নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কানাডার ফেডারেল কোর্টের সাম্প্রতিক (জুন ১৫, ২০২৩) একটি রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন: 'বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয় বলে কানাডার আদালত রায় দিয়েছে।' [যুগান্তর, আগস্ট, ২০২৩] অপরদিকে, কালের কণ্ঠ পত্রিকা বলছে: 'বিএনপিকে আবারও সন্ত্রাসী সংগঠন বললেন কানাডার আদালত।' [কালের কণ্ঠ, ৩১ জুলাই ২০২৩] স্পষ্টতঃ, দাবিগুলো স্ববিরোধী। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং বাংলা ব্লগেও এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কানাডার আদালত কি আদপেই বিএনপিকে টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন বা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে রায় দিয়েছে?
লেখাটির শুরুতেই আমার সম্পর্কে দুচারটি কথা বললে আমার এ লেখায় আগ্রহী হবার কারন বুঝতে সুবিধা হবে। আমি দুদশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছি। জীবনের কোন পর্যায়ে কোনপ্রকার রাজনৈতিক দলে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, বা আজও নেই। তবে, একজন সচেতন/দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী, তথা, কানাডার লাইসেন্সধারী একজন ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কানাডার ইমিগ্রেশন এক্ট ও রেগুলেশন নিয়ে নিয়মিত কাজ করি বলে কানাডার আদালতে চলমান মামলা নিয়ে আমার আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। সে আগ্রহ থেকেই উপরের বিষয়ে দেশবাসীকে একটি নির্মোহ আলোচনা উপহার দেবার প্রয়াস পেয়েছি। এটি কোনভাবেই কোন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি আমার আস্থা বা অনাস্থা বুঝায় না। ভবিষ্যতে অন্য কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কানাডার আদালতের কোন পর্যবেক্ষণ থাকলে তাও একইভাবে তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে আমার।
এ নিবন্ধ কানাডার ফেডারেল কোর্টের একটি জুডিশিয়াল রিভিউ মামলা 'Haque v. Canada' এর পর্যালোচনা ও রায়ের উপর ভিত্তি করে নির্মোহভাবে প্রণীত। এ মামলার আগে ঘটে যাওয়া অপর কিছু মামলায় বিএনপির কর্মীদের নিয়ে কানাডার আদালত এর পর্যবেক্ষণ বা রায়গুলো অন্তর্ভুক্ত করলে এ লেখা অতি দীর্ঘ হবে বিধায় কেবলমাত্র উপরে বর্ণিত 'হক ব. কানাডা'-তেই আলোচনার বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ থাকবে।
জনাব হকের পুরোনাম, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় 'হক ব. কানাডা' মামলাটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে আলোচিত হবার কারণ হলো, দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নাম এ মামলায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করলে যে কারো ধারণা জন্মাতে পারে, জনাব হক রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতেই কানাডায় গিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও প্রকৃত অর্থে তাঁর কানাডায় প্রবেশের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তিনি গিয়েছিলেন পড়াশোনা করতে।
২০১৩ সালের আগস্ট মাসে জনাব হক কানাডায় ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে স্টাডি পারমিট (স্টুডেন্ট ভিসা) গ্রহণ করে সেদেশে প্রবেশ করেন, এবং যথানিয়মে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। কানাডায় বছরে ৮ হতে ৯ লক্ষ বিদেশী ছাত্রছাত্রী এভাবেই পড়াশোনা করতে আসেন যাঁদের প্রায় সবারই পরিকল্পনা থাকে লেখাপড়া পরবর্তী কানাডায় স্থায়ী অভিবাসনের সুযোগ গ্রহণ। কানাডায় প্রবেশের প্রায় দুবছর পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হক বাংলাদেশে বেড়াতে যান। দুমাস পর, অর্থাৎ ২০১৫ সালের নভেম্বরে তিনি কানাডায় পুনঃপ্রবেশ করেন। এ সময়কাল পর্যন্ত তিনি নিজেকে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয় দেননি, বা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ও প্রার্থনা করেননি।
পরের বছর, অর্থাৎ, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কানাডার ইমিগ্রেশন এক্ট-এর ধারা অনুসারে সিবিএসএ (কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি) স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের সময় ভুয়া একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট/সনদ ব্যবহারের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কানাডার ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি) বরাবরে ইনএডমিজিবিলিটি (অপ্রবেশযোগ্যতা)'র অভিযোগ/রিপোর্ট করেন, এবং একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কানাডায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। উল্লেখ্য, কানাডার সিটিজেন বা নাগরিক (পাসপোর্টধারী) নন এমন কোন ব্যক্তিকে কানাডায় অপ্রবেশযোগ্য বা ইনএডমিজিবল সাব্যস্ত করা হলে তাঁকে হয় কানাডায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না, বা এমন ব্যক্তি ইতিমধ্যেই কানাডায় প্রবেশ করে থাকলে তাঁকে কানাডা হতে বহিস্কার করা হয়। কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট (পিআর)-বৃন্দও এই নিয়মের আওতায় পড়েন, কেননা পিআর-বৃন্দ স্থায়ী অভিবাসী হলেও কানাডার পাসপোর্টধারী নন। ইনএডমিজিবিলিটির অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত প্রদান করে আইডি।
এ অবস্থায় তিনি বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়ান। অবশেষে অবস্থা বেগতিক দেখে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে কানাডায় রিফিউজি আবেদন দাখিল করার উদ্যোগ নিলে সে সুযোগ না দিয়ে সিবিএসএ তাঁকে গ্রেফতার করে। ছাড়া পেয়ে একই মাসে কানাডায় রিফিউজি আবেদন/ক্লেইম করে কানাডা সরকারের কাছে প্রটেকশন বা সুরক্ষা চান। কানাডার লাইসেন্সধারী একজন অভিবাসন পরামর্শক (আরসিআইসি-আইআরবি) হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা হতে বলছি, পড়াশোনায় সফল হতে না পেরে অবশেষে কানাডায় রিফিউজি স্ট্যাটাসের জন্য আবেদন দাখিল ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এটি নতুন ঘটনা নয়। দুদিন আগেও আরেক বাংলাদেশী ছাত্র এ ধরণের একটি আবেদন প্রসেসিংয়ের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন।
জনাব হক নিজেকে একজন সক্রিয় বিএনপি সদস্য দাবি করেন এবং দেশে ফিরে গেলে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের কর্মীদের হাতে নিপীড়িত হবার ভয়কে [fear of persecution] রিফিউজি আবেদন দাখিলের কারন হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিএসএ কর্তৃক দায়েরকৃত রিপোর্টের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি) প্রয়োজনীয় শুনানি/হিয়ারিং সম্পন্ন করে ২০২২ সালের জুন মাসে তাঁকে কানাডায় ইনএডমিজিবল (অপ্রবেশযোগ্য) সাব্যস্ত করেন এবং কানাডার ইমিগ্রেশন এক্ট ও রেগুলেশনের সংশ্লিষ্ট ধারানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার জারি করেন। উল্লেখ্য, কানাডার সবচেয়ে বড়ো এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, আইআরবি (ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি বোর্ড), এর একটি শাখা প্রতিষ্ঠান আইডি। আইআরবি কোন কোর্ট বা আদালত নয়, তবে একটি শক্তিশালী এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল।
এ লেখার প্রয়োজনে অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি 'ফ্যাক্ট-ওয়াচ' এর ওয়েবসাইটে পরিবেশিত তথ্যও বিবেচনা করে দেখেছি। সেখানে লেখা হয়েছে: 'কানাডার ফেডারেল কোর্ট এর ওয়েবসাইট থেকে Haque v. Canada শীর্ষক মামলার রায় সংগ্রহ করে দেখা গেল, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামক বিএনপি’র এক কর্মী কানাডার নাগরিকত্বের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই রায় দেয়া হচ্ছে। এখানে, জনাব হক এর সাথে বিএনপি’র সংশ্লিষ্টতার কারণে তার আবেদন নাকচ করা হয়েছে।' - ফ্যাক্ট-ওয়াচ'এর এ বক্তব্যও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, জনাব হক প্রকৃত অর্থে কানাডায় নাগরিকত্বের আবেদন দাখিল করেননি; তিনি করেছিলেন রিফিউজি প্রটেকশনের আবেদন যা যথাযথ কর্তৃপক্ষ (রিফিউজি প্রটেকশন ডিভিশন, আরপিডি) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। এই আবেদন দাখিলের আগেই তিনি ভুয়া সনদ ব্যবহারের কারণে সিবিএসএ অফিসারের হাতে ধরা পরে ইনএডমিজিবিলিটির অভিযোগ তদন্তের মুখোমুখি হন। এ অবস্থায়, কানাডার আদালত জনাব হকের নাগরিকত্বের আবেদন নাকচ বা বিবেচনা করার প্রশ্নই আসে না।
উল্লেখ্য, কোন আবেদনকারী যখন রিফিউজি প্রটেকশনের আবেদন করেন তখন কানাডার সিবিএসএ অফিসার প্রাথমিক যাঁচাই করে দেখেন সে আবেদন আদৌ আরপিডি বরাবরে রেফার করার বা পাঠানোর উপযুক্ত কিনা। ইতিপূর্বে স্টাডি পারমিট আবেদনে ভুয়া সনদ/ট্রান্সক্রিপ্ট ব্যবহার করায় জনাব হক কানাডায় অপ্রবেশযোগ্য (ইনএডমিজিবল) কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য সিবিএসএ অফিসার তাঁকে আরপিডি-তে রেফার না করে ইমিগ্রেশন ডিভিশন (আইডি)-তে রেফার করেছেন। বিস্তারিত শুনানির পর আইডি তাঁকে ইনএডমিজিবল ঘোষণা করলে তিনি তা চ্যালেঞ্জ করেন কানাডা ফেডারেল কোর্টে। ফেডারেল কোর্ট জুডিশিয়াল রিভিউ সম্পন্ন করে আইডি'র সিদ্ধান্ত কনফার্ম বা নিশ্চিত করেন। অর্থাৎ, জনাব হকের রিফিউজি প্রটেকশনের আবেদনটি শুনানির জন্য আরপিডি বরাবরে উপস্থাপিতই হয়নি; তার আগেই তিনি কানাডায় ইনএডমিজিবল সাব্যস্ত হন। সিবিএসএ জনাব হককে রিফিউজি আবেদনের জন্য প্রাথমিকভাবে উপযুক্ত মনে করলে তাঁর কেইস রিফিউজি প্রটেকশন ডিভিশন (আরপিডি)-তে পাঠানো হতো, আইডি'তে নয়। অর্থাৎ, জনাব হক ইনএডমিজিবিলিটি অভিযোগের কারণে রিফিউজি আবেদনের শুরুতেই অসফল হয়েছেন।
জনাব হকের ইনএডমিজিবিলিটি পরখ করতে গিয়ে আইডি সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে তাঁকে ডিপোর্টেশন অর্ডার দেন, অর্থাৎ কানাডা হতে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে রিফিউজি আবেদন দাখিলের উদ্যোগ নেয়ায় বিএনপি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও আইডির বিবেচনায় আসে। আইডির বিবেচনায় বিএনপি এমন একটি 'অর্গানাইজেশন' যার কর্মকান্ড কানাডার ইমিগ্রেশন এক্ট-এর ৩৪(১)(এফ) ধারায় পড়ে, এবং জনাব হক সেই 'অর্গানাইজেশন'-এর একজন সদস্য। একইসাথে আইডি এও স্বীকার করে যে, ইমিগ্রেশন এক্ট-এর ৩৪(১)(এফ) এবং (সি) ধারার অধীনে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জনাব হক জড়িত নন। কানাডার ইমিগ্রেশন এক্ট (IRPA) -এর ৩৪(১)(এফ) ও (সি) ধারায় নিম্নরূপ বর্ণিত আছে:
34 (1) A permanent resident or a foreign national is inadmissible on security grounds for
(a) engaging in an act of espionage that is against Canada or that is contrary to Canada’s interests;
(b) engaging in or instigating the subversion by force of any government;
(b.1) engaging in an act of subversion against a democratic government, institution or process as they are understood in Canada;
(c) engaging in terrorism; ... or,
(f) being a member of an organization that there are reasonable grounds to believe engages, has engaged or will engage in acts
referred to in paragraph (a), (b), (b.1) or (c).
জনাব হকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি (espionage ) বা, সন্ত্রাসবাদ (terrorism) এর অভিযোগ না থাকায় তাঁকে মূলত ইমিগ্রেশন এক্ট-এর ৩৪(১)(বি) ও (বি.১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আইডির ভাষ্যমতে, বিএনপির সক্রিয় সদস্য হিসেবে জনাব হক বাংলাদেশে জোরপূর্বক সরকার পরিবর্তনের কর্মকান্ডে, বা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন। আবারো বলছি, আইডি আদালত নয়, এটি কানাডার সবচেয়ে বড়ো এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল আইআরবি'র একটি অঙ্গ সংগঠন।
আইডি'র সিদ্ধান্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় নেয়া হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা (জুডিশিয়াল রিভিউ) করার জন্য আবেদনকারী, জনাব হক, কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। উক্ত রিভিউ রায় দলিলের শুরুতেই রিভিউ আবেদনের কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে এভাবে: [1] In this application for judicial review, the applicant asks the Court to set aside an inadmissibility decision of the Immigration Division of the Immigration and Refugee Board of Canada (the “ID”) dated June 10, 2022. অর্থাৎ, এ জুডিশিয়াল রিভিউর বিবেচ্য হলো, জনাব হককে কানাডায় ইনএডমিজিবল (অপ্রবেশযোগ্য) ঘোষণা দেবার যে সিদ্ধান্ত আইডি দিয়েছে তার যথার্থতা যাচাই করা; বাংলাদেশের বিএনপি বা অন্য কোন দল সন্ত্রাসী দল কিনা তা খতিয়ে দেখা বা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া নয়।
এ বছরের (২০২৩) জুন মাসের ১৫ তারিখে কানাডার ফেডারেল কোর্টে আইডির সিদ্ধান্তের জুডিশিয়াল রিভিউ অনুষ্ঠিত হয়। জুডিশিয়াল রিভিউ কোন ঘটনার পুনর্বিচার নয়, বরং, আইডি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা যথাযথ আইনি বিবেচনায়/প্রক্রিয়ায় নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়টিই জুডিশিয়াল রিভিউতে খতিয়ে দেখা হয়। এ অর্থে বলা চলে, জুডিশিয়াল রিভিউর মাধ্যমে ফেডারেল কোর্ট অভিযোগের পুনর্বিচার করে নতুন কোন রায় দেননি, বরং, জনাব হকের এডমিজিবিলিটি বিষয়ে ইমিগ্রেশন ডিভিশনের (আইডি) সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখেছেন কেবল।
ফেডারেল কোর্টের জাজমেন্টের ডকুমেন্টটি দীর্ঘ। এটিতে আশিটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এ দীর্ঘ ডকুমেন্টের খুঁটিনাটি আলোচনা করলে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে। তাই, মামলার কিছু চুম্বকাংশ নিয়ে এ লেখায় সংক্ষেপে আলোচনা করবো যাতে কানাডার ফেডারেল কোর্ট প্রকৃত অর্থে বিএনপি সন্ত্রাসী দল বলে রায় দিয়েছেন কিনা তা আরো পরিষ্কার বুঝা যায়।
ফেডারেল কোর্টের রিভিউ দলিলে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ হতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষনের জন্য বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত নেয় যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হবার পর ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করেনি। আইডিতে শুনানির সময় সরকারপক্ষ দাবি করে, ২০১৩ হতে ২০১৫ সালে বিএনপি জোরপূর্বক আওয়ামীলীগের সরকার পতনের উদ্দেশ্যে সহিংস হরতাল ডাকে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, এবং জনাব হক ছিলেন সে সময়ের বিএনপির একজন সদস্য। অপরদিকে, জনাব হকের পক্ষ হতে দাবি করা হয়, বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন দাবি করেনি, দলটি চেয়েছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃ প্রবর্তন, যা দুদলই অনুসরণ করতে সম্মত হয়েছিল বহুবছর আগে।
রিভিউ দলিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: '... The ID found reasonable grounds to believe the BNP was an organization that had engaged in or instigated the subversion by force of the Awami League government in Bangladesh. The ID did not find reasonable grounds to believe that the BNP was an organization that had engaged in terrorism.' এটি আইডির পর্যবেক্ষণ, ফেডারেল কোর্টের রায় নয়।
অপরদিকে জনাব হকের পক্ষে বলা হয়েছে, 'The applicant argued that the ID made a reviewable error by failing to analyze an unchallenged expert report bearing on whether the BNP intended to overthrow a government, an element in the definition of “subversion by force”.' অর্থাৎ, বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি যথাযথভাবে পর্যালোচনা না করে আইডি পুনর্বিবেচনাযোগ্য ভুলত্রুটি করেছেন বলে হক দাবি করেন।
ফেডারেল কোর্টের সম্মানিত বিচারক, Andrew D. Little, আবেদনকারী (হক) ও আইডির প্রতিনিধির বিস্তারিত বক্তব্য শুনে সার্বিক বিবেচনায় জনাব হকের দায়ের করা জুডিশিয়াল রিভিউ-এর আবেদনটি খারিজ করে দেন। অর্থাৎ, এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, আইডি, জনাব হকের ইনএডমিজিবিলিটি বা অপ্রবেশযোগ্যতা বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল তা ফেডারেল কোর্টের বিচারক বহাল রাখেন। বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা সে বিষয়টি রিভিউ আবেদনের বিচার্য ছিল না বিধায় কানাডার বিজ্ঞ ফেডারেল কোর্ট রায়ের conclusion বা উপসংহারেও সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। আলোচ্য রিভিউ মামলাটির শুরু এবং শেষ (উপসংহার) পড়লেই আমার এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। অনুসন্ধিৎসু পাঠকের সুবিধার্থে কানাডার ফেডারেল কোর্টের রেফারেন্স মামলাটির তথ্য নিচে দেয়া হলো। গুগলে সার্চ করলে সার্বিক বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যাবে। তবে, লিগেল ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলে বিষয়টি যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। রেফারেন্স: Haque v. Canada (Public Safety and Emergency Preparedness), 2023 FC 847
ML Gani, RCIC-IRB
Canadian Immigration Consultant
[email protected]
০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:২৪
এমএলজি বলেছেন: মনে হচ্ছে লেখাটি না পড়েই আপনি ভিন্ন সোর্স হতে কিছু তথ্য কাট এন্ড পেস্ট করে মন্তব্য লিখেছেন।
দয়া করে লেখাটি আগে পড়ুন। পড়লে বুঝবেন ফেডারেল কোর্টের বিবেচ্য আসলে কি ছিল।
ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ ভোর ৫:৩৩
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার লেখাটাকে রেকর্ড করে লোড করেন, শুনতে চাই কি লিখেছেন।
০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:০৭
এমএলজি বলেছেন: সুন্দর পরামর্শ। তবে, আপনিওতো চাইলে এ কাজটি করে কমেন্টে দিতে পারেন।
৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৮
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: জ্ঞানপাপীরা তো ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে; বলছে যে, বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিবেবে চিহ্নিত করেছে কানাডা।
৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমার কিছু বলার নাই।
৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৩
এমএলজি বলেছেন: ঢাকাপোস্ট লেখাটি ছেপেছে: https://www.dhakapost.com/opinion/236012
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:৪৩
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
২০১৭ সালে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। সে আবেদন বিশ্বাসযগ্য করতে কয়েকটি মামলার এজাহার আবেদনে যুক্ত করেছিল, সেগুলো ছিল বোমা হামলা আগুন সন্ত্রাস ইত্যাদি। এসব দেখে তার এই আবেদন নাকচ হওয়ার সময় কানাডার ফেডারেল কোর্টে রিভিউর আবেদনে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা হয়েছিল।
এর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আরেকজন বিএনপির কর্মী মো. মোস্তফা কামাল নামে আরেক ব্যক্তি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে দ্বিতীয় দফায় বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
একই বছরের অক্টোবরে মাসুদ রানার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন একই কারন দেখিয়ে নাকচ করা হয়।
এরপর ২০২২ সালে ছাত্রদল কর্মী সেলিম বাদশার অভিবাসন নাকচ করার সময়ও বিএনপিকে স্পষ্ট ভাবেই সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করেন কানাডার আদালত।
সর্বশেষ এইবার ১৫ জুন মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামে চিহ্নিত পলাতক এক বিএনপিকর্মী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে তা পুর্ববর্তি উচ্চআদালতের রায়ের আলোকে তথা 'বিএনপিকে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কারন দেখিয়ে জিপসেদ ইবনে হক নামের একজন বিএনপি কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেন দেশটির ফেডারেল কোর্ট।