নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৩ এপ্রিলের ভর দুপুরে যখন ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে নামলাম তখনো জানতামনা স্বপ্নের দেশটি এতটা সুন্দর হবে। ইমিগ্রেশ পার হয়ে যখন শহরের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠি তখনই আস্তে আস্তে ধরা দিতে থাকে স্রষ্টার অপরুপ সৌন্দর্য। মনে হতে লাগল এই ট্যুর টা মিস করলে লাইফে অনেক কিছুই মিস হয়ে যেত। কি নেই মালেয়শিয়ায়? সমুদ্র, পাহাড়, দ্বীপ, শপিং সেন্টার সবকিছুর সমাহার। যেন সৃষ্টি কর্তা নিজ হাতে সব সাজিয়ে রেখেছেন। আপনাদের সাথে আজ আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। চলুন জেনে নেয়া যাক কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, কিভাবে যাবেন, আর কত খরচ হতে পারে এসব টুকিটাকি।
• যাতায়াত:
মালেয়শিয়া ভ্রমন করতে চাইলে এখন পর্যন্ত একমাত্র উপায় হচ্ছে আকাশ পথ। ঢাকা থেকে মালেয়শিয়া রুটে এখন সার্ভিস দিচ্ছে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, বাংলাদেশ বিমান এবং মালেয়শিয়ান এয়ারলাইন্স। সার্ভিসের দিক থেকে মালেয়শিয়ান এয়ারলাইন্স সর্বোত্তম মনে করি আমি। কিন্তু টিকেটের দামের কথা চিন্তা করে আপনি অন্যান্য এয়ারলাইন্স গুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
সাধারণত রিটার্ন টিকেট পাবেন আপনি বিশ থেকে বাইশ হাজার টাকায় কিন্তু সময় এবং এয়ার লাইন্স ভেদে টিকেটের দাম কম বেশি হতে পারে। যেমনঃ আমি বাংলাদেশ বিমানে টিকেট পেয়েছিলাম মাত্র ১৬ হাজার টাকায়। রেগুলার টিকেটের দাম চেক করতে পারেন cheapflights.com এ।
• কোথায় থাকবেন:
পর্যটকের শহর কুয়ালালামপুরে আপনি যদি আসার পরে হোটেল খোজার চিন্তা তাহলে আপনি অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। যেমনঃ ইমিগ্রেশনে আপনাকে জানাতে হবে আপনি কোথায় থাকবেন? সদুত্তর উত্তর না দিতে পারলে হয়ত দেশেই ব্যাক করা লাগতে পারে। আবার আপনি আশার পর ট্যাক্সি ওয়ালাকে বলতে পারবেননা যে কোন হোটেলের সামনে নিয়ে যাও তাহলে সে কোথায় নিবে দাম কত হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে আসুন; ফ্রীতে হোটেল বুকিং দিতে booking.com ব্যাবহার করতে পারেন।অসংখ্য নামি দামি হোটেলের মধ্যে টাইম স্কয়ার, পার্ক রয়্যাল, ফেডারেল ইন্টারন্যাশনাল এগুলো পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এগুলোতে থাকতে হলে আপনাকে প্রতি রাতে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে প্রতিদিন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই; ব্যাকপেকার্স গুলোতে মাত্র ৪০ রিংগিতে থাকতে পারবেন একরাত। ডাবল বেড রুম পাখা/এসি সব মিলিয়ে খারাপ না। আপনি চাইলে একহাজার রিঙ্গিতেও এক রাত কাটাতে পারেন। আপনার চাহিদামত বুকিং ডট কমে ফিল্টারিং করে রুম বুকিং দিয়ে দিতে পারেন। আমার মতে; দামি হোটেলে না থেকে ঘুরা আর শপিং এ টাকা খরচ করাই উত্তম।
• কোথায় খাবেন:
আপনি যদি কুয়ালালামপুর সিটিতে থাকেন তাহলে আপনাকে খাবার খুজে পাওয়া নিয়ে মোটেই চিন্তা করতে হবেনা। কারন, কুয়ালালামপুর শহরে আপনি পাঁচ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন অনেক বাংলাদেশি খাবারের হোটেল। তবে কুয়ালালামপুরে আপনি পেতে পারেন সব ধরনের খাবারের স্বাদ। যদি চাইনিজ খাবারের স্বাদ নিতে চান; চলে যান চায়না টাউনে। ওখানে আপনি সব ধরনের চাইনিজ ফুড পাবেন আর হালকা শপিং ও করে নিতে পারবেন আশপাশ থেকে। এছাড়াও একটু খুজলেই পেয়ে যাবেন ইন্ডিয়ান, থাই, পাকিস্তানি খাবারের দোকান। খাবারের জন্য আপনার খুব বেশি টাকা খরচ করতে হবেনা; মাত্র ২০ রিংগিতেই পেটভরে খেতে পারবেন বাংলাদেশি রেস্তোরা গুলুতে। তবে মালেয়শিয়ার স্থানীয় খাবারের স্বাদ পেতে পারেন সকালের নাস্তায়; মাত্র ২ রিংগিতে চানারুটি দিয়ে হতে পারে আপনার দিনের শুরু।
• কোথায় ঘুরবেন:
মালেয়শিয়া এমন একটা দেশ যেখানে আপনি যতই ঘুরুননা কেন বেলা শেষে মনে হবে ইশ! যদি আরো কিছু যায়গা ঘুরা যেত। কি নেই এখানে? আপনি পাহাড়ের কোল ধরে কোন জঙ্গলে হারিয়ে যেতে চান সেটা যেমন পারবেন; আবার যদি চান সমুদ্রে হারিয়ে যেতে সেটাও সম্ভব।
মালয়েশিয়ায় আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আমি নিচে কুয়ালামপুর শহরের দর্শনীয় স্থানের কথা উল্লেখ করছি। যেগুলো মিস করলে হয়ত ট্যুর শেষে আপনার আফসুসটা রয়ে যাবেঃ
১। পেট্রোনাস টাওয়ারঃ এটি টুইন টাওয়ার নামেও পরিচিত; শহরের একদম প্রান কেন্দ্রের এই বিল্ডিংটি ঘিরে সবসময়ই লেগে থাকে ট্যুরিস্টদের জট। এখানে আছে অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের শো-রুম। ঘুরার সাথে এখান থেকে কিনে নিতে পারেন প্রিয় জনের জন্য গিফট।
২। বুকিট বিনটেজঃ শপিং করার জন্য এই স্থানটি হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে পছন্দের। কুয়ালালামপুর শহরের মধ্যেই এই দৃষ্টিনন্দন এই স্থানটি নিয়ে আসতে পারে আপনার ট্যুরে অন্যরকম এক স্বাদ।
৩। কুয়ালালামপুর বার্ড পার্কঃ পাখিদের সাথে খেলা আর স্মৃতির পাতায় ট্যুরটাকে আটকে রাখতে আপনি চলে যেতে পারেন এই পার্কটিতে। কুয়ালালামপুর শহরেই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্কটি। প্রিয়জনের সময়টাকে শ্রেষ্ঠ করে তুলতে তাকে এখানে ঘুরিয়ে আনতে পারেন।
৪। কুয়ালামপুর টাওয়ারঃ কানাডার সিএন টাওয়ার কিংবা নিউজিল্যান্ডের স্কাইটাওয়ারের স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন এই টাওয়ারটি থেকে। কুয়ালালামপুর শহরের এই জায়গাটি মিস করলে আপনার ট্যুর পূর্নতা পাবেনা।
৫। অ্যাকুরিয়া কুয়ালামপুরঃ সাগরে ডুবন্ত অবস্থায় হাটার স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন এখান থেকেই। প্রিয়জনের হাত ধরে নীল পানির নিচে হাটাটা আপনার ট্যুরকে করে তুলবে আরো এডভেঞ্জার ময়।
৬। বাটু ক্যাবসঃ শহর থেকে ট্রেন ধরে সোজা চলে যান এই স্থানটিতে। সাউথ ইন্ডিয়ানদের অভয়ারণ্য এই স্থানটি দিতে পারে আপনাকে ভৌতিক এডভেঞ্চার। ২৭০ টি সিড়ি বেয়ে দেখে আসতে পারেন ঐতিহ্যবাহী গুহা আর মন্দির। আর অজগর গলায় নিয়ে ছবি তুলতে ভুলবেননা যেন।
এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন চেন সি সো ইয়েন হাউস,মেনারা অলিম্পিয়া,ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি,পুত্রজায়া ব্রীজ,রয়্যাল প্যালেস,এগ্রিকালচারাল পার্ক,ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন,অর্কিড পার্ক প্রভৃতি জায়গা। এছাড়া দেখতে পারেন মালেশিয় সংস্কৃতি,হস্তশিল্পের নানা নিদর্শন। এছাড়াও রয়েছে কর্মাশিয়াল সেন্টার,ইন্ডিপেণ্ডেন্ট স্কোয়ার,কিংস প্যালেস,ন্যাশনাল মিউজিয়াম,ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম,হাউস অব পালার্মেন্ট।
মালয়েশিয়া গিয়ে লাঙ্কাউইতে যদি না যান তবে আপনার মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যাওয়াটাই বৃথা। লাঙ্কাউইতে বিনোদনের সবকিছুই আপনি পাবেন কেবল কার, ঝরনা, সমুদ্রের নিচ দিয়ে রাস্তা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আরও অনেক কিছু। লাঙ্কাউই যাত্রা পথে অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে রাস্তার ধারে অসংখ্য পাম ট্রি দেখে।
এছাড়াও মালয়েশিয়া দেখতে যেতে পারবেন গেন্টিং হাইল্যান্ড, ,ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, দ্বীপ মাবুল, পেনাং আরও অনেক কিছু।
©somewhere in net ltd.