নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরয নামাজ শেষে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোয়া জিকির

০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৮

ফরয নামাজ শেষে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোয়া জিকির

আয়াতুল কুরসির ক্যালিগ্রাফি, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

ফরজ নামাজ শেষে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থবহ অনেক দোয়া এবং জিকির পাঠ করতেন। তিনি কোন কোন দোয়া ও জিকির ফরজ নামাজান্তে গুরুত্বের সাথে পাঠ করতেন এবং পাঠে অভ্যস্তও ছিলেন - আমরা কি জানি? কেউ কেউ জেনে থাকলেও অনেকেরই হয়তো সঠিকভাবে জানা নেই। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পঠিত কিছু দোয়া এবং জিকির আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিদিনের ফরজ নামাজ শেষে অনুশীলনের লক্ষ্যে এখানে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের তাওফিক দান করুন।

১. সালাম ফিরিয়ে প্রথমেই পাঠ করুন- ''আল্লাহু আকবার'' ১ বার এবং “আসতাগফিরুল্লা-হ” (ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪ) -- ৩ বার

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

২. এরপরে পাঠ করুন- “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – ১ বার।

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻭَﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﺗَﺒَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻳَﺎ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﻼَﻝِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻛْﺮَﺍﻡِ

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। আপনি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ইস্তেগফার পড়তেন, অর্থাৎ, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”। -মুসলিম ১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১

৩. একবার

لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ:- “ লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহ্‌, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থ:- আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

৪. একবার

اَللّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الَجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’তিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন তা রোধ করার এবং যা রোধ করেন তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন আপনার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। -বুখারী, মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬২ নং

৫. একবার

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِالله

উচ্চারণ:- লা-হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ্‌।

অর্থ:- আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই।

৬. একবার

لآ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

উচ্চারণ:- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না’বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফায্বলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বিনা লাহুদ্দ্বীনা অলাউকারিহাল কা-ফিরুন।

অর্থ- আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফের দল তা অপছন্দ করে। -মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬৩ নং

৭. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫) ১ বার।

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না”। -নাসায়ী, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহিহাহ-হাদিস ৯৭২

৮. আবু হুরাইরা (রাঃ) প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। -মুসলিম-১২২৮

৯. একবার করে সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পড়ুন। -আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮

১০. একবার পড়ুন- “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা”

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻋِﻨِّﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺫِﻛْﺮِﻙَ، ﻭَﺷُﻜْﺮِﻙَ، ﻭَﺣُﺴْﻦِ ﻋِﺒﺎﺩَﺗِﻚَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার স্মরণ, আপনার কৃতজ্ঞতা এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে সাহায্য করুন”। -আবু দাউদ ১/২১৩

১১. একবার পাঠ করুন- 'আল্লা-হুম্মা ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা-দাক'।

اَللّهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

অর্থ:- হে আল্লাহ! যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন সেদিনকার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করুন। -মুসলিম

১২. ফজরের সলাতের পর ১ বার

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْماً نَّافِعاً وَّرِزْقاً طَيِّباً وَّعَمَلاً مُّتَقَبَّلاً

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না-ফিআ, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।

অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট ফলদায়ক শিক্ষা, হালাল জীবিকা এবং গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।

ফজরের নামাযের পর এটি পঠনীয়। -ইবনে মাজাহ্‌, সুনান১/১৫২, ত্বাবারানী সাগীর, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১১১

১৩. হযরত আব্দুর রহমান বিন গানম (রাঃ) হতে বর্ণিত প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামায থেকে ফিরে বসা ও পা মুড়ার পূর্বে (অর্থাৎ, যেভাবে বসে নামাজ শেষ করেছে সেভাবে বসেই, এদিক অদিক ঘুরা বা অন্য রকম করে বসার পূর্বেই) নিম্নোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে,

«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।

“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।

আল্লাহ্‌ তার আমলনামায় প্রত্যেকবারের বিনিময়ে ১০টি সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন, ১০টি গোনাহ মোচন করে দেন, তাকে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত করেন, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ যিকির) রক্ষাকবচ হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমার্হ হয়। আর সে হয় আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে যে তার থেকেও উত্তম যিকির পাঠ করবে”। -আহমাদ,সহীহ তারগীব-হাদিস ৪৭২

শেষের নিবেদনঃ

প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, উল্লিখিত প্রতিটি দোয়া এবং জিকিরই চমৎকার অর্থবহ এবং গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থ বুঝে কায়োমনোবাক্যে একাগ্রতার সাথে পাঠ করলে অন্তরে শিহরণ জাগা স্বাভাবিক। নিতান্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে, একান্তভাবে প্রাপ্তির আশা নিয়ে দোয়া ও জিকিরগুলো পাঠ করা চাই। আল্লাহ জাল্লা শানুহূ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: রমজানের জন্য চমৎকার পোষ্ট।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



স্বাগত প্রিয় কবি ভাই। জাজাকুমুল্লাহ।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:১৭

জটিল ভাই বলেছেন:
মাশাল্লাহ্। জাযাকাল্লাহ্।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৪

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৫

আহলান বলেছেন: মাশাআল্লাহ!

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরান। জাজাকুমুল্লাহ।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৮

কামাল১৮ বলেছেন: মক্কায় থাকা কালে তিনি কোথায় জামাতে নামাজ পড়তেন।কোন দিকে কেবলা করে নামাজ পড়তেন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



ইবনে হিশামের বর্ণনায় এ কথা রয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীগণ (রা.) সালাতের সময় ঘাঁটিতে চলে যেতেন এবং গোত্রীয় লোকজনদের দৃষ্টির আড়ালে গোপনে সালাত আদায় করতেন। আবূ ত্বালিব এক দফা নাবী কারীম (ﷺ) এবং আলীকে সালাত আদায় করতে দেখেন এবং জিজ্ঞাসা করে প্রকৃত বিষয়টি অবগত হলে এর উপর দৃঢ় থাকার পরামর্শ প্রদান করেন। -ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ২৪৭ পৃঃ

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সিরাতের বিভিন্ন কিতাব যেমন, আর রাহিকুল মাখতূম, সিরাতে ইবনে হিশাম পড়া যেতে পারে।

ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: নবীজি ৪০ বছর বয়সে নবুয়াত লাভ করেন। এর আগে কি নামাজ পড়তেন? কিভাবে পড়তেন?

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন: নবুয়তের পূর্বে নাবী কারীম (ﷺ) সালাত আদায় করতেন কি?

ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন যে, নাবী কারীম (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবাগণ (রা.) মি’রাজের ঘটনার পূর্ব হতে অবশ্যই সালাত পড়তেন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার পূর্বে অন্য কোন সালাত ফরজ ছিল কি ছিল না সে ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন যে, সূর্যের উদয় এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বে একটি করে সালাত ফরজ ছিল। আর নবুয়তের পূর্বে নাবী কারীম (ﷺ) এর সালাত আদায়ের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

হারিস বিন উসামাহ ইবনে লাহী’আর মাধ্যমে বর্ণনাকারীদের মিলিত পরম্পরা সূত্রের বরাতে যায়দ বিন হারিসাহ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট যখন প্রথম ওহী অবতীর্ণ হল তখন জিবরাঈল (আঃ) আগমন করলেন এবং তাকে অযুর পদ্ধতি শিক্ষা দিলেন। যখন অযু শেখা সমাপ্ত হল তখন এক চুল্লি পানি লজ্জা স্থানে ছিটিয়ে দিলেন। ইবনে মাজাহও এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বারা বিন আযিব এবং ইবনে আব্বাস হতেও ঐ ধরণের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হাদীসে এ কথারও উল্লেখ রয়েছে যে, সালাত প্রাথমিক ফরজকৃত কর্তব্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত ছিল। -শাইখ আব্দুল্লাহ মোখতাসার মীরাহ পৃঃ ৮৮

ইবনে হিশামের বর্ণনায় এ কথা রয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) এবং সাহাবীগণ (রা.) সালাতের সময় ঘাঁটিতে চলে যেতেন এবং গোত্রীয় লোকজনদের দৃষ্টির আড়ালে গোপনে সালাত আদায় করতেন। আবূ ত্বালিব এক দফা নাবী কারীম (ﷺ) এবং আলীকে সালাত আদায় করতে দেখেন এবং জিজ্ঞাসা করে প্রকৃত বিষয়টি অবগত হলে এর উপর দৃঢ় থাকার পরামর্শ প্রদান করেন। - ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ২৪৭ পৃঃ

নবুয়তের পূর্বে নাবী কারীম (ﷺ) কোন ধর্ম পালন করতেন?

রাসূলে কারিম (ﷺ) ছিলেন ইবরাহিম (আঃ) এর বংশধর। তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রচারিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি জীবনে কখনো মূর্তিপূজা করেননি এমনকি মূর্তি স্পর্শও করেননি। শিশুকাল থেকেই তিনি মূর্তিপূজা অপছন্দ করতেন।

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমঃ

১০ বা ১২ বছর বয়সে চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি সর্বপ্রথম সিরিয়ার বুছরা (بُصْرَى) শহরে গমন করেন। সেখানে জিরজীস (جِرْجِيْس) ওরফে বাহীরা (بَحِيرَى) নামক জনৈক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাহেব অর্থাৎ খ্রিষ্টান পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তিনি মক্কার কাফেলাকে আন্তরিক আতিথেয়তায় আপ্যায়িত করেন এবং কিশোর মুহাম্মাদেরﷺ হাত ধরে কাফেলা নেতা আবু ত্বালেবকে বলেন, هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِيْنَ هَذَا يَبْعَثُهُ اللهُ رَحْمَةً لِِّلْعَالَمِيْنَ ‘এই বালক বিশ্ব জাহানের নেতা। একে আল্লাহ বিশ্ব চরাচরের রহমত হিসাবে প্রেরণ করবেন’। আবু ত্বালেব বললেন, কিভাবে আপনি এ কথা বুঝলেন? তিনি বললেন, গিরিপথের অপর প্রান্ত থেকে যখন আপনাদের কাফেলা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল, তখন আমি খেয়াল করলাম যে, সেখানে এমন কোন প্রস্তরখন্ড বা বৃক্ষ ছিল না, যে এই বালকের প্রতি সিজদায় পতিত হয়নি। আর নবী ব্যতীত এরা কাউকে সিজদা করে না। তাছাড়া মেঘ তাঁকে ছায়া করছিল। গাছ তার প্রতি নুইয়ে পড়ছিল। এতদ্ব্যতীত ‘মোহরে নবুঅত’ দেখে আমি তাঁকে চিনতে পেরেছি, যা তার (বাম) স্কন্ধমূলে ছোট্ট ফলের আকৃতিতে উঁচু হয়ে আছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থে আখেরী নবীর এসব আলামত সম্পর্কে আমরা আগেই জেনেছি। অতএব হে আবু ত্বালেব! আপনি সত্বর একে মক্কায় পাঠিয়ে দিন। নইলে ইহূদীরা জানতে পারলে ওকে মেরে ফেলতে পারে’। অতঃপর চাচা তাকে কিছু গোলামের সাথে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় পাদ্রী তাকে পিঠা ও তৈল উপহার দেন।

ইবনু ইসহাক বলেন, পাদ্রী বাহীরা তাকে পৃথকভাবে ডেকে নিয়ে লাত ও ‘উযযার দোহাই দিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন। তখন তরুণ মুহাম্মাদﷺ তাকে বলেন, আমাকে লাত ও ‘উযযার নামে কোন প্রশ্ন করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি এ দু’টির চাইতে কোন কিছুর প্রতি অধিক বিদ্বেষ পোষণ করি না। অতঃপর তিনি তাকে তার নিদ্রা, আচরণ-আকৃতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সেগুলিতে তিনি তাদের কিতাবে বর্ণিত গুণাবলীর সাথে মিল পান। অতঃপর তিনি আবু তালিবকে বলেন, ছেলেটি কে? আবু তালিব বলেন, এটি আমার বেটা। তিনি বললেন, না। এটি আপনার পুত্র নয়। এই ছেলের বাপ জীবিত থাকতে পারেন না। তখন আবু তালিব বললেন, এটি আমার ভাতিজা। বাহীরা বললেন, তার পিতা কি করেন? জবাবে আবু তালিব বলেন, তিনি মারা গেছেন এমতাবস্থায় যে তার মা গর্ভবতী ছিলেন। বাহীরা বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। আপনি ভাতিজাকে নিয়ে আপনার শহরে চলে যান এবং ইহূদীদের থেকে সাবধান থাকবেন। ... আপনার ভাতিজার মহান মর্যাদা রয়েছে’ (ইবনু হিশাম ১/১৮২)।

বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, সকল নবীই নিষ্পাপ ছিলেন। আর শেষনবী মুহাম্মাদ(ﷺ) নবী হওয়ার আগে ও পরে যাবতীয় কুফরী থেকে এবং অহী প্রাপ্তির পরে কবীরা গোনাহের সংকল্প থেকেও নিষ্পাপ ছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ছগীরা গোনাহ জায়েয ছিল। তাঁদের এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, কুফরী ও কবীরা গোনাহ থেকে তিনি নবুঅত লাভের পূর্ব হ’তেই নিষ্পাপ ছিলেন। যেমন--

(১)

তিনি কুরায়েশদের নিয়ম অনুযায়ী হজ্জের সময় কখনো তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করেননি। বরং অন্যদের সাথে আরাফাতে অবস্থান করতেন। তাঁকে সেখানে দেখে একবার জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম আশ্চর্য হয়ে বলে উঠেছিলেন, وَاللهِ مِنَ الْحُمْسِ فَمَا شَأْنُهُ هَا هُنَا ‘আল্লাহর কসম! এ তো হুম্স-দের সন্তান। তার কি হয়েছে যে, সে এখানে অবস্থান করছে? -বুখারী হা/১৬৬৪; মুসলিম হা/১২২০

(২)

তিনি কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। একবার তিনি স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে কা‘বাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন। সে সময় যায়েদ মূর্তিকে স্পর্শ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। দ্বিতীয়বার যায়েদ আরেকটি মূর্তিকে স্পর্শ করেন বিষয়টির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নবুঅত লাভের আগ পর্যন্ত যায়েদ কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। তিনি কসম করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনোই মূর্তি স্পর্শ করেননি। অবশেষে আল্লাহ তাকে অহী প্রেরণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন। -ত্বাবারানী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ

(৩)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনোই মূর্তির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত পশুর গোশত কিংবা যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, এমন কোন গোশত ভক্ষণ করেননি’। -বুখারী ফাতহসহ হা/৫৪৯৯), মুসলিম হা/৩৪০; বুখারী ফাতহসহ হা/৩৬৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

(৪)

কা‘বা পুনর্নির্মাণ কালে দূর থেকে পাথর বহন করে আনার সময় চাচা আববাসের প্রস্তাবক্রমে তিনি কাপড় খুলে ঘাড়ে রাখেন। ফলে তিনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি পাজামা কঠিনভাবে বেঁধে দিতে বলেন’ (বুখারী, মুসলিম)।

যদিও বিষয়টি সে যুগে কোনই লজ্জাকর বিষয় ছিল না। ইবনু হাজার আসক্বালানী(রঃ) উক্ত হাদীছের আলোচনায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ স্বীয় নবী-কে নবুঅতের পূর্বে ও পরে সকল মন্দ কর্ম থেকে হেফাযত করেন’। -মুসলিম হা/৩৪০; বুখারী ফাতহসহ হা/৩৬৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

তাঁর বয়স ৪০ হওয়ার পূর্বে কিছু বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হল। তিনি একাকী হেরা গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকতে শুরু করেন অবশেষে ৪০ বছর বয়সে সর্ব প্রথম ওহী প্রাপ্ত হন এবং নবুয়তী জীবন শুরু করেন। -ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭

আশা করি, উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে - নবুয়তের পূর্বেও রাসুল (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের উপরেই ছিলেন; তিনি সে সময় সেই সব নির্দেশনাই পালন করতেন যা পূর্ববর্তী নবী-রাসুলগন আদিষ্ট হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ সংযুক্ত।

ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:০৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: পবিত্র রমজান মাসের জন্য অতি দরকারী সাথে সাথে মুমিনের প্রাত্যহিক জীবনের জন্যও প্রয়োজন ।

ধন্যবাদ ভাই , অর্থবহ এ লেখার জন্য এবং সুযোগ দেয়ার জন্য পড়ার সময়ও কিছু নেক হাসিলের সম্ভাবনার সুযোগের জন্য।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:০৯

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহ।

৭| ১২ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৫৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুবই উপকারী একটা পোস্ট। প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। মাঝে মাঝে দেখতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.