নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা!

১১ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭

বর্তমান সময়ে খুব স্পষ্টভাবেই পৃথিবী দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। যদিও পৃথিবীতে অসংখ্য মতবাদ, অসংখ্য আন্দোলন এবং সন্ত্রাসবাদের প্রসার লক্ষ করা যাচ্ছে কিন্তু একটু গভীর দৃষ্টি থেকে বিশ্লেষণ করতে বসলে দেখা যায় দুইটি প্রধান ভাগ পৃথিবীকে গ্রাস করছে। একটি ক্ষমতাসীন এবং অন্যটি ক্ষমতাহীন। এই ‘সীন’ আর ‘হীন’-এর লড়াই দিয়েই পৃথিবী এগিয়ে চলেছে, চলবে কিন্তু তার একটা সহনশীল মাত্রা প্রয়োজন। যখন রাজ-রাজার শাসনকাল ছিল, তখনও নিমর্ম আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ চলত, চলত প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ, নিপীড়ন। এসব একটু ইতিহাস খুঁজলেই আমরা দেখতে পাই। দিন বদলাতে বদলাতে আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের যুগে এসে আমরা পেলাম ‘মানবতাবাদ’ বা ‘মানবধর্ম’ নামক কনসেপ্ট। যা দিয়ে আমরা প্রতিহত করতে চেষ্টা করলাম বিভিন্ন নিপীড়নের। অথচ আধুনিক সমাজেও হয়েছে যুদ্ধ, বিগ্রহ, নিপীড়ন। তার প্রধান সাক্ষী তো দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ। শিল্প ও নন্দনতাত্ত্বিক জায়গায় থেকে বিংশ শতাব্দীকে আধুনিক কালই ধরা হয়। যেখানে মানবতার কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে অথচ তখনই বছরের পর বছর চলেছে বিশ্বযুদ্ধ। চলেছে নিপীড়ন, দুর্ভিক্ষ, ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা। ধরলাম সে সময়টা আধুনিক ছিল না। আধুনিকতা এসেছে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের হাত ধরে। তা হলে সেটা হতে পারে সত্তর বা আশির দশক। আচ্ছা, সে সময়ও তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলছিল, তাই না? এরপর একেবারে একবিংশ শতাব্দীতেই আসা যাক। আপনাদের কি মনে আছে আফগানিস্তান, ইরাকের কথা। আপনি কি জানেন সে সময় যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে কী ধরনের নিপীড়ন চালানো হত? এখনও আমেরিকাসহ পরাক্রমশালী দেশগুলোর কারগারগুলোতে কেমন নিপীড়ন চলে, জানেন? একটু ইন্টারনেটে সার্চ দেন, টুকটাক কিছু তথ্য পেয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। তার মানে ‘মানবতাবাদ’ বা ‘মানবধর্ম’ কনসেপ্ট হচ্ছে এক ধরনের জ্ঞানতাত্ত্বিক চর্চার বিষয়, যা বাস্তবিকভাবে খুব একটা অনুসৃত নয়। এতসব কেন বলছি বলেন তো? বলছি এই কথা প্রতিষ্ঠার জন্য আজ আমরা যে খুব শঙ্কিত নানা প্রসঙ্গে সেগুলোকে আমার মনে হয় খুব স্বাভাবিক। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি উৎত্থান, আইএস ইত্যাদির কার্যক্রম আমাকে আতঙ্কিত করে, ভীত করে কিন্তু অবাক করেন না। আচ্ছা, কারখানায় কম পারিশ্রমিকে খাটানো, শ্রমিকের মজুরি নিয়ে টাল-বাহানা এগুলো কি সন্ত্রাসবাদের অর্ন্তভুক্ত ভাবা যায় না? একজন আমাকে হুট করে এসে মেরে ফেলল সেটা অপরাধ কিন্তু আরেকজন তার নিজ স্বার্থে আমাকে যুগের পর যুগ ব্যবহার করে নিঃশেষ করে দিল অথচ মূল্যায়ন করল না, সেটা কি অপরাধ নয়?
আমার কথার ভেতর সন্ত্রাসবাদের সমর্থন লক্ষ করতে পারেন কিন্তু আমিও একজন শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের পক্ষে আমি নই। তীব্র নিন্দা আমার আছে। তবে আরেকটু বিস্তারিত ভাবতে আমি আগ্রহী।
মূল কথায় আসা যাক, বলছিলাম পুরো পৃথিবী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে একটি ‘ক্ষমতাসীন’ অপরটি ‘ক্ষমতাহীন’। এই ‘ক্ষমতাহীন’ দলটির যত সমস্যা। এর কারণ ‘ক্ষমতাসীন’রা তাদের দর্শন নিয়ে বিভ্রান্ত নয়। তাদের মূল দর্শন ‘পুঁজিবাদ’। এই ‘পুঁজিবাদ’-এর নীতির ভিত্তিতেই তারা প্রতিষ্ঠা করে ‘সিগেরেট ফ্যাক্টরী’ এবং তারপর ‘ক্যান্সার হাসপাতাল’ গঠনেও তাদের আপত্তি নেই। সিগেরেট ফ্যাক্টরীতে তারা মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে কর্মচারী রাখতেও রাজি আবার ঐ কর্মচারীর ক্যান্সারের চিকিৎসা বাদ খরচ করতেও রাজি। মূলত পুঁজিকে কুক্ষিগত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আবার এরাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে বড় বড় কথা বলে গোয়েন্দা সংস্থা গঠন, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সভা-সেমিনার করে, অন্যদিকে অস্ত্র কারখানায় গবেষণা চালায় নতুন নতুন অস্ত্র নিমার্ণ নিয়ে। সেগুলো আবার সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতেও তাদের দ্বিধা নেই। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। নেই কোন ধর্ম, কোন নির্দিষ্ট জীবনাদর্শ। আছে একটি দর্শন, সেটা হলো ‘পুঁজি কুক্ষিগতকরণ’। সুতরাং ‘উই আর নাইনটি নাইন’-এর বিপরীতের মানুষগুলোর দর্শন নিয়ে ভাবার তেমন কিছু নেই। এবার ‘উই আর নাইনটি নাইন’ নিয়ে যত সঙ্কট। এরা ‘ক্ষমতাহীন’ কিন্তু এদের ঐক্য নেই এমনকি দর্শনও ভিন্ন ভিন্ন। একদল মনে করে ‘পুঁজি লুণ্ঠন’-ই একমাত্র সমাধান। একদল মনে করে, সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে পারবে। আরেকদল ক্ষমতা না চেয়ে, চায় একটু সুখে-শান্তিতে বসবাস, তাই তারা ক্ষমতাশীলদের ক্ষমতাকে মর্যাদা দিয়ে একটা সহনশীল মাত্রায় ‘শোষণ-শাসন’ চায়। কেউ নরম, কেউ চরম। ব্যস্, এ থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের সঙ্কট। চরমপন্থী অস্ত্র চায়, হত্যা করে ধ্বংস করতে চায় ক্ষমতাসীনদের সুখের পৃথিবী। অথচ মরে সাধারণ ক্ষমতাহীনরাই। ব্যাপারটা ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে, মাঝখানে প্রজায় মরে’-এর কিছুটা উল্টো করে, ‘ক্ষমতাহীনরা যুদ্ধ করে ক্ষমতাহীনরা মরে, মাঝখানে ক্ষমতাসীন হাসে’ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার মনে হয়, বামপন্থী আন্দোলন, নকশাল আন্দোলন কিংবা সন্ত্রাসবাদ এর সঙ্গে বর্তমান জঙ্গিবাদ ও আইএস-এর খুব বেশি অমিল নেই। সবগুলোই মূলত ‘ক্ষমতাসীন’দের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এবারও বলছি আইএস বা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করছি না কিন্তু তারা কি আমাদের অচিরেই ধ্বংস করে দিবে না? ক্ষমতাসীনদের আসরে আমরা ক’জনই বা আছি? তা ছাড়া একটা কথা আছে, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’। আগুন এক না একদিন সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করবে তখন কি আইএস, জঙ্গিরাও ধ্বংস হবে না? হবে না ক্ষমতাসীনদের নির্মম মৃত্যু?
এতসব বলার পরও বলব, সমাধান কোথায়? তা আমি জানি না। আমার জানা নেই কিন্তু ভয় হয়, আতঙ্ক হয়। পৃথিবী কি এমনিভাবে এগিয়ে চলবে অজানায়? নাকি
অচিরেই ধ্বংস হবে এই মানবসভ্যতা ‘মায়ান সভ্যতা’র মতো করেই? অসংখ্য প্রশ্ন, উত্তর নেই।

সুব্রত দত্ত
জুলাই ১১, ২০১৬
সন্ধ্যা ৭টা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আলটিমেট খেলাটা এরকমই!!!!!!!!!!!!!!!!!

আমাদের যখন যেভাবে বোঝায় আমরা বুঝি

পক্ষ বিপক্ষ হই- তারা খেলে যায়....

কারখানায় কম পারিশ্রমিকে খাটানো, শ্রমিকের মজুরি নিয়ে টাল-বাহানা এগুলো কি সন্ত্রাসবাদের অর্ন্তভুক্ত ভাবা যায় না?

একজন আমাকে হুট করে এসে মেরে ফেলল সেটা অপরাধ কিন্তু আরেকজন তার নিজ স্বার্থে আমাকে যুগের পর যুগ ব্যবহার করে নিঃশেষ করে দিল অথচ মূল্যায়ন করল না, সেটা কি অপরাধ নয়?

মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন।

মুক্তি, শান্তি প্রকৃত স্বাধীনতা-- আর কতদূর???????????????????

১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:১০

সুব্রত দত্ত বলেছেন: আসলেই ভাই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন তো আছে। উত্তর তো ট্রিলিয়ন ডলারের নাই। সেটাই দুঃখ। আসলে ভাবতে বসাটাও প্রেসারের। প্রেসার বাড়লেও ঔষধ কোম্পানির লাভ। কই যাব!! জীবন বড়ই বিচিত্র। এখানে মুক্তি, শান্তি, প্রকৃত স্বাধীনতা বলে আদৌ কিছু আছে নাকি! কোন একজন বিখ্যাত নেতা বলেছিলেন, বিপ্লবের পরের দিনই নাকি বিপ্লবীরা রক্ষণশীল হয়ে যায়। সেটা তো সত্যই বোধ হয়।
যা হোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.