নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্কলারশিপ পেলেই কি বিদেশে যাবেন! =
জার্মানি থেকে বাংলাদেশি এক যুবক কিছুদিন আগে আমার সাথে কথা বললেন। উদ্দেশ্য, পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা পিআর হিসেবে কিভাবে কানাডায় আসা যায়? এ লেখার প্রয়োজনে যুবকের নাম দিলাম, প্রান্ত।
তার আগ্রহ শুনে আমি জানতে চাইলাম, “প্রান্ত, কানাডায় যদি পিআর এর আবেদনই করবেন, তবে জার্মানি গেলেন কেন? ওদেশে পিআর পাওয়া যায় না?”
উত্তরে তিনি বললেন, “কাহিনী একটু দীর্ঘ। চার বছর আগের কথা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ জার্মানি থেকে বৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পেলাম। সে সুযোগ কাজে লাগাতেই আমার জার্মানি আসা।”
জার্মানির পড়াশোনা শেষ করেছেন কিনা- আমার এ প্রশ্নের উত্তরে প্রান্ত বললেন, “জ্বি, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছি বছর দেড়েক হলো।”
- তারপর আপনার পরিকল্পনা কী?
তিনি বললেন, “জার্মানিতে স্থায়ী অভিবাসনের (পিআর স্ট্যাটাস) আবেদনের চিন্তা মাথায়। তবে, তা আমাকে দিয়ে হয়ে উঠবে মনে হয় না।”
সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে প্রান্ত বললেন, “মূল সমস্যা ভাষায়। অর্থাৎ, জার্মানিতে পিআর পেতে হলে জার্মান ভাষার পরীক্ষায় যে ফলাফল করতে হয় তা আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের জন্য খুব কঠিন।”
:আপনাদের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড বলতে কী বোঝাচ্ছেন”, জানতে চাইলাম।
“মানে, যারা ছোটবেলা হতে জার্মান ভাষার সাথে পরিচিত নন তাদের কথা বলছি। আমরা তো ছোটবেলা থেকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার সাথে পরিচিত, জার্মান ভাষার সাথে নয়”, ওপাশ থেকে উত্তর দিলেন প্রান্ত।
- তাহলে, শুরুতেই আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে কেন ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে গেলেন না?
- ঠিক বলেছেন, সেটাই ভালো হতো। প্রথমবারে না পারলেও কয়েকবার আইইএলটিএস দিয়ে একটা ভালোমানের স্কোর তোলা অসম্ভব হতো না। সেভাবে চেষ্টা করলেই পারতাম। কিন্তু, স্কলারশিপসহ জার্মানিতে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে অতো হিসাব-নিকাশ আর করিনি। এখন মনে হচ্ছে বৃত্তির লোভে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন…
এ আলোচনা থেকে কী বোঝা গেল?
আমি যা বুঝেছি তা হলো, স্কলারশিপ পেলেই দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ভোঁ দৌঁড় দেওয়া বোকামো। আপনাকে প্রথমেই ভাবতে হবে, কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বিদেশি পড়াশোনা থেকে আপনার অর্জন কতখানি, বা বিদেশে স্থায়ী হতে চাইলে আপনার এ পড়াশোনা বা সময় ব্যয় কতটা সুফল দেবে, বা আদৌ দেবে কিনা?
প্রান্ত (ছদ্মনাম) নামের এ তরুণের জীবনের প্রায় চার বছর জার্মানিতে কেটেছে। আর, এই বৃত্তির সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার দুটো মূল্যবান বছরও তাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। সব মিলে প্রায় অর্ধযুগ এ অনিশ্চিত যাত্রায় তিনি ব্যয় করেছেন। এর ফলাফল হয়েছে এটুকুই, জার্মানিতে যে সহজে স্থায়ী হওয়া যায় না সে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারা।
এ লেখায় জার্মানির নাম এলেও পৃথিবীর আরো অনেক দেশে আমাদের ভাইবোন বা সন্তানরা পড়াশোনা করতে যায় খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করেই। দেশ ছাড়ার আগে এদের অনেকেই পড়াশোনা শেষের পর কী ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারেন তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করেন না অনেকেই। যে সব প্রার্থীর দেশে ফিরে যাবার বিশেষ আগ্রহ থাকে তাদের ক্ষেত্রে বিদেশে পড়াশোনার পর খুব দীর্ঘ পরিকল্পনা না থাকলেও সমস্যা নেই। কিন্তু যারা চিন্তা করেন পড়াশোনার পর নিজেকে নতুন দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের ক্ষেত্রে পূর্ব-পরিকল্পনা না হলেই নয়।
নিজেদের একটা দৃষ্টান্ত দেই। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই একসময় নেদারল্যান্ডস-এ ছিলাম কিছুদিন। বাংলাদেশ সরকারের চাকরি থেকে সেদেশের সরকারের খরচে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম। সঙ্গত কারণেই, আমাদের মাথায় ছিল দুজনের সরকারি চাকরি ছেড়ে কোনদিন বিদেশে পাড়ি জমাবো না। কিন্তু, নেদারল্যান্ডস এর আইনশৃঙ্খলা, মানুষের স্বভাবচরিত্র, সরকারি কর্মচারীদের সততা, বাকস্বাধীনতা, নির্মল পরিবেশ, ইত্যাদি দেখে এতোটাই অভিভূত হয়ে পড়ি যে নেদারল্যান্ডস থেকে দেশে ফিরেই আমরা প্রথম বিশ্বের দেশ কানাডায় অভিবাসনের (পিআর স্ট্যাটাস) আবেদন করি। সেই সূত্রেই আমরা আজ একুশ বছর ধরে কানাডায়।
আমাদের ব্যক্তিগত কাহিনী এখানে উল্লেখের কারণ এটা বোঝাতে যে, অপেক্ষাকৃত উন্নত পরিবেশে দীর্ঘসময়ের জন্য বসবাসের সুযোগ হলে অনেকক্ষেত্রে পূর্ব-পরিকল্পনা না থাকা সত্ত্বেও উন্নতদেশে জীবনযাপনের চিন্তা মাথায় চলে আসে। আমাদের আগেও হাজারো বাংলাদেশি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
কানাডা অভিবাসন বিষয়ে কিছু কথা বলে এ লেখা শেষ করি।
কানাডায় অভিবাসন নিয়ে যদি থিতু হওয়ার পরিকল্পনা যদি থাকে, তবে অন্যকোনও দেশে পড়াশোনার বৃত্তি পেয়েছেন বলে তড়িঘড়ি পাড়ি না জমানোর পরামর্শই দিবো। তার চেয়ে বরং কয়েকবার আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে হলেও কানাডায় কিভাবে প্রবেশ করা যায় সে চেষ্টা করুন।
সাধারণভাবে বলা যায়, কানাডা অভিবাসন আবেদনকারীর সম্মিলিত পয়েন্টের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষার দক্ষতা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাটাগরি থেকে এই পয়েন্টগুলো হিসাব করা হয়। সঙ্গত কারণেই, কানাডা অভিবাসনে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা উপাদান।
ভিন্ন দেশে পড়াশোনার জন্য কয়েকবছর কাটিয়ে দিলে বয়স বেড়ে যাওয়ায় আপনার পয়েন্ট কমে যাবে। এছাড়া, কানাডায় পড়াশোনা বা, কাজ করলে আপনি যে বাড়তি কিছু পয়েন্ট পেতেন ভিন্ন দেশে পড়াশোনা বা কাজ করে এলে তা পাবেন না। সর্বোপরি, ইংরেজি ভাষাভাষীর দেশ কানাডায় পড়াশোনা বা কাজের সুবাদে কয়েকবছর বসবাস করলে আপনার আইইএলটিএস স্কোরও বেড়ে যাবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
এভাবে নানা আঙ্গিকে বিবেচনায় কানাডায় যাদের স্থায়ী হবার আগ্রহ তাদের উচিত হবে বৃত্তি পান বা না পান, পড়াশোনার জন্য কানাডাকেই প্রথমে বেছে নেওয়া। তাতেই কানাডা ইমিগ্রেশনের পয়েন্ট বৃদ্ধির অনুকূলে আপনার সময়, অর্থ ও শ্রমের সদ্ব্যবহার হবে।
[পুনশ্চ: কাউকে জার্মানি যেতে নিরুৎসাহিত করা এ লেখার লক্ষ্য নয়। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির নাম এসেছে কেবল।]
Email: [email protected] FaceBook: ML Gani
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি নিজেকে সব সময় পন্ডির দেখাতে চান। বড় দেখাতে চান।
আসলে আপনি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবেন না।
০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩৩
এমএলজি বলেছেন: https://bangla.bdnews24.com/probash/sip86hktvh
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১২
ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনি কিছুটা ঠিকই বলেছেন। একই অবস্থা জাপানে। আমাদের দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমান স্টুডেন্ট জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। কারন ঐ স্কলারশীপ। কিন্ত জাপানী ভাষায় পিএইচডি শেষে বেশিরভাগকেই দেশে ফিরে আসতে হয়। তবে কানাডা, আমেরিকায় আবার স্কলারশীপ সহ সুযোগ পাওয়াটা খুবই কঠিন। নিজের খরচে এসব দেশে যাওয়াটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না।
৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৫৬
শ্রাবণধারা বলেছেন: জার্মানীতে স্কলারশীপ সহ পড়ালেখার সুযোগ পেলেও জার্মানীতে না গিয়ে দেশেই রয়ে যাবে? কি আশ্চর্য উপদেশ!!!
আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত তরুন-তরুনীদের জীবনে সাধারনত একাধিক সুযোগ আসে না যে আমরা তুলনা করে যে কোন একটা পছন্দ করতে পারি। জার্মানীর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মান আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর চেয়ে ভাল। তাই স্কলারশীপ সহ পড়ালেখার সুযোগ পেলে যেকোন তরুন-তরুনীদের উচিত হবে দ্বিতীয় চিন্তা না করে অবশ্যই সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। তার পরে কি হবে, কোথায় স্থায়ী হবে, সে চিন্তা পরে করলেও চলবে।
০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩৪
এমএলজি বলেছেন: লেখাটির মূল বক্তব্য আপনি ধরতে পারেননি।
পুরো লেখাটা এখান থেকে পড়ুন: https://bangla.bdnews24.com/probash/sip86hktvh
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০৮
সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: আপনার বক্তব্য স্পষ্ট না। স্কলারশিপ না পেলে একজন স্টুডেন্ট স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কানাডাকে কীভাবে চুজ করবে? ব্যাংক স্টেটমেন্ট তো বিশাল ব্যাপার। এত টাকা তো আর সবার নেই। আপনি যদি ইমিগ্রেশন এ দীর্ঘদিন কাজ করে থাকেন তাহলে, এ নিয়ে বিস্তারিত লিখলে আশাকরি অনেকের উপকার হবে।
আর জার্মানির কথা বললেন, জার্মান সহ নর্ডিক কান্ট্রিগুলো তো ভাষা অনেক বড় একটা ম্যাটার। এটা না জেনে কেউ ওসব দেশে যায় বলে আমার মনে হয় না। কারণ, বাইরে পড়তে যাওয়া লম্বা একটা প্রসেসিং এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
কানাডায় একাডেমিক সাইট টা নিয়ে একটা পোস্ট দিলে অনেকে উপকৃত হত, কারণ চারদিকে এত ভুলভাল ইনফরমেশন কোনটা সত্যি সেটা বোঝাই মুশকিল।