নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতারকের ভীড়ে সত্যিকারের অভাবী, অসহায় এবং বিপদগ্রস্থদের চেনার উপায় কী?

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

প্রতারকের ভীড়ে সত্যিকারের অভাবী, অসহায় এবং বিপদগ্রস্থদের চেনার উপায় কী?

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই

সম্প্রতি রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সামনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আমাদের সামনে এনেছে এক কঠিন বাস্তবতা। হোসাইন ইসলাম লিমন নামের একজন যুবক এক নারীর কান্নার আবেদনে সাড়া দিয়ে তার মুঠোফোন দিয়েছিলেন সামান্য কথা বলার জন্য। কিন্তু ফলাফল হলো তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তার কাছ থেকে লাখ টাকা লুট হয়ে যায়। এমন ঘটনা দেশে হরহামেশাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এসব ঘটনা আমাদের সামনে প্রশ্ন উত্থাপন করে—কে সত্যিকারের অভাবী, আর কে প্রতারক? প্রতারকের ভীড়ে কীভাবে আমরা সত্যিকারের অসহায় মানুষদের চিনবো? এই প্রতিবেদনে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।

প্রতারণার নিত্য নতুন কৌশল

আজকাল প্রতারকরা অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং পরিকল্পিতভাবে তাদের ফাঁদ পাতে। কান্নাকাটি করে সহানুভূতি আদায় করা, অসহায় বা বিপদগ্রস্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা, এমনকি ভিক্ষুকের বেশ ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা—এসব তাদের পুরনো কৌশল। কিন্তু এখন তারা আরো উন্নত প্রযুক্তি এবং মনস্তাত্ত্বিক কৌশল ব্যবহার করছে। লিমনের ঘটনায় দেখা গেছে, একটি সাধারণ মুঠোফোনে দুই এক মিনিট কথা বলতে চাওয়ার নাটক তাকে অজ্ঞান করে ফেলেছে। এ ধরনের প্রতারণায় প্রায়ই মানুষের সহানুভূতি এবং ভালো মনকে টার্গেট করা হয়। তাই সতর্কতা এবং সঠিক বিচার-বুদ্ধি ছাড়া আমরা সহজেই প্রতারণার শিকার হতে পারি।

সত্যিকারের অভাবীদের চেনার উপায়

প্রতারকদের থেকে সত্যিকারের অসহায় ও অভাবী মানুষকে আলাদা করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। নিচে কিছু ব্যবহারিক উপায় উল্লেখ করা হলো, যা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে:

এক. অতিরিক্ত আবেগে ভেসে না যাওয়া

প্রতারকরা প্রায়ই কান্না, দুঃখজনক গল্প বা জরুরি পরিস্থিতির কথা বলে আবেগকে উসকে দেয়। যেমন, লিমনের ক্ষেত্রে নারীটি কান্নাকাটি করে সামান্য সময় নিজের প্রিয়জনের সাথে জরুরি কথা বলার জন্য মুঠোফোন চেয়েছিলেন। কারো দুঃখজনক গল্প শুনে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু থেমে ভাবুন। জিজ্ঞাসা করুন, এই পরিস্থিতি কতটা যৌক্তিক? তাদের গল্পে কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখুন।

দুই. ব্যক্তিগত তথ্য বা সম্পদ দেওয়ার আগে যাচাই করা

অপরিচিত কাউকে মুঠোফোন, টাকা বা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিস দেওয়ার আগে তাদের পরিচয় যাচাই করুন। যদি কেউ জরুরি কথা বলার জন্য ফোন চায়, তাহলে তার পরিবর্তে আপনি নিজে কল করে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারেন। এতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে। উদাহরণস্বরূপ, লিমন যদি নিজে ফোন করে নারীর প্রয়োজনীয় কথা বলার ব্যবস্থা করতেন, তাহলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত।

তিন. পরিবেশ ও আচরণ পর্যবেক্ষণ

সত্যিকারের অভাবী মানুষ সাধারণত লজ্জা বা সংকোচ প্রকাশ করে এবং তাদের আচরণে একটি স্বাভাবিকতা থাকে। অন্যদিকে, প্রতারকরা অতিরিক্ত নাটকীয়তা বা অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো দেখায়। তাদের কথাবার্তা বা শরীরের ভাষায় অসঙ্গতি থাকতে পারে। যেমন, তারা বারবার চোখের যোগাযোগ এড়িয়ে যেতে পারে বা অতিরিক্ত চাপ দিতে পারে।

চার. স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ

আপনার এলাকার পরিচিত মানুষ, স্থানীয় নেতা বা সংগঠনের মাধ্যমে অভাবীদের সম্পর্কে জানুন। অনেক সময় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষ জানে কারা সত্যিকারের অসহায়। তাদের মাধ্যমে সাহায্য করলে প্রতারণার ঝুঁকি কমে।

পাঁচ. নির্ভরযোগ্য সংস্থার মাধ্যমে সাহায্য

সরাসরি অপরিচিত ব্যক্তিকে সাহায্য করার পরিবর্তে নির্ভরযোগ্য দাতব্য সংস্থা, এনজিও বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাহায্য করা নিরাপদ। এই সংস্থাগুলো সাধারণত তাদের সুবিধাভোগীদের যাচাই করে থাকে। বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্থা, যেমন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক বা স্থানীয় জাকাত ফান্ড, সত্যিকারের অভাবীদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়।

ছয়. পেশাদার ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করা

পেশাদার ভিক্ষুকরা প্রায়ই একই স্থানে বারবার ভিক্ষা করে, তাদের গল্প একই থাকে এবং তারা সাহায্য নেওয়ার পর দ্রুত চলে যায়। তারা প্রায়ই শিশু বা অক্ষমতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সত্যিকারের অভাবী মানুষ সাধারণত একবার সাহায্য পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং বারবার একইভাবে ফিরে আসে না।

সাত. জনসমাগম এড়ানো

অনেক প্রতারক জনাকীর্ণ জায়গায় কাজ করে, যেখানে মানুষের মনোযোগ কম থাকে। শিল্পকলা একাডেমির মতো ব্যস্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার সময় আশপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন এবং সম্ভব হলে একা থাকা এড়িয়ে চলুন।
প্রতারণা থেকে বাঁচার কৌশল

প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

এক. ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখা: মুঠোফোন, টাকা বা অন্য মূল্যবান জিনিস অপরিচিত কাউকে দেবেন না। যদি দিতেই হয়, তবে তা তত্ত্বাবধানে করুন।

দুই. জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশের সাহায্য নেওয়া: কেউ যদি জরুরি অবস্থার কথা বলে, তাহলে স্থানীয় পুলিশ বা নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বাংলাদেশে জরুরি নম্বর ৯৯৯ এ কল করলে দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়।

তিন. অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে সতর্কতা: অজ্ঞান পার্টি সাধারণত খাবার, পানীয় বা স্পর্শের মাধ্যমে মাদক ব্যবহার করে। অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাবেন না বা তাদের সঙ্গে অযথা শারীরিক সংস্পর্শে যাবেন না।

চার. আর্থিক সাক্ষরতা বাড়ানো: প্রতারকরা প্রায়ই আর্থিক লোভ দেখিয়ে ফাঁদ পাতে। নিজের আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করুন এবং অবিশ্বাস্য প্রস্তাব থেকে দূরে থাকুন।

পাঁচ. শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন: অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা প্রায়ই স্পর্শ বা কাছাকাছি এসে ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিরাপদ।

সমাজে সচেতনতা বাড়ানো

প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত সতর্কতার পাশাপাশি সমাজে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। স্কুল, কলেজ, এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া উচিত। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোরভাবে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরার জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং জনবহুল স্থানে পুলিশি টহল বাড়ানো প্রতারণা কমাতে সাহায্য করবে।

সত্যিকারের অভাবীদের সাহায্য করার দায়িত্ব

যদি আমরা সঠিকভাবে যাচাই করে সাহায্য করি, তাহলে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। একটি সংগঠিত পদ্ধতিতে সাহায্য করলে প্রতারণার ঝুঁকি কমে এবং সত্যিকারের প্রয়োজনী মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় মসজিদ, মন্দির, বা গীর্জার মাধ্যমে দান করা যেতে পারে, যেখানে তারা অভাবীদের তালিকা রাখে। এছাড়া, ছোট ছোট স্থানীয় উদ্যোগ, যেমন কোনো গরিব শিশুর পড়াশোনার খরচ বহন করা বা একটি পরিবারের মাসিক ফলের চাহিদা মেটানো, সরাসরি এবং কার্যকর সাহায্য হতে পারে।

উপসংহার

লিমনের মতো ঘটনা আমাদের সতর্ক করে দেয় যে প্রতারকরা আমাদের সহানুভূতিকে তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা সাহায্য করা বন্ধ করে দেব। সত্যিকারের অভাবী, অসহায় এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে চেনার জন্য আমাদের আরো সচেতন, বিচক্ষণ এবং সংগঠিত হতে হবে। অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী না হয়ে, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে, এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সাহায্য করলে আমরা প্রতারকদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং একইসঙ্গে সমাজের প্রকৃত অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারি। প্রতারণার ভয়কে জয় করে আমাদের মানবিকতাকে জাগ্রত রাখতে হবে—এটিই হবে আমাদের প্রকৃত জয়।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

জুল ভার্ন বলেছেন: কোন ক্ষেত্রে প্রতারণা নাই- খুঁজে পাচ্ছিনা!

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৬

নতুন নকিব বলেছেন:



সেটাই। প্রতারণা এই জাতির রক্তে মিশে গেছে, মনে হচ্ছে।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩৩

কামাল১৮ বলেছেন: সব প্রতারণাই পুরনো কেবন বর্তমান সরকারের মব তৈরি করে ভাংচুর ও লুটপাট নতুন।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ। আপনি বিশাল কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। আপনাকে নো-বেল প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৭

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সব ক্ষেত্রে প্রতারণা যা এখন আমাদের বৈশিষ্ট্য ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, সঠিক বলেছেন। প্রতারণা মুক্ত কোনো সেক্টর চোখে পড়ে না। ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: দরিদ্র দেশ গুলোতে প্রতারনা বেশি হয়।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



কথা সত্য। তবে এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার কাছে?

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: কথা সত্য। তবে এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার কাছে?

অভাব, বেকারত্ব, পারিবারিক শিক্ষা, হিংস্রতা, হিংসা ইত্যাদি কারন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ প্রত্যুত্তর করার জন্য।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩

নকল কাক বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিয়ে লেখা ফিকশন সিরিজ গল্প এ্যমবুশের ৫ম পর্ব "এ্যমবুশ ৫" পড়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ বিষয়টি জানানোর জন্য।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২২

নতুন বলেছেন: মানুষ নৈতিক মুল্যবোধ হারাচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাদের জেলা ফরিদপুরে একটা বাস দূঘটনায় পরার পরে কিছু মানুষ সাহাজ্য করতে এসে মানুষের ব্যাগ, মূলবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। :(

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯

নতুন নকিব বলেছেন:



ঠিক বলেছেন। দিন দিন মানুষ নৈতিক মুল্যবোধ হারাচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। দুর্ঘটনায় সহমর্মিতা দেখানোর বদলে লুটতরাজ মানবিকতার চরম অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। সমাজ যখন নৈতিকতা হারায়, তখন এমন ঘটনাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সম্মিলিতভাবে মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.