নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

আমিই সাইফুল

চলতে চলতে হবে পরিচয়.....

আমিই সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: শেষ রাতের সুর (পর্ব ২)

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫০

রাফি সাহেবের পড়ে যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল দ্রুত। সকালের মিষ্টি রোদ গাজীপুরের এই ছোট্ট গ্রামে যখন পড়ছে, তখনই কাজের লোক রহিমা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। সিঁড়ির নিচে রাফি সাহেব পড়ে আছেন, হাতে রিয়াদের সেই প্লাস্টিকের ঘোড়াটা শক্ত করে ধরা। রহিমা চিৎকার করে উঠল, “ও বুড়ো মানুষ, এ কী হইল!” পড়শিরা ছুটে এল। কেউ কেউ ফোন করল রাসেলকে, কেউ গ্রামের ডাক্তার হারুন সাহেবকে খবর দিল।

রাসেল ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে ছুটে এল। সকাল দশটার মধ্যে সে গ্রামে পৌঁছে গেল। বাড়ির সামনে ভিড়। রাফি সাহেবকে ততক্ষণে সিঁড়ি থেকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। হারুন সাহেব এসে দেখলেন, “স্ট্রোক হইছে মনে হয়। তবে বড় কিছু না। হাত-পা না নড়লে বুঝতাম বড় ক্ষতি। এখনও শ্বাস চলতেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।” রাসেলের বুকটা ধক করে উঠল। বাবাকে এভাবে দেখে তার চোখে জল এল। সে রিয়াদের ঘোড়াটা হাতে নিয়ে দেখল। মনে হলো, এটা কি সত্যিই খেলনা, না অন্য কিছু? কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নয়।

গ্রামের কয়েকজন যুবক মিলে রাফি সাহেবকে গাড়িতে তুলল। রাসেল গাড়ি চালিয়ে গাজীপুর শহরের কাছের একটা হাসপাতালে নিয়ে গেল। পথে তার মনে পড়ল তানিয়ার কথা। মা যখন মারা গেলেন, তখন বাবা কত শক্ত ছিলেন। ছেলেমেয়েদের জন্য নিজের দুঃখ লুকিয়ে রেখেছিলেন। এখন বাবার এই অবস্থা দেখে তার মনে হলো, সে কি বাবাকে যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছে? ঢাকায় ব্যস্ত জীবন, চাকরি, সংসার—সবকিছুর মাঝে বাবাকে একা ফেলে এসেছে।

হাসপাতালে পৌঁছে রাফি সাহেবকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলো। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলল, “মাইল্ড স্ট্রোক। তবে বয়সের কারণে শরীর দুর্বল। কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।” রাসেলের মাথায় হাত বুলিয়ে গেল। সে রুমাকে ফোন করল। “দিদি, বাবার অবস্থা ভালো না। তুই একবার আয়।” রুমা বরিশালে থাকে। শুনে সে বলল, “আমি আজই রওনা দিচ্ছি। রিয়াদের মা’কে খবর দে।” রাসেল রিয়াদের মা, তার বউ সানজিদাকে ফোন করল। সানজিদা বলল, “আমি রিয়াদকে নিয়ে আসছি। তুই বাবার পাশে থাক।”
বিকেলের দিকে রুমা এসে পড়ল। রাফি সাহেব তখনও অচেতন। রুমা বাবার হাত ধরে কাঁদতে লাগল। “বাবা, তুমি আমাদের ছাড়া থাকতে পারো না। আমরা কেন তোমাকে একা ফেলে চলে গেলাম?” রাসেল চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার মনে পড়ল, ছোটবেলায় বাবা তাদের কত আদর করতেন। গ্রামের মাঠে হাত ধরে ঘুরতে নিয়ে যেতেন। বর্ষায় পড়তে বসিয়ে গল্প শোনাতেন। তানিয়া মা রান্নাঘরে পড়ে থাকতেন—ভাত, ইলিশ মাছের ভর্তা, আর শুটকির চচ্চড়ি। সেই দিনগুলো এখন স্বপ্ন মনে হয়।

সন্ধ্যায় সানজিদা আর রিয়াদ এল। রিয়াদ দাদুকে দেখে ছুটে গেল। “দাদু, তুমি উঠো না! আমি তোমার সঙ্গে খেলব।” রাফি সাহেবের চোখে সামান্য নড়াচড়া হলো। রিয়াদের গলা শুনে যেন তিনি ফিরে আসতে চাইছেন। রাসেলের মনে হলো, বাবার জন্য রিয়াদই এখন সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ডাক্তার এসে বলল, “রোগীর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কাল সকালে হয়তো জ্ঞান ফিরবে।”
রাতে হাসপাতালের করিডরে রাসেল, রুমা আর সানজিদা বসে রইল। রিয়াদ মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ল। রাসেল বলল, “দিদি, আমরা বাবাকে আর একা রাখতে পারি না।” রুমা মাথা নাড়ল। “হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়। বরিশালে আমার সংসার ঠিক আছে। আমি বাবার কাছে থাকতে পারি।” সানজিদা বলল, “আমরাও মাঝে মাঝে আসব। রিয়াদের জন্যও দাদু দরকার।” রাসেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “আমি ঢাকায় ফ্ল্যাটটা বেচে গ্রামে ফিরে আসব। বাবার সঙ্গে থাকব।”

পরদিন সকালে রাফি সাহেবের জ্ঞান ফিরল। চোখ খুলে তিনি দেখলেন, রুমা, রাসেল আর রিয়াদ পাশে বসে আছে। দুর্বল গলায় বললেন, “তোরা এসেছিস?” রিয়াদ ছুটে গিয়ে দাদুর হাত ধরল। “দাদু, আমি তোমার কাছে থাকব। আর যাব না।” রাফি সাহেবের মুখে একটা হাসি ফুটল। তিনি রিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। “আমার ছোট আমি, তুই থাকলে আমি বাঁচব।”
কয়েকদিন পর রাফি সাহেবকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি আর আগের মতো একা নন। রুমা গ্রামে ফিরে এসেছে। রাসেল ঢাকার চাকরি ছেড়ে গ্রামে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছে। সানজিদা আর রিয়াদ প্রতি সপ্তাহে আসে। বাড়িটা আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে। রাফি সাহেবের শেষ রাতের সেই সুর আর শোনা যায় না। তিনি মনে করেন, হয়তো সেই গান তাঁকে সতর্ক করেছিল—একাকিত্বে নয়, পরিবারের মাঝে ফিরে আসার জন্য।

একদিন সকালে রাফি সাহেব জানালার পাশে বসে রিয়াদের সঙ্গে খেলছিলেন। রিয়াদ হঠাৎ বলল, “দাদু, তুমি যে রাতে পড়ে গিয়েছিলে, আমি স্বপ্নে দেখলাম তুমি আমাকে ডাকছ।” রাফি সাহেব চমকে উঠলেন। “তুই শুনেছিলি?” রিয়াদ হেসে বলল, “হ্যাঁ, তুমি বলছিলে—‘আমার ছোট আমি, আমাকে বাঁচা।’” রাফি সাহেবের চোখ ভিজে গেল। তিনি বুঝলেন, সেই শেষ রাতের সুর কোনো বিভ্রম ছিল না। সেটা ছিল তাঁর নিজের মনের ডাক—পরিবারের কাছে ফিরে আসার আহ্বান।

বাড়ির উঠোনে রুমা রান্না করছে—পড়শি এসেছে, তাই পোলাও আর মুরগির রোস্ট হচ্ছে। রাসেল গ্রামের বাজার থেকে ফিরল। সানজিদা রিয়াদকে পড়তে বসিয়েছে। রাফি সাহেব জানালায় বসে এই দৃশ্য দেখছেন। তাঁর মনে হলো, জীবন আবার পূর্ণতা পেয়েছে। সেই অন্ধকার থেকে অন্ধকারের যাত্রা আর নেই। এখন আছে আলো, হাসি, আর পরিবারের উষ্ণতা।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৩০

চেংগিস খান বলেছেন:



সামনের পাতায় আপনার ৫টি পোষ্ট; ৩ পোষ্টে ০ মন্তব্য; বাকী ২টি তে ২টি করে মন্তব্য। লোকজন পোষ্ট পড়ছে না; কিন্তু আপনি লিখেই চলেছেন!

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৪১

আমিই সাইফুল বলেছেন: আগের লেখা পোস্ট করছি। ব্লগে আসা হয় কম। সময় পেলাম তাই পোস্ট করলাম। মানুষের মন্তব্যের জন্য কি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত ? থাকুক না কিছু পোস্ট ভবিষ্যতের জন্য । সামু যদি টিকে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বাচ্চাকাচ্চারা এসে পড়বে।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৫

চেংগিস খান বলেছেন:



আজকের ব্লগারেরা যা পড়ছেন না, ভবিষ্যতের বাচ্চারা এসে এগুলো পড়বে? ভালো।

আপনি অন্যদের পোষ্টে শেষ মন্তব্য করেছেন ২০২১ সালে; আপনি কি রকম পাঠাক? আপনি নিজকে রাজনৈতিক কর্মী বলেন। কোন কিছু পড়েন না, ইহাই কি আপনাকে রাজনৈতিক কর্মীতে পরিণত করেছে?

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১

আমিই সাইফুল বলেছেন: হুদাই আজাইরা গ্যাজানো আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। সেটা নিশ্চয়ই আমার কমেন্টের হাল দেখেই বুঝতে পারছেন। লিখি! আর্কাইভ হিসেবে জমা থাকুক। ব্লগার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিলনা।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৪

চেংগিস খান বলেছেন:



ব্লগিং করা যদি হুদাই "গ্যাজানো" হয়, আপনার ভাবনাচিন্তাতে ভুল আছে। ব্লগিং মানে শুধু লেখা নয়, পড়াও উহার অংশ। কারো লেখা পড়লে, লেখা নিয়ে কিছু বলা "গ্যাজানো" নয়; ইহা আপনার ভুল ধরণা। লেখক হিসেবে আপনার বেসিক ধারণাও সঠিক বলে মনে হচ্ছে না।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০২

আমিই সাইফুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আমি ইন্ট্রোভার্ট মানুষ! আপনার সাথে জ্ঞানের পরিধি প্রমাণের তক্কে আমি যাবো না। আপনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন।

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৬

চেংগিস খান বলেছেন:


আপনি কি কোন রাজনৈতিক দলের, নাকি কোন রাজনৈতিক আইডিয়ার কর্মী?

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৩

আমিই সাইফুল বলেছেন: বিষয়টি জানা আপনার কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে বুঝলামনা।

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

চেংগিস খান বলেছেন:



আপনি কোন দেশে আছেন?

এখন ব্লগে থাকলে, মন্তব্যগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৫

আমিই সাইফুল বলেছেন: ইউরোপের একটা দেশে আছি। স্পেসিফিক কোন ব্যাক্তিগত তথ্য ব্লগে শেয়ার করতে চাচ্ছিনা।

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: @চেংগিস খান ঢাকার কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় ওয়াশিংটন Click This Link

৭| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪

চেংগিস খান বলেছেন:


লিংকটি আমি পড়বো না; আমি আমার সাধারণ জ্ঞান থেকে বলবো যে, আমেরিকা জানে যে, বাংলাদেশের হাতে সরকার চালানোর মতোও দরকারী ত হবিল নেই; ফলে, বাংলাদেশ কিছু কিনতে পারবে না। আমেরিকা হয়তো অপ্রয়োজনীয় কিছু ফেলে দেয়ার আগে বাংলাদেশকে দিতে চাচ্ছে।

৮| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

চেংগিস খান বলেছেন:


৭ নং মন্তব্যটি ব্লগার সৈয়দ কুতুব'এর জন্য।

৯| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

চেংগিস খান বলেছেন:



লেখক বলেছেন: ইউরোপের একটা দেশে আছি। স্পেসিফিক কোন ব্যাক্তিগত তথ্য ব্লগে শেয়ার করতে চাচ্ছিনা।

-কোন ব্লগার কোন দেশে আছেন, সেটা ব্যক্তিগত "তথ্য" নয়; আমি আমেরিকায় আছি; কেহ জানতে চাইলে, জানাতে হবে। অপরাধীরা নিজের অবস্হান জানাতে পারে না।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮

আমিই সাইফুল বলেছেন: কেন আমি জানাতে বাধ্য ? আর এটা কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ ? জানতে পারি?

১০| ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯

চেংগিস খান বলেছেন:



লেখক বলেছেন: কেন আমি জানাতে বাধ্য ? আর এটা কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ ? জানতে পারি?

-আপনি বাধ্য নন; মানুষ লেখকদের সম্পর্কে জানতে চান! আপনি লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী; আপনার সম্পর্কে তাই জানতে চাই।
আমরা জনকরুল ইসলাম, রবী বাবু সম্পর্কে অনেক কিছু জানি; আপনার সম্পর্কেও জানতে চাই।

১১| ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:০৩

জিকোব্লগ বলেছেন:



ঐ চেঙ্গু থুক্কু চেংগিস খান , তুমি যখন গেজাচ্ছ তোমার আসল নাম বলে দেও না কেন।
আসল নাম লুকিয়ে তোমার এতো নিক খাল লাগে কেন ?তোমার কথানুসারে , পরিচয়
গোপন করে , তুমিই তো সবচেয়ে বড় অপরাধী, ক্রিমিনাল। কি কি ক্রাইম করলা জীবনে,
ঐসব ও লেখে যেও।

এই নিক হারালে এরপরে তোমার দোস্ত যে ছেলে হয়ে তিনটা মেয়ে নিক খুলে ছিল ,
উহার পরামর্শ নিয়ে মেয়ে নিক খুলতে পারো। মেয়ে নিকে অনেকদিন টিকতে পারবা ।

১২| ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম পাতায় আমাদের একটু সুযোগ দেন।

২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪

আমিই সাইফুল বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.