নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেশা সাহিত্য, পেশা শিক্ষকতা।

সুব্রত দত্ত

পরিশ্রমকে সঙ্গী করে কত মানুষ উর্ধ্বে গেলো, আকাশের ঐ তারার দলে/ চিরদিনই অলস আমি, আছি পড়ে অনন্তকাল এই ধরনীর গাছের তলে।

সুব্রত দত্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেট ও আমার অভিজ্ঞা

২৩ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:১৫

আমার সবকিছুই যেন একটু দেরিতে। প্রথম কথাই নাকি বলেছিলাম চার বছর বয়সে। সেই থেকে সবকিছুতে লেট। ছাত্রজীবনের শুরতেও ছিলাম গাঁধা-প্রকৃতির ছাত্র। এসব বলতে অবশ্য আমি লজ্জা পাই না। কারণ, আজ আমি যতটুকু আত্ম-পরিচয় নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি তা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। এসব শুধু শুধুই বলা। আজ আসলে বলব ক্রিকেট নিয়ে। ক্রিকেট খেলা এবং আমার ক্রিকেট সম্পৃক্ত ধারনার কথা লেখব।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই জন্ম আমার। তবু ক্রিকেট কী- তা বুঝতে বুঝতে একবিংশ শতাব্দীর কয়েকটি বছর কেটে গিয়েছিল। যে বয়সের ছেলেরা স্কুল পালিয়ে সারাদিন ক্রিকেট খেলে ট্রফি নিয়ে বাসায় ফেরে, সে বয়সের ছেলে হিসেবে আমি কেবল জানতাম ক্রিকেট একটা খেলা, যাতে ব্যাট ও বল লাগে। তবে আস্তে আস্তে শিখে নেই খেলার একেবারে বেসিক নিয়মগুলো। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে আমার মনমতো একটা দল খুঁজে পাই। দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি খেলা আমার বেশ লাগে। যদিও তারা যে খুব ভালো খেলে ফাইনালে গিয়েছিল, তা নয়। তবু দক্ষিণ আফ্রিকা আমার ফেভারেট। এরপর থেকে খুব খেলা দেখতাম তেমনটা না, আবার নিজেও যে ব্যাট-বল হাতে মাঠে চলে যেতাম, তেমনটাও ‍না। ক্রিকেটের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে আমার তেমন কোন সম্পর্কই ছিল না কখনো। বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপ বা দক্ষিণ আফ্রিকার কোন সিরিজ- এ-ই ছিল আমার খেলা দেখা।

২০১২ সালে এসে তার কিছুটা পরিবর্তন আসে। ক্রিকেট খেলার মূল স্বাদটা কিছুটা বুঝতে শিখি। আমার প্রিয় ছাত্র নেহাল ওয়ারিশ চৌধুরী বিশাল আইপিএল খেলা নিয়ে তখন সবসময় উন্মাদনায় থাকত। রয়্যাল চেলেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরে ভয়াবহ ভক্ত। আমাকে প্রায়ই খেলা দেখতে বলত। ঐ টিমটা আমারও পছন্দ ছিল। কারণ ঐ দলে ছিল আমার প্রিয় খেলোয়াড় এবি ডিভিলির্য়াস। খেলা দেখতাম মাঝেমধ্যে। ও আবার ইন্ডিয়া টিমের ফ্যান ছিল। তাই আইপিএল বাদে ভারতের সিরিজগুলোও দেখত আর আমাকে দেখতে বলত। আমি মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে দেখতাম। ২০১২-তে অনেকটাই বড় হয়ে গেছি। অন্তত মাঠে ব্যাটসম্যান আর বলারদের ব্যাটে-বলে খেলার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসিং রুমে ক্যাপটেন আর কোচের হিসাবনিকাশের খেলাটা একটু একটু বুঝতে শিখেছি। আর সেখানেই যে ক্রিকেটের মূল জাদুকরী খেলাটা লুকিয়ে আছে তা বুঝতে বেশি দিন লাগেনি। গতকাল এশিয়া কাপে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হারল। খুব খারাপ লাগা অনুভূতি নিয়ে ঘুমাতে গিয়েও ক্রিকেট খেলার সৌন্দর্যের একটা হিসাবনিকাশ মেলানোর বাসনা হল। তাই লিখতে বসা।


১.
আমার সম্পর্কে কে কী ভাববেন বা বলবেন, জানি না তবে আমি আমার ধারনাই ব্যক্ত করছি। গতকাল সত্যি ভারত তার সম্পূর্ণ যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ভালো খেলেছে। অন্তত টি২০ লিস্টে ১০ নম্বর দেশ হয়ে যে ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপে তারা রানারআর্প হয়েছে তা-ই অনেক বেশি। এবার ভারতের সম্পূর্ণ যোগ্যতার পরিচয় দেয়ার ধরনটার ব্যাখ্যা করা যাক-

বৃষ্টি-বিঘ্নিত যে কোন ম্যাচেই টসে জেতাটা সবচেয়ে বড় জেতা। ভাগ্য অনুকূলে ছিল বিধায় এমএস ধোনিই সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পেল। ভুল করল না, টস জিতে বোলিং-এ গেল। নিঃসন্দেহে ধোনির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ১০৫-১১০-এ আটকে দেয়ার। রিয়াদের ঝড়ো ইনিংস সেটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল। স্কোর বোর্ড-এ বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২০। ১২১-এর লক্ষ্যে খেলতে নামে বরাবরের মতো রোহিত শর্মা ও শেখড় ধাওয়ান। আল-আমিনের দুর্দান্ত বোলিং-এ টিকতে পারল না শর্মা। নামল বিরাট কোহলি। বিরাট কোহলিকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এমনকি কয়েকটি আচরণগত অভিযোগও আছে। মাথা গরম করা, অহংকারী এই খেলোয়াড়টি কিন্তু খেলে ভালো। শেখড় ধাওয়ান আর কোহলি মিলে একেবারে ওয়ানডে খেলা শুরু করল। লং শর্ট মাঝেমধ্যে মারলেও তার প্রতি বেশি একটা আগ্রহ দেখা গেল না। সিঙ্গেলে তারা রান কমিয়ে আনল। গ্যালারিতে বসে আমাদের অস্থিরতা। টি২০-এর স্বাদই পাচ্ছি না। বলাররা কেবল মার খাচ্ছে। একটা পর্যায়ে ধাওয়ান আউট হলো। কিছু আনন্দ মিললেও ব্যাট হাতে স্বয়ং ক্যাপ্টিনই এসে পড়ল। এমএস ধোনি সাধারণত সেকেন্ড ডাউনে নামে না। কিন্তু এবার নামল। কোন রকম ভণিতা ছাড়া উড়াধুড়া শর্ট খেলতে লাগল। অপর প্রান্তে চুপচাপ কোহলি। অতিদ্রুত খেলাটা শেষ হয়ে গেল। কাপ গেল ভারতের কাছে। কাঁদল না টাইগাররা। হৃদয়টা ভেঙে চুরে চুরমার। তবু হাসি মুখে হাত মেলালো। দর্শকরাও নিশ্চুপ। কেউ কেউ কাঁদছে। কেউ নীরবে প্রস্থান করছে। বিদ্রোহ নেই কোথাও। একটা প্রবাদ আছে ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।’- আমাদের দশা অনেকটা অধিক শোকের মতোই হলো। তবে কি কাপ হারিয়ে আমরা বড় কিছু পেয়েছি। হঠাৎ করে আমরা বলতে শিখেছি, ‘আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!’- এই নিজেকে চিনতে পারার ভেতর আছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশ ক্রিকেট অদূর ভবিষ্যতে প্রথম সারির দলের তালিকায় আসবে তাতে সন্দেহ নেই।

২.
প্রথম সারির দলের তালিকায় আসতে হলে আবেগের থেকে যুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে বেশি। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বাঙালির বাংলা’ নামক একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন- মানুষের তিনটি শক্তি থাকে। জ্ঞান শক্তি, প্রেম শক্তি ও কর্ম শক্তি। বাঙালি প্রথম দুটোতে একেবারে ভরপুর কিন্তু শেষটাতে যারপরনাই রিক্ত। সত্যিই কর্ম শক্তিতে আমাদের দল পিছিয়ে আছে। কেউ কেউ আমার কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবেন। প্রশ্ন করবেন আপনি কতটুকু জানেন আমাদের টাইগাররা কতটা পরিশ্রম করে? আমি অস্বীকার করছি না। ‍আমাদের খেলোয়াড়রা পরিশ্রম করে কিন্তু তাতে ঘাটতি অবশ্যই আছে। অন্তত অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের তুলনায় আমাদের খেলোয়াড়রা কম পরিশ্রম করে। কেবল মাঠে ব্যাট বল নিয়ে থাকলে আর ব্যায়াম করলেই হয় না, স্ট্যাডিও করতে হয়। একজন বলারকে পড়তে হবে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। তাদের দুর্বলতা, তাদের বৈশিষ্ট্য জানতে হবে। তেমনি একজন ব্যাটসম্যানকে পড়তে হবে বিশ্বের সেরা বলারদের বল করার ধরন নিয়ে। এগুলো করতেই হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য প্রয়োজন মেডিটেশন। অনেকে হয়তো মানবেন না কিন্তু সত্যিই মেডিটেশন প্রতিটি মানুষের জন্য দরকারি। অনেক ঋষি মনীষীরাই বলতেন, ‘ধৈর্য ধরো। মুক্তি আসবে।’ এই ধৈর্যটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খেলোয়াড়দের ধৈর্যবান হতে হবে।

আর সমর্থক ও ক্রিকেট কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব আছে অনেক। একটা ম্যাচ জেতার পরে খেলোয়াড়দের গিফট দেয়াটা অত্যন্ত আন্তরিকতার পরিচয়। কিন্তু গিফটের ধরনটা গুরুত্বপূর্ণ। এনিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে আমার মনে হয় পারিতোষিকের সম্পর্ক যেন পারিশ্রমিকের ‍অনুবর্তী হয়। আর একদিন ভালো খেললেই কোন খেলোয়াড়কে আসমানে ওঠানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এমনটা করার জন্যই খেলোয়াড়টি একদিন খারাপ খেললেই তাকে নর্দমায় নিক্ষেপ করা হয়। সবকিছু্র একটা পরিমিত জ্ঞান থাকা জরুরি। অতিরিক্ত প্রশংসা কল্যাণকর নয়, অতিরিক্ত প্রশংসা জন্ম দেয় অতিরিক্ত নিন্দার। সুতরাং খেলোয়াড়, দর্শক, সমর্থক সবাইকেই অনেক কিছু বুঝতে ও শিখতে হবে। আর সর্বাপরি ধৈর্য ধারন করতে হবে। বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনবে- এটা কোন স্বপ্ন নয়, এটা অদূর ভবিষ্যের বাস্তব দৃশ্য।

সুব্রত দত্ত
মার্চ ১০, ২০১৬।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.