নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন হবে যদি আপনার স্মার্টফোন একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়?

০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:০৬



কেমন হবে যদি আপনার স্মার্টফোন একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়? শুধু স্মার্টফোন নয়, আপনার হাতের ল্যাপটপ, ট্যাব, ডিজিটাল ওয়াচ সহ রুমে থাকা টেলিভিশন এবং সকল ধরণের ডিজিটাল ডিভাইস একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়ে যায়? খুব সম্ভবত এমন হলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে নিমিষেই।

শুধুমাত্র স্মার্টফোনের পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলা যাক। বাংলাদেশে মোট ৫৬% শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সংখ্যায় ৯ কোটি ৫২ লাখ প্রায়। এখন এই সমস্ত স্মার্টফোন যদি ক্ষুদ্র বোমায় রুপান্তরিত হয় তাহলে পুরো বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ নিতে এক অন্ধকার দুনিয়ার ঠিক কত সময় লাগবে? সর্বোচ্চ কয়েক মিনিট মাত্র। তারচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে কি পরিমাণ মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করতে পারেন তাও নির্মমভাবে?

কথাগুলো হয়তো একটু পাগল-পাগল শোনাচ্ছে, বোকা-বোকা শোনাচ্ছে কিন্তু আমি কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার রিভিউ লিখছি না। এই বিষয়গুলো বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে। আমরা জানিনা পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ক্ষমতা সম্পর্কে। কিন্তু এই স্পাইওয়্যার বাংলাদেশের মত দেশে মজুদ আছে আমাদের সারাক্ষণ নজরদারি করবার জন্য। গত কয়েক বছরে এই স্প্যাইওয়্যারের ব্যবহার এবং উপস্থিতি আরো স্পষ্টভাবে আমাদের সামনে এসেছে। খুব সম্ভবত আপনার স্মার্টফোনকে টুকরো একটি বোম তৈরীর জন্য এই স্প্যাইওয়্যার-ই যথেষ্ট।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের বৈরুতে পেজার নামক একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকে তা বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ২,৮০০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন শিশুও মৃত্যুবরণ করেছে। এই পেজার একমুখী ছিলো। মানে এই পেজারগুলো শুধু বার্তা গ্রহণ করতে পারবে কিন্তু কোনো বার্তা পাঠাতে সক্ষম নয়।

হিজবুল্লাহ্‌ হচ্ছে ইরান সমর্থিত একটি শিয়া সশস্ত্র বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘদিন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু শক্রু যখন ইসরায়েল তখন হিজবুল্লাহ্‌ ডিজিটাল ডিভাইস পরিত্যাগ করে একমুখী পেজার ক্রয় করে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য। এই পেজারগুলো সাধারণত বিভিন্ন হাসপাতাল, বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইমার্জেন্সি যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। পেজারের আরো নাম আছে যেমন, বীপার, ব্লিপার, পকেট বেল ইত্যাদি।

হিজবুল্লাহ্‌ যখন পেজার ক্রয় করে তখন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নেয়। মনে করা হচ্ছে, এতে মোসাদ (ইসরায়েলের ভয়ানক গোয়েন্দা সংস্থা) এর হাত ছিলো এবং ইসরায়েলকে এই বিস্ফোরণে সাহায্য করে। হিজবুল্লাহ্‌ প্রায় ৫,০০০ এর বেশি পেজার ক্রয় করে তাইওয়ান থেকে। আর এখানেই ঘটে ঘাপলা। প্রতিটি পেজারে আগে থেকেই লাগানো ছিলো বিস্ফোরক। এতে করে বিপ শব্দে একটি বার্তা পেজারে এলে সেটা খোলা মাত্রই বিস্ফোরিত হতে শুরু করে। এতে করে কারো হাত, কারো পা, কারো চোখ বা কারো প্রাইভেট পার্ট পর্যন্ত উড়ে গেছে।

যদিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল এই বিষয়টি অফিসিয়ালি স্বীকার করে নি কিন্তু এমন অত্যাধুনিক সাইবার যুদ্ধ কে করেছে তা সহজেই অনুমেয়। প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে চলছে চর্চা, কড়চা এবং প্রশংসা। আরো আতঙ্কিত হতে হয়, বিশ্ব নেতারা যখন একটি ‘Terror’ হামলা কে গ্লোরিফাই করছেন সেটা বুঝেও! দেখেও!

ইসরায়েল অবশ্য এই পর্যন্তই ক্ষান্ত থাকে নাই। গাজায় গণহত্যা চালানোর পর এবার হিজবুল্লাহ্‌ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ সহ ডজনের বেশি শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। পেজার আর ওয়াকিটকির বিস্ফোরণের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান ইরান, লেবানন ও ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েলের এই যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সহ বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ানক যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান।

কিন্তু আমি যেখানে শুরু করেছিলাম সেখানেই ফিরে যাচ্ছি। একাধিক তথ্য মতে, ইসরায়েলের পেজার ও ওয়াকিটকি তে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ১০-১৫ বছরের পরিকল্পনা চলমান ছিলো। এবং তারা আজ সফল হয়েছে। মানে এই কথাগুলো লিখতেও আমার এই দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি বমি আসতেছে। সমানে সাধারণ মানুষ মেরে এরা টেকনোলজিক্যাল জায়ান্ট হিসেবে নিজেদের জানান দিচ্ছে। মানুষের জীবন কে এরা জীবনই মনে করে না। অন্যদিকে লেবাননে শুধু মুসলিম নাই, এখানে একাধিক ধর্মের ও সেক্যুলার পন্থী মানুষও আছেন।

অবশ্য হত্যাকারীদের আবার কীসের নসিহত! এখন আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবুন! যদি ইসরায়েল সামান্য পেজার-ওয়াকিটকি তে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে তাহলে আমাদের দামী দামী স্মার্টফোনকে একেকটি বোমায় রুপান্তরিত করতে এদের খুব বেশি সময় লাগবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পেগাসাস স্পাইওয়্যার এর উপস্থিতি স্পষ্ট টের পাওয়া গেছে, বাংলাদেশেও আছে।

সুতরাং এবার টার্গেট আর ফিলিস্তিন বা লেবানন নয়। এবার শক্রু কিন্তু ইসরায়েলও নয়। এবার আমরা-আমরাই শক্রুতে রুপান্তরিত হবার সমূহ সম্ভাবনার গেট উন্মোচন করলো ইসরায়েল। এই সমস্ত টেকনোলজি আমাদের আশেপাশে প্রায় দেশেই আছে। আজ যদি আমরা ধর্ম-বর্ণ-মত-আদর্শ নির্বিশেষে এই সাইবার আক্রমণের নিন্দা না করি তাহলে আগামীকাল সরকার একটা করে স্মার্টফোনকে বিস্ফোরিত করবে আর বলবে, “লোকটি টেরোরিস্ট ছিলো!”

বুদ্ধিজীবীরা বলবেন, “মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষের মনে ‘ভয়’ ঢুকানো খুবই জরুরী।” সবাই চুপ আছেন তা নয়, কিন্তু অনেকেই কিছুই বলছেন না এ বিষয়ে। আগাম সতর্কতা কেউ নিচ্ছেন না। আগামীর দিনগুলো কেমন হবে কেউ ভাবছেন না। ধর্মের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েল চলছে।

আমার শুধু মুচকি হাসি পায় এটা ভেবে যে, “আগুন লাগলে সব বাড়িতেই আগুন লাগবে, এই জমিনে শুধু আমার বাড়ি আছে তা তো নয়!”

ছবি: Old Pager Images | Adobe Stock
Also Read It On: ডিজিটাল ডিভাইস: আমাদের অস্তিত্বের জন্য নতুন হুমকি?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৩৮

আজব লিংকন বলেছেন: রজনীকান্তের একটা সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমার নাম রোবট টু পয়েন্ট জিরো। আপনার লেখা এই কাহিনী তারা চুরি করে অনেক আগেই সিনেমা বানিয়ে ফেলেছে।

আপনার উচিত হবে রাজনিকান্তের নামে এক্ষুনি একটি মামলা ঠুকে দেওয়া।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

মি. বিকেল বলেছেন: আজব লিংকন, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। "রোবট 2.0" একটি জনপ্রিয় সিনেমা ঠিকই, কিন্তু আমার লেখা একটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। আমার লেখায় আমি স্মার্টফোনকে বোমায় রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। লেবাননে ঘটে যাওয়া পেজার বিস্ফোরণের মতো ঘটনা এই ধরনের হুমকির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। আমার লক্ষ্য ছিল এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে জাগিয়ে তোলা।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


ভালোই তো হয়।
আন্দোলনে আগুন জ্বালাতে আর স্থাপনা পুড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা যাবে।

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪২

নতুন বলেছেন: সমানে সাধারণ মানুষ মেরে এরা টেকনোলজিক্যাল জায়ান্ট হিসেবে নিজেদের জানান দিচ্ছে। মানুষের জীবন কে এরা জীবনই মনে করে না।

মানুষ মানবিকতা হারাচ্ছে।

প্রজ্ঞা ছাড়া মানুষ অন্য সব পশুর মতনই।

সেটা যে আমাদের সমাজেও আছে তার প্রমান আমরা এই আন্দোলনেই দেখলাম।

এই আন্দোলনে কতগুলি মানুষ কে হত্যা করা হলো, আহত হলো।

এই খুনি গুলি কিন্তু আমাদের সমাজেই ঘুরে বেরাচ্ছে। :|
যারা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে, বাচাতে সাহাজ্য করছে। তাদের বিন্দুমাত্র অনুসুচনা নাই।

দল, ধর্ম বা মতের পার্থক্যের কারনে কাউকে হত্যা একজন জ্ঞানী মানুষ করতে পারেনা।

মানবিকতা হারিয়ে বিশ্ব যেখানে যাচ্ছে সেখানে শান্তি থাকবেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.