নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
বরাবরই আমি লেখালেখির প্রতি আসক্ত। খুব যে ভালো লিখতে পারি, তা না কিন্তু লিখতে ভালোবাসি। ছোটবেলায় হাবিজাবি লিখতাম আর ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিতাম খাটের নিচে। মা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখতেন খাতার ছেঁড়া পৃষ্ঠার স্তুপ। মানা করতেন। শুনতাম না। মনে পড়ে একেবারে ছোটবেলায় যখন অক্ষর চিনতে ও লিখতে শিখলাম তখন ঈপশের গল্পগুলো মায়ের কাছে, বোনের কাছে শুনে, বাচ্চাদের ছবি’অলা বই থেকে পড়ে আমি নতুন নতুন গল্প লিখতাম। আসলে গল্পগুলো নতুন কিছুই হত না। ঈশপের গল্পগুলোর একটু পরিবর্তন করতাম মাত্র। তবু বেশ তৃপ্তি পেতাম। ২০০০ সালে জীবনের প্রথম কবিতা লেখি। ঠিক কবিতা বলা যায় না তাকে। বলা চলে পদ্য। তখন পদ্যকেই কবিতা জানতাম। এমনিভাবে বড় হওয়ার পথে লেখালেখি আমার একটা সঙ্গী হয়ে ওঠে। তবে কখনোই খুব মনোযোগ দিয়ে লেখালেখি হত না। কেন যেন স্কুলের দেয়ালিকা, ম্যাগজিন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংখ্যায় দেয়া আমার লেখাগুলো কখনো ছাপা হত না। প্রকাশের পর খুব আগ্রহ নিয়ে ম্যাগাজিন বা পত্রিকাগুলো দেখতাম। মন খারাপ করে বসে থাকতাম কিছুক্ষণ। অবশ্য লেখালেখি দিয়ে পরিচিতি লাভের আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। এবং এ কথা কেবল মুখের না মনেরও কথা। আমার খ্যাতির স্পৃহা নেই। তবে আমি লিখতে চাই। আমার মনের কথাগুলোকে বোধ হয় আমি লিখেই ভালো প্রকাশ করতে পারি ভালো। বক্তা হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের আমি। লেখালেখির ভেতর দিয়ে আমাকে প্রকাশের ব্যাকুলতা আমার আছে।
বর্তমানে এই লেখালেখির উপরই খড়গহস্ত হয়ে উঠেছে সকলে। লেখালেখি মানেই মুক্ত চিন্তার চর্চা বিষয়টা তা নয় কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীনদের ভাবনা তা-ই। মুক্তমনাদের আবার নাস্তিক খেতাবও লক্ষ করা যায়। এদের অনেকে বামপন্থী ভাবতেও কসুর করে না। বামপন্থীদের আবার একদল রয়েছে বিরোধীদলঘেঁষা, এরাই আবার বেশি লেখালেখি করে বলে অনেকের ধারণা। সুতরাং আইন প্রনয়ণ করো। ৫৭ধারা তৈরি করো। ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে যায় এমন কিছুই দেশদ্রোহিতা এবং এর শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এত সবের ভেতরে আমি আমার নিজস্ব ভালো লাগার চর্চা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। আমি স্বীকার করি আমি ভীতু প্রকৃতির মানুষ। নিতান্ত সাধারণ একজন মানুষ যেভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে কোনরকম বিশেষত্ব ছাড়া, আমি তেমন একজনই। সুতরাং লিখতে বসাটা কঠিনতর আমার জন্য। কেউ হয়তো বলবেন, আরে যা মন চায় লিখে রেখে দেন না আপনার কম্পিউটারে। তাহলেই তো আর সমস্যা নাই। ফেসবুকে, ব্লগে বা কোনো গ্রুপ/পেইজে লেখার দরকার কী? আসলে কি, লেখালেখির একটা বড় চাওয়া হচ্ছে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাওয়া। লেখা নিজেই চায় পাঠককে খুঁজে নিতে। এটা কোনো দোষের না।
আবার অন্যদিকে স্ক্রিনশর্ট নামক আরেক আতঙ্ক লেখালেখির প্রাইভেসিকে ক্ষুণ্ন করছে। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিমতকে প্রকাশ করলাম আমারই ওয়ালে। সেটা কেবল আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে। তারা সে সম্পর্কে তাদের পক্ষ বা বিপক্ষ মত দিবে। রাগও প্রকাশ করতে পারে। সমর্থনও জানাতে পারে। কিন্তু যখন কোনোরকম নোটিশ ছাড়াই তার স্ক্রিনশর্ট নিয়ে যেকোনো পেইজে পোস্ট করে আমাকে হেনস্তা করা হবে তখন স্বভাবতই আমি দুঃখ পাব এবং লেখালেখির প্রতি আগ্রহ হারাব। স্ক্রিনশর্ট নেয়া দোষের না তবে তা যেখানে সেখানে প্রকাশ করা অনুচিত। আজকাল তো আবার আমাদের কিছু সংখ্যক সুশীলা ললনা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির চ্যাটেরও স্ক্রিনশর্ট প্রকাশ করে ব্যাপক বিনোদন পেয়ে ও দিয়ে থাকেন। অথচ এটা যে তাদের ব্যক্তিহীনতার পরিচয়, তা তারা বোঝেন না। আমি তো আজকাল চ্যাট করতেও ভয় পাই। অনেক বলবেন, এমন কথা কেনই বা বলবেন যেটা পাবলিকলি আসলে আপনি লজ্জিত হবেন? নিজেকে সংযত করুন। দেখবেন এগুলো কোন সঙ্কটই না। আপনার কথা মানছি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টের যেকেউ তার সঙ্গে আমার চ্যাটের স্ক্রিনশর্ট প্রকাশ করতে পারেন, তাতে আমার কিছুই হবে না। সেটুকু বোধ আমার আছে কিন্তু এমনটা যারা করে তারা কতটুকু বোধসম্পন্ন সেটাই আমার প্রশ্ন।
আমার আরেকটা অযোগ্যতা আমি সংখ্যালঘু। নিঃসন্দেহে আমি সংখ্যালঘু হওয়াকে নেতিবাচক এবং দুঃখজনক বিবেচনা করি। কারণ যতই ভাববাদী কথা বলা হোক না কেন, যতই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলা হোক না কেন, আমরা প্রত্যেকেই সংখ্যালঘুর প্রতি অবিচার এবং ক্ষমতাপ্রদর্শনমূলক আচরণ করে থাকি। এই তো কিছুদিন আগেই নাসিরাবাদে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ‘আমি মালাউন’ টাইপের ঢঙের প্রোফাইল পিকচার আপলোড করলাম কিন্তু সাওতাঁলদের জমি জোরপূর্বক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে কেঁড়ে নেয়া হল তখন কেউ তো ‘আমি সাওতাঁল’ বললাম না। কারণ সংখ্যালঘুর দিক থেকে হিন্দুদের থেকেও সংখ্যালঘু হচ্ছে আদিবাসীরা। তাই জাতিগত পরিচয়ের সাপেক্ষে আমরা হিন্দু মুসলমান সকল বাঙালি ঐক্যবদ্ধ এবং আদিবাসীদের উপর ক্ষমতাপ্রদর্শনমূলক আচরণকারী। তাই সংখ্যালঘুত্ব আসলে ক্ষমতাচর্চার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। ধর্মগত জায়গা থেকে আমি সংখ্যালঘু হওয়ায় আমি পিছিয়ে আছি, থাকব। এখন আমার সকল লেখার সঙ্গে যেহেতু আমার নামটা লেখা থাকে সুতরাং বিষয়টা আরও গুরুতর। আমার লেখায় কি কোন ইসলাম বিদ্বেষী গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কিনা একদল লোক তার সন্ধান করবেন। আবার আমার লেখায় যদি প্যান-ইসলামিক গন্ধ পাওয়া যায় তবে আমার আইডি ফেইক ঘোষণা করে কেউ কেউ জঙ্গী, শিবির ঘোষণা করে দিবে। ধর্ম নিয়ে কথা বললে আমি নাস্তিক বনে যাব। রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে কথা বললে আমি সরকারবিরোধী, বিএনপি-জামাতপন্থী হয়ে যাব।
তাহলে আমি কী নিয়ে কথা বলব? ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’- কথায় বিশ্বাসী একজন মানুষ কিভাবে লিখবে সমাজনীতি, অর্থনীতি বা রাজনীতি ভিন্ন অন্যসব ন্যাকামোর কথাবার্তা। সুতরাং আমাকে লেখালেখি ছেড়ে দিতে হবে যদি আমি একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই। অথবা আমাকে মেনে নিতে হবে লেখালেখির পরাধীনতা। আমি জানি আমি যদি লেখালেখির দাসত্ব মেনে নেই তবে আমি অনেক কিছুই করতে পারব। অনেক দ্রুতই আমার লেখালেখির উন্নতি হবে। কিন্তু নিঃসন্দেহে আমি সে পথে হাঁটব না। আমার সামনে অনেকগুলো পথই খোলা কিন্তু আমি লেখালেখির ক্ষেত্রে অন্তত স্বাধীন পথটিই বেছে নিব।
একদিন আসবেই যেদিন স্ক্রিনশর্ট আতঙ্ক, আমার সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের দরুন পিছিয়ে থাকা- সবকিছুকে অতিক্রম করে আমি স্বাধীনভাবে লিখে চলব। আমার গুটিকয়েক পাঠক তাদের পাঠের খোরাক মিটাতে পারবে তৃপ্তির সাথে।
সুব্রত দত্ত
নভেম্বর ২৭, ২০১৬ খ্রি:
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭
সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যটির ঝাঁঝটি বুঝলাম না। স্যটায়ার করলেন নাকি 'আদিবাসী' শব্দটার সঙ্গে দ্বিমত করলেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: সাওতালরা আদিবাসী নয়। বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী।