নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর অবিরাম ঘূর্ণন বেগ অনুভূত না হওয়া এবং পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে আমাদের ছিটকে না পড়ার কারণ

২৪ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৬

পৃথিবীর অবিরাম ঘূর্ণন বেগ অনুভূত না হওয়া এবং পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে আমাদের ছিটকে না পড়ার কারণ

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

পৃথিবী ঘুরছে। অবিরাম ঘুরছে। সূর্যকে কেন্দ্র করে। সূর্যের চারদিকে। দূরন্ত তার বেগ। জ্বি, শুনে হয়তো অনেকেরই চক্ষু চড়ক গাছ! হ্যাঁ, আপনি ভুল শুনছেন না। পৃথিবী প্রতি ঘন্টায় নিজ অক্ষে ১,৬৭৫ কি.মি বেগে ছুটে চলেছে। আর সূর্যের চারদিকে ছুটে চলেছে ১,০৭,৮২৬ কি.মি বেগে। ছুটে চলেছি আমি, আপনি আমরাও। পৃথিবীর সাথে সাথে। একই গতিতে। একই তালে। নিরন্তর। অবিরাম। কিন্তু সামান্য ছন্দপতন নেই। কোথাও কোন ব্যত্যয় নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ, কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ مَّا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَـٰنِ مِن تَفَاوُتٍ

তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত, বৈপরিত্য বা অসামঞ্জস্যতা দেখতে পাবে না। -সূরা আল মুলক, আয়াত ০৩

একটু ঝাকুনি বা হোচটও খাচ্ছি না আমরা। ঝাকুনি তো দূরের কথা, এতটুকু পরিমান টেরও পাচ্ছি না। কোনভাবে বুঝতেই পারছি না যে, পৃথিবী নিরন্তর চলমান। ছিটকে পড়েও যাচ্ছি না এর পৃষ্ঠ হতে। এর কারণ কী? জ্বি হ্যা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি প্রশ্ন এটি যা কোন না কোন সময়ে নিশ্চয়ই আপনার মনে হয়তো জেগেছে। কিন্তু এর উত্তর কি আমরা জানি? হয়তো জানি। হয়তো জানি না। জানলেও অনেকেই হয়তো স্পষ্টভাবে জানি না।

এ যাবতকালের উদ্ভাবন, আবিষ্কার এবং গবেষনা সন্দেহাতীতভাবে এটা প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে যে, মহাশুণ্যে থাকা কোন কিছুই স্থির নয়। সকলকিছুই বরং চলমান, ঘূর্ণনশীল বা সন্তরণরত। অন্য কথায় প্রত্যেকেই পরিভ্রমনরত সুবিশাল মহাশুণ্যে। চন্দ্র, সূর্য এবং দিন রাতের আবর্তনের বর্ণনার পরপরই কুরআনুল কারিমে মহাশুণ্যের প্রত্যেক বস্তুর আপন কক্ষপথে সন্তরণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৩৮

وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ

চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৩৯

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৪০

বস্ততঃ গ্রহ, নক্ষত্র, মিল্কিওয়ে, ছায়াপথ, নিহারিকা থেকে শুরু করে অনন্ত মহাশুণ্যে বিদ্যমান সবকিছুই এই অবিরাম ঘূর্ণাবর্তে রত। সৃষ্টির শুরু লগ্ন হতে অদ্যাবধি অবিরাম ঘুরে চলেছে পৃথিবীও। ঘুরতে থাকবে মহাপ্রলয়ের পূর্ব মুহূর্তটি পর্যন্ত। পৃথিবী ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। সূর্যের চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে তার অবিরাম পরিভ্রমন। শুধু সূর্যের চারদিকেই নয়, একইভাবে এই ঘূর্ণনের সময় পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট বেগে ঘুরে চলেছে নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করেও। নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোরার ফলেই দিন রাতের আবর্তন বিবর্তন ঘটে পৃথিবীতে।

পৃথিবীর নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে এমন ঘূর্ণনকে বিজ্ঞানীরা লাটিমের ঘূর্ণনের সাথে তুলনা করে থাকেন। লাটিম যেমন তার কাটার উপর বনবন করে ঘুরতে থাকে এবং সেই সাথে মাটির উপরেও চক্রাকারে আবর্তন করে, পৃথিবীও ঠিক একইভাবে ঘোরে। পার্থক্য শুধু লাটিম ঘুরতে ঘুরতে ঘর্ষণ বলের কারণে ধীরে ধীরে একসময় থেমে যায়। কিন্তু মহাশূন্যে কোন ঘর্ষণ বল নেই, যার ফলে পৃথিবী থেমে যায় না, বরং সমবেগে ঘুরতে থাকে সর্বদাই।

বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রায় ৩০ কি.মি./ সেকেন্ড বা ১,০৭,৮২৬ কি.মি/ ঘণ্টা বা ৬৭,০০০ মাইল/ঘণ্টা বেগে ঘুরে চলেছে। সেই সাথে নিজ অক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগ প্রায় ৪৬০ মি./ সেকেন্ড বা ১,৬৭৫ কি.মি./ ঘণ্টা বা ১,০৪০ মাইল/ ঘণ্টা। তার মানে, এতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই, আমরা যারা পৃথিবী পৃষ্ঠে বিশেষ করে বিষুব রেখার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি, দৈনিক অর্থাৎ, ২৪ ঘন্টায় কম করে হলেও আমাদেরকেও কিন্তু পৃথিবীর সাথে ঘুরে আসতে হচ্ছে ৩৮,০০০ কি.মি - ৪০,০০০ কি.মি পথ। আবার সূর্য তার গ্রহগুলোকে নিয়ে গ্যালাক্সিতে ঘুরে চলেছে ঘন্টায় ৮,২৮,০০০ কিলোমিটার গতিতে। ভাবা যায়, কি বিপুল গতিতে নিরন্তর ছুটে চলেছি আমরা! আমাদের সৌরজগত!

পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগ যে কত বেশি, উপরের পরিসংখ্যান দেখে সহজেই সেটা অনুমেয়। তবে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন বেগ আমাদের মনে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের জন্ম দেয় তা হল এত বেগে অবিরাম ঘুরতে থাকার পরেও পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে আমরা বাইরের দিকে ছিটকে পড়ে যাই না কেন? এমনকি, কেনই বা আমরা এই প্রচণ্ড বেগটা সামান্য অনুভব পর্যন্ত করতে সক্ষম হই না?

সত্যিই তো, স্বাভাবিকভাবে আপনি যদি ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর উপর নিজেকে কল্পনা করেন তাহলে প্রথমেই আপনার মাথায় বস্তুটি থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি চলে আসার কথা। তাহলে পৃথিবীর ক্ষেত্রে কেন এমনটা হচ্ছে না?

পৃথিবীর ঘূর্ণনে আমরা ছিটকে পড়ে যাই না, বা পৃথিবীর অবিরাম ঘূর্ণনের এই প্রচণ্ড বেগ অনুভব করতে পারি না মূলতঃ বিশেষ কিছু কারণে। চলুন, সেই কারণগুলোই দেখে নেওয়া যাক আজ।

প্রথমতঃ পৃথিবীর সাথে সাথে এর পৃষ্ঠে অবস্থিত সবকিছু এমনকি বায়ুমণ্ডলও ঘুরছেঃ

পৃথিবীর সাথে সাথে এর পৃষ্ঠে অবস্থিত সবকিছু এমনকি বায়ুমণ্ডলও ঘুরছে। কুরআনুল হাকিমে ইরশাদ হয়েছে,

وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সীন, আয়াত ৪০

যেহেতু পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত গাছপালা, ঘরবাড়ি, স্থাপনা, মানুষ বা পশুপাখি সবকিছুই পৃথিবী পৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত, সেহেতু সবকিছুই গতিশীল হওয়ার কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণনের বেগ আমাদের কাছে অনুভূত হয় না।

তবে বায়ুমণ্ডলের কথা আমাদের বিশেষভাবে বলতে হবে, কারণ, যে কোন গতিই হোক না কেন তা বোঝার জন্য আমাদের ঘর্ষণ বল অনুভব করতে হবে। যেমন, আপনি যদি মাঠে বা কোন খোলা জায়গায় দৌঁড় দেন তাহলে বাতাসের বাধা অনুভব করাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, তখন বায়ুমণ্ডল আপনার সাথে সাথে একই দিকে বা একই বেগে গতিশীল থাকে না। ফলে আপনার গতির বিপরীত দিকে দৌঁড়ে যেতে বাতাসের এক প্রবল বাধা অনুভব করতে হয়। আর ঘর্ষণ বল সবসময় গতির বিপরীত দিকে কাজ করে।

কিন্তু পৃথিবীর সাথে সাথে আমাদের বায়ুমণ্ডলও একই বেগে একই দিকে অবিরাম ঘুরছে, ফলে আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগের কারণে কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হচ্ছি না।

তা ছাড়া, বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চারদিকে একটি গ্যাসীয় স্তর তৈরি করে রেখেছে। এই স্তর পৃথিবীর সমান বেগে গতিশীল থাকার কারণে আমরা কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি না, অর্থাৎ, কোন প্রকার ঘর্ষণ বল আমাদের উপর কাজ করছে না। এতে করে আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে অনুভব করতে পারি না।

দ্বিতীয়তঃ সবচেয়ে বড় কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ বা মাধ্যকর্ষণ বল (The gravity of the Earth) এর কারণেঃ

সবচেয়ে বড় যে কারণটি রয়েছে তা হল পৃথিবীর অভিকর্ষ বল বা The gravity of the Earth। পৃথিবী যে বল দ্বারা তার পৃষ্ঠে অবস্থিত সকল বস্তুকে নিজ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে তাকে বলে অভিকর্ষ বল বা gravitational force। অর্থাৎ, পৃথিবী আমাদেরকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষন করে। পবিত্র কুরআনে এই বিষয়ক স্পষ্ট বর্ণনা না থাকলেও কিছু কিছু স্থানে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا

তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। -সূরা লুকমান, আয়াত ১০

এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আকাশমন্ডলীকে খুঁটিবিহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। বস্তুতঃ একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়, মহাশুণ্যের সুবিশাল ও মহান এই সৃষ্টিকে খুঁটিবিহীনভাবে সৃষ্টি করে অতি সূক্ষ্মভাবে সেগুলোকে পরিচালনার মাঝে কার্যকর রয়েছে অভিকর্ষ বল বা gravitational force। অন্য আয়াতেও এই বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে,

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا

আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। -সূরা আর রাদ, আয়াত ০২

এই অভিকর্ষ বল বা gravitational force এর বিষয়টিই অন্য আয়াত হতেও আমরা অনুধাবন করতে পারি। যেখানে কিয়মতের পূর্ব আলামাতকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ্ বলেন,

وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا

যখন সে তার বোঝা (ভর) বের করে দেবে। --সূরা যিলযাল, আয়াত ০২

তার অর্থ দাঁড়ায়, পবিত্র কুরআন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভরই হচ্ছে মহাকর্ষ শক্তির উৎস যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআ'লা খুঁটি ব্যতিত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন (লোকমান ৩১:১০), এবং সেগুলোকে উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত (রা’দ ১৩:০২)।

আবার ঘূর্ণায়মান বস্তুর কেন্দ্রের বাইরের দিকে একটি বল তৈরি হয়, যাকে কেন্দ্রবিমুখী বল বলে। যেমন আপনি যদি একটি ছোট পাথরের টুকরো কে দড়ি দিয়ে বেঁধে দড়ির অন্যপ্রান্ত ধরে বৃত্তাকারে ঘুরাতে থাকেন তাহলে আপনার হাতে একট টান অনুভব করবেন। এই টানটিই কেন্দ্রবিমুখী বল।

পৃথিবী যেহেতু ঘুরছে, আমাদেরও পৃথিবী পৃষ্ঠের বাইরের দিকে এই বল অনুভব করার কথা। মূলতঃ এই বলের কারণে আমাদের বাইরের দিকে ছিটকে পড়ারও কথা। কিন্তু ঘূর্ণনের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত কোন বস্তু পৃথিবী পৃষ্ঠের বাইরের দিকে যে বল অনুভব করে তা অভিকর্ষ বলের তুলনায় খুবই নগণ্য। তাই পৃথিবী যতই ঘুরুক না কেন, অভিকর্ষ বলের প্রভাবে আমরা ঠিকই পৃথিবী পৃষ্ঠে আটকে থাকি।

তৃতীয়তঃ পৃথিবী সর্বদা সমবেগে গতিশীল থাকার কারণেঃ

নির্দিষ্ট মাত্রায় মহাশুণ্যের সকল বস্তুই পরিভ্রমনরত। এই কথার বাস্তবতা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ

এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন। -সূরা আর রাদ, আয়াত ০২

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সিন, আয়াত ৪০

পৃথিবী সর্বদা সমবেগে গতিশীল। অর্থাৎ, এর বেগ বাড়ছেও না, আবার কমছেও না। কোন বস্তু যখন সমবেগে গতিশীল থাকে তখন আমরা ওই বস্তুটির বেগ অনুভব করতে পারি না।

যেমন, ধরুন, আপনি যখন লিফটে করে উপরে ওঠেন বা নিচে নামেন তখন লিফট চালু হওয়ার বা থেমে যাওয়ার মূহুর্তে আপনি অনুভব করতে পারেন যে লিফটটি উপরে উঠছে বা নিচে নামছে। কারণ, তখন বেগের পরিবর্তন হয়। কিন্তু লিফটটি চালু হওয়ার একটু পরেই আপনি আর লিফটের বেগ অনুভব করতে পারবেন না। কারণ, তখন লিফটটি একটি নির্দিষ্ট বেগে গতিশীল থাকে। ঘটনাটি বিশ্বাস না হলে লিফট চালু হওয়ার একটু পর আপনার চোখ বন্ধ করে পরিক্ষাটি করে দেখতে পারেন। দেখুন তো, বুঝতে পারেন কি না যে উপরে উঠছেন না কি, নিচে নামছেন? (চোখ বন্ধ করতে বলার কারণ হচ্ছে, তাকিয়ে থাকলে পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি সে সম্পর্কে মস্তিষ্ক সচেতন থাকে)।

গাড়িতে চলার সময়ও একই ঘটনা ঘটে। গাড়ি যখন সমবেগে চলতে থাকে তখন আমরা বেগ অনুভব করতে পারি না। ফলে গাড়ির সিটে আমরা স্থিরভাবে বসে থাকতে সক্ষম হই। কিন্তু যখনই গাড়ির গতি বাড়ে কিংবা ব্রেক কষে গতি কমিয়ে দেওয়া হয় তখন আমরা স্থির বসে থাকতে পারি না। সামনে বা পিছনের দিকে একটা ঝোঁক, টান বা ধাক্কা অনুভব করি।

এই একই কারণে আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগ বুঝতে পারি না। এর বেগ সর্বদা সমান থাকে। ভূ-পৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানের এই আবর্তন বেগ সমান হওয়ার দরুন এমন গতিশীল অবস্থা আমাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।

যদি কোন কারণে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন থেমে যায়, বা বেগ হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় তাহলে সাথে সাথে বিশাল হোচট খেয়ে আমাদের ছিটকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল।

চতুর্থতঃ পৃথিবী লাগোয়া সাপেক্ষমানতা বুঝার মত কোন কিছু না থাকায়ঃ

আবার, কোন কিছুর বেগ বুঝতে হলে কোন প্রসঙ্গ কাঠামোর প্রয়োজন, অর্থাৎ, আশেপাশের কোন কিছুর সাথে নিজের অবস্থানকে তুলনা করার মত পরিস্থিতি থাকতে হবে। তুলনা করার মত কিছু না থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন না যে, আপনি গতিশীল, না কি স্থির। যেমন, আপনি যখন গাড়িতে ভ্রমণ করেন তখন আশেপাশের গাছপালা, ভবনাদি বা রাস্তার সাপেক্ষে আপনার অবস্থানের পরিবর্তন দেখে বুঝতে পারবেন যে, আপনি গতিশীল। কিন্তু পৃথিবীর কথা ভেবে দেখুন তো। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পর থেকে এতটাই দূরত্বে অবস্থিত যে আকাশের দিকে তাকিয়ে কোন নক্ষত্র, গ্রহ বা উপগ্রহের সাপেক্ষে আপনার অবস্থানের পরিবর্তন ধরতে পারার সুযোগ নেই। এটা সম্ভব নয়। কারণ, এতটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন খালি চোখে বোঝা একেবারেই অসম্ভব। ফলাফল খুবই সহজ, পৃথিবীকে আপনার কাছে স্থির মনে হবে।

এইক্ষেত্রে একটি বিষয় বুঝা প্রয়োজন। মহাশুণ্যে বিদ্যমান গ্রহ নক্ষত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি বস্তুরই রয়েছে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ। এই কক্ষপথ ধরেই তাদের আবর্তন করতে হয়। কক্ষপথ থেকে তারা সরে যেতে পারে না। যেমনটা আমরা কুরআনুল কারিমের বর্ণনায় দেখতে পাই। ইরশাদ হয়েছে,

وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সিন, আয়াত ৪০

এই যে প্রত্যেক বস্তুর আপন আপন কক্ষপথ এটা কিন্তু এতটাই লাগোয়া বা সন্নিহিত নয় যে, একটিতে অবস্থান করে কোন যন্ত্রের সাহায্য ব্যতিত খালি চোখে অন্যটির নড়াচড়া বা আবর্তন বিবর্তনের বিষয়গুলো সনাক্ত করা যাবে। একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব হাজার লক্ষ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি হওয়ার কারণেই মূলতঃ পৃথিবীর অবিরাম ঘূর্ণন আমাদের কাছে কোনভাবেই অনুভূত হয় না।

পঞ্চমতঃ নিজ অক্ষে পৃথিবীর মসৃণ বেগে নিরন্তুর পরিক্রমনঃ

আগেই বলেছি পৃথিবী সমবেগে গতিশীল। নিজ অক্ষে পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট গতিতে নিরন্তর আবর্তনশীল। পৃথিবীর সেই আবর্তনের গতি বাড়েও না বা কমেও না। চলতে চলতে হঠাৎ করে কোন একটি তলায় গিয়ে লিফট যদি থেমে না যায় লিফটের গতি যেমন সহসাই বুঝা যায় না, ঠিক একইভাবে পৃথিবীর গতিও একই কারণে আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠে না। মূলতঃ পৃথিবীর এমন মসৃণ বেগ আমাদের কিছুতেই বুঝতে দেয় না যে, পৃথিবী গতিশীল এবং শুধু পৃথিবী একাই ঘুরছে না বরং আমরাও পৃথিবীর সাথে সাথে সমভাবে গতিশীল। অন্য দিকে পৃথিবীর আকৃতির তুলনায় আমাদের অস্তিত্ব অতি নগণ্য হওয়ার কারণেও এই ঘূর্ণন আমাদের উপর কোন ধরণের প্রভাবই ফেলতে অক্ষম। যার ফলে বিশাল গতিতে পৃথিবী আমাদেরকেসহ নিরন্তর ছুটে চলার পরেও আমরা অনুধাবন করতে পারছি না যে, পৃথিবীসহ আমরা গতিশীল। আর বলা বাহুল্য, এই একই কারণে আমরা পৃথিবীর ঘূর্ণন যেমন বুঝতে পারি না ঠিক তেমনি পৃথিবীর অভিকর্ষ বা মাধ্যকর্ষণ বল (The gravity of the Earth) এর টানে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ছিটকেও পড়ে যাই না।

কুরআনুল হাকিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। -সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৩৩

এখানে دَائِبَيْنِ শব্দটি একই নিয়ম, রীতি, অভ্যাস বা রুসম রেওয়াজ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই শব্দটির উল্লেখের দ্বারা এখানে চন্দ্র সূর্যের নিরন্তর একই গতিতে চলমানতার বিষয়টিকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে।

তথ্য সূত্রঃ

১। Click This Link
২। Click This Link
৩। Click This Link
৪। Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:১৮

কামাল১৮ বলেছেন: ধর্মের বক্তব্য যে সত্য এটা প্রামানের জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন হয়।বিজ্ঞানের বক্তব্যের প্রমানের জন্য ধর্মের প্রয়োজন হয় না।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৪১

নতুন বলেছেন: সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। -সূরা ইয়া সিন, আয়াত ৪০


In solar eclipse moon comes in front of sun. In a way moon crossing solar orbital path.

Also in another measurement sun is so far away to even compair there orbit.

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: লিফটের উদাহরণ টা ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.