নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

আমিই সাইফুল

চলতে চলতে হবে পরিচয়.....

আমিই সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের খচখচানি!

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২১

রাফি আজও বাজার থেকে ফিরল পকেটে সেই একশো টাকার নোট নিয়ে। নোটটা যেন তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। দুদিন আগেও এটা নিয়ে এত মাথাব্যথা হবে ভাবেনি। একশো টাকা! আজকাল এর দামই বা কতটুকু? কিন্তু এই ছোট্ট নোটটা যেন তার জীবনে ঝড় তুলেছে। মানিব্যাগে থাকলেই মনে অস্থিরতা, যেন কেউ তাকে সারাক্ষণ খোঁচাচ্ছে।

হালিশহরের বাজারে সকালে গিয়েছিল। দু কেজি পেঁয়াজ আর এক কেজি আলু কিনতে গিয়ে নোটটা বের করেছিল। দোকানি আজিজ মিয়া চোখ কুঁচকে বলল, “ভাই, এটা চলবে না। দেখেন, নোটের মাঝখানটা ফ্যাকাসে। ছিঁড়ে যাওয়ার মতো।”
“ছিঁড়ে যাওয়ার মতো মানে কী? এটা তো বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট!” রাফি তর্ক শুরু করল।

“না ভাই, এটা আমি নিতে পারব না। অন্য টাকা দেন।”
রাফির মাথা গরম হয়ে গেল। “অন্য টাকা কেন দেব? এটা কি আমি বাড়িতে বানিয়েছি? বাসের কন্ডাক্টর দিয়েছে। নিন না কেন?”
আজিজ মিয়া ঠাণ্ডা গলায় বলল, “তাহলে আলু-পেঁয়াজ ফেরত দেন। আমি এটা নিতে পারব না।”
রাফি আর কথা বাড়াল না। নোটটা পকেটে ঢুকিয়ে চুপচাপ ফিরে এল। মনে মনে ভাবল, এই নোটটা যেন তার জীবনের শত্রু। এটা না চালাতে পারলে তার হার হয়ে যাবে।

দুদিন আগে বাসে এই নোটটা পেয়েছিল। হালিশহর থেকে বহদ্দারহাট যাওয়ার বাসে কন্ডাক্টরের সঙ্গে তর্ক হয়েছিল। রাফি বলেছিল, “ভাই, এটা কী দিলেন? নোট তো ফ্যাকাসে!”
কন্ডাক্টর হেসে বলেছিল, “কী বলেন ভাই! একশো টাকার নোট এটা চলবে।
“এটা চলবে না, বদলে দেন।”
“ধুর, নিন না। না হয় বাস থেকে নেমে যান।”

বাসের লোকজন হাসাহাসি শুরু করল। একজন বলল, “ভাই, একশ টাকার নোট অচল হয় না। আপনি দেখি বড়ো অদ্ভুত লোক!” রাফি লজ্জায় চুপ করে গিয়েছিল। জানালার দিকে তাকিয়ে ভেবেছিল, সামান্য একটা নোট নিয়ে এত কথা বলা উচিত হয়নি। কিন্তু মনে মনে ঠিক করেছিল, এই নোটটা সে চালিয়ে দেবেই।

বাড়ি ফিরে তানিয়ার কাছে কিছু বলেনি। তানিয়া জানলে বলবে, “আবার কে তোমাকে অচল টাকা গছিয়ে দিল? তুমি না দেখে কিছু নাও, তাও তোমাকে ঠকায়!” তানিয়ার এই কথাগুলো রাফির বুকে ছুরির মতো বিঁধে। তাই নোটটা লুকিয়ে রেখেছে।
পরদিন সকালে আবার বাজারে গেল। এবার একটা মুদির দোকানে দুটো ডিম কিনে নোটটা দিল। দোকানি হাতে নিয়েই বলল, “এটা চলবে না। অন্যটা দেন।”
রাফি মরিয়া হয়ে বলল, “কেন চলবে না? এটা তো একশো টাকার নোট!”
“না ভাই, এটা ফ্যাকাসে। আমি নিতে পারব না।”

রাফি আর কথা না বাড়িয়ে নোটটা ফেরত নিল। মনে মনে ভাবল, এই নোটটা যেন তার জীবনের পরীক্ষা। সে হারবে না।
বাড়ি ফিরে তানিয়া জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে? মুখটা এমন কেন?”
“কিছু না। একটু কাজ আছে।”
“কী কাজ? সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছ?”
“বলছি না, কাজ আছে।”
তানিয়া বুঝল, রাফি কিছু লুকোচ্ছে। কিন্তু আর জোর করল না। রাফি ভাত আর ডাল দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়ল। মনে মনে ঠিক করেছে, সেই বাস কন্ডাক্টরকে খুঁজে বের করবে। তাকে ধরে বলবে, “তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। এই নোট ফেরত নাও!”

হালিশহরের বাস স্টপে গিয়ে দাঁড়াল। একটা বাস, দুটো বাস, তিনটে বাস—কেউই সেই কন্ডাক্টর নয়। রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার মাথা ঝিমঝিম করছে। একজন চেনা লোক পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল, “রাফি ভাই, এই ভরদুপুরে এখানে কী?”
“এমনি। একটু কাজ আছে।”

লোকটা হেসে চলে গেল। রাফি ভাবল, সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? একটা একশো টাকার নোট নিয়ে এত দৌড়াদৌড়ি কেন? কিন্তু তার মনে হলো, এটা শুধু নোটের ব্যাপার নয়। এটা তার জীবনের লড়াই। সে সবসময় ঠকে, বাজারে, বাসে, এমনকি কাজের জায়গায়। এবার সে হারবে না।
কিন্তু সারাদিন খুঁজেও সেই কন্ডাক্টরকে পেল না। বিকেলে ক্লান্ত হয়ে বহদ্দারহাটের একটা গাছের নিচে বসে পড়ল। পকেট থেকে নোটটা বের করে দেখল। ফ্যাকাসে, মলিন, যেন তার জীবনের মতোই। সে ভাবল, এই নোটটা কেন তার জীবনে এত অশান্তি এনেছে? হঠাৎ তার মনে হলো, আসল শত্রু তো এই নোটটা নয়। শত্রু তার নিজের মন, যে সবসময় হারার ভয় পায়।
রাফি নোটটা হাতে নিয়ে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলল। ছেঁড়া টুকরোগুলো বাতাসে উড়ে গেল। যেন তার মনের ভারও উড়ে গেল। সে হালকা বোধ করল। বাড়ি ফিরে তানিয়ার কাছে সব খুলে বলল।

তানিয়া হেসে বলল, “তুমি না একটা পাগল! একটা নোটের জন্য এত কষ্ট!”
রাফি বলল, “জানো, এটা শুধু নোট ছিল না। আমার নিজের সঙ্গে লড়াই ছিল।”
তানিয়া তার হাত ধরে বলল, “তুমি যেমনই হও, আমার কাছে তুমি সবচেয়ে ভালো।”
সেদিন রাতে রাফি অনেকদিন পর শান্তিতে ঘুমাল। পরদিন সকালে জানালা দিয়ে দেখল, চট্টগ্রামের পাহাড়, গাছপালা, মানুষজন—সব যেন নতুন করে সুন্দর হয়ে উঠেছে। তার মনে হলো, জীবনটা আসলে এতটাই সহজ, যদি আমরা নিজেদের মনের বোঝা ফেলে দিতে পারি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের জীবন সহজও নয়, জটিলও নয়। জীবন জীবনের মতো। আমরা জীবনকে সহজ করি, জটিল করি।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৫

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ।
গল্পটি মনকে ছুঁয়ে গেল—ছোট্ট একশো টাকার নোট ঘিরে জীবনের গভীর এক মানসিক লড়াই অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন। বাস্তব, অনুভূতিপূর্ণ ও অনুপ্রেরণামূলক।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৩৮

কাঁউটাল বলেছেন: গল্প ভাল হয়েছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.