নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
জুন ০৩, ২০১৬
রাত: ৯টা ৩০মিনিট।
দেখতে দেখতে জীবন থেকে ২৫টি বছর শেষ হয়ে গেল। বরাবরই আমি জীবনটাকে একটা ওয়েন ডে ক্রিকেট ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করে হিসাব করতে ভালোবাসি। জীবনের এক একটি বছর যেন এক একটি ওভার। জীবনের সমস্ত কর্মকা-গুলো হলো উইকেট। আর কাজকর্মের ভেতর দিয়ে আমরা যে সকল বস্তু ও অবস্তুগত সম্পদ পেয়ে থাকি সেগুলো হল মোট রান। প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাদের কাছে থাকে সম্পূর্ণ পৃথিবী, মহাবিশ্ব তথা মহাকাল। প্রতিটি বছরই পৃথিবী আমাদের এক একটি ওভার হিসেবে দেয়। জীবনের একটা সময় থাকে পাওয়ার প্লে। তখন যত বেশি রান সংগ্রহ করে নেয়া যায়, তত বেশিই জয়ের নিশ্চয়তা বাড়ে। বিশাল টার্গেট দিয়েও যেমন কখন কখন হেরে যেতে হয়, জীবনের ক্ষেত্রেও ব্যাপার তেমনই। তবে ক্রিকেট ম্যাচ শেষে যেমন বিজিত ও পরাজিতের হাত মেলানোর দৃশ্য দেখা যায়, তেমন আমাদেরও জীবনের সায়াহ্নে এসে পৃথিবী, মহাবিশ্বের আত্মার সঙ্গে মিশে যেতে হয়। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবী এবং এর সমস্ত উপাদানের আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। সেই আন্তঃসম্পর্কের নামই হতে পারে ঈশ্বর। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ও বস্তু ঐ ঈশ্বরে লীন হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল। আমাদের কর্তব্য কেবল সেই আন্তঃসম্পর্ককে বুঝতে চেষ্টা করা, পৃথিবীর প্রতিটি উপাদানের ভাষা শেখার চেষ্টা করা। সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোএলহো-এর ‘দ্যা আলকেমিস্ট’ বইটা পাঠ সম্পন্ন করলাম। অদ্ভুত রচনাশক্তির ভেতর দিয়ে জীবনের প্রতি গভীর দৃষ্টির প্রয়াসের অনুপ্রেরণা পেলাম। সত্যিই তো সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মা- প্রতিনিয়ত হাজার হাজার সঙ্কেত পাঠায় আমাদের। আমরা বুঝি না অথবা বুঝতে চেষ্টা করি না। আর আমাদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন বা আকাক্সক্ষা হচ্ছে মহাশক্তির ডাক, সেই ডাকটা বুঝে উঠতে না পারাটা আমাদের জীবনের জন্য দুঃখজনক। সান্তিয়াগো চরিত্রটি গুপ্তধনের অনুসন্ধানের তার যে যাত্রা শুরু করেছিল, তা আসলে তাকে পৌঁছে দিয়েছে শাশ্বত সত্তার দিকে। গুপ্তধন কিন্তু ঠিক আমাদের হৃদয়েই থেকে তাকে অথচ আমরা অনুসন্ধান করি বিশ্ব-ব্রহ্মা- জুড়ে এবং এই অনুসন্ধানের ফলে আমরা উপলব্ধি করতে শিখি আমার হৃদয় এবং সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মা- প্রকৃতপক্ষে একটি একক সত্তাই। তবে আমাদের অনেকেরই গুপ্তধন অনুসন্ধান করা হয় না। লেখক পাওলো কোএলহো তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সেগুলোর চমৎকার বয়ান করেছেন। পুরো বইটা আমাকে একটি ইতিবাচক উপলব্ধিতে সিক্ত করেছে। জীবনের এমন একটা অধ্যায় পার করছি যেখানে এই ‘দ্যা আলকেমিস্ট’ বইটা আমার হাতে আসাটাও একটা বড় সংকেত। এ বছর খুব কম বই-ই পড়েছি। অথচ এ মুহূর্তে এই বইটা আমার জন্য অসম্ভব দরকারি ছিল। আমাকে নির্ধারণ করতে হবে ‘আমি কী চাই?’ ২৫ বছর শেষে এমন প্রশ্নের সামনে দাঁড়ানোটা হয়তো সুখকর নয় কিন্তু ক্রিকেট খেলার স্কোরবোর্ডের মতো করে যদি জীবনের ইতিহাসটা পাঠ করি তবে হতাশ হাওয়ার তেমন যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে না। ২৫ ওভারে আমার সংগ্রহ একদম কম না। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার শেষ ধাপটিও পার করেছি সাফল্যের সঙ্গেই। যদিও বাংলা বিষয়ে পড়াটা ক্যারিয়ারের জন্য খুব বেশি ভালো হয়নি তবু অনার্স ও মাস্টার্সে ভালো রেজাল্ট আমাকে সাহায্য করবেই। এছাড়া উইকেট পতনও কম হয়েছে। উইকেট পতন বলতে জীবনের ভুলগুলো হলো এক একটা উইকেটের পতন। খুব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনে বড়সড় ভুল দু’একটার বেশি করিনি। অর্থাৎ ২৫ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েছি। আরও ২৫ ওভারে পাব ৮টি উইকেট। মোট রানও একদম কম না। সুতরাং সামনের পাওয়ার প্লে-তে কিছুটা ঝুঁকি নেয়া অবিবেচকের কাজ হবে না। তবে মনে রাখতে হবে বৃষ্টি বা এই ধরনের প্রাকৃতিক বা জরুরি কারণে যেমন অনেক ম্যাচই পরিত্যক্ত হয়, তেমন জীবনের খেলাটাও হঠাৎই বিঘিœত হতে পারে। তাই ক্রিকেট কেবল বল আর ব্যাট নিয়ে টোকাটুকি না বরং আরও বৃহৎ একটি মানসিক ক্রিয়া। জীবনও তাই। তবে এ মুহূর্তে আমার সব ভাবনাকে পাশে রেখে আমার চাওয়াটাকে সুনির্দিষ্ট করতে চাই। কর্মজীবনের সূচনায় সেটাই বেছে নিয়েছি যেটা অনেক আগে থেকেই ভাবতাম। এখন মনে হচ্ছে, জীবিকার জন্য শিক্ষকতা। আর জীবনের জন্য বেছে নিতে হবে শিক্ষকতারও আগে ভেবে রাখা ক্ষেত্রটা। সেটাকে কখনই পেশায় পরিণত করব না। সেটা নেশা হয়ে জীবনকে আক্রান্ত করবে। কেউ হয়তো বিশ্বাস করবে না কিন্তু এটা সত্য আমি খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলাম। একদম ছোটবেলায় যখন সবেমাত্র লিখতে শিখেছি, তখনই ঈশপের গল্পগুলো পড়ে পড়ে একটু কাটসাট করে নতুন গল্প লিখতে চেষ্টা করতাম। আর ২০০০ সালে, ক্লাস ফোরে-ই আমি লেখি জীবনের প্রথম কবিতা। হাস্যকর সেই কবিতাটা আজও ভুলিনি। তবে লেখালেখি অনুশীলনের বিষয়। কেবল ভালো লাগা দিয়ে লেখক হয়ে ওঠা যায় না। পড়তে হয়, বিশ্ব-ব্রহ্মা-কে দেখতে ও অনুভব করতে হয় আর লিখতে হয় প্রতিনিয়ত। সেগুলো কখনই গভীরভাবে করিনি। অধ্যবসায় বিষয়টা আমার মধ্যে খুব বেশি উপস্থিত নয়। তবে নিজেকে নতুন উদ্দামে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সাধনা শুরু করার জন্য খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি। তাই ভাবনা-চিন্তাকে পরিশীলিত করে, একটি সুস্থির কর্মে আত্মনিয়োগ করার চেষ্টাটাই এখন বড় কাজ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এবং আমি তা করারই চেষ্টা করব।
২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩২
সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বেস্ট অফ লাক!!