নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে দাওয়াত ফিরিয়ে দেয়া যায় না =
ক্লাইয়েন্টদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আমাদের প্রফেশনে নিরুৎসাহিত করা হয়। কেননা, আমরা মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে deal করি, যা ব্যক্তিগত সম্পর্কে ক্লাইয়েন্টকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। আমাদেরও প্রত্যাশা থাকে, ক্লাইয়েন্ট আমাদের ঘনিষ্ঠ হতে চাইবেন না।
একজন লাইসেন্সড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (RCIC) হিসেবে আমার দায়িত্ব আমার কোন ক্লায়েন্টের সাথে ঘনিষ্ঠ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে না পরা। এটা প্রফেশনাল এথিক্স এরই অংশ। যতটা সম্ভব এ নিয়ম মানার চেষ্টা করি। তবে, মাঝে মাঝে এমনসব পরিস্থিতি তৈরী হয় যখন শতভাগ নিয়ম মানা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনই এক ছোট্ট কাহিনী শুনুন বন্ধুরা।
বছর পনেরো আগে বাংলাদেশ থেকে বাবা-মায়ের হাত ধরে কানাডা এসেছে শিল্পী (ছদ্মনাম)। তার দাদীকেও পরবর্তীতে স্পন্সর করে কানাডা এনেছিলেন শিল্পীর মা-বাবা। কিন্তু, কানাডায় দাদীর মন টেকেনি। আগমনের বছর না পেরুতেই তিনি ফিরে গেছেন দেশে। দেশে অবস্থানকালে মাঝে তিনি বেশ অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। কানাডায় তিনি PR স্ট্যাটাস পেলেও সেদেশে দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে স্ট্যাটাস ঠিকমতো ধরে রাখতে পারেননি।
শিল্পী ছোটবেলায় দাদির (ঠাম্মা) কাছে বড়ো হয়েছিল। কাজেই দাদিকে ঘিরে তার অনেক মূল্যবান স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার ইচ্ছে, দাদি আবার কানাডায় ফিরে আসুক। মেয়েটি থাকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায়, আর তার মা-বাবা থাকেন আলবার্টা প্রদেশে। গাড়িতে প্রায় ১৪/১৫ ঘন্টার পথ; প্লেনে লাগে ঘন্টা দেড়েক।
বছর তিনেক আগে একদিন শিল্পীর মা আমাকে ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন; বললেন শিল্পী এবং তার দাদির কথাও। গুগলে সার্চ দিয়ে শিল্পী নাকি আমাকে খুঁজে পেয়ে তার মা'কে বলেছে দাদিকে কানাডা নিয়ে আসার ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলতে। আমি মনোযোগ দিয়ে শিল্পীর মায়ের কথা শুনলাম। পরদিন শিল্পীও আমার সাথে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে কথা বললো। আমি তার আবেগ বুঝতে পারি; দাদিকে কানাডা ফিরিয়ে আনার তার ব্যাকুলতা আমার মন ছুঁয়ে যায়। সে আমাকে বলে, 'I fully trust you, you can make it happen ...' - -
শিল্পীর দাদি কানাডা ফিরেছেন বছর পেরিয়ে গেছে। ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। অথচ, সেই শিল্পীর মায়ের টেলিফোনে আজ আবার নতুন করে সবকিছু মনে পরলো। তিনি আমাকে বলেছেন, 'দাদা, আপনাকে আমার মেয়ে স্মরণ করেছে। আমাকে বলেছে আপনাকে যেন তার নিমন্ত্রণ পৌঁছে দেই।'
- কিসের নিমন্ত্রণ দিদি?
- শিল্পীর একটা বেবি হয়েছে। অনুষ্ঠান হবে নভেম্বরের ২৭ তারিখ, রবিবার। এডমন্টন শহরেই। ও বারবার করে বলেছে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। সপরিবারে আসবেন অবশ্যই।
তাঁকে মুখের উপর কিছু না বললেও মনে মনে ভাবলাম, আমার প্রফেশনাল এথিক্সের তবে কি হবে?
কত রকম দাওয়াতই তো কতোদিকে পাই। তবে, শিল্পীর এ দাওয়াতটি একেবারেই অনাকাঙ্খিত আমার কাছে। কত ক্লায়েন্টের কত কাজই তো করেছি; কজনাই বা এভাবে আমাকে মনে রেখেছেন? অথচ, ভাঙা ভাঙা বাংলা বলা বাংলাদেশী-কানাডিয়ান এ তরুণী আমাকে একটুও ভোলেনি। আমার মতো এক নগন্য মানুষের জন্য এ তো এক বড়ো অর্জন।
এ দাওয়াত তাৎক্ষণিক গ্রহণ করে দিদিকে বললাম, অবশ্যই যাবো দিদি, অবশ্যই; একা নয় সপরিবারে যাবো।
Contact: [email protected] ; FaceBook: ML Gani
৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এমএলজি বলেছেন: একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরেকটু ভালো বুঝবেন।
ধরুন, কিরণ সাহেব একজন ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (RCIC) । তাঁর ক্লাইয়েন্ট অমল। অমল, কিরণের সহযোগিতায় কানাডায় রিফিউজি হিসেবে ইমিগ্রেশন পেয়েছেন। কিন্তু, অমলের বন্ধুরা জানেন তিনি বিজনেস ইভেস্টর হিসেবে ইমিগ্রেশন পেয়েছেন। এ অবস্থায় কিরণ সাহেব দাওয়াতে গিয়ে অমলের বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা জমালে বিষয়টা অমলকে কি স্বস্তি দেবে? আপনি হয়তো বলতে পারেন, অমল আগেই কিরণ সাহেবকে বলে রাখবেন মিথ্যে বলতে। কিন্তু, তা কি কিরণ সাহেবের জন্য স্বস্তির হবে?
এবার বুঝা গেছে?
(পুনশ্চঃ রেফিফিউজি হিসেবে ইমিগ্রেশন কিন্তু খারাপ কিছু না।)
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আমি সব দাওয়াতে যাই। আগ্রহ নিয়ে যাই।
৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩০
রানার ব্লগ বলেছেন: খাওয়া দাওয়া ভালো হলে দাওয়াত মিস করাটা বোকামি
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: মানুষের সাথে মানুষের নানান ভাবে সম্পর্ক তৈরি হয় । প্রোফেসন তার ভেতরে একটা । কলিগের সাথে কিংবা ক্লাইন্টের সাথে কাজের বাইরেও সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠতে পারে । এখানে আন্তরিকতা অনেক বড় একটা ব্যাপার !
মানুষের সাথে এই সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা মোটেই খারাপ কিছু নয় ।