নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

“আমার ডাইরী- ভারত ভ্রমণ বিষয়ক: বাংলাদেশ ও কলকাতা প্রসঙ্গে”

১৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

(ভারতে ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বে কত কি নাই ভেবেছিলাম। সমাজ, সংস্কৃতি অধ্যয়নসহ নানা বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করব, তার বিশ্লেষণ করার প্রয়াস চালিয়ে দু’চারটা প্রবন্ধ লিখব। কিন্তু মাত্র ১৯ দিনে ভারতের মত সুবিশাল রাষ্ট্রের ছিটেফোঁটাও যে দেখে শেষ করা সম্ভব নয় তা বুঝলাম ভ্রমণে গিয়ে। এছাড়া ভ্রমণের সঙ্গে ছিল বহুস্থানে, অনেক মানুষের সঙ্গে ঘোরা-ফেরার নানা ঝক্কি। তবু তার মধ্য থেকেও অনেক কিছু দেখেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি। আজ তা থেকেই ছোট একটা লেখা লিখতে বসা।)


কলকাতা আর বাংলাদেশের মধ্যে মিলের প্রধান জায়গাটি হল ভাষা। যদিও কলকাতা আর বাংলাদেশের বাংলার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর, তবু দুটোই যে বাংলা তাতে সন্দেহ নেই। তাছাড়া ভূ-খ-বছঁয়গছ্যতভাবেও পুরো বাংলা অঞ্চলের মিল কম না। তাই পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) মিলে অখ- বাংলা কল্পনা করা অযৌক্তিক নয় (রাজনৈতিক ভাবে অবশ্য কল্পনা করার সুযোগ নেই)। এই বাংলার দুইটি ভাগের জীবন ব্যবস্থা আলাদা। ১৯৪৮ সালে বাংলা বিভাগের পর ৬৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের জীবন-সংস্কৃতি-আচার-ব্যবহার বদলেছে অনেক (যদিও বহু আগে থেকেই এ দুই অঞ্চলের জীবন-সংস্কৃতি কিছুটা ভিন্ন)।

কলকাতার পার্ক স্ট্রীটের পাশে একটি হোটেলে অবস্থান করি দুই রাত এবং একদিন। সেই অল্প সময়ে যতটুকু দেখেছি তা যৎসামান্য অবশ্যই। অনেক কিছুই দেখি নি। দেখি নি ভিক্টোরিয়া পার্ক, গড়ের মাঠ, সাইন্স সিটির মত অনেক নামকরা জায়গা-ই। কেবল নিউ মার্কেটের আশেপাশেই কেটেছে সারাটা দিন। তার মধ্যে থেকে যতটুকু দেখেছি তা থেকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় রকমের পার্থক্য চোখে পড়েছে।
তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। এশিয়া তথা পুরো বিশ্বে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে অনেক ভালোতেই। এ দিক থেকে কলকাতার থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে।
বেনাপোল বর্ডার অতিক্রম করে যখন দহগ্রাম দিয়ে বাসটি কলকাতার অভিমুখে যাচ্ছিল তখন জানালা দিয়ে বাহিরটা দেখছিলাম। দহগ্রাম আমাদের দেশের অনুন্নত গ্রামগুলোর মতই একটি গ্রাম। পূর্ব বাংলার শাশ্বত রূপ বলতে যে গাছ-গাছালিময় চিরসবুজ প্রকৃতির কথা মনে পড়ে, দহগ্রাম অনেকটা তেমনই। প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির সঙ্গে সঙ্গে দেখছিলাম সেখানকার মানুষের পোশাক-আশাক, চাল-চলন। দেখলাম সেখানের দোকান-পাট, মার্কেট, যানবাহনসহ আরো অনেক কিছু। প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে যে পার্থক্যটি আমার চোখে পড়ল তা হল ‘বাংলা হরফ’। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলা ভাষা ও তার শব্দ-অক্ষর-উচ্চারণ নীতি নিয়ে বাংলা একাডেমি অনেক কাজ করে একটি প্রমিত বাংলার প্রচলন করেছে, কলকাতায়ও হয়তো তেমন কোন কাজ হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তাদের বাংলা হরফ, যুক্তবর্ণ ব্যবহারের ধরনটা এখনও প্রাচীনরূপেই আছে। বিশেষত প্রিন্টিং মিডিয়াতে বাংলা ফন্ট নিয়ে যে উন্নতিটা বাংলাদেশে ঘটেছে, তা কলকাতায় বেশি একটা হয়নি বলেই মনে হয়।
পোশাক-আশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কলকাতা ও বাংলাদেশের অমিল থাকলেও তা খুব বেশি নয়। পুরুষের পোশাক প্রায় একই রকম দু’রাষ্ট্রে। তবে কলকাতার মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ অপেক্ষা শার্ট-টপস্-জিন্স ব্যবহার করে বেশি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়েরাই সালোয়ার-কামিজকে এখনও প্রধান পোশাক হিসেবে বিবেচনা করে। ওড়নার ব্যবহার কলকাতার মেয়েরা করে না বললেই চলে। অবশ্য ধীরে ধীরে এদেশেও ওড়নার প্রচলন হ্রাস পাচ্ছে। পোশাকের এই বিষয়টা আরো অনেক বিষয়ের সঙ্গে খুব ভালো ভাবেই সংযুক্ত। বাংলাদেশের যে মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পরিত্যাগ করে শার্ট-টপস্-জিন্সের দিকে ঝোঁক দিচ্ছে, ওড়না ব্যবহার ছাড়ছে, তাদের চলনভঙ্গিতে সাবলীলতা একটু কমই মনে হয় কিন্তু কলকাতায় তেমনটা মনে হয়নি। ওদের পোশাকের ঐ ধরনটা বেশ দীর্ঘদিনেরই মনে হয়েছে। অর্থাৎ ওটা তাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এটি এখনও অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা নতুন চল। তবে আমার মনে হয়েছে উভয় দেশের মেয়েরাই রূপচর্চার ব্যাপারে যতটা সচেতন ততটা স্বাস্থ্য সচেতন নয়।
পুরো ভারতের তুলনায় কলকাতার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বলে মনে হয় নি তবু কাজ, পরিশ্রমের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র কম নয়। সারাদিন-সারারাত ব্যতিব্যস্ত থাকে সবাই। আমাদের দেশেও তেমন, তবু মনে হয় অলসতা, কাজে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা আমাদের একটু বেশিই।
কলকাতার পণ্যগুলোর দাম, মান বাংলাদেশের তুলনা ভালোই মনে হয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে অন্তত কলকাতার মধ্যবিত্ত শ্রেণি আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির তুলনায় ভালো জীবন যাপন করে। তবে সামাজিকভাবে বিশেষত ধর্ম, জাত ও উুঁচ-নিচু শ্রেণির ভেদনীতি কলকাতায় বেশি। আমাদের দেশে যেখানে অর্থ-সম্পদই মানুষকে বড় ছোট শ্রেণিতে ভাগ করে সেখানে কলকাতায় ধর্ম একটা বড় ব্যাপার।

আমাদের দেশের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে কলকাতার থেকে গতিশীল ও দ্রুত বেগবান। এটি আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই মঙ্গলজনক। তবে বড় যে সমস্যা এই অগ্রগতির জন্য হচ্ছে তা হল আমাদের ‘জেনারেশন গ্যাপ’-এর সময়সীমা দ্রুত কমে যাচ্ছে। জেনারেশন গ্যাপ বিষয়টি হল এক প্রজন্মের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রজন্মের মানুষের যোগাযোগগত অমিলগুলো, তারতাম্যগুলো। সাধারণত ধরা হয় এক জেনারেশন সমান ২৫ বছর। অর্থাৎ মোটামুটি ২৫ বছর সময়সীমার সবাই একই প্রজন্মের। কিন্তু আমাদের দেশে মোটামুটি ৭/৮ বছরের পার্থক্যতেই গ্যাপ সৃষ্টি হয়। মানে বর্তমানে একজন ২২/২৩ বছর বয়সী মানুষের সঙ্গে ৩০/৩১ বছরের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, রূচি, আদর্শগত অমিল দেখা যায় প্রচুর এবং একে অপরের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে না। আমার মনে হয়েছে কলকাতায় এই গ্যাপের সময়সীমা অন্ততপক্ষে ১২/১৫ বছর হবে। এটা অবশ্য আমার ঝাপসা ধারণা। এই সময়সীমা কমে গেলে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বাড়ে, মানুষ নিঃসঙ্গ হয় এবং সর্বাপরি রাষ্ট্রের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। এই সময়সীমা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ও তার নেতিবাচক প্রভাব। তথ্য-প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব কীভাবে জেনারেশন গ্যাপের সময়সীমা কমিয়ে দেয় তা নিয়ে বিস্তারিত কথা অন্যত্র করা যাবে। শুধু এটুকু বলব, আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য যতগুলো প্রতিবন্ধকতা আছে তার মধ্যে জেনারেশন গ্যাপ অন্যতম।
কলকাতার মানুষেরা ধোঁয়া তুলসী পাতা আর বাংলাদেশের সবাই দুর্নীতিবাজ-এ কথা বলা যেমন ঘোরতর অন্যায় হবে, তেমন দুর্নীতিতে যে আমাদের দেশের অবশ্য শোচনীয় তা অস্বীকার করাও ঠিক না। কলকাতার তুলনায় এদেশে দুর্নীতি বেশি।
সর্বাপরি বলা যায় কলকাতা ও বাংলাদেশ খুব বেশি ভিন্নতা বহন করে না। যতটা পার্থক্য কাশ্মীর আর কলকাতার তার ছিকি ভাগ পার্থক্যও নেই বাংলাদেশ ও কলকাতার। তবু সমধর্মী হওয়া সত্ত্বেও সংস্কৃতিগত ভাবে দুটি অঞ্চল আলাদা। আমাদের উচিত হবে কলকাতার সঙ্গে আমাদের মিল এবং অমিলগুলো আরো বেশি সুনির্দিষ্টভাবে খুঁজে বের করে আমাদের পিছিয়ে থাকা বিষয়গুলোর প্রতি সর্তক হওয়া, সংশোধন আনা।

সুব্রত দত্ত
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪


[ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। পুরো লেখাটাই আমার নিজস্ব ভাবনাজাত। তথ্যসূত্রের ব্যবহার নেই তাই।]

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এমন ভাবনা এবং বিশ্লেষনের লেখা ইদানিং খুব একটা চোখে পড়ে না। আপনার ব্লগ পড়ে ভালো লেগেছে।


২০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯

সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষন!!

২০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০

সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

অপরিচিত সেই আমি বলেছেন: আপনি যে অনেক জ্ঞানী একজন ব্যক্তি, সেটা আপনার পোস্ট গুলো দেখলেই বোঝা যায়। খুব ভাল লাগলো আপনার বিশ্লেষণ ভিত্তিক পোস্টটা!

২০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭

সুব্রত দত্ত বলেছেন: জ্ঞানী বলে লজ্জা দিবেন না প্লিজ। জ্ঞানী হওয়া সহজ কর্ম নয়। আমি খুব কম পড়েছি। কেবল পরীক্ষা ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য পড়লেই জ্ঞানী হওয়া যায়। আরও অনেক কিছু পড়তে হয়। পাশাপাশি জীবন ও জগৎকে খুব সূক্ষ্মভাবে দেখতে হয়। সেই দেখার চোখ এখনও আমার ফোটেনি। আর এই যে দু'চারটা পোস্ট এগুলো তো ভেবে চিন্তে, ঘষেমেঝে প্রস্তুত। তবু আপনার আমাকে এভাবে মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ। ভালো লাগল আপনার মন্তব্য। দোয়া রাখবেন যাতে লেখালেখি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি। ভালো থাকবেন।

৪| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:০২

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাল লাগল ।

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১১

সুব্রত দত্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১২

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

অনেক ভালো লেগেছে লেখাটি। কলকাতা সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু সম্পূর্ণ তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। তবে নিজ দেশ তথা বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়নে দ্বিমত করার কিছু পেলাম না।

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:২০

সুব্রত দত্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে কলকাতায় মাত্র দুটি রাত ও একটি দিন ছিলাম। ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমরা ভ্রমণের সূচনাস্থান ও সমাপ্তিস্থান হিসেবে কলকাতায় থেকেছিলাম। সেক্ষেত্রে কলকাতার কিছুই দেখা হয়নি বলা চলে। চারপাশটার দিকে তাকালে যে অস্বচ্ছ ধারণা জন্মেছে সেটাকে ভিত্তি করেই এ লেখা। সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে অসম্পূর্ণ। আর নিজের দেশটা তো জন্ম থেকেই দেখছি। তবু দেখার ভঙ্গিতে মানুষে মানুষে অমিল থাকাই স্বাভাবিক। যেহেতু আপনার দ্বিমত নেই সুতরাং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মিল রয়েছে। ভালো থাকবেন।

৬| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:১৬

কল্লোল পথিক বলেছেন:




চমৎকার বিশ্লেষণ।

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪০

সুব্রত দত্ত বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৭| ৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৩৬

এস বি সুমন বলেছেন: আপনার এই লেখাটি পড়ে মোটামুটি একটু ধারণা পেলাম কলকাতা সম্পর্কে ।

৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০৯

সুব্রত দত্ত বলেছেন: সময় সুযোগ পেলে একটু ঘুরে আসবেন। কলকাতা যাওয়া এখন কোন জটিল ব্যাপারই নয়। অবশ্য ভিসা পেতে কষ্ট হয়। যা হোক, আপনার কিছুটা ধারণা হয়েছে ভালো লাগল। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.