নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
https://www.dhakapost.com/opinion/173452
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের মৃত্যু রহস্য এআই (AI) ব্যবহার করে র্যাব বের করতে পেরেছে। সেই থেকে এআই বিষয়ের উপর সাধারণ মানুষের আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়।
সাম্প্রতিককালে সামাজিক আড্ডায় অনেকেরই মুখে মুখে প্রশ্ন, এআই-এর কি এমন বিশেষ ক্ষমতা আছে যা দিয়ে জটিল মৃত্যুর রহস্য বের করতে সক্ষম হলো র্যাব? বাস্তবতা হলো, অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও পরিষ্কার বোঝেন না এআই আসলে কী?
কিছুদিন আগেও ফারদিন হত্যার বিচার চেয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল, ব্যাহত হয়েছিল বুয়েটের পাঠদান ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। অবশেষে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে জনা বিশেক শিক্ষার্থীদের র্যাব ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তাদের সদর দফতরে। উদ্দেশ্য, তাদের বুঝিয়ে দেওয়া কীভাবে এআই ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া গেল যে ফারদিনকে কেউ মারেনি, বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।
র্যাবের সাথে সাক্ষাতের পর ছোটখাটো কিছু বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করলেও বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওই দল শেষতক মেনে নিয়েছে ফারদিনের আত্মহত্যার গল্প। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই দলটি পুলিশ তথা র্যাবের সাথে ঐকমত্য পোষণ করায় স্বাভাবিকভাবেই বুয়েট-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে গেছে এবং সেই সাথে, দেশের তাবৎ মানুষও এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফারদিন যে আত্মহত্যা করেছে তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণযোগ্য সত্য যদিও ফারদিনের বাবা তা মানতে নারাজ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তরুণ ফারদিনকে হারিয়ে তার বাবা মানসিক ভারসাম্য হারানোর দ্বারপ্রান্তে বলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়। ওদিকে, বুয়েট-শিক্ষার্থীদের র্যাবের সাথে একমত পোষণ করা প্রসঙ্গেও অনেকে বলছেন, ‘এলিট বাহিনী র্যাব যা বুঝাতে চাইছে তা না বোঝার সাধ্য দেশে কারো আছে কি?'
এই বিষয়ে আমার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে যারা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তারা সবাই আত্মহত্যার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই মতামত দিয়েছেন। অর্থাৎ, তারা মনে করেন ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার।
বুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল ফেসবুক গ্ৰুপ আছে যা পরিচালনা করেন স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে পরিচিত কিছু বুয়েটিয়ান। সেখানেও একই স্ট্যাটাস দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সেই গ্রুপেও কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি তা বিশ্বাস করেন।
আমার ফেসবুক ওয়ালে যারা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাদের বক্তব্যও অভিন্ন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, র্যাব এআই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে যে 'সত্য' আবিষ্কার করলো প্রকৃতপক্ষে তেমন জটিল সত্য উন্মোচনে সক্ষম কি না?
শুরুতেই বুঝার চেষ্টা করি 'এআই' আসলে কী?
এআই হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোনো বিশেষ কম্পিউটার, রোবট বা সফটওয়্যার মানুষের মস্তিষ্কের অনুরূপ চিন্তাভাবনা করা ও সেই চিন্তা প্রয়োগের সক্ষমতা প্রদান করা যায়। এআই-এর যে বিশেষ ক্ষমতাগুলো রয়েছে তা হলো, দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে বিপুল পরিমাণ ডাটা বা উপাত্ত প্রসেস বা প্রক্রিয়া করা, সেই ডাটা ব্যবহার করে নিজেকে ট্রেন্ড বা প্রশিক্ষিত করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশেষ ধরনের কাজ করা, জটিল তথ্য বিশ্লেষণ এবং তথ্যের প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যদ্বাণী করা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা।
এআই পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকাশ, উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান, যানবাহনের উন্নতি ঘটিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা আরও দক্ষ ও নিরাপদ করা, শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষা বিপ্লব ঘটানো, শিল্পোৎপাদনে যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটিয়ে নতুন নতুন শিল্প তৈরি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকাণ্ডে বৈপ্লবিক অগ্রগতি কেবল সময়ের ব্যাপার।
এআই-এর মূল উপাদান দুটি। ডাটা বা উপাত্ত এবং কোডিং (প্রোগ্রামিং)। নিজেদের বুদ্ধিমান বা প্রশিক্ষিত করার জন্য এআই সিস্টেমগুলো ডাটার উপর নির্ভর করে এবং তারা যে ডাটাতে প্রশিক্ষিত হয় সেই ডাটার গুণমান তাদের কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করে। ডাটা পক্ষপাতদুষ্ট, নিম্নমানের বা অসম্পূর্ণ হলে এআই সিস্টেমও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে, যার প্রভাব পড়ে এআই সিস্টেমের কর্মদক্ষতার উপর।
সহজ ভাষায় বলা চলে, এআই সিস্টেমগুলো কেবলমাত্র সেই ডাটার মতোই নির্ভরযোগ্য হতে পারে যা দিয়ে তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়; ডাটা পক্ষপাতদুষ্ট বা ভুল হলে এআই সিস্টেম-এর কাজও পক্ষপাতদুষ্ট বা ত্রুটিপূর্ণ হতে বাধ্য। এছাড়া যিনি বা যারা এসব ডাটা ব্যবহারের জন্য কোডিং বা প্রোগ্রামিং করছেন তাদের ভুলত্রুটিও এআই সিস্টেমকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এবার বুঝুন অপার সম্ভাবনাময় ও ক্ষমতাশালী এআই প্রযুক্তি চোখ বুজে সঠিক বা সত্য বলে মেনে নেওয়া কতখানি যৌক্তিক।
এআই-এর একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, অনেক এআই সিস্টেম ‘ব্ল্যাক বক্স’ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কাজ করে যা মানুষের পক্ষে বোঝা বা ব্যাখ্যা করা কঠিন। ব্ল্যাক বক্স অ্যালগরিদম হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যবহারকারী অ্যালগরিদমের ভেতরের কাজের ধাপগুলো দেখতে বা জানতে পারেন না। ফলে, এআই কীভাবে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা ভবিষ্যদ্বাণীতে পৌঁছে তা ব্যাখ্যা করাও সহজ নয়।
এছাড়া, এআই সিস্টেমগুলো অন্য যেকোনো কম্পিউটার সিস্টেমের মতোই সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারে, যা তাদের কার্যকারিতা (effectiveness) প্রশ্নবোধক করে তুলতে পারে।
অধিকন্তু, এআই সিস্টেম এমনসব কাজ করতে সক্ষম হয় না যার জন্য মানুষের মতো নমনীয়তা এবং অভিযোজন যোগ্যতার (adaptability) প্রয়োজন হয়। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা খোলাসা করা যাক।
মন মেজাজ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় একজন মানুষের আচরণ বা প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম হতে পারে এবং অনেকক্ষেত্রে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রয়োজনও হতে পারে। সুস্থ অবস্থায় একজন মানুষের যে কর্মক্ষমতা থাকে তা নিশ্চয়ই অসুস্থ অবস্থায় থাকে না।
একইভাবে, পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় একই ঘটনায় মানুষ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। মানুষের কর্মকাণ্ডে এই যে নমনীয়তা তা এআই সিস্টেমকে শেখাবেন কোনো উপাত্ত বা কোডিং দিয়ে? কমন সেন্স বা সাধারণ জ্ঞান আরোপ সম্ভব নয় বলে এআই সিস্টেমের আচরণে মানুষের বিচার-বুদ্ধি ও নমনীয়তা শতভাগ প্রদান কোনোদিনও সম্ভব হবে মনে হয় না।
এআই পদ্ধতি কি যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যায়? এর উত্তরে বলা যায়, সহজ, সু-সংজ্ঞায়িত (well defined) কাজের জন্যই এআই বেশি নির্ভরযোগ্য ও উপযোগী। অন্যভাবে বলা চলে, জটিল, উন্মুক্ত (open ended) কাজের জন্য এআই ততটা নির্ভরযোগ্য নয়।
বিভিন্ন এআই মডেলের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্ষমতা ও দুর্বলতা রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য ঠিক কোন মডেলের এআই নির্বাচন করা হবে তার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে এআই-প্রসূত ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা।
সামগ্রিকভাবে বলা চলে, বিশ্বব্যাপী এআই পদ্ধতি ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে তবে, এটি এখনো এমন স্তরে পৌঁছেনি যেখানে মানুষের তদারকি ছাড়াই এআই পদ্ধতির উপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করা যায়। এই অর্থে এআই যত উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন হোক না কেন, তা কখনো মানুষের বুদ্ধিমত্তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না বলা চলে।
মোটকথা, মানুষের তদারকি ছাড়া এআই কখনো স্বাবলম্বী হয়ে কাজ করতে পারবে না। এই কারণেই এআই প্রযুক্তির বিকাশ এবং স্থাপনা সাবধানে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।
এআই বিষয়ে যাদের তেমন ধারণা নেই তারা মনে করেন, এআই পদ্ধতির বিচার বিবেচনা মানুষের চেয়ে উন্নত। বাস্তবতা হলো, এআই সিস্টেমও ভুল করতে পারে এবং তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে মানুষের তদারকির বিকল্প নেই।
মানুষের আবেগ এবং চেতনার প্রতিলিপিকরণ, স্পর্শ বা স্বাদের মতো সংবেদন অভিজ্ঞতা তৈরি, প্রোগ্রাম করা ছাড়া কোনো বিষয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহজাতভাবে এলোমেলো ঘটনাগুলো (inherently random events) সঠিকভাবে বোঝা বা তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা, প্রোগ্রামিং-এর বাইরে আত্ম-সচেতনতা (self awareness) বা চেতনা (consciousness) তৈরি; মানুষের সহানুভূতি, সমবেদনা এবং সৃজনশীলতার প্রতিস্থাপন, তথা, সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো উপাত্ত ও কোড নির্ভর এআই যে কোনদিনও সফলভাবে করতে সক্ষম হবে না সেই মর্মে এই বিষয়ের শীর্ষ বিশেষজ্ঞবৃন্দও ঐকমত্য পোষণ করেন।
https://www.dhakapost.com/opinion/173452
এম এল গনি ।। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি)
২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪২
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: সরিষার মধ্যে ভুত থাকলে দূর করবে কে?
৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৫
এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: মডেলটা উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ এর সফলতার হার ভালো বুঝতে পারত, কারণ If you torture the data long enough, they will confess anything, এ ধরণের একটা রিসকও থাকে পরীক্ষায়।
৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:২৭
নতুন বলেছেন: যার মাথা থেকে এই জবাব দেবার বুদ্ধি বের হয়েছে তাকে AI এর অর্থ কি বানান কি জিঙ্সাস করা দরকার।
৫| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২
রানার ব্লগ বলেছেন: নতুন বলেছেন: যার মাথা থেকে এই জবাব দেবার বুদ্ধি বের হয়েছে তাকে AI এর অর্থ কি বানান কি জিঙ্সাস করা দরকার।
হা হা হা !! ভালো বলেছেন !!!
৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১২
বিটপি বলেছেন: র্যাব কি দাবি করেছে যে তারা এ আই ব্যবহার করে ফারদিনের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করেছে? যদি তাই করে থাকে, তাহলে র্যাবের দরকার কি? বুয়েটে যারা স্বাধীনতার পক্ষের লড়াকু ইঞ্জিনিয়ার আছে - তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হোক।
৮| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮
শেরজা তপন বলেছেন: এ আই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাটা ভাল লেগেছে।
৯| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:০৫
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: AI এর বাস্তব ব্যাবহার অনেক পুরনো। আঙুলের ছাপ এবং তা যন্ত্রিকভাবে সনাক্ত হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতে অনেক যুগ আগে থেকেই। বর্তমানে এর ব্যবহার বহুবিধ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৯
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এটা খুবই হাস্যকর। এআই সাধারণ কোন কন্ট্রোভার্সাল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না সেখানে হত্যা রহস্য উম্মোচন করবে!!