নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিরাট গরু ছাগলের হাট- ভুল নাকি ঠিক? আমাদের ব্যাকরণ গ্রন্থ কোথায়??

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১

ভাষা ও ব্যাকরণের ব্যবহার নিয়ে বহুজনের বহু মত থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে প্রতিটি ভাষার ব্যাকরণই গুরুত্বপূর্ণ এবং তার যথাযথ নথিবদ্ধকরণ জরুরি। কিন্তু ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ ভাষা হিসেবে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি আছে বলে বোধ হয় না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভাষাতত্ত্ব, ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক অনেক জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে হচ্ছে নানা ধরনের কাজ। তবু সর্বসাধারণের বোধগম্য এবং ভাষা ব্যবহারের দিক-নিদের্শনামূলক ‘বাংলা ব্যাকরণ’ নামক সুনির্দিষ্ট গ্রন্থের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষও মনে করেন বাংলা ব্যাকরণ মানে ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ- নবম-দশম শ্রেণি’ পাঠ্যবইটিই হচ্ছে ‘বাংলা ব্যাকরণ’। এমন ধারণার জন্য অবশ্য ঐ সর্বসাধারণদের দোষ দেয়া চলে না। রাষ্ট্র এর বাইরে কোনো বই আমাদের কাছে সরবরাহ করেনি। এই বইকে ভিত্তি করে অনেক জ্ঞানী, গুণী ও ভাষা-গবেষক, শিক্ষক ‘বাংলা ব্যাকরণ’ পাঠের উপযোগী গ্রন্থ রচনা করেছেন কিন্তু সেগুলোকে ‘গাইড বই’ ব্যতীত অন্যকিছু ভাবাও সম্ভব নয়।

বাংলা ভাষা অত্যন্ত গতিশীল ও প্রবহমান ভাষা। যা বাংলা ভাষার একটি বিশেষ গুণ এবং অন্য ভাষার আগ্রাসনের ভেতরও টিকে থাকার সার্মথ্য বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিনিয়ত তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব, বিশ্বায়ন ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদ প্রতিটি ভাষাকে প্রবলভাবে আগ্রাসনের কবলে ফেলছে। বাংলা ভাষায় বাড়ছে নতুন নতুন শব্দ। তদ্ভব শব্দ যেমন সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত শব্দ, তেমনি বিদেশি ভাষা থেকে উদ্ভূত শব্দও জায়গা করে নিচ্ছে বাংলায়। সেসবকে গণহারে বিদেশি শব্দ বলে চালিয়ে দিতে আমরা দ্বিধা করছি না। বদলে যাচ্ছে বাক্য গঠন, পদক্রম ও বাগর্থ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও। কিন্তু সেসব নিয়ে ভাবার মতো লোক কোথায়? আমি বিশ্বাস করি, আছে। অবশ্যই সৎ, একনিষ্ঠ গবেষক আছেন বা সৃষ্টি হচ্ছেন। আমি তাদের অপেক্ষায়। বাংলা ভাষাও তাদের অপেক্ষায়।

ব্যাকরণ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- ব্যাকরণ হচ্ছে ভাষার সংবিধান, সংবিধান বিষয়টাই সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে নির্দেশ করে কিন্তু ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল, তাই একদিকে ভাষার প্রবহমানতা এবং অন্যদিকে সংবিধান হওয়ার শর্ত- পরস্পর বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এই যুক্তি অগ্রাহ্য করার মতো নয়। কিন্তু তবু আমি মনে করি ‘বাংলা ব্যাকরণ’-কে আবার নতুন করে পরিমার্জনা ও সম্পাদনা প্রয়োজন। এই মহান দায়িত্ব গ্রহণের মতো মানুষ যেন তার লক্ষ্যপথে সফল হয় সে কামনা আমি করি।
শিরোনামের বিষয়ে ঢোকার আগেই কত কথা বলে ফেললাম! না, এবার সরাসরি মূলকথাতেই যাব।

কোরবানির ঈদ এলেই একটা কথা জায়গায় জায়গায় ব্যানারে টানানো দেখি, মাইকিং-এ শুনি, লিফলেটে দেখি- ‘বিরাট গরু-ছাগলের হাট’। একটু শিক্ষিত আমরা মুচকি হাসি দিয়ে বলি ‘গরু-ছাগলগুলো কি বিরাট বিরাট নাকি?’ দেশের শ্রেষ্ঠ বোঝা হিসেবে আমরা শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা তো এসব খুব ভালো বুঝি বিসিএস, ব্যাংক জব-এর ‘বাংলা’ পড়তে গিয়ে শেখার দরুণ। দুধ-বিক্রেতা দুধ দিতে এসে বলে ‘খামারের একেবারে খাঁটি গরুর দুধ’। তখনও হেসে হেসে তাকে জবাব দেই, ‘হ্যাঁ, গরুর যে খাঁটি তা বিশ্বাস করলাম কিন্তু দুধে যে জল মিশিয়েছো তা-ও বুঝি।’ বাক্যগুলোর ভুল আমরা সহজেই ধরতে পারি। কিন্তু আদৌ সেটা ভুল কিনা ঠিক- তার কোনো যথার্থ সদুত্তর দিতে পারে না আমাদের ‘ব্যাকরণ’। একটু লক্ষ করে দেখলে বোঝা যায় বাক্যগুলো ভুল না বলেও ব্যবহার করা সম্ভব এবং তার জন্য যথার্থ যুক্তিও তৈরি করা যেতে পারে।
যেমন ধরুন-
‘গরুর দুধ দিয়ে মিষ্টিজাতীয় খাদ্য তৈরি হয়।’- এই বাক্যে ‘দুধ’ শব্দটি বিশেষ্য এবং তার বিশেষণ হিসেবে পাচ্ছি ‘গরুর’ শব্দটি। কিন্তু আমরা বহুপদী বিশেষ্যের উদাহরণও জানি। ঐ একই বাক্যে আমরা ‘গরুর দুধ’ শব্দটিকেই বিশেষ্য পদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। সেই যুক্তিতে দেখুন তো-
‘বিরাট গরু-ছাগলের হাট’ কথাটিতে ‘গরু-ছাগলের হাট’ শব্দটিকে বহুপদী বিশেষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা? যদি গ্রহণ করাতে কোনো আপত্তি না থাকে তবে ‘বিরাট’ শব্দটি গরু-ছাগলের আগে বসাতেই হবে কারণ বিশেষণ বিশেষ্যের পূর্বে বসে। আর এতে করে গরু-ছাগলগুলো বিরাট বিরাট হয়ে যাবে না। একইভাবে ‘খাঁটি গরুর দুধ’ কথায় ‘গরুর দুধ’ শব্দটিকে বহুপদী বিশেষ্য হিসেবে ধরা হলে কোনো সমস্যা থাকে না বাক্যের গঠন ও তার বাগর্থে।

বাক্যে পদ সংস্থাপনের ক্রম অর্থাৎ পদক্রম নিয়ে ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটিতে যৎসামান্য বিষয়ের উল্লেখ দেখা যায় অথচ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বাংলা ২য় পত্র বইগুলোতে তথ্য বেশি। আবার বিসিএস ও অন্যান্য জবের পরীক্ষার জন্য এমন কিছু ব্যাকরণের বিষয় তুলে ধরা হয় যেগুলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন সম্পন্ন করা একজন শিক্ষার্থীও প্রথম পড়ে। ভাষাতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞানে পঠিত বিষয়গুলোর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয় সেসবের সাথে। সবমিলিয়ে ‘বাংলা ব্যাকরণ’ বাংলা ভাষার যথোপযুক্ত সংবিধান হিসেবে গড়ে ওঠার বদলে পরীক্ষায় প্রশ্ন করা ও পাশ করে জিপিএ পাওয়ার বিষয় হয়ে উঠেছে। যা সত্যিকার অর্থে দুঃখজনক। ভাষার প্রচলন মুখে মুখে এবং মৌখিক ভাষাই শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও একেবারে এলোমেলো পথ দিয়ে পরিক্রমা করতে করতে ভাষা যে হারিয়ে যেতে পারে তাও ভুল কথা নয়। প্রাকৃত যুগের ভাষাগুলোর বিবর্তনের ধারা ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ভাষার রক্ষণাবেক্ষণ না থাকলে ভাষা হারিয়ে যেতে পারে। প্রবল আধিপত্যবাদী পুঁজিবাদের এই যুগে বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রেখে এবং আরো শক্তিশালী ভাষা হিসেবে দাঁড় করাতে বাংলা ব্যাকরণের একটি উৎকৃষ্টমানে গ্রন্থ প্রণয়ন এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

জানুয়ারি ২১, ২০১৭ খ্রি:
সুব্রত দত্ত
পিএইচডি গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: পুচকে গরু ছাগলতো আর হাঁটে তোলা হয়না, তাই বিরাট গরু ছাগল বলা দোষনীয় নয়।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৯

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: গরুই যদি খাঁটি না হয় তবে দুধ খাঁটি হয় কেমন করে? অন্য কিছুর দুধতো গরুর নামে চালানো হতে পারে। তাই তারা বলছে এটা খাঁটি গরুর দুধ অন্য কিছুর দুধ নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.