিত। ও যদি আত্মাও হত তবে তো শান্তার সঙ্গে কথা বলতে পারত না। বৃদ্ধ মা পাশের ঘরে ভয়ঙ্কর কাঁশছে। বুকের হাপানিটা হয়তো বেশি উঠেছে। সৌমিকের কোন বোধই হচ্ছে না। ধীরে ধীরে বাথরুমে গিয়ে গোসলটা করল। অফিসের শার্ট-প্যান্ট পড়ে যখন ঘড়িটা হাতে নিল তখনও ওর চোখটা মাথায় ওঠার মতো হলেও ও বিচলিত হল না। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১০টা নির্দেশ করছে। অন্যদিন এমন সময় অফিসের কাছাকাছি থাকে। শান্তা নাস্তা খেতে ডাকল। খাবার টেবিলে বসে খাবারটা হাতে নিতেই খাওয়ার অনিচ্ছা হল। সাধারণত সকালে ওর খুব ক্ষুধা পায় কিন্তু আজ কোন ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই ওর। শান্তা বলল, ‘জানো ভাইয়া, ফাতেমার পেটের বাচ্চাটা না মারা গেছে।’ ফাতেমা ওদের বাসায় টুকটাক কাজ করে। ঘর মোছা বা বিছানার চাদর, পর্দা ইত্যাদি ধোয়ার জন্য মাঝেমাঝে আসে। নগদ কাজ। কাজ শেষ সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট। ফাতেমার বাচ্চা মারা গেছে কথাটা কেবল সৌমিকের কানেই ঢুকল। ওর কোন ভ্রুক্ষেপও হলো না। ও কিছুক্ষণ খাবারগুলোর দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবল, ‘আমার হৃৎপি- গেল কই!’ হঠাৎ ওর ফোনে কল এলো। সকাল ১০টা ৩০ বেজে গেছে। বস ফোন করেছে। সৌমিক বিচলিত নয়। ফোনটা রিসিভ করে বলল, ‘দুঃখিত স্যার। একটু সমস্যা হয়েছে। আমার অফিসে আসতে ঘণ্টা দুয়েক লাগবে।’ একেবারে স্টেট-ফরওয়াড বলে দিল। বসও হয়তো কিছুটা হতভম্ব হয়ে কথা না বাড়িয়েই ফোনটা রেখে দিলেন। সৌমিক কিছু খেল না। জুতো জোড়া পরেই বাসা থেকে বের হল। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবল, ‘এবার তবে কি করা যায়। কি করব আমি? হৃৎপি-টা বন্ধ হয়ে গেলে তো মারাই যেতাম কিন্তু মরিনি তো। আচ্ছা ডাক্তারের কাছে যাব?’ ডাক্তারের চেম্বারের দিকে হাঁটতে শুরু করল ও। হঠাৎ ফাতেমার কথা মনে পড়ল। সৌমিক ভাবল, ‘আচ্ছা ফাতেমার বাচ্চাটা কি সত্যি মারা গেছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে? ফাতেমার তো পর পর তিনটা মেয়ে হয়েছিল। শুনেছিলাম পেটের টাও নাকি মেয়ে বাচ্চা।’ ও ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছালো। ঠিক চেম্বার বলা ঠিক না, ক্লিনিক। ক্লিনিক শব্দের সঙ্গে ক্লিন ক্লিন একটা ব্যাপার আছে। সবকিছু বোধ হয় ক্লিন করা যায় এখানে। লম্বা লাইন। অনেকক্ষণ বসে রইল সৌমিক। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বিভিন্ন মানুষ। কারো পেটে অসুখ, কারো বুকে ব্যথা, কারো জ্বর, কারো সর্বাঙ্গে ব্যথা। সৌমিক সবাইকে দেখে। ওর কোথাও কোন ব্যথা নেই। ওয়েটিং রুমে ঢোকার সময় দরজার সঙ্গে একটা ধাক্কা খেয়েছিল কিন্তু কোন ব্যথাই লাগে না। অন্যরা এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যে ওর উহ্ না করে ওঠাটা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু ওর তো উহ্ উপলব্ধিই আসেনি। ও ব্যথা পায় নি। দীর্ঘক্ষণ পর ওর ডাক এলো। রুমে ঢুকতেই ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখতে বসলেন। ওর সমস্যার কথা বলতে গিয়ে বাক্য শেষ করার আগেই কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ঔষুধগুলো সাতদিন খান। তারপর আসবেন।’ সৌমিক ক্লিনিক থেকে বের হল। ওর কেন যে ডাক্তারের উপর রাগ হলো না ও বুঝল না। অন্য কখনো হলে ডাক্তারকে কম করে হলেও দুটো কথা শুনিয়ে দিয়ে আসত। এবার একেবারে নির্বিকার। ক্লিনিকের পেছনের রাস্তা দিয়ে শর্টকাটে মেইন রোডে ওঠা যায় বলে সৌমিক ক্লিনিকের পিছনের দিকে গেল। অল্প একটু পথ। তবু মানুষ সহজে ও দিকে যায় না। ময়লার স্তুপ। দুর্গন্ধে বমি আসে। সৌমিক ঠিক ক্লিনিকের পিছনে গিয়েই দেখল কতগুলো কুকুর কিছু একটা খাচ্ছে। মাংসের টুকরোর মতো। লালটুকুকে। মাংসের টুকরোটা যেন কাঁপছে। ঠিক যেভাবে বুক কাঁপে। আৎকে উঠল ও। ওটা সৌমিকের হৃৎপি- নয় তো? একটু এগিয়ে গেল। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আরেকটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। হতে পারে ওটা সৌমিকের হৃৎপি- নতুবা কোন শিশুর ভ্রুণ।


সুব্রত দত্ত
মার্চ ২৩, ২০১৬।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:২৭

কাইকর বলেছেন: বেশ অগোছালো

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৩১

সুব্রত দত্ত বলেছেন: হতেই পারে, গল্পকার তো হইনি এখনো, চেষ্টায় আছি। তবে মন্তব্যের ব্যাখ্যা থাকলে উপকৃত হতাম।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শেষের চমক ভাল লাগলো।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৩২

সুব্রত দত্ত বলেছেন: চমকটার ভেতরেই কিন্তু গল্পটা আছে ভাই। গল্প লিখেছি কিন্তু গল্পটাই বলিনি। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লেখা। যদি একটা না লিখে ২/৩ টা প্যারা করে দিতেন দেখতে ভালো লাগতো। পড়েও আরাম পাওয়া যেত।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৩৩

সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। মন্তব্যটি মনে রাখব এবং ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সর্তক থাকব।

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:১৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ব্যাখ্যাটা ঠিক মত হয়নি। সৌমিকের হৃৎপিন্ড অথবা নতুন কোন শিশুর ভ্রুণ কেন হবে? গল্পটা তো সৌমিকের...

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৩০

সুব্রত দত্ত বলেছেন: আমি তো কিছু ব্যাখ্যাই করিনি। গল্পটা আসলে রূপকধর্মী। আরেকবার পড়বেন- বিশেষত ফাতেমা নামের চরিত্রটির কথাগুলো একটু খেয়াল করবেন। আশা করি বুঝতে পারবেন। আর গল্পটা আসলেই সৌমিকের :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.