নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘শিক্ষক দিবস’ ও আমার কথা

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১১


তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। বরাবরই খারাপ ছাত্র ছিলাম। কখনই পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করে প্রথম, দ্বিতীয় হইনি। এমনিতে অসুস্থ থাকতাম বলে বাসা থেকেও প্রেসার দিত না কখনো। আমি আমার মতো যতটুকু খুশি পড়তাম, ততটুকুই হতো অর্জন। অবশ্য ক্রমশ বড় ক্লাসে উঠতে উঠতে বুঝতে পেরেছিলাম- এই পড়ালেখাই আমার প্রকৃত বন্ধু। এই পড়ালেখাই আমাকে যথার্থ মানুষ হতে পথ দেখাবে। সে যা হোক, বলছিলাম চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ের একটা ঘটনার কথা। স্কুলের কোনো একটা পরীক্ষায় সামনের বেঞ্চে বসে লিখছিলাম , যা যা পারি সেসব। দেখলাম কিছুতেই প্রশ্নে দেয়া সবগুলোর উত্তর দিতে পারছি না। এক প্রশ্নও ঠিক বুঝতে পারছি না যে উত্তরে কী লিখতে হবে। আমি সাধারণত পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের কিছু জিজ্ঞাসা করি না, সংকোচবোধ হয়। তবু ঐ দিন একজন স্যারকে সাহস করে প্রশ্নটা বুঝিয়ে দিতে বলি। অবাক হয়ে লক্ষ করি স্যার বুঝিয়ে দিতেই আমি খেয়াল করলাম প্রশ্নটা অত্যন্ত সহজ এবং আমি তার উত্তরও পারি। সেদিন লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, আচ্ছা স্যার কি ম্যাজিক জানেন? ঠিক প্রশ্নে যে শব্দগুলো আছে, সেগুলোই তিনি পড়ে দিলেন আর দু’একটা কথা বললেন আর আমি দেখলাম আমার ভেতরে পুরো উত্তরটাই আছে। অথচ আমি খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। ঐ স্যার আমাদের ক্লাস নিতেন না, তাকে ঠিকমতো চিনতামও না। আজ নামও মনে নেই, দেখলেও চিনব না। অথচ ওনার ঐটুকু সৌজন্যবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আজ ১৬ বছর পরও তাকে মনে করছি এবং শিক্ষক দিবসে প্রিয় শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাকে প্রথম সারিতে রাখছি। ঐ দিনই আমি মনে মনে ভেবেছিলাম বড় হয়ে শিক্ষক হব। ২০০০ সালের ঐ দিনটার পর ঠিকই পনেরো বছর পর আমি শিক্ষক হিসেবে একটি বিদ্যালয়ে চাকরি নেই। আমার জীবনের লক্ষ্যে আমি পা রাখি। আসলে কি শিক্ষক কে? এবং কী কী গুণ থাকলে একজন মানুষ শিক্ষক হয়ে ওঠেন? সেগুলোর যথার্থ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বর্তমান সময়ে খুব জরুরি বলেই বোধ হয়।

আজ শিক্ষক দিবস। আমি নীতিগতভাবে বাবা দিবস, মা দিবস, ভালোবাসা দিবস, বন্ধুত্ব দিবস- ইত্যাদি দিবস পালন করি না এবং সর্মথনও করি না। কিন্তু আজ মনে হলো এর একটা ইতিবাচক দিক হলো- আমরা তো সারাটা বছরই অনেক অনেক সম্পর্কের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকি। তাই কখনই কোন একটি সম্পর্কের প্রতি ঘটা করে মনোযোগ দেয়া হয় না। এই দিবসগুলো সে সুযোগটা তৈরি করে দেয়। অবশ্য এই একটি ভাবনা দিয়েই এ ধরনের পশ্চিমা সংস্কৃতির সমর্থন আমি করব না। এনিয়ে এখানে আলোচনা করতেও আগ্রহবোধ করছি না। বরং ‘শিক্ষক’ নিয়ে আমরা ভাবনা চিন্তার একটা সংক্ষিপ্ত বয়ান এখানে তুলে ধরব।

পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত অনেকদিন আগেই নিয়েছিলাম। নবম শ্রেণিতে উঠে নিতে চেয়েছিলাম মানবিক শাখা কিন্তু পরিবারে সবাই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কর্মাসে ভর্তি করে দেয়। সিদ্ধান্ত নেই হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক হব। এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করি। নবম শ্রেণির একেবারে শুরু দিকেই। সেসময় সাধারণত সবাই এমনটা করত না। প্রাইভেট পড়তো পরীক্ষা আগে আগে। তা যাহোক, আমার ঐ বড়ভাইয়ের হাতেই আমার হিসাববিজ্ঞানের হাতেখড়ি হয়। বড়বোন তখন কলেজে পড়ে। সেও কর্মাসের ছাত্রী। সুতরাং বড় ভাই আমাদের দুজনকেই পড়াতেন। মনোযোগ দিয়ে আমি শুনতাম। বড় ভাই অত্যন্ত চমৎকারভাবে হিসাববিজ্ঞানের মৌল বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিতেন। আমার খুব ভালো লাগত। স্কুলে অনেক বন্ধুকে হিসাববিজ্ঞান বুঝিয়ে দিতাম। কলেজে উঠে তো পণ্ডিতিও করতাম হিসাববিজ্ঞান নিয়ে। আসলে সেটা ছিল ঐ বড় ভাইয়ের কৃর্তিত্ব। এইচএসসি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং শুরু করি। লক্ষ্য ঢাকা কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। দুটোতেই পাশ করি কিন্তু ওয়েটিং লিস্টে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এতটাই পিছনে ছিলাম যে আর দ্বিতীয় কোনো তথ্য শুনতে যেতে হয়নি। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্টভিত্তিক পরীক্ষা দিয়ে সবগুলোতে ফেল করে কেবল টিকে যাই বাংলা বিভাগের তালিকায়। দুই দুইবার ওয়েটিং লিস্টে ঝুলোঝুলি শেষে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পাই। অনেকেই আপত্তি তোলে। কর্মাস থেকে পড়ে বাংলায় পড়তে যাওয়া কেন? কিন্তু আমি লক্ষ করলাম আমি আমার জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছি না। হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক না হতে পারি তো কী হয়েছে? বাংলার শিক্ষক তো হতে পারব? ভর্তি হয়ে যাই কোনোরকম দ্বিধা না রেখে। শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। একেএকে অনেক শিক্ষকের সাহচর্যে এসে জানতে ও শিখতে পারি অনেক কিছু। অনেক বড় ভাইয়া, আপুর কাছ থেকেও শিখতে থাকি ধীরে ধীরে। আসলে শিক্ষক বলতে আমরা মোটাদাগে মনে করি ‘যিনি আমাদের একাডেমিক পড়াশুনা করান, একাডেমিতে সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক বা অধ্যাপক পোস্টে নিযুক্ত হয়ে ক্লাস নেন ও তার পারিশ্রমিক পান, তিনি হচ্ছেন শিক্ষক।’ অথচ যার কাছ থেকে আমরা বেঁচে থাকার কোনো না কোনো রশদ পাই, জীবনের পথে চলতে একটু সহায়তা পাই তিনিই প্রকৃত শিক্ষক। এখন দেখুন তো আমাদের শিক্ষক কত কত?? আমাদের প্রথমত জানতে হবে শিক্ষক কে? সেটা সম্পর্ককে একটা স্বচ্ছ ধারণা আমাদের সবাইকে পেতে হবে। শিক্ষক অনেকেই হতে পারেন। বিশেষত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে অনেক শিক্ষকই আমাদের নানাভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। বাস থেকে নামার সময় বাম পা’টা আগে দেয়া উচিত, এই শিক্ষাটা আমি অর্জন করেছি বাসের হেল্পারের কাছ থেকেই। সে অবশ্যই আমার শিক্ষক। বুঝতে পারছি এভাবে বর্ণনা করে ‘শিক্ষক’ শব্দটাকে আমি সাধারণীকরণ করে ফেলছি। কিন্তু শিক্ষক শব্দটি যখন ‘যিনি শিক্ষা দেন’ অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে তখন এই সাধারণীকরণ দোষের নয়। কেউ যদি শিক্ষক বলতে ‘গুরু’ বা ‘পথপ্রদর্শক’ অর্থটি ধরেন তবে আলোচনা একটু ভিন্নখাতেই যাবে। গুরু বা পথপ্রর্দশক সবাই হতে পারেন না। বরং আমাদের আশেপাশের অসংখ্য মানুষই আমাদের ভুল পথে বা আমাদের জন্য যথার্থ নয় এমন পথে চলতে উৎসাহিত করে (আমি বলছি না, এটা তাদের ইচ্ছাকৃত, বরং তারা যে গুরুর সাক্ষাৎ পায়নি তারই প্রমাণ)। সেক্ষেত্রে শিক্ষক হতে কী কী গুণ থাকা লাগবে তা ভাবতে হবে। অনেক জ্ঞানী-গুণী, সাহিত্যিকের লেখাতে শিক্ষক কে? তার কাজ কী? তার দায়িত্ব কেমন হওয়া উচিত? ইত্যাদির বিশদ আলোচনা পাওয়া যায়। সেসবের পুনরাবৃত্তি করার দরকার দেখি না। শিক্ষকের প্রকৃত কাজ শিক্ষার্থীর আত্মাকে আলোড়িত করা, উদ্বুব্ধ করা। শিক্ষার্থীকে তার আপন পথটা দেখিয়ে দেয়া। অনেকের কাছেই এসব কথা কেমন যেন পুস্তকীয়, পুস্তকীয় লাগবে। আমিও তা স্বীকার করছি। একাডেমিক শিক্ষকতায় শিক্ষকের দায়িত্ব থাকে একেবারেই প্রাতিষ্ঠানিক- সিলেবাস অনুসারে পড়ানো, পড়া নেয়া, পরীক্ষা নেয়া, ভালো রেজাল্ট এনে দেয়া। বর্তমান রেজাল্টভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় তো শিক্ষক আরো বেশি অসহায়। রেজাল্ট ওরিয়েন্টটেড পড়াতে শিক্ষক বাধ্য। শিক্ষার্থীও অতিরিক্ত কিছূ পড়তে আগ্রহী নয়। শিক্ষা এখন চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করার একটা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত। এমন অবস্থায় যদি বলা হয় শিক্ষকের কাজ শিক্ষার্থীর আত্মাকে উদ্বুব্ধ করা, তবে পুরো ব্যাপারটাই বোকাবোকা লাগবে। তবু শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীর মনের উপর আধিপত্য স্থাপনের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সেটা যেভাবেই হোক না কেন। শিক্ষার্থীরা যেমনই হোক না কেন, শিক্ষকের কথা না শুনুক, না পড়াশুনা করুক কিন্তু শিক্ষকের প্রতি অধিকাংশই পোষণ করে এক ধরনের শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। ঠিক সেটাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষককে প্রভাব ফেলতে হবে শিক্ষার্থীর উপর। আমার ব্যক্তিজীবনে আমি ছাত্র হিসেবে এমন তিন/চারজন শিক্ষককে পেয়েছিলাম, যারা অদ্ভুত দক্ষতায় আমাকে সমৃদ্ধ করে দিয়েছেন। তাই ছোট ক্লাসগুলোতে খারাপ ছাত্র থাকা ছেলেটা মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে ভালো ছাত্র খেতাব নিয়েই। সেগুলো ঐ শিক্ষকদের অবদান। আবার অন্যদিকে আমার অল্পদিনের শিক্ষকতায়ও আমি পেয়েছি কিছুটা সাফল্য। একাডেমিকভাবে আমার শিক্ষকতার বয়স মাত্র ২১ মাস। তাই ঠিক সাফল্য বলতে যা বোঝায়, তা এত দ্রুত অর্জন সম্ভব নয়। তবে টিউশনি করি ২০০৮ সাল থেকেই। খুব যে টিউশনি করতাম ব্যাপারটা তেমন না। এই দু’একটার মতো। তবে বারবার টিউশনি বদলাতাম। পড়াতে পারতাম না মোটেও। আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল আমি ছাত্রদের সঙ্গে এতটাই মিশে যেতাম যে ওদের কাছ থেকে আর পড়া আদায় করতে পারতাম না। ওরা বড় ভাই হিসেবে সম্মান করত কিন্তু শিক্ষক হিসেবে মূল্যায়ন করত না। ফলে টিউশনি না থাকাটাই যৌক্তিক। দু’এক জায়গায় তো অপমানিতও হয়েছিলাম ঐ ব্যর্থতার দরুণ। পরবর্তি সময়ে ২০১২ সালে একটা টিউশনি পাই উত্তরায়। বেশ মোটা মাইনে। দায়িত্বও বেশি না। ছাত্র নবম শ্রেণিতে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ সব সাবজেক্টেই কোচিং-এ পড়ে। আমার দায়িত্ব গাইড টিচার হিসেবে সবগুলোর একটা সমন্বয় করা। পড়ানো শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই যথারীতি ছাত্র আমাকে ভাই বানিয়ে ফেলে এবং আমি তাকে নিয়ন্ত্রণের সার্মথ্য হারাতে থাকি। একটা পর্যায়ে আমি টিউশনি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ছাত্রের বাবা-মাকে জানাই। ছাত্রের বাবা অনেক রেগে যান। ছাত্রকে অনেক বকাঝকা করেন এবং বলেন আমাকে তিনি ছাড়বেন না। আমাকেই পড়াতে হবে এবং ওর পড়তে হবে। এরপর থেকে দেখি ছাত্রটা আমার কথা শোনে। এবং পুরো দশম শ্রেণি পড়ানোর পর সফলভাবেই টিউশনিটার অবসান হয়। ছাত্র গোল্ডেন এ+ পায়। ওর বাবা-মা আমাকে ধন্যবাদ জানায় আমি শুধু বলি, ওর এত ভালো রেজাল্ট করার পেছনে অনেকের হাত আছে, কেবল বাংলা বা বিজিএস-এর মতো বিষয়ে এ+ পাওয়ায় বিন্দুমাত্র হলেও আমি ভূমিকা রেখেছি। ছাত্র আমার এখনও যোগাযোগ করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। একদিন ওর বাসায় গিয়ে দেখি ওর পড়ার টেবিলে বেশ কয়েকটা উপন্যাস, গল্পের বই। ক্রিকেট পাগলা আর সারাদিন মোবাইল-ল্যাপটপ নিয়ে থাকা ছাত্রটা আমার গল্প, উপন্যাসও পড়ে নাকি! জানলাম, তার সাহিত্য ভালো লাগে। কলেজ লাইফে প্রতিটি পরীক্ষায় সে বাংলায় বস হয়েছে। সে নির্দ্বিধায় সে কৃর্তিত্ব আমাকে দেয়। আসলে আমার কৃর্তিত্বের জায়গাটুকু কেবল ওর মনে সাহিত্যের জায়গাটুকুকে নাড়িয়ে দেয়ায়। অন্যদিকে আজকাল লক্ষ করি আমার নবম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী কবিতা পড়তে খুব পছন্দ করছে। পাঠ্যতালিকার বাইরের কবিতাগুলোও তারা সময় পেলে পড়ে। না বুঝলে আমাকে প্রশ্ন করে। ওদের বাংলা ১ম পত্রের সৃজনশীল লেখার হাতটাও পাকা হচ্ছে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অল্প বেতনে প্রচুর পরিশ্রম করে এইটুকু প্রাপ্তিকে আমি অনেক বড় কিছুই মনে করছি। হয়তো ওরাও সাহিত্যকে ভালোবেসে ফেলবে ধীরে ধীরে। মনে হচ্ছে আত্ম প্রশংসা অনেক করছি কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। আমি নির্দ্বিধায় আমার ব্যর্থতার জায়গাগুলোও তুলে ধরতে পারব। আমি ফিডব্যাক নিতে একেবারেই দুর্বল। এজন্য অনেক সময়ই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়। ক্লাস কন্ট্রোলিং-এ্ও পারদর্শী নই। আমি ক্লাসে গেলেই সবাই কথা বলে ওঠে। এর এই বিচার, তার ঐ জরুরি কথা, কে রাগ করছে আমার উপর, স্কুল কবে বন্ধ থাকবে- সবই যেন তাদের আমার কাছ থেকে শুনতে হবে। রাগ করে মাঝেমধ্যে স্কেলের দু’একটা আঘাত দিয়ে দিলেও তারা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার কথা শুরু করে। এগুলো নিঃসন্দেহে আমার অক্ষমতার দিক। তবু আমি মনে করি শিক্ষক হিসেবে একজন মানুষকে প্রথমত হতে হয় ধৈর্যশীল। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে অবলোকন করা জরুরি। তারপর কার, কোথায় প্রতিভা আছে সেটা জেনে নেওয়াও শিক্ষকের দায়িত্ব। বিপদগামী ছাত্র-ছাত্রীদের ঠিক পথে আনার চেষ্টাটাও শিক্ষকের করা উচিত।

আজ শিক্ষক দিবসে আমার সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। একজন আর্দশ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নেই আমার এগিয়ে চলা। সবার কাছে তাই আমি দোয়াপ্রার্থী।

০৫ অক্টোবর ২০১৬ খ্রি:
সুব্রত দত্ত
স্নাতক, স্নাতকোত্তর (বাংলা)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
হায়দরাবাদ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ,
গাজীপুর-১৭১০।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: সুব্রত দত্ত ,




আপনার একজন শিক্ষক হয়ে ওঠার এই বাসনার জন্যে সহস্র সালাম ।
আপনি আপনার মাথাটি তুলে আছেন স্বগর্বে যা আমার- মতো অনেক প্রানীই তুলতে পারবেন না । সে সাহস আমাদের নেই । হবেও না কোনদিন । ঘুণে ধরা এই সমাজ আপনাকে দাম না দিলেও আপনাকে কোনদিন পিছে থেকে গালাগালি করবেনা ।

একজন শিক্ষককে কি করে "শিক্ষক" হয়ে উঠতে হয় , তার বর্ণনা দিয়েছেন সুন্দর ভাবে । অথচ মানুষ গড়ার এই কারিগরেরাই এই সমাজেই অবহেলিত দারুন ভাবে । কিন্তু একজন শিক্ষক আসলে যে কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন সেটা বোঝাতে আমার লেখার এই লিংকটি দিলুম ----শিক্ষক” একটি অবহেলিত প্রানীর নাম…..(?)

শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৭

সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার লেখাটাও পড়লাম। অনেক আগের পোস্ট এটা। তখনই আপনি জরুরি কিছু কথা বলে দিয়েছিলেন। এটা আসলে আজকের নয়, বহু পুরাতন সমস্যা। শিক্ষকরা বরাবরই অবহেলিত হয়। এই পেশায় খুব কম মানুষই নিজে থেকে আসতে আগ্রহ বোধ করে। অনেক তো কোনো উপায় না পেয়ে এই পেশায় থেকে যায়। তাদের মধ্যে অনেকে আবার নানা ধরনের হতাশার ভেতর দিয়ে অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এখনকার শিক্ষকরাই খারাপ, এমন কথা শুনতে হয়। আমি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে এইসব বিষয়কে গায়ে লাগাই না। সমাজের কাছে স্বীকৃতি চাওয়ার কিছু আমি দেখি না। কেউ আমাকে সম্মান করল কি করল না, শ্রদ্ধা জানালো কি জানালো না, ভালোবাসলো কি ভালোবাসলো না- এসব আমার আগ্রহের জায়গা না, আমি আমার দায়িত্বটুকুর প্রতি সর্তক থাকতে চেষ্টা করি। সমাজ আমাকে অবহেলা করলেও আপনার মতো কেউ না কেউ অনেক শ্রদ্ধাই জানাবে, আমার সেটুকুতেই চলবে। যেহেতু আমি জানি না আপনি শিক্ষক কি শিক্ষক না, তাই তেমন কিছু বলতে পারলাম না। তবে আপনার মন্তব্যে অসামান্য হিসেবেই বিবেচনা করছি। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.