নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।
একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৪৪ বছর। এই অল্প সময়ে রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যগুলো সম্পাদন করা সহজ ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি কল্যাণমূলক আধুনিক রাষ্ট্রের যে সকল উপাদান থাকা উচিত, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনেকটা সময়। একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে সময়টা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তবে একটি রাষ্ট্র কতটুকু উন্নত হবে অথবা তার ভবিষ্যৎ কোনদিকে এগোচ্ছে তা বোঝা যায় তার শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা দেখে উপলব্ধি করা সম্ভব।
একটি ব্লগে সেদিন পড়ছিলাম একজন লিখছেন যে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুটিকয়েক শিক্ষা-ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ সন্তুষ্ট নয় বলে তার ধারণা। বক্তব্যটি একদম একপেশে হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সরকার নানাভাবেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক প্রয়াস চালাচ্ছে। এটি কোন তোষামুদে কথা নয়। একটু উদারদৃষ্টিতে তাকালেই তা নজরে পড়বে। তবু একটা কিন্তু থেকে যায়। সেই কিন্তুর উত্তর খোঁজাই বর্তমান বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুণী ও শিক্ষাবিদের একমাত্র কাজ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় অতীতের বছরগুলোতে যাবতীয় পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপক হারে নকল এবং দুর্নীতি হয়েছিল। এটি ছিল রাষ্ট্রের জন্য বিষবৃক্ষের প্রথম চারা রোপন। এই ঘটনাটির প্রভূত ক্ষতি একদিনে মুছে ফেলা যাবে না এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমাদের বয়ে চলতে হবে পাবলিক পরীক্ষায় দুর্নীতির মনোভাব। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান যে লক্ষ্য ছিল ‘জাতিকে মেধাশূণ্য করে দেয়া’ তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে বলা চলে। ঐ সকল বুদ্ধিজীবীদের অবর্তমানে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম চলে গিয়েছিল অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে। বাংলাদেশ যে সূচনালগ্নে একেবারে বুদ্ধিজীবীশূণ্য অবস্থায় ছিল, তা বলছি না কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনেককেই হারাতে হয়েছে। যা চলে গেছে তা নিয়ে ভেবে অবশ্য সবিশেষ লাভ নাই।
বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য স্বাধীনতার পরপরই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। পাকিস্তান আমলের কয়েকটি শিক্ষানীতির সঙ্গে অনেকটা মিল রেখেই তৈরি করা হয় শিক্ষানীতি। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদলে বারবার শিক্ষানীতির পরিবর্তন হয়েছে। একটি রাষ্ট্রের শিক্ষানীতির বারবার পরিবর্তন নির্দেশ করে রাষ্ট্রটি মেধাশূণ্য অবস্থায় আছে। এমন কলঙ্কটাকে আমরা এড়াতে পারি না। শিক্ষার স্তর, পাবলিক পরীক্ষাসমূহ, পাঠ্যবই, পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াদি অনেকবারই ব্যাপক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভেতর নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে পরোক্ষভাবে। সর্বশেষ শিক্ষানীতি-২০১০ (যা বেশ কয়েকবার সংশোধিত, পরিমার্জিত হয়েছে) অনুসারে সরকার একটি স্থিতিশীল শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনার প্রয়াস চালিয়েছে। সেই নীতি অনুসারে এখন বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে মুখস্ত পড়ার পরিবর্তে সৃষ্টিশীল পদ্ধতিতে শেখানোর জন্য চালু করা হয়েছে ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’। প্রতি বছর প্রায় চার কোটি বই সরকার ছাপিয়ে বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে। বাজেটের একটি বড় অংশ থাকছে ‘শিক্ষাখাতে’। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিক্ষার্থীও পড়ার বইটি যথাসময়ে পেয়ে যাচ্ছে। এসবই জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এনসিটিবি-র ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে সকল শ্রেণির সকল বিষয়ের বইয়ের সফ্টকপি। এগুলো সবগুলোই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কথাই নির্দেশ করে। কিন্তু সরকারের একটি বিষয়ের প্রতি খুব বেশি মনোযোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। তাহলো- ‘শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি’। প্রতিটি শিশু স্কুলে যাক- এই চাওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু তার সঙ্গে এটিও চাওয়া প্রয়োজন যে শিশু যেন স্কুলে গিয়ে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী হয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সামাজিকতা শেখে।
দেখা যায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী মেধাবী মানুষ পেশা হিসেবে কখনই শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চান না। শিক্ষকতাকে খাটো চোখে দেখা হয় বরাবরই। সামাজিক এই সমস্যাটি রাষ্ট্রের জন্য সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক। অবশ্য সামাজিক সমস্যাটি অর্থনীতির সঙ্গেও জড়িত। শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি অন্য যে কোন পেশার থেকে অনেক কম। এটি অবশ্যই শিক্ষকতা পেশার জন্য সঙ্কটজনক। এইসব কারণে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে পায় না নতুন প্রজন্ম। বিদ্যালয়ে গিয়ে একজন আদর্শবান ব্যক্তিকে যদি কোন শিশু না-ই পায় তবে তার শিক্ষার প্রতি আগ্রহ-ই তো জন্মাবে না। যারা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন তাদের জন্যও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা লক্ষ করা যায় না। প্রশিক্ষণের নামে কয়েকটি দিন অবশ্য অতিবাহিত হয় এবং রাষ্ট্রের কিছু অর্থের বিনষ্টি ঘটে। ফলে ক্লাসে পাঠদানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিসহ যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত না হওয়া ব্যক্তিরাই দিনের পর দিন ক্লাস নিতে থাকে। সেখানে শিক্ষার উদ্দেশ্যটাই ভালোভাবে ফুটে ওঠে না শিক্ষার্থীদের কাছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর পর তো আরও বিশাল একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থার সম্মুখিন হয় ছাত্র-শিক্ষক সকলে। বিদেশি ‘কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি’কে এনে ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ নামে উপস্থাপন করা হয় এবং সকল বিষয়ের একটি ব্যাপক পরিবর্তন এনে কোটি কোটি বই ছাপিয়ে তুলে দেয়া হয় ছাত্র-শিক্ষকের হাতে। শিক্ষকদেরই শুরু করতে হয় ব্যাপক হারে পড়াশুনা। অথচ ‘কাঠামোবদ্ধ’ আর ‘সৃজনশীল’ শব্দ দুইটি একেবারেই বিপরীতার্থক। পদ্ধতি পরিবর্তনের পাশাপাশি পাঠ্যতালিকায় আনা হয় ব্যাপক রদবদল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকের লেখাই বাদ পড়ে নতুন তালিকা থেকে এবং অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুরই সন্নিবেশ লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাহলে এবার সার্বিক একটি বক্তব্য পেশ করতে হয়। কারিগরি দিক থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি অবশ্যই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এবং বই-পুস্তক থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, তথ্য-প্রযুুক্তির ব্যবহার ইত্যাদিরও দিন দিন বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক কিন্তু এতসব যে জন্য, সেই ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য’ই বাস্তবায়িত হচ্ছে না ঠিকমত। একটু ব্যাখ্যা করে বললে বলা যায়-
ক. পাঠ্যবই ও পাঠদান সংশ্লিষ্ট অবস্থা: ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের সহপাঠ বই হিসেবে ‘আনন্দপাঠ’ বইটির প্রথম গল্পটি জসীম উদ্দীনের ‘আয়না’। এই গল্পটিকে ঠিক কী কারণে পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার যথার্থ উত্তর কেউ দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। গল্পের শেষে অনুশীলনীতে দেয়া সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনাটি থেকেও বোঝা সম্ভব হয় না ঠিক কোন বিষয়টিকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের লেকচার দিতে হবে। এমনি অনেক বিষয়ের অনেক অধ্যায়ই স্পষ্টভাবে না বুঝেই পড়া হচ্ছে। এটি কখনই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে না।
খ. শিক্ষা উপকরণ: সেদিন আমার এক ছাত্রীর কাছে একটা নতুন খাতা দেখলাম। খাতাটি দেখে তো একেবার অবাক হওয়া ছাড়া কিছু করাই ছিল না। খাতার নাম ‘কিরণমালা’। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল নিয়ে যেখানে একটি বুদ্ধিজীবী শ্রেণি দিন-রাত চেঁচামেচি করে চলছে, টিভিতে টকশো-র পর টকশো করছে সেখানে কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এমন খাতা যার মলাটে হিন্দি সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকার ছবি থাকে। এমনকি সিরিয়ালটি কখন, কোন চ্যানেলে হয়- তাও তাতে উল্লেখ থাকে। একদিন কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষার মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলাম ষষ্ঠ শ্রেণির। বহুবার পড়ানো শ্রমের শ্রেণিবিভাগ জানতে চেয়ে কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই সঠিক উত্তর পেলাম না। একজন সহকর্মী এক শিক্ষার্থীকে কিছুটা মজাচ্ছলেই জিজ্ঞেস করল হিন্দি সিরিয়াল সম্পর্কে। শিক্ষার্থীটি একের পর এক উত্তর দিয়ে গেল একেবারেই নির্ভুলভাবে। এটি সত্যি দুঃখজনক। শিক্ষার উপকরণগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীকে যতটা সংশ্লিষ্ট করা প্রয়োজন তার কিয়দাংশও সম্ভব হচ্ছে না পারিপ¦ার্শিক নানা উপাদানের কারণে।
গ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশার কদর সম্পর্কে। অবশ্য বর্তমানে শিক্ষকতাকে একটি লাভজনক পেশা হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করছেন। এর কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ের গুরুত্বকে কমিয়ে কোচিং সেন্টারকে প্রাধান্য দেয়া। দেশের বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রতিষ্ঠানকে কোচিং সেন্টারে রূপান্তর করে নিয়েছে একটি বিশেষ কৌশলে। ক্লাস আওয়ারের পরে অতিরিক্ত সময় শিক্ষার্থীকে রেখে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। ফলে একজন শিক্ষকের মূল বেতন যদি হয় এগারো/বারো হাজার টাকা তবে সে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে আরও দশ/বারো হাজার টাকা সহজেই আয় করতে সক্ষম হচ্ছে (কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয় লক্ষাধিক টাকাতে গিয়েও পৌঁছায়)। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকরা হয়ে উঠছেন ব্যবসায়ী। শিক্ষা এখানে পণ্যসদৃশ।
ঘ. পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন: অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন বিষয়টি একটি নাটকে পরিণত হয়েছে। বিশেষত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলোর তো বাস্তবিক কোন অর্থ আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষার্থী যাতে ফেল না করে তা শিক্ষককে নিশ্চিত করতে হয়। খাতায় যা-ই লেখুক না কেন প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন অন্তত ৬০% নম্বর পায় তা বলা থাকে। এই দুর্বলতার কথা জেনে শিক্ষার্থীও পড়াশুনায় ফাঁকি দেয়। আর পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে তো প্রশ্নপত্রফাঁস, পরীক্ষাকেন্দ্রে উত্তর বলে দেয়া সহ বহুরৈখিক দুর্নীতি রয়েছে। সরকারের বোঝা উচিত কেবল ১০০% শিক্ষিত দেখিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে এমন আহামরি কিছু করতে পারবে না যদি না শিক্ষার মান রক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবস্থা সত্যি উদ্বেগজনক। রাষ্ট্র অচিরেই কূলহারা পরিস্থিতিতে পড়বে বলে মনে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শিক্ষিত প্রতিটি নাগরিককে উদ্যোগী হওয়া উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে স্ব-প্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসা উচিত। তবে প্রধান দায়িত্বটি অবশ্যই পালন করতে হবে সরকারকে। আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতির পেছনে সরকারের দায়-দায়িত্বই বেশি থাকে (যদিও রাষ্টের নাগরিক সবচেয়ে ক্ষমতাবান)। নিচে বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় দিকগুলো উল্লেখ করা হলো-
ক. সরকারের করণীয়: শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি কাজটি করতে হবে সরকারকে। কেবল অর্থের যোগানই নয় বরং চিন্তাগত পর্যাপ্ত সার্পোট নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া-
১। একটি পূর্ণাঙ্গ এবং দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
২। সেই শিক্ষানীতির যথাযথ বাস্তবায়নের অবকাঠামোগত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
৩। শিক্ষকতা পেশাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে।
৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রাধান্য দেয়া নিশ্চিত করে যাবতীয় কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।
৫। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। প্রশ্নফাঁস, নকল এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে উত্তর বলে দেয়ার মত কাজগুলো শক্ত হাত বন্ধ করতে হবে।
৭। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে।
৮। পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার বা বেশি নম্বর পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
খ. সচেতন নাগরিকের করণীয়: একজন শিক্ষিত ও সচেতন মানুষেরও অনেক দায়িত্ব থাকে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি। সেই দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে সচেতন মানুষগুলোকে। যেমন-
১। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করতে বাধ্য না করে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
২। শিক্ষা সংক্রান্ত তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে হবে।
৩। শিক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না।
৪। নিজের সন্তান বা আশেপাশের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা স্বরূপ বই পড়া, শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র দেখার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিশু বই বুকে জড়িয়ে হাসিমুখে ফসলের খেতের পাশ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে দৃশ্যটি সত্যি অসাধারণ। এমনটি বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগায়। সুতরাং এই দৃশ্যটিকে যথার্থ করে তোলার জন্য সরকার ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের সচেষ্ট হয়ে সুশিক্ষার ব্যবস্থার জন্য বর্তমান সঙ্কটগুলোকে নিরসন করতে উদ্যোগী হতে হবে। তবেই বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
অক্টোবর ১৩, ২০১৫।
২| ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১১:২০
মার্কোপলো বলেছেন:
"একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৪৪ বছর। এই অল্প সময়ে রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যগুলো সম্পাদন করা সহজ ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি কল্যাণমূলক আধুনিক রাষ্ট্রের যে সকল উপাদান থাকা উচিত, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনেকটা সময়। "
-৫ম শ্রেণী পাশ করা লেখকের সমান ভাবনা।
৩| ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: নার্কোপলো, বৃদ্ধ চাচাজান আমার, আপনার উন্নত শ্রেনীর ভাবনাগুলোও জানান এখানে। পুরো পোস্ট নিয়ে না বলে কেবল এটুকু নিয়েই বললেন? আপনার কি শিক্ষাগত যোগ্যতা আরও কম যে পুরোটা পড়তে দাত ভেঙ্গে যায়? নাকি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাই কিছু একটা আন্দাজে তুলে দিয়ে একটু ইয়ে ত্যাগ করে দায় সারেন?
@লেখক, মানসিক বিকারগ্রস্থ কারো কথায় মন খারাপ করবেন না। বিনোদন হিসেবেই নেন।
৪| ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৫
মার্কোপলো বলেছেন:
@বৈশাখের আমরণ নিদাঘ ,
-আপনি নিজেই জীবিত বিনোদন
৫| ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ১:০০
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: পলো কাহা, "মনে হয়" লিখলেন না!?
যাক, একটা পোস্টে অন্তত আপ্নের কমেন্ট মনে হয় ছাড়া পাওন গেল। মাঝে মাঝে মনে হয় আপনারে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার লিঙ্গ কি, আপনি বলবেন,
- "পুরুষ/স্ত্রী", মনে হয়
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৯
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: খুবই ভালো পোস্ট। যদিও তেমন কেউ পড়বে বলে মনে হয়না। আপনার ক থেখে ঘ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থার কথা বলে, অসঙ্গতির কথা বলে। কিন্তু আবার যে সুপারিশ করলেন, তার এক নাম্বারেই দেশের দুর্বলতা আছে। শিক্ষানীতি যারা প্রন্যন করবেন, সেক্ষেত্রে যারা করবেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কেই সন্দেহ করবার বিশেশ অবকাশ থাকবে। এদেশের নানা নীতিই যোগ্য লোকেরা করেন না। এই সময়ের শিশুদের মন বা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তাদ্র মনের অবস্থা সহ নানা ব্যাপারে ধারনা রাখেন এমন লোকদের না দিয়ে দেয়া হবে অযোগ্যদের, তারাও দায়সারা কিছু একটাই করে দেবেন।
অনেক কথাই আপনি বএ গেছেন। আমার বাচ্চাদের ভালোলাগে। তাদের সাথে কথা বলতে, তাদের সৃজনশীলতা এবং নানা ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার ঝলক দেখতে ভালোলাগে। বাবা মায়েরও উচিত তাদের সন্তানের যদি মাটির পুতুল বানাতে ভালোলাগে, সে চাইলে সেদিকেই যেতে দেওয়া। আমি স্বপ্ন দেখি এমন একটা দেশের, যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসবে। দেশের বাইরে বাংলাদেশী এম্ব্যাসীতে লাইন লাগবে। আমার দেশটা একদিন না একদিন হোক সোনার বাংলাদেশ। নামে না ভাই, খুব ভালো মনের, খাটি সোনার মত হৃদয়ে ভরপুর একটা নতুন প্রজন্মের নিজের হাতে গড়া নতুন সোনার বাংলাদেশ। আমাদের প্রজন্ম তো পারলাম না, আর তেমন পারবো না। ওরা নিজেরা নিজেদের বদলে দেবে কোনও অলৌকিক উপায়ে, সেই স্বপ্ন দেখি।