নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র মাহে রমজান: ফজিলত ও আমল -সংশোধিত পুনঃপ্রকাশ

০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:২১

ছবিঃ অন্তর্জাল।

পবিত্র মাহে রমজান: ফজিলত ও আমল -সংশোধিত পুনঃপ্রকাশ

আলহামদুলিল্লাহিল আকরামিল্লাজি খালাক্কাল ইনছানা ওয়া কাররামাহু ওয়া আল্লামাহু মিনাল বাইয়ানি মা- লাম ইয়া'লাম। ফাসুবহানাহু লা ইউহছা ইমতিনানুহূ বিল্লিছানি ওয়ালা- বিল ক্কলাম। নাশহাদু আল্লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা- শারিকা লাহু অনাশহাদু আন্না সাইয়্যিদানা ওয়া হাবিবানা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহু। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত আমাদের প্রতি- পবিত্র রমজান মাসের নিকটে এসে পৌঁছেছি আমরা। এ মাস আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ নিয়ামাত। এটি সাওয়াব অর্জন করার মাস। সাওয়াবের মওসুম। এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন। রহমাত, বরকত ও নাজাতের বারতা নিয়ে আসে রমজান মাস। আল কুরআনে এসেছে:

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ -সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫

রমজানুল মুবারকের ফজিলত:

রমজানুল মুবারকের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘রমজান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)।’ -সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آخِرَ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ «قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ فَرَضَ اللَّهُ صِيَامَهُ وَجَعَلَ قِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا , فَمَنْ تَطَوَّعَ فِيهِ بِخِصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ , وَمَنْ أَدَّى فِيهِ فَرِيضَةً كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً , وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ , وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ الخ

'হযরত সালমান ফারসি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানের শেষ দিন আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের উপরে ছায়া বিস্তার করছে একটি মহান, বরকতময় মাস। যাতে রয়েছে এমন একটি রাত- যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআ'লা এর দিনের বেলায় রোযা ফরজ করেছেন আর রাতে কিয়ামকে করেছেন নফল। সুতরাং, এ মাসে যে ব্যক্তি কোন নফল আদায় করবে সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তুরটি ফরজ আদায় করল। এ মাস হল ছবরের মাস। আর ছবরের পুুরস্কার হল জান্নাত।' -মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৩২১, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৩৩৬, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৮৮৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৭১৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৯৬৫

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্য অর্জনের পথে ধাবিত হতে পারি, জান্নাতপ্রাপ্তির আশা আর জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশা পোষন করতে পারি। রমজান মাসের বিশেষ বিশেষ আমল সম্পর্কে অত্র নিবন্ধে সামান্য আলোকপাতের চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ। তবে সকল প্রকারের নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়:

প্রথমত: ইখলাস তথা ‘একনিষ্ঠতা'। প্রতিটি আমল একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে করা। সুতরাং, কোনো আমল করার পেছনে উদ্দেশ্য যদি থাকে টাকা উপার্জন কিংবা নেতৃত্ব অর্জন অথবা সুনাম সুখ্যাতি অর্জন; সে আমল হয়ে যাবে ইখলাসশুন্য। এমনসব ইবাদাত বা নেক আমলের দ্বারা আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না, প্রকারান্তরে তা পরিনত হতে পারে শিরকের মত গোনাহে। যেমন, মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে:

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ

'আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে।' -সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫

দ্বিতীয়ত: প্রতিটি ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ অনুকরণকে আবশ্যক করে নেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছেছে, হাদিসে উল্লেখিত সেই আমলগুলো পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো হ্রাস বৃদ্ধির এখতিয়ার নেই। মনে রাখতে হবে, ইবাদাত তো কেবলমাত্র তা-ই, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আমলগুলো যেভাবে নিজে করেছেন, তাঁর সঙ্গী সাথী ন্যায়পরায়ন, সত্যের মাপকাঠি আসহাবগন করেছেন ঠিক সেভাবেই অামাদেরও করতে হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েই কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে:

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ -সূরা হাশর: ৭

কোনো বাড়তি বিষয় ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। সে কারণেই রাসূলে আরাবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। -সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো:

পবিত্র মাহে রমজান আমলের মাস। ফজিলতের মাস। রহমত, বরকত এবং ক্ষমালাভের মাস। মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল এখানে উপস্থাপন করা হলো-

এক. রোজা বা সিয়াম পালন করা:

রোজা বা সিয়াম ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। আর রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমজান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন:

فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

'সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।' -সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার জন্য রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ বুখারী : ২০১৪

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘যে কেউ আল্লাহ তাআ'লার রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ'লাকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাআ'লা তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন’। -সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭

দুই. সময় মত নামাজ আদায় করা:

পবিত্র রমজান মাস নেক আমলের ট্রেইনিং এর মাস। এ মাসে সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করার প্রতি মনযোগী হতে হবে। এমনটা যেন না হয় যে, আমার কাজ শেষ করে তবেই আমি নামাজ আদায় করে নেব। বরং সময়মত নামাজ আদায় করে আমি আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবো। হাদিসে নামাজকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে। আর নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে:

إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا

‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

হাদিস শরিফেও এ বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা।' -সহীহ মুসলিম : ২৬৩

তিন. সহীহভাবে কুরআন শেখা:

মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াতে অক্ষম ব্যক্তিবর্গের জন্য তিলাওয়াত শিখে নেয়া। আর আমাদের জন্য কুরআন শিক্ষা করাকে ফরয করা হয়েছে। যেমন, কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে:

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

‘পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ -সূরা আলাক : ১

হাদিস শরিফে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন: ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর।’ -মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০

চার. অপরকে কুরআন তিলাওয়াত শেখানো:

রমজান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনিই, যিনি নিজে কুরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন।’ -সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭

‘যিনি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবেন, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব তিনি পাবেন।’ -সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭

পাঁচ. রাত্রির শেষ প্রহরে সাহরী খাওয়া:

সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ -মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ

ছয়. সালাতুত তারাবীহতে অংশগ্রহন করাঃ

রমজানের প্রতি রাতে সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে সময় নিয়ে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে।’ -সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ

ইদানিং তারাবীহ নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে আমাদের সমাজে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সাধারন মুসল্লিদের ভেতরে মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। যদিও বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত পবিত্র মক্কাতুল মুকাররমাহতে অবস্থিত বাইতুল্লাহ শরিফে এবং মদিনাতুল মুনাওওয়ারাহতে অবস্থিত মাসজিদে নববীতে জামাআতের সাথে ২০ রাকাআত তারাবীহর নামাজই চলে আসছে।

সাত. কুরআন তিলাওয়াতের আমল বেশি বেশি করা:

পবিত্র রমজান কুরআনুল কারিম নাজিলের মাস। এই মাস মহাগ্রন্থ আল কুরআন পঠন, শিক্ষন এরও মাস। রমজান যেন আল কুরআনেরই মাস। এই মাসটি জুড়ে কুরআনে কারিমের যত বেশি সম্ভব তিলাওয়াত, আল কুরআনের মর্ম অনুধাবন এবং তার ফায়দা সমস্ত জগতের মানুষের জন্য উম্মুক্ত করার পথ রচনা করার চেষ্টা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ -সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ

কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদত বা অভ্যাস ছিল, তিনি রমজান মাসের মত এত বেশি পরিমান তিলাওয়াত অন্য কোন মাসে করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রমজান ব্যতিত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি।’ -সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩

আট. আল্লাহ পাকের দরবারে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা:

পবিত্র মাহে রমজান মাস প্রাপ্ত হওয়া নি:সন্দেহে এক মহা সৌভাগ্যের বিষয়। এ কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। বেশি বেশি হামদ ও সানা পাঠ করে মহান মুনিবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অবিরত-অনবরত এবং অব্যহতভাবে তাঁর পবিত্র নামের তাসবীহ ঠোটের কোনে লাগিয়ে রাখার চেষ্টা করা। সাথে সাথে আগামী রমজানপ্রাপ্তির জন্য বিনীতভাবে তাঁর নিকট তাওফিক প্রত্যাশা করা। এ বিষয়ক নির্দেশনা ঐশিগ্রন্থ আল কুরআনেও এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেন:

وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ -সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫

আল্লাহ তাআ'লার নিআমতের শুকরিয়া আদায় করলে তিনি খুশি হন। অকৃতজ্ঞদের প্রতি তিনি নারাজ হন। ইরশাদ হয়েছে:

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন- যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ -সূরা ইবরাহীম : ৭

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন- আলহামদুলিল্লাহ, অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ'লার জন্য।' -সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮

নয়. কল্যাণকর প্রতিটি কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহনের চেষ্টা করা:

পবিত্র মাহে রমজান সাওয়াব অর্জনের মাস। এ মাসে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজে অংশগ্রহনের চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন?’ -সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪

দশ. নিয়মিত সালাতুত তাহাজ্জুদের পাবন্দি করা:

সালাতুত তাহাজ্জুদের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নির্জনে একাকি মহান প্রতিপালকের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে তাঁর নৈকট্যলাভের অন্যতম মাধ্যম। রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের বিশেষ ফজিলতের কারণে এ মাসে এই নামাজের জন্য রয়েছে আরো বেশি সাওয়াব ও ফায়দা। আমাদের প্রত্যেক রোজাদারকেই যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয়, আমরা ভোর রাতে উঠি, সে কারণে রমজান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার একটি বিশেষ সুযোগ থেকে যায়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাঅা'লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।’ -সহীহ মুসলিম : ২৮১২

এগারো. অধিক পরিমানে দান-সদাকাহ করা:

পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান সাদাকাহর পরিমান অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে যেত। তিনি স্বয়ং এই মাসের বিশেষ সাওয়াব অর্জনের জন্য যেখানে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করেছেন, আমাদেরও সেই চেষ্টাই করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা এ মাসের অন্যতম আমল হওয়া উচিত। যাকাত যাদের ফরজ তারা অবশ্যই যাকাত আদায় করে থাকেন। বছরের যে কোনো মাসেই সম্পদের হিসাব করে নির্ধারিত পরিমান যাকাত আদায় করা যায়। তবে এক্ষেত্রেও অন্য মাসের তুলনায় প্রতি বছর এ মাসে যাকাত আদায় করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত।’ -সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২

বারো. উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা:

রমজান মাস চরিত্র গঠনের মাস। আত্মশুদ্ধি, আত্মোপলব্ধি এবং আত্মোন্নয়নের মাস। এ মাসে চারিত্রিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। এমনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো পরিচালিত হয় সুন্দরভাবে। ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, আমানতদারিতা, সত্যবাদিতা, পরোপকারিতার মত উন্নত অন্যান্য গুনাবলী নিজের ভেতরে ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, গিবত, অন্যায়-অশ্লীলতাসহ যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার ট্রেইনিং নিতে হবে। আমাদের প্রতি দিনের অনুশীলন হবে- সুন্দর এবং আদর্শ চরিত্র গঠন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে, আমি রোযাদার।’ -সহীহ মুসলিম : ১১৫১

তেরো. মাহে রমজানের অন্যতম আমল হোক ই‘তিকাফ:

মাহে রমজানের অন্যতম আমল ই‘তিকাফ। 'ই‘তিকাফ' অর্থ অবস্থান করা, অর্থাৎ মানুষজনের কোলাহল থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘প্রত্যেক রমজানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন। দশ দিন ই‘তিকাফ করা সুন্নাত।' -সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪

চৌদ্দ. দাওয়াতে দ্বীনের কাজে অংশগ্রহন করা:

মাহে রমজান উত্তম আমলের মাস। আর দ্বীনের দাওয়াত এমনিতেই উত্তম একটি আমল। দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ তাআ'লার দিকে ডাকা হয়। আত্মভোলা বিপথগামী বান্দাহকে মহান স্রষ্টার দিকে ডেকে আনা। মহান সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তাকে ভুলে যাওয়া পার্থিব মোহে আত্মবিভোর মানুষকে রবের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে দেয়ার মত পূন্যময় কাজ আর কি হতে পারে? এটি নি:সন্দেহে সর্বোত্তম একটি কাজ। আর এ কাজটি যদি করা হয় পবিত্র মাহে রমজানে, এর সাওয়াব অবশ্যই আরও অনেক অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে। এজন্য এ বরকতময় মাসটিতে বেশি বেশি মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, সামর্থ্যানুযায়ী সম্ভব হলে দ্বীনি তারগীব তাবলীগের লক্ষ্যে কুরআন হাদিসের আলোকে লিখিত নির্ভরযোগ্য আলেম উলামাদের বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আল কুরআনের ঘোষণা :

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহ তাআ'লার দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম।’ -সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে।’ -সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০

পনেরো. সামর্থ্যবানগনের জন্য উমরাহ পালন করা:

মাহে রমজানে একটি উমরাহ করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘রমজান মাসে উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য।’ -সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩

ষোল. শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় লাইলাতুল কদর তালাশ করা:

পবিত্র মাহে রমজানে এমন বরকতময় একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা:

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সূরা কদর : ৪

হাদিসে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ আল-বুখারী : ৩৫

মহিমান্বিত এ রজনী পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদিসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: ‘রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।’ -সহীহ মুসলিম : ১১৭৫

লাইলাতুল কদরে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত বিশেষ দুআ: লাইলাতুল কদরে যে কোনো দুআ পাঠ করা যায়। যে কোনো বৈধ বাসনা পূরণের জন্য কুরআন হাদিসে বর্ণিত দুআ মুনাজাত করা যায়। তদুপরি, এই রজনীতে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত বিশেষ একটি দুআ রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ

‘اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي‘

'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।'

‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ -সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩

সতেরো. বেশি বেশি দুআয় নিমগ্ন থাকা এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহ তাআ'লার রহমত প্রার্থনা করা:

হাদিসে বলা হয়েছে- 'আদ্দুআউ মুখখুল ইবাদাহ', অর্থাত, দুআ ইবাদাতের মগজ। দুআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দুআ করা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করে কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করা। হাদিসে এসেছে: ‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ -আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩

অন্য হাদিসে এসেছে: ‘রমজানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দুআ কবূল করা হয়।’ -সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২

আঠারো. ইফতার করার ভেতরে রয়েছে বরকত:

মাহে রমজানে ইফতারির সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপন না করা। কারণ হাদিসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ -সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন: 'পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।' -সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে- 'হে আল্লাহ! আপনার জন্য রোযা রেখেছি, আর আপনারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।' -কোনো কোনো মুহাদ্দিসের নিকট এই হাদিসটির সনদ দুর্বল। আল্লাহ পাক আমাদের সহিহ হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। -সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮

উনিশ. রোজাদারদের ইফতার করানোতে রয়েছে অশেষ সাওয়াব:

রোজাদারদের ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। এই মর্মে হাদিসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ -সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ

বিশ. অধিক পরিমানে তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা:

'তাওবাহ' শব্দের আভিধানিক অর্থ- 'ফিরে আসা', পারিভাষিক অর্থে- 'আল্লাহ তাআ'লার নিকট নিজ গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় উক্ত গুনাহের কাজ আর কখনো না করার সিদ্ধান্ত নেয়া'। পবিত্র রমজান মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। তাওবাহকারীকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন। তাওবাহ করলে আল্লাহ তাআ'লা খুশি হন। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।’ -সূরা আত-তাহরীম : ৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।’ -সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪

তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার (সর্বশ্রেষ্ঠ ইসতিগফার) পড়া, আর তা হচ্ছে:

اللهم انت ربى لا اله الا انت خلقتنى وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت اعوذبك من شرما صنعت ابوء لك بنعمتك على وابوء لك بذنبى فاغفرلى فانه لا يغفر الذنوب الا انت -

বাংলা উচ্চারণ: 'আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী- লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা খলাকতানী-, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা- আহদিকা অ অ'দিকা, মাসতাতা'তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা- ছনা'তু, আবু-উ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবু-উ লাকা বিজানবী-, ফাগফিরলী-, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুজজুনূ-বা ইল্লা- আনতা।'

বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনার গোলাম আর আমি সাধ্যমত আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছেন সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’

সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠের ফযিলাত:

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’ -সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬

আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করে যথাযথভাবে সবগুলো রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। এই রমজানকে আমাদের গুনাহ মাফির কারণ হিসেবে কবুল করুন। রমজানের রহমত, বরকত এবং নাজাতপ্রাপ্তি আমাদের নসিব করুন।

একুশ. তাকওয়া অর্জন করা:

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ -সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩

অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا

'যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন।' -সূরা তালাক : ০২

বাইশ. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা:

ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। -সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬

তেইশ. ফিতরাহ দেয়া:

এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। -সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩

চব্বিশ. অপরকে খাদ্য খাওয়ানো:

রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে:

وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا

'তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।' -সূরা আদ-দাহর: ৮

এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ -সহীহ আল-বুখারী : ১২

অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে: ‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। -বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান

পচিশ. আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা:

আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।' -সূরা আন-নিসা: ১

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” -সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩

ছাব্বিশ. কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা:

কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে:

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী।’ -সূরা আল-হিজর: ৯

যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে”। -সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪

সাতাশ. আল্লাহর যিকর করা:

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। -মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫

আটাশ. মিসওয়াক করা:

মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। -সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫

উনত্রিশ. একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো:

রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। -সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২

ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

ত্রিশ. কুরআন বুঝা ও আমল করা:

কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে:

اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلاً مَّا تَذَكَّرُونَ

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। -সূরা আল-আ‘রাফ : ৩

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’। -শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০

রোজায় বর্জনীয় কিছু কাজ:

এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য অন্তরায়। যে কাজগুলো সম্মন্ধে জেনে বুঝে তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এমন ধরণের কিছু কাজ হলো:

ক. রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় উদাসীনতা প্রদর্শন করা।
খ. বিলম্বে ইফতার করা।
গ. সাহরী না খাওয়া।
ঘ. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা।
ঙ. অপচয় ও অপব্যয় করা।
চ. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা।
ছ. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা।
জ. বেশি বেশি খাওয়া।
ঝ. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা।
ঞ. বেশি বেশি ঘুমানো।
ট. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য।
ঠ. অশ্লীল ছবি, নাটক ইত্যাদি দেখা।
ড. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা।
ঢ. বিদ‘আতপূর্ণ কর্মকান্ড সম্পাদন করা।
ণ. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা।
ত. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা।

সুপ্রিয় বন্ধু!

পবিত্র মাহে রমজান আমাদের জন্য মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অনন্য এক উপহার। রমজানের এই বরকতপূর্ণ মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহর আলোকে সঠিক পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমজানপ্রাপ্তি স্বার্থক হবে। কারণ, হাদীসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক।’ -শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯

শেষের প্রার্থনাঃ

আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করে যথাযথভাবে সবগুলো রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। এই রমজানকে আমাদের গুনাহ মাফির কারণ হিসেবে কবুল করুন। রমজানের রহমত, বরকত এবং নাজাতপ্রাপ্তি আমাদের নসিব করুন।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



এক মাস রোজা রাখার সত্যিকার লাভটা আসলে কী?

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

নতুন নকিব বলেছেন:



রোজা বিশ্বাসীদের জন্য। যারা আল্লাহ তাআ'লাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেন এবং পরকালে বিশ্বাস রাখেন রোজার বিধান মূলতঃ তাদের জন্যই। তারা মহান স্রষ্টার নির্দেশ পালনার্থেই রমজানের একটি মাস রোজা রেখে থাকেন। তবে রোজার শারীরিক ও মানসিকসহ বিভিন্ন লাভ ও উপকারিতা যে রয়েছে, তা এখন আর কল্পনা নয়। আধুনিক বিজ্ঞানও সেটা প্রমান করেছে। এই বিষয়ক আমার একটি লেখা ছিল রোজা, অটোফেজি এবং মানব শরীরের প্রাকৃতিক সুস্থতাঃ শিরোনামে। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন - Click This Link

ধন্যবাদ ভাই।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: পবিত্র রমজান উপলক্ষে খুব সুন্দর একটা পোস্ট দিয়েছেন।

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরান। শুভকামনা।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্ট কার জন্য লিখেছেন? মুমিনদের জন্য? ধার্মিকদের জন্য? আলেম বা হাফেজদের জন্য? না মানুষের জন্য?

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

নতুন নকিব বলেছেন:



এই পোস্ট আসলে সবার জন্যই। বিশেষ করে আপনার জন্য।

আপনাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তির বিষয়ে পোস্ট দিতে দেখে ভালো লাগলো। আপনার কবর আযাব যেন মাফ হয়ে যায় সে জন্য দোআ করছি। ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




মাহে রমজান নিয়ে মুল্যবান পোষ্ট ।
প্রিয়তে নিয়ে গেলাম । বেশ কিছু
কথা বলার আছে ।
পরে আবার আসার ইচ্ছা রাখি ।

পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা রইল

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আলী ভাই, আপনিও পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা নিবেন। একইসাথে আগাম ঈদের শুভেচ্ছাও আপনাকে। পোস্টে আপনাকে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আপনার সুস্থতা কামনা করছি। পরিবার পরিজন সকলকে নিয়ে আপনি কুশলে থাকুন, আমরা দোআ করছি।

পোস্ট আপনার কাছে মূল্যবান মনে হওয়ায় এবং প্রিয়তে নেয়ায় বিশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনার পরে আবার পোস্টে আসার ইচ্ছেকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করছি, আপনার থেকে মূল্যবান কিছু জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

আবারও শুভকামনা ভাই।

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




আপনার পোষ্টটি আমি খুবই মনযোগ দিয়ে পড়েছি । মাহে রমজানে যথানিয়মে সিয়াম
পালন বিষয়ে মুল কথাগুলি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখাটিতে ।
ঊল্লেখ্য মাহে রমজান নিয়ে আমি প্রায় তিনশত পৃষ্ঠার একটি বই সংকলন ও সম্পাদনা করেছি ।
অসুস্থতা হেতু সময়মত লেখা শেষ করতে পারিনি বলে এখনো প্রকাশ করতে পারিনি ,
এটা এখনো প্রেসে আছে । তবে দিন সাতেকের মধ্যে এটা ইনসাল্লাহ দিনের আলো দেখবে
বলে আশা করি ।
বইটিতে আপনার বলা সবগুলি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি একটি গবেশনা ধর্মী পুস্তক ।
লক্ষ্য মুলত ইসলামী দাওয়াতি কার্যক্রম । আমি ইউকের একটি ইসলামী দাওয়াতি সংগঠনের
সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি, এদের ম্যানেজমেন্টএ মসজিদ ও মাদ্রাসাও আছে ।
যাহোক মুল কথা হলো, গবেশনামুলক এই পুস্তকটি রচনায় সময় আমি বিভিন্ন প্রসিদ্ধ হাদিস
ও তরজমা ( বাংলায় ও ইংরেজীতে) গ্রস্থগুলি পর্যালোচনা করেছি । সে সকল গ্রন্থের কিছু মুদ্রিত কপি ,
আর কিছু অনলা্‌ইনে পিডিএফ ভার্ষানে । সমস্যা হলো হাদিস ও তর্জমা গ্রন্থগুলি বিভিন্ন খন্ডে /পর্বে
বিভক্ত । তাই মুদ্রিত ও অনলাইনের পিডিএফ গ্রন্থের সাথে বিভিন্ন লেখনীতে, বিশেষ করে অনলাইন
প্রচার মাধ্যম , সাময়িকি , ও দৈনিকে প্রকাশিত লেখায় রেফারেন্স হিসাবে থাকা হাদিসগুলির যতার্থতা
যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় যে, যে বিষয়ের উপর হাদিসটির নম্বর দেয়া হয়েছে সে নম্বরে অন্য বিষয়ে
কিংবা সম্পুর্ণ ভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয়েছে , কিংবা সেই রেফারেন্স নাম্বারের মত কোন নাম্বারই মুদ্রিত
কিংবা অনলাইন ভার্সানের হাদিস গ্রন্থের সাথে একেবারেই মিলেনা । মোদ্দা কথা রেফারেন্সকৃত হাদিসটির
কোন হদিসই পাওয়া যায়না ।

এই সুযোগে বিভিন্ন প্রকাশনি হতে প্রকাশিত হাদিস গ্রন্থসহ , অনেক মতলবি লেখা, প্রবন্ধ ও লেখনীসমুহ
তাদের লেখায় বলা কথার সাপোর্টে মনমত রেফারেন্স হিসাবে হাদিসের ঢালাও ব্যবহার করছে দেখতে পাওয়া
যায় । বিষয়টি বেশ জটিল আকার ধারণ করছে বলেই দেখা যায় । এর মারাত্মক পরিনতি হতে উত্তরনের
পন্থা বের করার জন্য ইসলামী বিশেযজ্ঞদেরে এখনি ভাবতে হবে ।
তা না হলে যে কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে তা ভাবতে গেলেও গা শিহড়িয়ে হয়ে উঠছে ।
যাহোক এ বিষয়ে আপনার মুল্যবান মতামত কামনা করছি ।

শুভেচ্ছা রইল ।



২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় আলী ভাই,

পবিত্র মাহে রমজানুল মুবারকের উপরে প্রায় তিনশত পৃষ্ঠার আপনার গবেষনাধর্মী একটি বই প্রকাশের পথে জেনে খুবই আনন্দিত হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনার এই কাজটিকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ হিসেবে গ্রহণ করে নিন এবং আপনাকে এর জন্য উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

আসলে গত কয়েক বছর পূর্বে আপনি যখন গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তখন থেকেই আপনার বিষয়ে উদ্বেগাকুল ছিলাম। দোআ করেছি, আপনাকে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন। ঠিকঠিকই সেই অবস্থা হতে আপনাকে তিনি সুস্থতা দান করেছেন। সবচেয়ে বড় এবং অবাক করার বিষয় হচ্ছে, সুস্থতালাভের পরে আপনি এত বড় একটি বই লেখার কাজ সুসম্পন্ন করতে পেরেছেন - এটি সত্যি অনেক বড় একটি খুশির সংবাদ। আশা করছি, প্রকাশের পরে বইটি পাঠ করার সৌভাগ্য আমাদেরও ইনশাআল্লাহ হবে।

আপনার সম্পাদিত/ সংকলিত বইটিতে আমার অত্র পোস্টের বিষয়াবলী অন্তর্ভূক্ত হয়েছে জেনে ভালো লাগছে। মূলতঃ রমজানুল মুবারকের আলোচনায় এগুলো আসবেই। এসব বিষয় এড়িয়ে রমজানের আলোচনা পরিপূর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই। আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরনের জন্য আল্লাহ তাআ'লার নিকট আমরা বিনীতভাবে দোআ করছি। তিনি যেন দাওয়াতে দ্বীনের উদ্দেশ্যেই আপনার এই কাজকে কবুল করে নেন।

আপনি ইউকের এমন একটি ইসলামী দাওয়াতি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, যে সংগঠনের তত্ত্বাবধানে মসজিদ এবং মাদ্রাসাও পরিচালিত হচ্ছে - বিষয়টি জেনে খুবই ভালো লাগছে। আপনার যোগ্যতা, জ্ঞান এবং নেতৃত্বকে আরও প্রসারিত করুন। আপনার সংগঠন, সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের জন্য আমাদের কল্যানের দোআ।

হাদিসের ক্রম বিষয়ক আপনার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটির উত্তর নিয়ে পরে আবার আসতে চাই ইনশাআল্লাহ।

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৫

নতুন নকিব বলেছেন:



হাদিসের ক্রমবিন্যাসের ক্ষেত্রে আপনি যে সমস্যাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন, এটি আমার কাছেও একটি বড় সমস্যা হিসেবে মনে হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আপনার পর্যবেক্ষণও যথার্থ। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে অনলাইন এবং অফলাইনে হাদিসের ক্রমবিন্যাস করার ফলে ইসলাম ধর্মের অন্যতম জ্ঞানের উৎস - হাদিসের ক্রমবিন্যাসের ক্ষেত্রে একটি জটিল আবহ তৈরি হয়েছে। এটির আসলে সহজ কোনো সমাধান আশা করাও এখন কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। আন্তর্জাতিকভাবে রাবেতা আলমে ইসলামী কিংবা ওআইসির মত সংগঠনের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী সকলের জন্য এর জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে হাদিসের জ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে আগ্রহী সকলকে সেই নীতিমালার আওতায় থাকার নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।

হাদিসের ক্রমবিন্যাসের এই সমস্যার অনেকগুলো কারণের মধ্যে মূল কারণ আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, একই হাদিস এক স্থানে শুধু সনদ উল্লেখ করা হয়েছে, অন্য স্থানে ইবারত অর্থাৎ মূল আরবিসহ। কেউ কেউ এখানে দু'টি হাদিস ধরেছেন। আবার কেউ কেউ ধরেছেন একটি হাদিস হিসেবে। তবে একটি ধরুন অথবা দুইটি, উভয়ের মতই সঠিক। এজন্য হাদিস নম্বরে তারতম্য হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এই ক্ষেত্রে অনলাইনের উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে আপনি যদি ছাপানো মূল আরবি হাদিসের কিতাবগুলোর ক্রম নাম্বার অনুসরণ করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ নির্ভুল ক্রমবিন্যাস পাবেন।

আপনার জন্য আগাম ঈদ শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারাক। পরিবার পরিজন সকলকে নিয়ে অনেক ভালো থাকবেন - সেই প্রার্থনা।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৩৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



সুপ্রিয় নতুন নকিব ,
গত তিন দিন ধরে অসংখবার আপনার পোষ্টে এসেছি ।
আপনার দেখা না পেয়ে বার বার ফিরে গেছি ।
আপনার জাকাতের বিধি বিধান পোষ্টটি নিয়ে আমার খুব
জরুরী কিছু কথা আছে । জাকাত বিষয়ে আপনার মুল্যবান
পোষ্টটির কয়েকটি প্রিন্ট কপি আমাদের মসজিদের
মুসুল্লীদের মাঝে প্রিন্ট করে দেয়ার প্রয়োজনীয়ত্ দেখা দিয়েছে ।
দিন কয়েক পুর্বে আপনার মুল্যবান লেখাটি আমার লেপটপে
সম্মানীত মুসুল্লীদেরকে দেখানোর পরে উনারা এর
একটি প্রিন্টেড কপি পাওয়ার জন্য খুবই আগ্রহ দেখিয়েছেন।
রমজান মাস শেষ হতে চলছে, বিষয়টি খুবই জরুরী, তাই
এ বিষয়ে আপনার সদয় সম্মতি পাওয়া গেলে তাদের খুবই
উপকার হয়।

পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা রইল

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:০৭

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় আলী ভাই,
গত কয়েক দিনে আপনি বেশ কয়েকবার আমার পোস্টে এসেও আমাকে পাননি বলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আসলে আমার স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত কারণে তাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকার কারণেই ব্লগে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি। আশা করছি, আপনি মনঃক্ষুন্ন হবেন না। যাকাত বিষয়ক আমার যে লেখাটির কথা বলছেন, আপনি নির্দ্বিধায় আপনার মসজিদের সম্মানিত মুসল্লি ভাইদের প্রয়োজনে প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আমার আপত্তি তো নেই-ই; বরং ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর এমন যে কোন কাজের সাথে থাকতে পারাকেই দ্বীনি দাওয়াতের অংশ এবং দায়িত্ব মনে করে আনন্দিত হয়ে থাকি ইনশাআল্লাহ।

আপনার এবং আপনার মসজিদের মুসল্লিবৃন্দ ভাই বোনদের জন্যও পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনাদের সর্বাবস্থায় কল্যানের ভেতরে রাখুন।

৭| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:





দু:খ প্রকাশ করার মত কিছু নেই , আমি বুঝে নিয়েছিলাম , আপনি মহাব্যস্ত মানুষ , ব্যস্ত থাকাই স্বাভাবিক ।
অপনার স্ত্রী, আমাদের ভাবীর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করছি তিনি যেন খুব শীঘ্রই উনাকে পুর্ণ
সুস্থতা দান করেন ।


আজ এখানে রমজানের শেষ দশ দিবসের প্রথম বেজোড় রাত্রী ।
এতেকাফের সময় রাতে তাহাজ্জুতের পর সমবেত মুসুল্লিদের সাথে
ইসলামি বিষয়ে ঘন্টাখানেকের আলোচনার সময় এ পোষ্টের লেখটির
বিসয়বস্তু সমুহ আলোচনায় বিশেষ স্থান পাবে ইনসাল্লাহ ।

সুন্দর মুল্যবান লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
জানি রমজানের শেষ দশদিন সকল মুমিন মুসলমানের জন্যই
একটি বিশেষ সময় আতিবাহিতের দিন । আপনার সাথে
আরো কিছু ইসলামী বিষয়ে আলোচনা আছে । তাই খোদা চাহেত
রমজানের পরে কথা হবে এখানে অথবা আপনার নতুন কোন
পোষ্টে ।

আপনি সহ পরিবারের সকলের জন্য
ইদুল ফিতরের অগ্রীম শুভেচ্ছা সহ
রমজানুল মুবারকের শুভেচ্ছা রইল ।

০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:২৭

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় আলী ভাই,

শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ। ই'তেকাফের সময়টা এমনিতে সবসময়ই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বিশেষ সান্নিধ্যলাভের অন্যতম মাধ্যম ই'তেকাফ। প্রসঙ্গতঃ রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশক ই'তিকাফে কাটাতেন। তবে তিনি তাঁর জীবনের শেষ রমজানে বিশ দিন ই'তিকাফ করেছেন। ই'তিকাফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হওয়ার কারণেই এটিকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া মানে হচ্ছে, এই সুন্নতটি অন্ততঃ কিছু লোক আদায় করলে মহল্লাবাসী সকলের পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে। ই'তিকাফ সারা বছরের যে কোন সময় যে কোন মেয়াদে করা যায়। তবে রমজানুল মুবারাকে ই'তেকাফের গুরুত্ব যে অনেক অনেক বেশি তা বলারই অপেক্ষা রাখে না।

শেষ দশকে ই'তেকাফে রত থাকাবস্থায় রাতে তাহাজ্জুদের পরে সমবেত মুসুল্লিদের সাথে ইসলামি বিষয়ে আলোচনায় এই পোষ্টে আলোচিত বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করবেন জেনে খুবই ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সুন্দর এই উদ্যোগ সফল হোক। এগুলোকে মহান আল্লাহ তাআ'লা দ্বীনি দাওয়াতের অংশ হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।

আর রমজানুল মুবারকের পরে ইসলামী বিষয়াদি নিয়ে আপনি আলোচনা করার কথা বলেছেন। আপনার সাথে আলোচনা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই সৌভাগ্য মনে করবো। এক্ষেত্রে আপনার যখনই সময় সুযোগ হয়ে ওঠে জানাবেন, ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করবো সারা দিতে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনাকে আফিয়াতের জিন্দেগী দান করুন। উভয় জাহানে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।

৮| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী পোস্ট দিয়েছিলেন; আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন!
আশাকারি, আপনার এ পোস্ট পড়ে আমার মত অনেকেই উপকৃত হয়েছেন/হবেন।
ডঃ এম এ আলী এবং লেখকের মন্তব্য/প্রতিমন্তব্যগুলো ভালো লেগেছে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৮:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



বিনম্র কৃতজ্ঞতা। পোস্টে আপনার আগমনে আনন্দিত এবং উজ্জিবিত হই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনাকেও উত্তম বিনিময় প্রদান করুন পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে! আপনার প্রত্যাশা তিনি পূরণ করুন এবং আপনাকে হায়াতে তাইয়্যিবা দান করুন। জ্বি, আপনি যথার্থই বলেছেন, ডঃ আলী ভাইয়ের মন্তব্য থেকেও অনেক কিছু শেখার থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে আফিয়াতের যিন্দেগী দান করুন! শিফায়ে কামেলা আজেলা নসিব করুন।

৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৫:৩৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



মুল্যবান প্রতি মন্তব্য হতে অনেক গুরুত্বপুর্ণ কথা জানতে পারলাম ।
মোট নয়টি অধ্যায়ে লিখিত মাহে রমজান নিয়ে প্রকাশিত আমার
পুস্তকটির ১ম অধ্যায় সংক্ষেপিত আকারে সামুতে আজ পোষ্ট
দিয়েছে । পোষ্টটির উপর আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমার জন্য
খুবই উপকারী হবে । সময় পেলে দেখে আসার জন্য অনুরোধ
রইল ।

শুভেচ্ছা রইল

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৮:১৩

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার অনবদ্য এই প্রচেষ্টাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা গ্রহণ করে নিন। এর জন্য উত্তম বিনিময় প্রদান করুন। পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে মুক্তির অসিলা হিসেবে এগুলোকে কবুল করে নিন।

পোস্টটির সংবাদ এখানে অবহিত করায় কৃত্জ্ঞতা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আপনাকে শিফায়ে কামেলা আজেলা নসিব করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.