নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
আমরা অনেকেই লেখি। লেখালেখির ভেতর একটা অকৃত্রিম সুখ আছে। লেখালেখির প্রথম শর্ত অক্ষরজ্ঞান। মোটামুটি যেকোনো একটি ভাষার অক্ষরকে আয়ত্ত করেই লেখালেখি শুরু করা যায়। সেদিক বিচারে লেখালেখি অত্যন্ত সহজ। কিন্তু আদৌ তা সহজ কিছু না। অনেক পড়াশুনা জানা উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি অকপটে স্বীকার করেন, না ভাই এই লেখালেখি আমার কর্ম না। সত্যি বলতে ব্যাপারটা অত সোজা না। অনেকেই তো লেখেন, কিন্তু ক’জন লেখক খ্যাতি পান! এর কারণ অনেকগুলো। প্রথমত ভাষার সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞান। বিষয়টা ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব বা বাগর্থতত্ত্বকে অতিক্রম করে এমন কিছু, যে তা কেবল চর্চা ও চিন্তার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। দেখবেন যারা ভালো লেখক বলে খ্যাত তারা প্রায়শই ব্যাকরণিক নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে লেখেন কিন্তু তবু তাদের লেখা সুখপাঠ্য বোধ হয়, এর কারণ তাদের ভাষিক শক্তি। ভাষা ব্যবহারের একটা শক্তি থাকে। ভাষার আছে ভার ও ধার। দুটোকে আয়ত্ত করা চারটেখানি কথা না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালে পড়েছিলাম ‘ব্যক্তিভাষা’ বা ‘ইডিওলেক্ট’ বিষয়টা। অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তিরই স্বতন্ত্র ভাষা আছে। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের অনেকেরই ভাষা বাংলা হলেও, ব্যক্তিসত্তাগত জায়গা থেকে আমাদের ভাষার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভিন্নতা রয়েছে। সেটা সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত যারা লেখালেখিতে আসক্ত, তাদের। এতে তার লেখালেখির গুণগতমান বৃদ্ধি সম্ভব হয়। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে আমার একটা কোর্স ছিল ‘সৃষ্টিশীল সাহিত্য’, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সৃষ্টিশীল রচনার একটি পাণ্ডুলিপি জমা দিতে হয়েছিল। মোটমাট মাত্র ৮জন শিক্ষার্থী ছিলাম। ক্লাস নিতেন শ্রদ্ধেয় হিমেল বরকত স্যার। সবাই সবার লেখা পড়তাম। আলোচনা-সমালোচনা হত। এক বন্ধু আমার একটা ছোট্ট গল্প খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছিল। ৬৪ লাইনের গল্পটিতে সে শতাধিক অব্যয় শব্দ খুঁজে বের করেছিল। আমি দেখে অবাক হই। স্যার জানান, লেখালেখির ক্ষেত্রে অব্যয় শব্দ ব্যবহার এক ধরনের দুর্বলতা। একটি বাক্যকে সংশয়াপন্ন করে তোলে অব্যয় শব্দ। বাক্যের অন্তর্নিহিত শক্তিও লোপ পায় অব্যয়ের কারণে। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। অবশ্য নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টাটা আর করা হয়নি। আরেক বন্ধু আমার বাক্যগঠনের ধরনকে খুব শক্তিশালী বলেই বিবেচনা করেছিল। হ্যাঁ হতে পারে অব্যয় শব্দ দিয়ে শক্তিশালী বাক্য নির্মাণ করাও সম্ভব। এসব কিন্তু একেবারে ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাপার। মনের ভাব প্রকাশের জন্য তত্ত্বকে এড়ানো অনুচিত।
যাই হোক, আমার আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নিজেকে লেখক হিসেবে প্রকাশ করার পূর্বে আমাদের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া জরুরি।
সাধারণত অনেকেই লেখালেখি শুরু করার পূর্বে নিজেকে এমন কেউ মনে করেন, যে মুক্তমনা, সৃজনশীল এবং নিরপেক্ষ। এইসব বিশেষণগুলো কিন্তু আদৌ অত সহজ না যতটা আমরা ভাবি। মুক্তমনা বলতে আসলে কী বোঝায়? সৃজনশীল হওয়ার জন্য কী যোগ্যতা থাকা জরুরি? নিরপেক্ষ অবস্থান বলতে কি আদৌ কোনো অবস্থান আছে? সেসব প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন।
আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এবং বর্তমান কর্মজীবনের আলোকে বলতে পারি নিজেকে এসব ভাবা প্রচণ্ড বোকামি এবং ভণ্ডামিও বটে। পৃথিবী যে গতিতেই চলুক, তার তাল-লয় যেমনই হোক না কেন, নিজের অবস্থান সুনির্দিষ্টকরণটা জরুরি। বর্তমানে দেখা যায় এমবিএ, ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়া শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে আত্মদ্বন্দ্ব কম কিন্তু মানবিক অনুষদের শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি-ব্যাংক-বিসিএস-হাবিজাবি হাজারও চাকরির পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্যারিয়ারকে ক্যারি করতে পারছে না। কারণ একটা, সে সুনির্দিষ্ট পথ নেয়নি। চাকরির ক্ষেত্রেও নানা গ্রুপিং, শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ ইত্যাদি ঝুট-ঝামেলা থাকে সেখানে নিরপেক্ষরা ভণ্ডামির মাধ্যমে লাভবান হলেও অপরের কাছে রাত-দিন গালি খেয়ে থাকেন, তার থেকে কোনো একটা পক্ষ অবলম্বন করাই তার জন্য উত্তম। ফেসবুকসহ ভার্চুয়াল জগতের সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে অনেককেই লিখতে দেখি। এক একটা ঘটনা ঘটে আর তারা কিবোর্ড টিপাটিপি শুরু করে- নিজের নিরপেক্ষতা দাবি করে লিখতে গিয়ে দেখা যায় তাদের এক একটি ঘটনায় এক এক রকমের অবস্থান এবং কখনোসখনো তা পরস্পরবিরোধী হয়ে পড়ে। নিজে বোঝে না কিন্তু পাঠক এসব ঠিক বোঝে, লেখক হিসেবে তারা যতটা প্রতিষ্ঠা পায় তার থেকে ফাউল বা আঁতেল হিসেবে পরিচিতি পায় বেশি।
তাই আমি মনে করি শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে এসেই পারিপ্বার্শিক বাস্তবতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তির নিজস্ব রুচি-পছন্দ ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা, অস্তিত্ব ও নিজস্বতা ঠিক করে নেয়া উচিত। [যদিও তা অবশ্যই পরিবর্তনশীল থাকব্]
যেসব বিষয়গুলো সর্বপ্রথম ঠিক করা প্রয়োজন-
১। আমার ধর্মীয় বিশ্বাস [আমি আস্তিক নাকি নাস্তিক? আস্তিক হলে আমি কেমন? স্বধর্মপ্রাণ নাকি ধর্মনিরপেক্ষ? প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম পালনকারী নাকি আধ্যত্মবাদে/সূফিবাদ/মরমীবাদ ইত্যাদিতে আগ্রহী?]
২। আমার রাজনৈতিক আদর্শ [আমি ডানপন্থী নাকি বামপন্থী? গণতন্ত্রে আমার আস্থা আছে? সমাজতন্ত্র বা সা্ম্যবাদ নিয়ে আগ্রহ আছে কি? নাকি আমি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী? নাকি এন্টি-ক্যাপিটালিস্ট? গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে আমার গণতন্ত্রটা ঠিক কোন জাতের?]
৩। শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে আমার অবস্থান [আমি কি শিল্পকে শিল্পের জন্য বিবেচনা করি নাকি শিল্প মানুষের জন্য, সেটা ভাবি।?]
৪। মৌলবাদ ও তার বিপরীত অবস্থান [মৌলবাদকে আমি ঠিক কীভাবে দেখি? মৌলবাদ বিষয়টা আসলে কী? আমি কি মৌলবাদী? আচ্ছা মৌলবাদের বিপরীত অবস্থানটা কীরূপ? সেটা সুবিধাবাদ নয়তো? ]
৫। আমার লেখালেখির উদ্দেশ্য কী? সেটা কি কেবল লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা নাকি সমাজজীবনে প্রভাব ফেলা?
এসব প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে লেখালেখি শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি নিজেও উত্তর খুঁজছি। কয়েকটা পেয়েছি। বাকিগুলো পাব বলে অাশা রাখি।
২৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩
সুব্রত দত্ত বলেছেন: হতে পারে ভাই। কিন্তু নিজের কাছে অন্তত বিষয়টা ক্লিয়ার থাকা ভালো। আমার মনে হয়।
২| ২৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭
দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: আপনার বক্তব্য সঠিক বলেই মনে হচ্ছে,লেকজার আগে জানতে হবে আমি কেমন।তার উপর নির্বর করেই লেখা উচিৎ।
আমার মতে ভালো লেখা লিখতে হলে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে,=সৃজনশীলতা এবং শব্দের উপর আয়ত্ত।
ধন্যবাদ।
২৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
সুব্রত দত্ত বলেছেন: হুম। ঠিক বলেছেন। তবে নিজস্ব অবস্থানটা ঠিক করে নেয়াও জরুরি। অনেকে দেখবেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান বা ভ্রমণ বিষয়ক লেখালেখি করেন সেগুলোতে তার পূর্ণ মনোযোগ। তাতে কিন্তু তিনি ভালো মানের লেখা দিতে পারেন। অনেকে হট টপিক নিয়ে লিখতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল করে ফেলেন।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:০০
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখা হতে হবে সার্বজনীন ও লজিক্যালী সঠিক; নিজকে ধর্মীয়ভাবে আলাদা করলে লেখা সার্বজনীন হবে না।
২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:০৭
সুব্রত দত্ত বলেছেন: তাহলে কি ভাই, এই বিষয়টাকে একেবারে এড়িয়ে যেতে বলছেন? কিন্তু লেখালেখিতে তো নিজস্ব বিশ্বাসের ছাপ পড়বেই, তাই না? ধরেন, কেউ একজন মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে মারা গেলেন- এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেউ কেউ নিয়তির কথা আনবেন, কেউ বলবেন এটা তার কর্মফল। দেখেন ধর্মীয় অনুভূতি কিন্তু এখানে এসে যাচ্ছে।
বিশ্বের বিখ্যাত অনেক লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী সার্বজনীন হয়েছেন কিন্তু তাদের ধর্মীয় অবস্থান ছিল এবং তা তাদের লেখা ছাপ আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাই ভাবেন।
লিও টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি থেকে শুরু করে একালে অনেকে খ্যাতিমান সাহিত্যিকেরও ধর্মীয় অবস্থান দেখা যায়।
আমি আপনার সঙ্গে তর্ক করতে চাই না ভাই। আপনার অভিমত জানতে চাই। সময় সুযোগ হলে বিস্তারিত বলবেন। ধন্যবাদ।
৪| ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০৭
সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
নীলপরি বলেছেন: নতুন লেখা কোথায় ?
২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:২২
সুব্রত দত্ত বলেছেন: সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া অনেকগুলো দিন,
তবু লেখার প্রতি আগ্রহ অমলিন।
তাই আবার লিখব আপু।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
"যেসব বিষয়গুলো সর্বপ্রথম ঠিক করা প্রয়োজন-
১। আমার ধর্মীয় বিশ্বাস [আমি আস্তিক নাকি নাস্তিক? আস্তিক হলে আমি কেমন? স্বধর্মপ্রাণ নাকি ধর্মনিরপেক্ষ? প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম পালনকারী নাকি আধ্যত্মবাদে/সূফিবাদ/মরমীবাদ ইত্যাদিতে আগ্রহী?] "
-এই লাইনে এসে বুঝলাম যে, আপনার লেখাটা তেমন দরকারী কিছু নয়।